"বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, বানিজ্য মন্ত্রনালয় হতে আলোচ্য প্রতিষ্ঠানের অবৈধ কার্যক্রমের অভিযোগ সম্পর্কে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কতৃপক্ষকে অনুরোধ কড়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক হতে ইতোপূর্বে আলোচ্য প্রতিষ্ঠানটির নাম উল্লেখ করে জানানো হয় যে, এ সকল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক "ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১" এর আওতায় ব্যবস্থা গ্রহনের সুযোগ নেই। তবে, এদের ব্যবসা প্রতারনামূলক ও জনস্বার্থের হানিকর বলে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ বাঞ্চনীয়। এ বিষয়ে বানিজ্য মন্ত্রনালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে বলে প্রতীয়মান হয়।"
অর্থ মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব জনাব মোঃ রিজওয়ানুল হুদা (ফোন: ৭১৬১৫৫৮) স্বাক্ষরিত এই পত্রের পরিপেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়দ্বয় ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের অবৈধ কার্যক্রমের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
ইতিপূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংক এর ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে গত ০১-১২-২০১১ তারিখ বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক জনাব কে, এম আব্দুল ওয়াদুদ (ফোন: ৭১১৭৮২৫) স্বাক্ষরিত বিআরপিডি/নীতি-৪/৭৬২/২০১১-৪৫৬৮ নং পত্রবলে অর্থ মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবরে "মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি ডেসটিনি ২০০০ লিঃ এর অবৈধ কর্মকান্ড প্রসঙ্গে শিরোনামে পাঠানো পত্রে বলা হয়: "মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানি ডেসটিনি ২০০০ লিঃ এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল থেকে অবৈধ কর্মকান্ডের অবিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে। উল্লেখ্য হে, ইতোপূর্বে প্রতিষ্ঠানটির প্রতারনামূলক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অত্র বিভাগ হতে নিম্ন বর্ণিত পত্রগুলীয়র (কপি সংযুক্ত) মাধ্যমে আপনাদের অনুরোধ কড়া হয়েছিল :
ক) সুত্র নং বিআরপিডি(পি)৭৬০/২৯/২০০২-৩৭১৫, তাং ১৯-১০-২০০২
খ) সুত্র নং বিআরপিডি(পি)৭৬০/২৯/২০০৪-৩৫২৯, তাং ০৯-০৯-২০০৪
গ) সুত্র নং বিআরপিডি(পি)৭৬০/২৯/২০০৪-৫৭৬৫, তাং ২৩-১২-২০০৪
অত্র বিভাগের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আপনাদের ৭/৪/২০০৫ তারিখের পত্রের মাধ্যমে আলোচ্য প্রতিষ্ঠানসহ আরও ০২টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বানিজ্য মন্ত্রনালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে অনুরোধ জানানো হয়।
এমতাবস্থায়, বানিজ্য মন্ত্রনালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এর মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রতিষ্ঠানটির অবৈধ কার্যক্রম বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আপনাদেরকে পুনরায় অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।"
বাংলাদেশ ব্যাংক এর এই পত্রটি গত ০৮-১২-২০১১ তারিখ যুগ্ম সচিব (ব্যাংকিং প্রশাসন ও বীমা) এর দপ্তর ৩৪৫ স্মারকে গ্রহণ করে।
অর্থ মন্ত্রনালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গত ২৮-১২-২০১১ তারিখ স্মারক নং ৫৩.০০৯.০৩৫.০০.০০৫.২০১১-২৫৭ উল্লেখিত পত্র পাঠানোর পর থেকেই ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড রক্ষায় ঝাপিয়ে পড়েছেন সাবেক সেনা প্রধান লেঃ জেঃ হারুন আর রশিদ। তিনি তাঁর নিজস্ব প্রভাব খাটিয়ে এবং সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের প্রভাব খাটিয়ে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের অবৈধ কার্যক্রম ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এর পাশাপাশি ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড-এর ভেতরকার কিছু সুত্র দাবি করছে যে, তাদের প্রতিষ্ঠানের মূল ব্যক্তি মোঃ রফিকুল আমিন নাকি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে পদ্মা সেতু প্রকল্পে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়ার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে ডেসটিনি'র ৪৮ লাখ কর্মী বাহিনীকে আওয়ামিলীগের পক্ষে কাজ করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড এর বিরুদ্ধে যেনো মন্ত্রনালয় বা সরকার কোনো ব্যবস্থা না নেয়, সেই প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন। কয়েকদিন আগে, ঢাকায় মুক্তি যুদ্ধাদের একটি অনুষ্ঠানে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড ৩ কোটি টাকার চাঁদা দিয়ে স্পন্সর হয়। এর পাশাপাশি এরা প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়েমা ওয়াজেদ পুতুলকে খুশি করতে অটিস্টিক ফাউনডেশনকেও ১ কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছে। এরও আগে, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে দিয়েছে ৩ কোটি টাকা অনুদান।
কিন্তু ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন লিমিটেড, যার চেয়ারম্যান হলেন খোদ লেঃ জেঃ হারুন, এরা ভুঁয়া গাছ প্রকল্প দেখিয়ে জনগনের কাছ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ডেসটিনির দাবি, ২০১২ সনের মধ্যেই নাকি ৬ কোটি গাছ লাগানো হবে এবং ২০১১ সন পর্যন্ত নাকি ৪ কোটি গাছ রোপন সম্পন্ন হয়েছে। অথচ, প্রকৃতপক্ষে ছয় বা চার কোটি গাছ তো দুরের কথা, ডেসটিনির এই প্রকল্পে অধীনে এক লাখ গাছ ও নেই। এই গনপ্রতানরা চলছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগায়। আর এসব সামাল দিচ্ছেন খোদ জেনারেল হারুন এবং তার বাহিনী।
ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড আরও কিছু ভুয়া প্রকল্প দেখিতে জনগনের কাছ থেকে শত-শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম, বেস্ট এয়ার (যা অস্তিত্ববিহীন বেসরকারী বিমান প্রতিষ্ঠান), ডেসটিনি লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ডেসটিনি মেডিক্যাল কলেজ, ডেসটিনি অটোমোবাইল (অস্তিত্ববিহীন গাড়ি সংযোজন কারখানা), সারা দেশে ডেসটিনি'র তথাকথিত বহুতল ভবন প্রকল্প, আবাসন প্রকল্প, বানিজ্যিক ভবন ইত্যাদি। দেশের সাধারণ মানুষ বিশেষ করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা যখন শেয়ার বাজারে সর্বস্ব হারিয়ে রীতিমত নাকানি-চুবানি খাচ্ছেন, তখন ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড-এর মতো একটা ফটকাবাজ প্রতিষ্ঠানকে কেনো এখনো চলতে দেয়া হচ্ছে, এবং কি কারনে এদের বিরুদ্ধে কর আইনানুগ ব্যবস্থা এখন নেয়া হয়নি, তা যথেষ্ট রহস্যজনক
View this link