চৈত্রের এই সময়টা ঝিঁঝিঁ পোকা ধরার মৌসুম। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে বাগানে পোকাদের উৎসব লেগে যেত। তখনো লাল হাফ প্যান্ট আর সাদা শার্টের স্কুল ড্রেস পরি আমি। দুপুর অবধি স্কুলে কাটিয়ে সাদা শার্টটার প্রতিদিন গড়ে ১মাসের আয়ু কমিয়ে বাসায় ফিরি। এসেই পুকুরে ঝাপ! তখন আবার মুরুব্বীকুলের প্রচুর নিয়ম কানুন। ৩ ডুবের বেশি ডুবানো যায় না। জগত সংসারের যত রাগ অভিমান সব তারা এই সময়টায় বাচ্চাদের উপর ঝেড়ে দিতো। আমাদের ব্যাচের থেকে কিঞ্চিত বড় পাড়াত ভাই ব্রাদাররাও এই সময় প্রচুর দাদাগিরি দেখিয়ে দিত। দাঁতে দাঁত চেপে কতজনের গুষ্ঠি উদ্ধার করে ঐ পানিতেই চুবিয়ে রাখতাম তার ইয়ত্তা নেই। পার্মানেন্টলি নিজের হাতে খাওয়া শুরু করি কলেজে উঠার পর, এর আগে এই কাজ মায়ের উপর দিয়েই যেত। গোসল শেষে মা ভাত নিয়ে নানাবিধ গল্প নিয়ে কাহিনী নিয়ে পিছন পিছন ঘুরতো। গল্প কাহিনী শুনে শুনে ভাত খাওয়ার গল্পগুলোও এখন আরেক নতুন গল্প।
চৈত্রের বিকেলটা একটু বেশিই সুন্দর। বাড়ির পাশেই বিশাল মাঠ, তখন ইরি ধান কাটার মৌসুম। ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে আসা মাঠ একটা সময় গন-স্টেডিয়ামে পরিনত হয়। সূর্য লাল হতে হতে ঢলে পড়ে আর লাল আকাশে রং বেরং এর ঘুড়ি, সাপের মত লেজ ধুলিয়ে উড়তে থাকে! এখন যেমন চোখ বন্ধ করলেই সেই সময়গুলোকে খুব সিনেমাটিক কিংবা কাব্যিক লাগে তখন তার ছিটেফোটাও ছিলনা। সারা বিকেল মাঠ ঘাট চরিয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সময়টায় ঝিঁঝিঁ পোকা ধরা হতো। একটা ছিল বোবা ঝিঁঝিঁ, ওটা ডাকতে পারতোনা, পুরুষ! পুরুষেরা সব সমাজেই নীরব, সে ঝিঁঝিঁ পোকাদের সমাজ হোক কিংবা মানুষ!
এরপর মাগরিবের আযান, হাত পা ধোয়ার সময়। কচিকাচাদের ভবিষ্যতের জন্য স্মৃতি রোমন্থনের একটা স্বর্ণালী দিনের সমাপ্তি। না সমাপ্তি না। শেষ হইয়াও হইলোনা শেষ! বাড়ির সব কচিকাচা মিলে একসাথে পুকুরে হাত পা ধুতে যেত। যাবার আগে সবাইকে ডাকা হতো।
- "কে কে হাত- পা ধুইতে যাইবি?" (সুর করে নোয়াখালি টান নিয়ে)
- " আমি"
- "কুত্তা তোর স্বামী"
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:৫৪