রেল ভ্রমণঃ শৈশব থেকে অদ্যাবধি
আনিছা শারমিন খান নিশি
আমার নানু বাসার কাছে কোর্ট ইস্টিশন. ছোটবেলায় এই কোর্ট ইস্টিশন নিয়ে ছিল দারুন উত্তেজনা!
নানু ( Badruddoza) ভাইয়া কোর্ট ইস্টিশনের দিকে যাবে শুনলেই জল্পনা কল্পনা তারপর বায়না,
আমিও যাবো..
সেখানে আমাকে নিয়ে যাওয়া কি কম ঝক্কি!
বাসা থেকে বের হয়ে একটু হাঁটার পরই কোলে নাও.. তারপর দোকানে নেমে বিস্কুট পানি খেয়ে জিরিয়ে নিয়ে আবার একটু হেটে তারপর আবার কোলে..
তারপর ওখানে পৌঁছে নানু ভাইয়ার দরকারী কাজ সেরে চকলেট বা বুনবুনি দুই হাত ভর্তি করে নিয়ে আবার দু পা হেটে কোলে উঠে একই দোকানে থেমে বিস্কুট পানি খেয়ে (এবার কিন্তু অন্য বিস্কুট) তারপর বাসা.. বাসায় ফিরে সে কী পা ব্যথা! !
বাসায় ফিরে এত বড় জার্নির গল্প কি আর এক দুই কথায় শেষ হয়!
সেই গল্প আবার চলত কয়দিন ধরে..
বলে রাখা ভালো যে নানু বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাড়ালেই কোর্ট ইস্টিশন দেখা যায় (খালি চোখেই) ! অবশ্য নানু বাসার উঠান থেকে তো চাদ ও দেখা যায়!! tongue emoticon
দাদুর বাসায় ট্রেনে যেতে হলে ঈশ্বরদী তে নামতে হতো .. ট্রেন থেকে নেমে ওভার ব্রিজ পার হতে হতো ওই ওভার ব্রিজের সিড়ি টা ফাকা ফাকা একবার ওই ফাকা দিয়ে আমার স্যান্ডেল পড়ে গেছিল.. আমি খুব ভয় পেতাম ওই সিড়িটা.. আব্বুর কোলে উঠে পার হতাম..
তারপর অনেক দিন চলে গেছে ট্রেনে আর ঈশ্বরদী যাওয়া হয়নি.. বছর দেড়েক আগে আবার আব্বুর সাথে ওই ইস্টশনে নামলাম.. আবার ওই সিড়ি .. প্রথম ধাপে পা রাখতেই আবার সেই ছোট্টবেলার ভয় চেপে বসল.. আব্বু আমার পিছনে ছিল আমি আব্বুর হাত ধরে সেই ভয়ঙ্কর সিড়ি পার হলাম..
পোড়াদহ ইস্টিশন টা আমার বেশ পছন্দের ! রাজশাহী থেকে ক্যাম্পাসে যেতে ওখানে নামতে হত. একা থাকলে আর লাগেজ বেশি হলে নেমে without adventure অটোতে উঠে বাস স্টপেজ কিন্তু সন্দেশ ( Anta A ) বা বিরিয়ানি ( Sumya) থাকলে তো কথাই নাই..
একা থাকলে আর লাগেজ কম থাকলে অবশ্য আমি একটু বসতাম..
স্টেশনের ব্যস্ততা শুরু হয় ট্রেন আসলেই.. ট্রেন চলে যাবার পর স্টেশন টা ক্যামন শান্ত হয়ে যায় আমার ওই জিনিসটা খুব ভালো লাগত.. আমি বসে বসে ওটা দেখতাম তারপর বাস স্টপেজে যেতাম..
বিমানবন্দর স্টেশন, ঢাকা।
এই স্টেশনে যে কয়বার গেছি এক কি দুবার ছাড়া প্রতিবারই টিয়া ( Afroza ) এসে আমাকে চিলের মত ছো মেরে বাসায় নিয়ে গেছে! এই স্টেশনের যাবতীয় কাহিনি সি এন জি সংক্রান্ত ..
আর কমলা পুর স্টেশনে প্রথম গেলাম ডলার মামার সাথে গত বছর.. সে কি অবস্থা তখন দেশের! খালি হরতাল আর বোমা ককটেল ছারা কোন কথাই নাই..
ফেরার দিন ও একই অবস্থা নুপুর ( Nahida) এল তুলে দিতে.. সেদিন ই আবার রাজশাহী স্টেশনে ককটেল ফুটেছে আর আমি রাজশাহি তেই যাব ! What a thrill!! wink emoticon
আর রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন!
রিক্সা ভ্যান অটো বাস ট্রাক প্লেন যেটাতে করেই তুমি আস না কেন সেটা থেকে নেমে কম করে হলেও 1 কিলোমিটার হেটে ট্রেনে উটতে হবে..
আমি আবার খুব হিসেবী মানুষ .সকাল৭-০০ টায় ট্রেন হলে ঠিক পৌনে ছটায় উঠব.. বাসা থেকে স্টেশন যেতে ১০ মিনিট লাগে আমি কাটায় কাটায় ন মিনিট (মানে ট্রেন ছাড়তে ন মিনিট ) আগে বের হব..
তারপর ইস্টিশনে পৌঁছে রিকশা থেকে নেমেই আব্বু গেলাম টা টা বলে দৌড় .. দৌড়াতে দৌড়াতে ট্রেনে উঠতাম...
জীবনে একটা ট্রেন ও মিস করিনি আমি!!!! grin emoticon
আব্বু ( সা কা ম আনিছুর রহমান খান কামাল ) এই নিয়ে বিরক্ত হত.. মম ( বদরুন নেসা খানম ) ও চিল্লাইত! wink emoticon
যাইহোক এই ছবি টা Ingleburn Station এর.. কোন এক বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় তুলেছিলাম... এই Station এর অনেক গল্প সেটা অন্য দিন করব.. গল্প গুলো এখনো কাচা পাকলেই টুপ করে লিখে ফেলব..! grin emoticon
লেখিকা : প্রবাসী অ্যাডভোকেট
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:২১