ধীরে ধীরে শরীরটা ওজনশূন্য হয়ে যাচ্ছে। যেন হাত নেই, পা নেই, মাথা নেই। চোখের পাতা খুলছে বন্ধ হচ্ছে তবু ন্যানো সেকেন্ডের যে বিরতি তাতে দর্শনে বাধা পড়ছেনা। চোখের পাতা বন্ধ করে দেখলাম, না, আমি চোখের পাতা বন্ধ করতে পারছিনা। ঠিক নাকের ডগার উপর একটা মাছি এসে বসছে, আমি কোন অনুভুতি পাচ্ছিনা। নিউরনের এক্সন ডেনড্রাইটগুলো নিষ্ক্রিয়, মেরুরজ্জুরাও নিশ্চুপ। হাতটা উঠাতে চাইলাম, মাছি তাড়াতে হবে, না, পেশিগুলো অবাধ্য, আমি হাতটাও নাড়াতে পারছিনা। একি!
কে কোথায় আছে?
আমি মা'কে ডাকছি, চিৎকার করে ডাকছি, আমার গলা দিয়ে শব্দ বেরুচ্ছেনা! চোখ জ্বালা করছেনা! অনেক চেষ্টা করছি, তবু আমি কাঁদতে পারছিনা। চোখ দিয়ে পানি পড়ছেনা!
শরীরটা কষ্ট করে উঠানোর চেষ্টা করছি, উঠছেনা! আমি উঠতে পারছিনা, না না, আমি উঠে যাচ্ছি আমার শরীরটা উঠছেনা, নিথর হয়ে পড়ে আছে। না না, আমি পড়ে আছি, আমার আত্না উঠে যাচ্ছে। আমি কে? আমি কি শরীর? নাকি আত্না?!!
ফিরে দেখি মা কাঁদছে, আমাকে ডাকছে। কেন? আমিতো এখানেই! আমি থেকেও নেই কেন? আমি মৃত?!
আমি উড়ে যাচ্ছি, আমার উড়ে যাবার সময় হয়ে আসছে। কিসের যেন তাগিদ। একটু আগের আমি যে ছিলাম, সে লাশ হয়ে গেছে। সবাই লাশ দাফনে ব্যস্ত, আমাকে দাফনে ব্যাস্ত! নিথর দেহ। এই পৃথিবী ছাড়তে হচ্ছে।
বাড়ির কোনে একদল কাছের মানুষ, এদের সাথে হাজারো দিন কেটেছে, সময় কেটেছে। ওদের মুখগুলো ফোলাফোলা হয়ে আছে, ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আমি অন্য কাউকে খুজছি। শেষ দেখার জন্য। একহাতে সবকিছু গুছিয়ে নেয়া মানুষটাকে। সে কোথায়? সে কি কাঁদছে? তাকে আমার কিছু কথা বলার ছিল, বলা হয়নি। বুঝি না বলাই রয়ে গেল। কোথায় সে....
সময় ফুরিয়ে গেছে, যাবার সময় হয়ে এল, কোথায় যাওয়ার সময় আমি জানিনা। কিসের এত তাগিদ আমি জানিনা। আমি যাচ্ছি। হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছি। আমি নেই, আমি শেষ। তোমরা যারা শুনছো, কেউ বলে দিও, আমি তাকে ভালোবাসি...
ভিষন রকমের ভালোবাসি।