প্রতিবারের মত আজও শপিং মলে গিয়ে এদোকান ওদোকান ঘুরে দেখার সময় অজান্তেই রশনীর চোখ চলে যায় প্রীতিলতা জুয়েলার্সের দিকে।লাল রঙের বাক্সটাতে আগের মতই সগৌরবে তার দিকে মিটমিট করে তাকিয়ে আছে সেই হীরের আংটিটা।যেন তাকে ব্যাঙ্গ করছে।আনমনে একপা একপা করে কখন যে সে দোকানের দিকে চলে যায় নিজেও বুঝতে পারেনা।তার ঘোর কাটে রাজনের ডাকে।
-রশনী তুমি এখানে কি করো?? আমি তোমাকে সেই কখন থেকে খুজছি।এই নাও তোমার ফুলদানিটা।দিয়ে দিয়েছে ঐ দামেই।
-তুমি আনলে কেন??ঐ লোকটা আস্ত একটা বদের হাড্ডি।আমি অন্য দোকান থেকে কিনে নিতাম।
-আহা!অন্য দোকানেতো এই ফুলদানিটা নাও থাকতে পারতো।আর দিয়েই তো দিয়েছে।এখন বাদ দাও তো।চল ফুসকা খাই।
-হুম চল।
নিচতলায় একটা ফুসকার দোকানে গিয়ে ঝাল বেশি দিয়ে দু প্লেট ফুসকার অর্ডার দেয় তারা।রাজন কপাকপ একটার পর একটা ফুসকা গিলছে।তাকে দেখে রশনীর বিয়ের আগের সময়ের কথা মনে পড়ে যায়।তখন তো রাজন ঝাল খেতেই পারতোনা।রশনীর পাল্লায় পরে খেতো আর চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকতো।তা দেখে রশনীর সে কি হাসি।মনে পড়তেই হেসে ফেলে রশনী।
-কি ব্যাপার??খাওয়ার মাঝে এমন পাগলের মতো হাসছ কেন??কি হয়েছে?
-নাহ কিছুই না।এমনিই।
-ওকে।তা ম্যাডাম আপনার খাওয়াটা দয়া করে কি তাড়াতাড়ি শেষ করবেন??১০ টা বাজে।আজকে কি বাসায় যাবেন না??
-হুম যাবোতো।
-তোমার কি মন খারাপ??
-না মানে......বাবা মার কথা খুব মনে পরছে রাজন।
-হুম আমি বুঝতে পারছি রশনী।আমার মাথায় একটা প্লান এসেছে।চলো আজকে আমরা রিকসায় করে ঘুরি।অনেক মজা হবে।
বের হয়েই একটা রিকসা ডাকলো রাজন।বাতাসে রশনীর খোলা চুলগুলো উড়ে এসে পরছে রাজনের মুখে।রাজন ইচ্ছে করেই সরাচ্ছেনা।ওর ভালই লাগছে।আড়চোখে তাকায় একবার সে রশনীর দিকে। স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে ওর মন খারাপ।৬ মাস হলো ওরা বিয়ে করেছে।সেম এজ হওয়াতে কারো পরিবারই বিয়েটাকে মেনে নেয়নি।
তাই নিজেরাই বিয়ে করেছে।ছোট একটা ২ রুমের বাসা নিয়েছে।রাজন একটা জব করছে।দুজনের ভালই চলে যায়।মেয়েটা খুব চাপা স্বভাবের।কখনই কিছু চায়না ওর কাছে।
আজকে ওর জন্মদিন ছিলো।রাজন এতোবার করে জিগেস করলো যে ওর কি লাগবে কিন্তু সে বললই না।তাই আজকে সে নিজেই জোর করে একটা সুন্দর শাড়ি কিনে দিয়েছে রশনীকে।কিন্তু আজকে সে একটা জিনিস খেয়াল করেছে।রশনী প্রায়ই ঐ দোকানটার সামনে গিয়ে কি যেন দেখে।পরে সে বুঝতে পেরেছে যে ঐ হীরের আংটিটা।রশনীকে ফুসকার দোকানে পাঠিয়ে দিয়ে সে কৌশলে দামটাও দেখে নিয়েছে। বাষট্টি হাজার সাতশো টাকা।রাজনের মতো ছোটখাটো জব করা মানুষের কাছে এটা অনেক বড় অঙ্কের টাকা।তারপরও সে ডিসিশান নিয়ে ফেলে যে সামনের বিবাহবার্ষিকীতে যেভাবেই হোক সে রশনীকে ঐটা গিফট করবে।তখনকার রশনীর হাসিমুখটা ভেবে ভালোলাগায় ভরে গেলো তার মনটা।
৬ মাস পর-
বিবাহবার্ষিকী আসতে আর ১ দিন বাকি।রাজন এর মধ্যেই বেশকিছু টাকা জমিয়ে ফেলেছে।অফিস থেকে কিছু টাকা অগ্রিম নিয়েছে।বাসায় এসেই রশনীকে ডাকলো।
-রশনী শোন তো
-কি?
-আমার সাথে একটু চলো এখুনি।
-কোথায়?
-কাজ আছে একটু।চলো না
-ওকে।৫ মিনিট।
রশনীর নিজের চোখকে বিশ্বাসই হচ্ছেনা।তার অনামিকায় শোভা পাচ্ছে সেই ডায়মন্ডের আংটিটা।বার বার খালি চেয়ে দেখছে আংটিটাকে।খুব খুশি সে আজকে।রাজন তাকে অনেক বড় সারপ্রাইজ দিয়েছে।
-আচ্ছা তুমি কিভাবে জানলে যে আমার এটা ভালো লেগেছিলো??
-আমি তোমার মনের খবর না রাখলে আর কে রাখবে বলো??
-জনাব এর জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধইন্ন্যা।
-থাক হয়েছে।আমার ধইন্যা খেয়ে পেট ভরবেনা।চলো ফুসকা খাই।
-না।আজকে আমিই স্পেশাল কিছু রান্না করবো তোমার জন্য।যাও রিকসা ডাকো।
-যো হুকুম ম্যাডাম
একটা গাড়ির হর্ন আর চিৎকারের শব্দে ফিরে তাকালো রশনী।হাত পা অবশ হয়ে গেলো তার।মাথাটা ঘুরে উঠলো একটু..........
-আপনার স্বামীর পায়ের হাড় ভেঙ্গে গেছে।খুব দ্রুত অপারেশন না করলে আপনার স্বামী পঙ্গু হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে।
-ঠিক আছে ডক্টর আপনি সব ব্যবস্থা করুন।
-ওকে আমরা করছি।আপনি টাকাটা জমা করে ফরম ফিলাপ করে ফেলুন।
-আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছি।
১ মাস পর-
আজকে অনেক দিন পর রাজন আর রশনী বাইরে বের হয়েছে।রাজনের পা এখোনো পুরোপুরি ঠিক হয়নি।একটু একটু খুরিয়ে হাটছে সে।আর রশনীর হাতটা ধরে আছে পরম নির্ভরতায়।এক পশলা বৃষ্টি নামলো,ভিজিয়ে দিলো ২ জনকে।রশনী বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য রাজনকে নিয়ে যেতে চাইলো রাস্তার পাশের ছাউনিতে।কিন্তু রাজন তার হাতটা ধরে বললো,চলোনা আজকে একটু ভিজি।অনেকদিন বৃষ্টিতে ভেজা হয়না।রশনীও আর মানা করলো না।একটু হেসে নীরবে সায় দিলো।বৃষ্টির জনশুন্য রাস্তায় মৃদুস্বরে খুনসুনি করতে করতে হেটে যায় সিক্ত একজোড়া মানব মানবী
শ্রাবণের জলধারায় আজ দুটি মন
হয়ে উঠুক অশান্ত আজ
হয়ে যাক বাধাহীন
আজকে আমি হব গানওয়ালা
ভাসাবো কন্ঠে আজ সুরের ভেলা
সঙ্গী হবে আমার সাথে বৃষ্টি
আর তোমার এই মুগ্ধদৃষ্টি