কিনে দে রেশমি চুড়ি
নইলে যাবো বাপের বাড়ি
দিবি বলে কাল কাটালি
জানি তোর জারিজুরি।
হ্যাঁ, বাংলার নারীদের কাছে চুড়ির কদর সেই প্রাচীনকাল থেকেই,সাজগোজের সময় দুহাত ভরতি করে চুড়ি না পরতে পারলে সাজটাই যেন অসম্পূর্ণ রয়ে যেত।চুড়ি যে নারীর সৌন্দর্য অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয় এতে কোনও সন্দেহ নেই। আর বিশেষ করে যেকোন উৎসব আয়োজনের দিন জমকালো সাজের সঙ্গে একগুচ্ছ চুড়ি যেন না পড়লেই নয়!একটা সময় ছিল যখন যুবকের মনে কাঁপন তুলতো চুড়ির রিনিঝিনি রিনিঝিনি শব্দ।আর সেই সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই তো বিদ্রোহী কবি লিখেছিলেন-
'আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা,
তার কাঁকন চুড়ির কনকন'।
রেশমি চুড়ির ইতিহাস প্রায় একশ বছর আগের। তখন সম্ভ্রান্ত জমিদার ও নবাব পরিবারের নারীদের হাতে রেশমি চুড়ি থাকাটা ছিল অবধারিত। এখনো সেই রেশমি চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ আমাদের মনে দোলা দিয়ে যায়।তবে নতুন প্রজন্মের নারীদের কাছেও চুড়ি সমানভাবেই সমাদৃত।
এখন যুগ পাল্টেছে আর সেই সাথে পাল্টেছে চুড়ির ধরনও, রেশমী চুড়ির পাশাপাশি সমান ভাবে জায়গা করে নিয়েছে কাঠ, মেটাল আর প্লাস্টিক আর মাটির চুড়িও।কারণ এগুলো প্রচলিত ধারার বাইরে এসে চুড়ির বৈচিত্র্য বাড়িয়ে দিয়েছে। আড়ং, রঙ, বিবিয়ানা, ক্রে-ক্র্যাফট, যাত্রা, গ্রামীণ ছাড়াও প্রায় সব ফ্যাশন হাউসেই এ ধরণের চুড়ি পাওয়া যায়। এছাড়াও শপিংমলের কাঁচের আলমারির পাশাপাশি ফুটপাতের ছোটখাট দোকান গুলোতেও থরে থরে সাজিয়ে রাখা এসব চুড়ি খুব গর্বের সাথেই নজর কেড়ে নেয় ললনাদের।
নকশা ও মানের সাথে এ সব চুড়ির দাম কমবেশি হলেও মোটামুটিভাবে ৭০-১০০ টাকায় পাওয়া যাবে একমুঠি চুড়ি। প্রতি মুঠিতে চুড়ি থাকবে ৪২ টি করে। মুঠি ছাড়াও সেট হিসেবে চুড়ি পাওয়া যাবে তবে সেক্ষেত্রে যথাক্রমে সেট প্রতি ২০০-২৫০ টাকা গুনতে হবে।আবার রেশমী চুড়ির দাম তুলনামূলক ভাবে কম।একটু ভালো মানের এক ডজন চুড়ির দাম পড়বে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। আর মেটালের চুড়ির ক্ষেত্রে মেটালের সেট চুড়িগুলোতে চিকন-মোটা মিলিয়ে দুই ডজন চুড়ি থাকে। এগুলো এক সেট পরলেই হাত ভরে যায়। রঙ, মান এবং নকশার ওপর ভিত্তি করে দাম পড়বে ৪০ থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত। তবে মেটালের সব চুড়িতে জরি-চুমকি দিয়ে নকশা করা থাকে, তাই এসব চুড়িতে পানি না লাগালেই ভালো।আর তাছাড়া আজকাল অক্সিডাইসের চুড়ি পরাও লক্ষ্য করা যায়।সরু ও মোটা কালচে ধাতুর এসব চুড়ির দামও হাতের নাগালের মধ্যেই।আর হাল ফ্যাশনের চুড়ির মধ্যে আলাদা করে বলতে হয় জয়পুরী চুড়ির কথা। হালকা মেটাল, কাঁচ ও মাটির মিশ্রণে তৈরি জয়পুরী চুড়ি এখন অনেক জনপ্রিয়।নকশাভেদে এসব চুড়ির দাম পড়বে প্রতি জোড়া ১৪০-৮০০ টাকা।
চুড়ি পরার প্রচলন মূলত শাড়ি বা লেহেঙ্গার সাথে হলেও আজকার ফতুয়া, লংস্কার্ট বা সালোয়ার কামিজের সাথেও তরুণীদের চুড়ি পরার প্রবণতা লক্ষ করা যায়।তবে সেটা হতে হবে অবশ্যই পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যাতে মানিয়ে যায়।আর তাই প্রতিটি উৎসবে-পার্বণে বর্ণিল সাজের সাথে মানানসই চুড়ি পরে সাজিয়ে নিন নিজেকে আর হয়ে উঠুন আরো বেশি আকর্ষনীয়।