প্রথমত "জাতীয়তাবাদ" আর "দেশপ্রেম" দুটি আলাদা
টার্ম, আলাদা ব্যাখ্যা। দ্বিতীয়ত "জাতীয়তাবাদ" আর
"দেশপ্রেম"সহ দেশকেন্দ্রীক চিন্তা চেতনার সাথে কেন
জানি "ধর্মীয় অনুভূতি", রীতিনীতি, চিন্তা চেতনার
একটা বিভেদ দেয়াল তৈরী হচ্ছে। এই দেয়ালের সাথে
দুরত্ব তৈরি হয়ে আমাদের চিন্তাশক্তির মাঝে একটা
বিস্তর ফারাক তৈরী হচ্ছে, ধীরে ধীরে উদ্ভব ঘটছে দুই
ক্যাটাগরির মানুষের । একদল দেশকে বিলং করে তো
আরেকদল ধর্মকে। ধর্ম আর দেশের এই দান্ধিক সম্পর্কের
টনাপোড়নে একইসাথে দেশপ্রেমিক এবং ধর্মপ্রান
মানুষেরা পড়ে যাচ্ছেন দোটানায়।
স্যেকুলারিজম আর ধর্মের লড়াই আজকের না, বহু
আগের। সেই মধ্যযুগীয় সময়ে যখন ধর্মীয় রীতিনিতিগুলো,
আচার- আচরনগুলো প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে, তখন
ধর্মের সাথে স্যেকুলারিজমের অলিখিত এক পরাজয় ঘটে।
বহুযুগ দাপটের সাথে ধর্মীয় চিন্তা চেতনার ডমিনিটেড রূপ
দেখা যায়। শিল্প, সাহিত্য আর বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার
সাথে সাথে স্যেকুলার চিন্তার অভাবনীয় জোয়ার দেখা
শুরু হয়, একই সাথে ধীরে ধীরে এই ধর্মীয় চিন্তা চেতনা
স্যেকুলার চিন্তা চেতনার কাছে হারতে শুরু করে।
পলিটিকস সবসময়ই মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে
বহু কাজ সেরে নেয়। পাওয়ার গেইনের টুল হিসেবে
এতদিন যে আবেগ ধর্ম দিয়ে ছিল, তা এখন জাতীয়তাবাদ,
দেশীয় চেতনা, দেশপ্রেমের আবেগের। ধর্ম দিয়ে একটা সময়
দুটি দেশ বিভক্ত হয়ে যেত, আর এখন জাতীয়বাদের কথা
বলে ব্যবসায়ীরা বিশ্ব রাজনীতির পটভুমিতে চলে আসে।
জাতীয়বাদের চেতনা এই উপমহাদেশে খুব ভাল জায়গায়
পৌছানোর আগেই জার্মানিরা আয়ত্বে নিয়ে আসে। সেই
আগে থেকেই তাদের শিল্প সাহিত্যের বিকাশ ঘটতে থাকে,
ফলে জাতীয়তাবোধের ট্যুল তারা আগেই ধারন করে। যদিও
তা জেনারালাইজড করে বলা যাবেনা, তবুও এই ট্যুলকে
দিয়েই বিশাল এক মহাপ্রলয় ঘটে বিশ্বে।
যেই ট্রেন্ডে এখন বাংলাদেশ চলছে তাতে প্রগতিশীল হতে
হলে আমাদের স্যেকুলার হতে হয়, আমাদের ইনার মাইন্ডে
ধর্মীয় বীজকে উপড়ে ফেলতে হয়, আমরা ধর্ম নয় দেশকে
বিলং করি আগে। আর ঠিক একই ভাবে ধর্মীয় চিন্তা
চেতনার মানুষগুলো জাতীয় চিন্তা চেতনাকে উপড়ে
ফেলে দিয়ে, দেশের সংস্কৃতি, জাতীয়তাবোধকে তুচ্ছ
ভেবে ধর্মকে বিলং করি আগে। ফলে দুভাগে বিভক্ত এই
জাতি সমাজ একই দেশে থেকেও, একই ধর্মীয় রীতিনীতি
মেনে চলেও একই চিন্তা চেতনার হয়ে উঠতে পারিনি।
সেই বহুকালের পুরনো দন্ধে বিভক্তিতে পড়ে আমাদের
মাঝে দেয়াল তৈরী হচ্ছে। যার উদাহারন আমাদের
চায়ের কাপের আড্ডায় যেখানে আমরা "মোল্লা", "মুন্সী",
ইত্যাদি শব্দগুলো কেন জানি খুব একটা ভাল শুনা যায়
এমন "টোন"এ বলিনা। আবার অন্যদিকে দেশের জাতীয়
দিবসগুলো, শহীদদের স্মরনে ফুল, ভাস্কর, আমাদের
নববর্ষ উদযাপন ইত্যাদি সবকিছুকে বিদআতি, নাপাকী,
হারাম বলে ফেলি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পর থেকে আমরা আরো বিপাকে!
"রাজাকার" আর "নাস্তিক" শব্দদুটির বহুল ব্যবহার আর
প্রচলনের মাঝে পিষ্ঠ হয়ে আমাদের মন খুলে কথা বলার
পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। আমরা প্রচন্ড এক্সট্রিম। মাঝামাঝি
কোন জায়গায় থাকা যায় না। ফলে এই দান্ধিক অবস্থা
আরো তীব্র হয়ে উঠছে। এর থেকে বের হওয়া যাচ্ছেনা।
আমরা প্রচন্ড সংকটে আছি। ভয়াবহ রকমের সংকট!
ভ্যাপসা গরমের অনুভূতির মত সংকট!
এই সংকটের মুক্তি কোথায়??
(ভুল হলে ক্ষমা করবেন। কমেন্ট বক্স খোলা রয়েছে)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:১৯