দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার মধ্য বাসুদেবপুর গ্রামে (চুড়িপট্টি) কোলের শিশু ফিরোজকে বিক্রি করার দুই দিন পর আজ সোমবার তার মাদকাসক্ত মা-বাবার খোঁজ পাওয়া গেছে।
আজ সকালে উপজেলার মধ্য বাসুদেবপুর এলাকায় ফিরোজের বাবা মহসিন চৌধুরী (৪৫) ও মা ফিরোজা বেগমের (২৬) খোঁজ পাওয়া যায়। গত শনিবার বিকেলে ওই মাদকাসক্ত মা-বাবা নেশার টাকা জোগাড় করতে না পেরে এক হাজার ১০১ টাকা ও দুটি শাড়ির বিনিময়ে এক হিজড়ার কাছে কোলের শিশু ফিরোজকে বিক্রি করে দেন। তাঁদের বাড়ি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার চণ্ডিপুর গ্রামে।
ফিরোজের বাবা মহসিন চৌধুরী বলেন, ‘দুই বছর আগে পার্বতীপুরে প্রতিবেশী আরিফের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। কিছুদিন পরই আরিফের পাল্লায় পড়ে হেরোইনের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ি। আরিফ যে হেরোইনসহ অনেক নেশা করত, তা আগে বুঝতে পারিনি। যখন বুঝলাম, তখন আর ফিরে আসার পথ নেই। আমার পাশাপাশি স্ত্রী ফিরোজাও হেরোইন নেওয়া শুরু করে। আমরা দুজনই হেরোইনের কঠিন নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ি।’
মহসিন আরও বলেন, ‘স্ত্রী ফিরোজা বেগমসহ প্রতিদিন হিলি সীমান্তের এপারে-ওপারে প্লাস্টিক ও কাচের বোতল, ভাঙাচোরা লোহা খুঁজে এনে তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি। এতে আমরা দুই-তিন শ টাকা রোজগার করি। আবার কোনোদিন ১০০ টাকাও হয় না। কখনো স্ত্রী ফিরোজা কোলের ছেলেকে নিয়ে এলাকায় ভিক্ষা করে কামাই করে। এভাবে চলতে চলতে যেখানে রাত হয়, সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ি। প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে হেরোইন খেতে ২০০ টাকা লাগে।’ চুড়িপট্টির কিছু বাড়ি থেকে হেরোইন কিনে খান বলেও জানান তাঁরা।
ওই শিশুর মা ফিরোজা বেগম বলেন, ‘ছয় বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর আমাদের জীবন ভালোই কাটছিল। স্বামী হেরোইনে আসক্ত হয়ে পড়লে আমিও অসহায় হয়ে হেরোইন নেওয়া শুরু করি। কয়েক দিন ধরে দুজনই নেশার টাকা জোগাড় করতে পারছিলাম না। তাই নেশার তাড়নায় কিছু টাকা নিয়ে কোলের সন্তানকে হিজড়া দুলালির কাছে বিক্রি করি। নেশার জ্বালায় কী করেছি, জানি না। এখন আমাদের ছেলেকে ফেরত চাই।’
মধ্য বাসুদেব গ্রামের হিজড়া দুলালি বলেন, ‘তাঁরা হেরোইন খাওয়ার টাকা না পেয়ে আমার কাছে বাচ্চাটি এক হাজার ১০১ টাকা ও দুটি শাড়ির বিনিময়ে বিক্রি করেন। আমার বড় বোনের কোনো ছেলেমেয়ে না থাকায় আমি বাচ্চাটি কিনে নিয়েছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজাহারুল ইসলাম প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, শিশুটির মা-বাবার খোঁজ পাওয়া গেছে। তাঁরা দুজনই হেরোইনে আসক্ত। কেন তাঁরা বাচ্চা বিক্রি করেছেন, তা জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গতকাল রোববার ওই হিজড়ার কাছ থেকে বাচ্চাটি উদ্ধার করে স্থানীয় এক নিঃসন্তান দম্পতিকে আপাতত লালন-পালনের জন্য দেওয়া হয়েছে। তবে বাচ্চার মা-বাবা মাদকাসক্ত হওয়ায় অন্য কোথাও তাকে লালন-পালনের দায়িত্ব দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আজ ‘প্রথম আলো’তে ‘মাদক কিনতে কোলের শিশুকে বিক্রি করলেন মাদকাসক্ত বাবা-মা!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়
View this link View this link