মানুষের ব্যক্তিত্বই আনে তার সকল গুণের পূর্ণতা। আর তা আসলে অনেকাংশেই নির্ভর করে তার নিজেকে উপস্থাপন করার ধরণ, তার অঙ্গভঙ্গি, কথা বলার ভঙ্গিমা, সবার মনোযোগ আকর্ষণের ক্ষমতা এসবের উপরে, বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাথে বা বসের সামনে, সেমিনার বা ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনার উপস্থাপনের ধরণের কারণে সবার মনোযোগ আপনার প্রতি আকৃষ্ট হবে স্বভাবতই। আবার আপনার আচরণের সামান্য একটু পরিবর্তনও চারপাশের পরিবেশে অনেক বড় প্রভাব ফেলতে পারে। আর তাই আপনার আচরণে বা অঙ্গভঙ্গিতে যে কোন পরিবর্তন আনার আগে আপনার নিজেকে আগে নিজের সম্পর্কে অবগত হতে হবে। নিজের দৃষ্টিভঙ্গীকে বদলে দিন কিছুটা, আর নিজের মাঝে রাখুন আত্মবিশ্বাস।
তবে এজন্য নিজেকে তৈরী করে নেয়ার জন্য নিজের আচরণে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারলে তা আপনার যোগাযোগের দক্ষতাকে বাড়িয়ে দেবে অনেকখানিই। আর এজন্য যত্নশীল হোন আর ব্যস্ততার মাঝে থেকেই কিছুটা মনোযোগ দিন আপনার নিজের প্রতি।
মনোযোগ দিন উপস্থাপনের প্রতি :
উপস্থাপনে একটুখানি বৈচিত্রটা পারে মানুষের ব্যক্তিত্বের অনেকখানি পূর্ণতা এনে দিতে। একটুখানি সময়োপযোগী পোষাক, পরিচ্ছন্নতা, হালকা সুগন্ধীর ব্যবহারে আপনার পরিপাট্যতা কেবল অন্যের চোখেই না আপনার নিজের চোখেও নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। সকালে অফিসে যাবার আগে ১০ মিনিট বেশী ব্যয় করুন নিজের পেছনে। দৃষ্টিনন্দন আকর্ষনীয় আর আত্মবিশ্বাসী ভাব ফুটে উঠবে আপনার কথায়, আচরণে যা প্রভাব ফেলবে আপনার কর্মক্ষেত্রেও।
কথা বলুন চোখে চোখ রেখে :
চোখে চোখ রেখে কথা বলার চেষ্টা করুন। কিন্ত চোখের দৃষ্টি হবে অবশ্যই নম্র এবং বিনীত। কথা বলার সময় সম্পূর্ণ মনোযোগ রাখুন সামনের শ্রোতার দিকে। কারণ আপনার সামান্যতম ভুলও সামনের শ্রোতাকে বিভ্রান্ত করে দিতে পারে। লাজুক স্বভাবের হলে চোখে চোখ রাখাটা প্রথম প্রথম একটু কঠিন মনে হলেও, নিয়মিত হালকা অনুশীলনে তা রপ্ত করে ফেলাটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
আচরণে ও অঙ্গভঙ্গীতে নিয়ে আসুন আত্মবিশ্বাস :
আপনার প্রতিটি আচরণে, পদক্ষেপে রাখুন আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া। চলাফেরার সময় মাথা উঁচু রাখুন, কাঁধ ও মেরুদন্ড সোজা রেখে চলুন। কোন কারণে নার্ভাস হয়ে গেলে কাঁধদুটোকে হালকা ঝাকুনি দিয়ে শিথিল করে সহজ করে নিন নিজেকে।
কথা বলার সময় মুখে কোন স্পর্শ করবেন না :
কারো সামনে কথা বলার সময় কখনোই হাত দিয়ে মুখে স্পর্শ করবেন না, বিশেষ করে বার বার মুখ মোছা, চুল সরানো এসব অভ্যাস যথাসম্ভব পরিত্যাগ করা উচিত। কারণ, শ্রোতার মনোযোগ বা আগ্রহ কমিয়ে বিরক্তির উদ্রোক করতে পারে এমন অভ্যাস।
পরিমার্জিত আচরণ ও ব্যবহার :
চলাফেরায় ধীরস্থিরতা বজায় রাখুন, কথা যথাসম্ভব চেষ্টা করুন অল্পকথায় শেষ করতে। সবসময় সোজা হয়ে বসুন। কাউকে কোন কিছুর নির্দেশনা দেয়ার সময় তাড়াহুড়ো না করে চেষ্টা করুন ধীরে-সুস্থে বুঝিয়ে দিতে। এতে সহজেই অন্যের আস্থা ও নির্ভরযোগ্যতা অর্জন করা সম্ভব।
দক্ষতা বাড়ান আপনার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুটিতে :
ভাষা, পড়াশোনা বা প্রযুক্তি, যেখানেই আপনার আগ্রহ থাকুক না কেন, দক্ষতা বাড়ান, আপনার পেশাদারী আত্মবিশ্বাসে একটি নতুন শাখা সংযোজন হবে নিঃসন্দেহেই।
শ্রোতার মনোযোগ আকর্ষণে হাত ব্যবহার করতে পারেন :
কারো সাথে কোন বিষয়ে আলোচনা করার সময় হাত কচলানো, মুখ ঘষা এসব অস্থিরতা দূর করতে হাত দুটোর সদ্ব্যবহারে মনোযোগ দিন। আপনার মতামত বা অভিব্যক্তির স্বচ্ছ ধারণা দিতে হাত ব্যবহার করতে পারেন তবে তা হবে পরিমিত। অতিরিক্ত হাতের ব্যবহার বিরক্তির কারণ যাতে না হয়ে ওঠে।
অবস্থানের দূরত্ব :
কারো সাথে কথা বলবার সময় মনোযোগ রাখুন আপনার অবস্থানের দূরত্বের প্রতি। ব্যবধান যাতে খুব কমও না হয় আবার খুব বেশিও না হয়। যাতে আপনার কথা-বার্তা অপরপাশের মানুষটির বোধগম্য হয় সহজেই।
নিজের ব্যাপারে নেতিবাচক কথা বলবেন না :
নিজের নেতিবাচক দিকগুলো কখনোই কর্মস্থলে না বলাটাই ভালো। বরং নিজের ইতিবাচক দিকগুলো প্রকাশ করুন, এতে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে আবার সহকর্মী বা বসের কাছেও আপনি আদৃত হবেন।
আয়নার ব্যবহার :
আপনার অঙ্গভঙ্গি বা আচরণ পরিবর্তনে আপনি সাহায্য নিতে পারেন আয়নার। রোজ কিছুটা সময় আয়নার সামনে দৃঢ়ভাবে কথা বলার অভ্যাস করতে পারেন। আবার ঘনিষ্ট বন্ধু কারো সাথে সময় কাটানোর সময় একে অপরের জন্য অনেকটা আয়নার মতোই কাজ করে। সেসময়ও নিজের মধ্যকার ভুল-ত্রুটিগুলো সংশোধন করে নিতে পারেন খুব সহজেই। বৃদ্ধি করুন নিজের উপর আস্থা ও বিশ্বাস। আর হয়ে উঠুন সবার চেয়ে আলাদা, পরিপাটি।