অনেক দিন আগের সেই কৈশর কালের কথা । আমার একটি সাইকেল ছিল । তখন জামাল পুরে থাকতাম । ছিলাম দুরন্ত । দুরন্তপনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল আমার সাইকেল । আমি আর আমার বন্ধু রানা জামালপুর শহরটাকে চষে বেড়িয়েছি দুজনের দুটি সাইকেল নিয়ে । ডিসির বাংলোর পিছন থেকে বন্যার সময় উত্তাল ব্রম্মপুত্রে ঝাপ দিতাম, শ্রোতের সাথে ভেসে যেতাম অনেক দুর !! থাকতাম মিয়া পাড়ায় পচা মেম্বারের বাড়ীতে । আশে পাশের নয়া পাড়া, মাঝি পাড়া, কষাই বাড়ী, বাজারী পাড়ার সকল দুষ্ট ছেলেরা ছিল আমার বন্ধু । সবাই আশা করত আমার সাইকেলটি একটু চড়তে । জামালপুর হাইস্কুল থেকে ৮৭ সালে অষ্টম শ্রেণী পাশ করার পর চলে এলাম কুমিল্লায় । সবাইকে কথা দিয়েছিলাম আবার আসব । কিন্তু আর যাওয়া হল না । বর্তমানে আমেরিকায় । জানিনা আর কোনদিন আমার শৈশব কৈশরের সেই লীলাভূমিকে দেখার সাধ্য হয় কিনা ।
আমার ফুফাতো ভাই ট্রেনের র্গাড । তার ট্রেনে করেই আমাদের বাসার সকল আসবাব পত্র কুমিল্লায় নিয়ে আসা হবে । মালামাল আসার এক সপ্তাহ আগেই আমরা কুমিল্লা চলে এলাম । কুমিল্লা এসেই নতুন বন্ধু বান্ধর রেডি । তাদেরকে বললাম আগামিকাল আমার সাইকেল আসছে ট্রেনে করে । আমার সাথে কে যাবি চল, রেল ষ্টেশন থেকে সাইকেল চালিয়ে নিয়ে আসব । দুই বন্ধু রাজি হয়ে গেল । রেল ষ্টেশন আমার বাড়ী থেকে তিন মাইল দুরে । ট্রেন আসবে বিকাল পাঁচটায় । আমরা তিন জনা পায়ে হেটে বিকাল পাঁচটার আগেই ষ্টেশনে হাজির ।
কিন্তু হায়, পাচটা কেন? সাতটা আটটা বেজে গেল ট্রেন আর আসে না । আমরা বার বার ষ্টেশন মাষ্টারকে জিগ্ঞেস করি ট্রেন কখন আসবে ?
মাষ্টার বলল, রাত এগারোটার দিকে আসবে । তখন রাত দশটা বাজে । এদিকে গ্রাম এলাকায় রাত দশটা মানে অনেক রাত । তবুও আমরা থেকে গেলাম, এগারোটার সময় ট্রেন আসলে সাইকেল নিয়েই বাড়ী যাব ।
কিন্তু হায় ! এগারোটার সময়ও ট্রেন আসল না । অগত্যা আমরা বাড়ী ফেরার সিদ্ধান্ত নিলাম । রাস্তা ঘাটে একজনও জন মানব নেই । আমাদেরকে বাড়ী ফিরতে হবে । আমরা ভয়ে ভয়ে বাড়ীর দিকে রওয়ানা হলাম । পথে একটা পুরাতন ব্রীজ আছে নাম হিন্দুরীর পুল । পুলের পাশেই একটি চিতাখলা (যেখানে হিন্দুদের পোড়ানো হয়) । ব্রীজের দুই দিকে আধা মাইল পর্যন্ত কোন বাড়ী ঘড় নাই । এমনিতেই গা ছমছম করে । এই রাস্তা দিয়েই আমাদের যেতে হবে । চারি দিক অন্ধকার ।আল্লাহর নাম জপতে জপতে আমরা যখন ব্রীজের কাছাকাছি, তখন রাত বারোটা । হঠাৎ দেখি বিশাল লম্বা এক লোক রাস্তায় শুয়ে আছে । আমরা তিনজনেই জড়িয়ে ধরে ভয়ে কাপতে থাকি ।
হঠাৎ উল্টো দিকে দৌড় আর চিৎকার । দৌড়াতে দৌড়াতে আধা মাইল পিছনে যখন বাড়ী ঘড়ের পৌছালাম, আমাদের চিৎকারে লোকজন ঘড় থেকে বেরিয়ে এল । সবাই আমাদের শান্ত করাল, তারপর তাদেরকে ঘটনা বললাম ।
আট দশজন লোক হাড়িকেন নিয়ে আমাদেরকে ব্রীজ পাড় করে দিতে আসল । আমরা পিছনে হাড়িকেন নিয়ে সামনে লোক গুলো ব্রীজের কাছে গিয়ে কিছুই দেখতে পেল না । আমাদেরকে বলল কোথায় কি দেখেছ। আমরা ব্রীজের কাছে গিয়ে দেখি অনেক বড় একটা গাছের গুড়ি রাস্তার পাশে কেটে ফেলে রেখেছে । আমরা তখন আমাদের ভূল বুঝতে পেরে চুপ করে থাকি । লোক গুলো আমাদেরকে বাড়ী পর্যন্ত দিয়ে আসে ।
তাই বলি, বনের বাঘে খায় না মনের বাঘে খায় ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:০২