খবর ১: দোকানে দোকানে সাইনবোর্ড: "প্রবাসী প্রবেশ নিষেধ।"
কারন:
তারা করোনা আক্রান্ত দেশ লক ডাউন হওয়ায় ছুটি পেয়ে/ কাজ হারিয়ে প্রবাস থেকে ফিরে নিজ বাড়িতে এসেছে।
তাই তাদের দোকানে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।
তাদের দোষ:
কেন তারা ফিরে এলো?
ফলাফল:
দোকানে দোকানে প্রবেশ নিষেধ সাইন বোর্ড ঝুলানো।
প্রবাসীদের বাড়িঘর ভাংচোড়।
ব্যাপারটা এমন যেন দেশ থেকে প্রবাসীদের বের করে দাও।
এরা এই দেশের কেউনা।
খবর ২: ২৬ এপ্রিল থেকে সাধারন ছুটি ঘোষনা করেছে সরকার।
কারন:
ঢাকায় করোনা রোগীর লিস্ট বাড়ছে দিনে দিনে। আর করোনার একমাত্র প্রতিকার ঘরে লকডাউ্ন থাকা।
তাই সবাই নিজ নিজ ঘরে থাকবে। বউ বাচ্চা নিয়ে থাকবে। চাচা ভাতিজা নিয়ে থাকবে। পাশের বাড়ির আন্টিদের নিয়ে থাকবে। নিজ দেশ নিজ বাড়ি নিজ আত্নিয় নিজ জাতী তাইলে সমেস্যা কি? আমি থাকবো, আমার বাবায় থাকবে হেতেনের মায়েও থাকবে। পাশের বাড়ির বিলকিসও থাকবে। তো এতজনকে তো একসাথে ঢাকাতে পাবো না।
তাই চলেন নিজ গ্রামে চলি যাই। টিকেন নেন। বাসে - ট্রেনে উঠেন জলদি জলদি।
সেজন্য ঢাকায় থাকা দেশের উত্তর-দক্ষিনের পুর্ব-পশ্চিমের মানুষরা তার নিজ নিজ গ্রামে ফিরে যাচ্ছে। যেতেতু তারাও নিজ জেলা ছেড়ে ঢাকায় থাকতেন তাহলে তাদের নিজ জেলার ঢাকাই ভাড়াতে বলা যায় বা এক কথায় নিজ দেশে নিজে পরবাসী বা প্রবাসীও বলা যেতে পারে।
সে সম্পর্কে আমাদের সে'ফুদা বলেন:
তো - তাদের বাড়িতেও তোরা হামলা কর। ভাংচুর কর। করছ না ক্যান? সমেস্যা কি? শালার হুজুগে-অশিক্ষিত-মুর্খ-গরীব লোকেরা।
ফলাফল: নিজ গ্রামে যেতে যেতে লন্চে-ট্রেনে-বাস-ঘাটে বিশাল মানুষের জমায়েত। নিচের ফটোর মত। আর তারা দিব্য এখন বাসার গিয়ে পাড়ার মোরে মোরে ঘুরে বেরাচ্ছে। অবস্থ্যা এতটাই বেগতিক দেখে সরকার মিলিটারি নামায়ে দিছে। কারন তারা লাঠির বাড়ি না খাইলে ঘরে ফিরবো না। ফিরবো কেন। নিজ দেশ, নিজ গ্রাম, নিজ দোকান আর এত্তদিন পর আইছি। যামু ক্যা? হেেহ।
আর ওদিকে ঢাকার রাস্তা ঘাট ফাকা।
এই সম্পর্কে আমদের বরিশালের জনৈক প্রবাসী বলেন:
তোমরা য্যা ঢাহাত্তন নিজ বাড়িত গেইছো। তও এ্যহন কও ত্তো তোমরাহা পরবাসী ন্যা?
ছুদি পাইছো আর গেছও বুঝোোও না?
খাড়াও আইত আছি দেখব্যা -
বি: দ্র: প্রবাসীরাও আমাদের দেশেরী মানুষ। তাদের আলাদা করে দেখার কিছু নেই। প্রবাসীদের মধ্যে যারা দেশে এসেছেন তাদের বেশীর ভাগই নিন্ম মধ্যবিত্ম শ্রমিক শ্রেনীর। করোনার প্রভাবে প্রবাসের অনেক কোম্পানীই
বেতন ছাড়া ছুটি দিয়ে দিয়েছে বা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
আর প্রবাসে থাকা -্খাওয়ার খরচ কতটা হতে পারে তা অনেকের ধারনার বাইরে। হয়ত যেসব প্রবাসী গিয়েছে তাদের সেসমস্ত খরচের যোগান দেয়া সম্ভব ছিলো না। বা খরচের ভয়েই চলে গিয়ে থাকতে পারে। আপনারা তাদের কোয়ারেন্টাইন আইনের বাধ্যবাধকতা মানাতে বাধ্য করতে পারেন বা চেক করে দেখতে পারেন।
কিন্তু আপনারা যা করলেন তাতে ভবিষ্যতে কোন প্রবাসীর কাছে নতুন একটা মোবাইল বা দরকারী জিনিস বা
টাকা ধার চাওয়ার আগে একটু ভেবে দেখবেন ভাই এটাই কামনা।
আপনারা জানেন না প্রবাস জীবনটা কত কঠিন। কতটা কষ্ট করে একজন শ্রমিক প্রবাসে ইনকাম করে।
তার উপর আছে প্রিয়জন হারানোর বেদনা। কাছে না থাকার বেদনা। ঠান্ডা রুটি ইত্যাদি। সেসব নাই বললাম।
কদিন আগেও আপনাদের কাছে টাকার গাছ আজ এতটা কিভাবে নিচে নেমে গেলো। বুজলাম না।
অনেক প্রবাসি আছেন ভয়ে দেশে আত্মীয়দের কাছে ফোন দেন না। কারন কি জানেন?
ফোন দিলেই -
ঐ তুমি আসার সময়
আমার জন্য এটা নিয়ে এসো ওটা নিয়ে এসো।
আমার ভাস্তির ভাগনির চাচার ঘরের মামার বাড়ির পাশের নানীর মেয়ে জামাইয়ের ছেলের একজন টিচার আছে।
উনি একটা আইফোন চাইছে। তুমি নিয়ে আইসো।
কত আবদার।
সেজন্য অনেকে নিজের কাছের লোক ছাড়া ফোন করেন না। এজন্য না যে জিনিস পত্র দিতে হবে।
বরং এজন্য যে সব আবদারই পুরন করতে ইচ্ছা হয় কিন্তু সাধ্য নাই।
কিন্তু দেশে থেকে আপনারা তা কি বুঝেন? বুঝেন না। বুঝবেন কিভাবে।
এত দিন মুখ দিয়ে যা বলে ছিলেন তাই এনে দেয়া হয়েছে। পুরান হয়ে গেছে ফেলে দিছেন ।
সমস্যা কি বিদেশে তো আছেই। ফোন করে বললেই ব্রান্ড নিউ চলে আসবে।
কিনতু ব্রাদার আপনি কি জানেন ? আপনার হাতে ঐ ব্রান্ড নিউ ফোনটির আবদার মেটাতে একজন
প্রবাসীর কত গুলো সকাল বেলার ঘুম হারাম হইছে?
আর ঢাকায় যারা অন্য ডিস্টিক থেকে এসে থাকেন কর্ম করেন তারাও কিন্তু এক প্রকার প্রবাসী, সেটি ভুলে গেছেন আপনারা সবাই।
আসলে আপনাদের মুল্যবোধের অভাব। আপনারা নিজেকেই নিজেরাই চিনেন না। হুজুগে বনে গেছেন। আবাল বলে গেছেন।
বিদেশের লোকেরা আমাদের আবাল-মুর্খ-কর্মহীন-বেকার আর অবুজ বাংগালী কেন বলে আজ তা বুজলাম।
ভালো থাকবেন।
আর একটা কথা: উপরে ছবিতে (তুই বিছনায় মুতোস) লেখাটা তাদের উৎসর্গ করলাম যারা "প্রবাসীদের প্রবেশ নিষেধ" সাইন বোর্ডটি বানিয়েছে, লাগিয়েছে, বহন করেছে ও হ্যা মত সমর্থন করেছে।
- প্রবাস থেকে - আপনাদের ব্যাবহারে কস্ট পাওয়া - একজন প্রবাসী
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৫৫