somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুলডোজারের কবলে হয়ে ভালোবাসা - রণক ইকরাম

১৭ ই জুন, ২০০৮ দুপুর ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক.
'পুঁজিবাদী সমাজের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় কুসংস্কারের নাম প্রেম।' না, প্রিয় পাঠক; চোখ কটমট করে তাকানোর কোন কারণ নেই। এত বড় কথা বলার মতো জ্ঞান-গরিমা অথবা কুসাহস কোনোটাই আমার নেই। কথাটা প্রয়াত ড. হুমায়ুন আজাদের। আমি কথাটা বিশ্বাস করি। আমি জানি, কেউ কারো জন্য খারাপ থাকে না। কিন্তু হঠাৎ কাউকে 'আই লাভ ইউ' বলার অপরাধে যেমন চটাস করে চড় খেতে হয় তেমনি প্রেম-ভালোবাসা বিষয়ক এরকম কিছু সত্য বলার অপরাধে গণধোলাই খাওয়ার সম্ভাবনা ও প্রচুর। আর নানা ধরনের অপবাদ তো আছেই। শালায় ছ্যাঁকা খাইছে, জীবনে ভালোবাসা পায় নাই পিরিতের কাঙাল, বউ ভালো না-এরকম হাজার অপবাদ শুনতে শুনতে নিজেকে কূলহারা কলঙ্কবাজ মনে হবে। তবু প্রশ্ন থেকে যায়, ভালোবাসার নামে এখন যা হচ্ছে তা আসলে কী? এক মেয়ে কাস্টমার দোকান থেকে-কেনা পোশাক ফেরত নিয়ে এসেছে। তার অভিযোগ, সবাই ছিঃ ছিঃ করছে, বলছে তাকে নাকি ভীষণ বাজে দেখাচ্ছে। তখন দোকানি হেসে বলল-ম্যাডাম আপনিতো লেটেস্ট ফ্যাশনের ড্রেস চেয়েছিলেন। ভুলে যাচ্ছেন কেন, বাজে দেখানোটাই এখনকার বাজার চলতি লেটেস্ট ফ্যাশন! স্বভাতই প্রশ্ন জাগে, ভালোবাসার নামে ভালোবাসা না থাকাটাই কি এখনকার বাজার চলতি লেটেস্ট ফ্যাশন?

দুই.
প্রয়াত করি ত্রিদিব দস্তিদারের কবিতার বইয়ের নাম ছিল 'ভালোবাসতে ভালোবাসতে ফতুর করে দেব'। কবি কাউকে ফতুর করতে পেরেছিলেন কিনা তা আমাদের হার্ডডিস্কে নেই। তবে প্রাইমারি স্কুল-হাইস্কুল-কলেজ কিংবা ভার্সিটি লাইফে যত প্রেমের ডাউনলোড আমার চোখে পড়েছে, সব ক্ষেত্রেই দেখেছি-কেবল ছেলেরাই ভালোবাসতে বাসতে ফতুর হয়ে গেছে, মেয়েরা নয়! তাই কবিতার বইয়ের নাম হওয়ার দরকার ছিল 'ভালোবাসতে ভালোবাসতে ফতুর হয়ে গেলাম'। যেমন ফিট সেই বিখ্যাত কথা-'ভালোবাসা মোরে ভিখারি করেছে তোমারে করেছে রানী...।' ফতুর আর ভিখারী না হয়ে কোনো উপায় আছে? ভালোবাসার সুগভীর মাইনকা চিপায় কতকিছু যে আটে তার লিস্টি কয়জন জানে? প্রেমিকার আলতা স্নো-পাউডার-লিপস্টিক-নেইল পলিশ-ড্রেস আইব্রু-সবই ভালোবাসাকে জোগাড় করতে হয়। মোবাইলে টাকা হেঁচকি লোড করতে হয়। নিয়মিত গিফটের নামে বাবার পকেট কাটতে হয়। লাল গোলাপ দিতে হয় আর ডেটিংয়ে পকেট কাটার ব্যাপারটা তো আছেই। সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্ব চায়নিজে নিয়ে যেতে হয় আবার দাবি-দাওয়া মতো প্রেমিকাকে নানান জিনিসপত্র খরিদও করে দিতে হয়। সবকিছুই করতে হয় প্রাণের ভালোবাসার মানুষ মানে প্রেমিক সাহেবকে। ভাবখানা এই যে, প্রেমিকা কেবল চাইবে আর প্রেমিক কেবলই দেবে। কিন্তু কীভাবে কোথা থেকে দেবে তা ভাবার মানুষ নেই। সবকিছুর চাপে স্বয়ং প্রেমিক মশাইর ভালোবাসাই উচ্ছেদ হওয়ার জোগাড়। প্রেমিকাদের চাহিদার বুলডোজারের চাপে প্রেমিকদের সবার প্রাণ যায় যায় অবস্থ। মর্ত্যরে মদনদের ওপর মর্ত্যে বসবাসরত স্বর্গের অন্সরীরা অবিরাম চালাচ্ছে বুলডোজার। তাদের বুলডোজার কবলিত হয়ে ভালোবাসা এখন হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন। দিন কাটছে, অনেক কিছুই বদলে যাচ্ছে। আর ভালোবাসা আস্তে আস্তে পরিণত হচ্ছে উত্তরাধুনিক কুসংস্কারে...!
তিন.
এক পরীক্ষার ইন্টারভিউতে প্রার্থীকে প্রশ্ন করা হলো-দেখুন আমরা অফিসের পরিচ্ছন্নতার দিকে খুব নজর রাখি। আচ্ছা রুমে ঢোকার আগে আপনি ঘরের পাপোশে আপনার পা মুছে এসেছেন তো? তখন প্রার্থী জবাব দিল-জ্বি স্যার, অবশ্যই! তখন ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্য বলল-খুব ভালো কথা; কিন্তু লক্ষ্য করে দেখুন আমাদের রুমে অথবা রুমের বাইরে কোথাও কোনো পাপোশই নেই। ভালোবাসার ব্যাপারটিও এমন অদৃশ্য ধোঁয়াটে জটিল ও যাতনাময়। যত বিচার-বিশ্লেষনই করা হোক না কেন ফলাফল ওই একই-ভিখারি ফতুর নয়তো ওই প্রার্থীর মতো ফেল মারা। আর সবকিছুর পরও একবার যদি ভালোবাসা নামক কিছু একটার কবলে পড়ে যায়, তাহলে কিছুকাল পরেই বোঝা যাবে ভালোবাসা আসলে প্রত্যাশা আর অপ্রাপ্তির বুলডোজার ছাড়া কিছুই নয়।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×