কয়েকদিন আগে গাজিপুরে বেড়াতে গিয়ে বাসার পাশের দোকানে চা খেতে গেলাম। হাতে সিগারেট জালিয়ে চা নিয়ে বসেছি, পিছে হেলান দিতেই ঠান্ডা লাগে। পিছে তাকিয়ে দেখি গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে দেয়াল বানানো জায়গায় হেলান দিছি। সিলিন্ডার গুলো পাশের মুদির দোকানের।
এভাবে গাজিপুর মৌচাক মোর থেকে ফুল বাড়িয়ার পর্যন্ত এই রাস্তার প্রায় সব গুলো ছোট বড় দোকানেই সিলিন্ডার বিক্রির বাপারটি চোখে পরেছে। আমি যে দোকানটাতে চা পান করছিলাম সেই দোকানে আমি ছাড়া আরও দুই তিন জন সিগারেট জালিয়ে বসে ছিলো যা খুবি বিপদজনক।
আর এদিকে আমার হাতের জলন্ত সিগারেট আর পিঠ পিছে সিলিন্ডারের দুরত্ব ১ মিটারের কম হওয়া আমি চিৎকার দিয়ে উঠে আমার হাতেরটি নিভিয়ে ফেলি। কিন্তু দু:কের বিষয় হলো - সামনে বসা এক মধ্যবয়সী লোক আমার দিকে লক্ষ্য করে এমন ভাবে তাকালো যেন মনে হলো আমি মারস বা ইউরেনাসের বাসিন্দা।
উনি বল্লেন: এত ভয় পাওয়ার কি ছিলো? আপনি নির্ভয়ে সিগারেট খান। আমরা তো এখানে বসে প্রতিদিন খাই। কিচ্ছু হবে না।
আমার অবস্ত্যা তখন "নো কমেন্ট" সাইনবোর্ড - যা ঝুলানো ছাড়া আর কোন উপায় নাই।
তারাতারি চা পান করে দ্রুত দোকান ত্যাগ করাই আমার উচিত মনে হলো। এতক্ষন বোমার ভিতর ছিলাম মনে হলো।
দোকান থেকে বার হয়ে হাফ ছেড়ে বাচলাম। এবার সামনের গলি ধরে মোর নিতেই আবারো চোখে পরলো আরেকটা চায়ের দোকানে পাশে গ্যাস সিলিন্ডার মজুত করে রাখা হয়েছে।
(পুরান ঢাকার ২০১০ আর ২০১৯ সালে দুটি ভয়াবহ অগ্নিকান্ড আমাদের স্বরন করিয়ে দেয় যে আমরা নিজেরাই আমাদের সেফটির বিষয়ে উদাসিন।)
(এই অগ্নিকান্ডে যারা মারা গিয়েছে তারা মারা যাবার আগে জানতেই পারলো না যে তারা কি জন্য মারা গেলো। কার দোষে মারা গেলো।)
(যারা এসব জায়গায় থাকতো। তাদের অনেকেই জানতো এসব কেমিকাল মজুদের কথা। আবাসিক এলাকায় এমন কেমিক্যাল মজুদ বিপদজনক জানার পরেও তারা এসব সরাবার কোন পদক্ষেপ নেই নি। এমনকি প্রতিবাদ ও করেনি।
আর প্রতিবাদ করবে কি? এদের তো কমন সেন্সই কাজ করে নি যে তারা প্রতিবাদ করবে। তারা তো জানেই না এসব বিপদজনক। একজনকে জিগাই লাম। কইল হ ভাই বিপদজনক বইয়ে পড়ছিলাম এখন ভুইলা গেছি। তাই তার প্রতিদান দিতে হলো তাদের নিজেদের প্রান বিসর্জন দিয়ে।)
(কে যানে আর কোথায় আমাদের জন্য এমন মৃত্যু উতপেতে রয়েছে যার হয়ত নেক্সট স্বীকার আপনি হবেন।)
(যারা এই রাস্তাধরে চলছিল তাদের কি দোষ ছিলো বলেন যে এভাবে পুড়ে লাশ হতে হলো? আপনি কি নিজেকে ক্ষমা করতে পারতেন যদি আপনার সন্তান এখানে সেদিন লাশ হত অন্য কারো ভুলের কারনে )
গলিটা এত চিপা যে মানুষ পাশাপাশি যেতে কস্ট হয়। সেখানে এভাবে সিলিন্ডার মজুত করা মানে বিপদ কে কোলের মধ্যে নিয়ে বসে থাকা। সিলিন্ডার গুলোর ঠিক পাশের দুটি চুলা দিয়ে ঐ দোকানি পুরি পিয়াজু ভাজছে। তার পাশেই ঐ বিল্ডিং এর উপরে উঠার সিড়ির কলাপসিবল গেট। ঠিক এখন যদি দুটি বা তিনটি সিলিন্ডার কোন কারনে আগুন লেগে বাস্ট হয়ে ঐ দোকানে আগুন লাগে তাহলে সিড়িটিও আগুনে ব্লক হয়ে যাবে। আর আগুন উপরে উঠলে ঐ বাড়ির বাসিন্দারা বেরোনোর পথ পাবে না। কি সাংঘাতিক।
কোন রুলস নাই। আমরা কোন খানে বাস করি। আমরা তো নিজেরাই নিজেদের বিপদ কোলে নিয়ে আদর করছি।
(এখনি আমরা নিজেরা সঠিক পদক্ষেপ না নেই তাহলে হয়ত অদুর ভবিষ্যতে আমদের সন্তান অথবা আমরা নিজেরাই উপরের ছবির মত লাশ হয়ে উদ্ধারকারীদের কাধে সওয়ার হতে পারি। কমছে কম অবৈধ এসব দোকানীকে আমরা প্রতিবাদ জানাতে পারি। আর তা না পারলে কাছের জনপ্রতিনিধি বা পুলিশে খবর দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি। এক্ষেত্রে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের দায়িত্ব নেয়া উচিৎ। আমাদের সবার আসলে সচেতনতা বাড়ানো উচিৎ। দিন দিন আমরা ভুলে যাচ্ছি কোনটা ঠিক আর কোনটা ঠিকনা। হয়ত আপনার একটা সচেতনতা অন্য ১০ জনের জীবন বাচাতে পারে।)
" কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল মালেক বলেন, গত ৩ জানুয়ারি শহরের নতুন বাহারছড়া এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ১২টি বসতবাড়ি ভস্মীভূত হয়েছে। এ সময় আগুনে পুড়ে দুই মাস বয়সী এক মেয়ে শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
১৯ ডিসেম্বর মহেশখালীর কালারমারছড়ায় গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আইয়ুব আলী (৩২) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তাঁর বাড়ি ওই ইউনিয়নের অফিসপাড়ায়। পুলিশ ও ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, গত তিন মাসে জেলায় ১০টির বেশি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় ৫ জন নিহত ও অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তিন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক শাহাদাত হোসেন বলেন, জেলায় কতটি দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হয়—তার তথ্য জানা নেই। তবে অন্তত ১১২টি দোকানে ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স রয়েছে।
বিস্ফোরক পরিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিস্ফোরক পরিদর্শক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, জনবল সংকটের কারণে তাঁরা জেলা পর্যায়ে অনিয়ন্ত্রিত গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি তদারকি করতে পারছেন না। পুরো চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার দায়িত্বে রয়েছেন তিনিসহ মাত্র দুজন কর্মকর্তা। তারপরও মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হচ্ছে। " ( সুত্র: ইত্তেফাক)
রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও কক্সবাজার সদর উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারেও অবাধে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। বিশেষ করে উখিয়া ও টেকনাফে যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি বাড়ছে।
আমার নিজের দেখা, গাজিপুরের পুর্বমৌচাক জামে মসজিদের সামনে কয়েকটি মুদি দোকান এমনকি একটি লেপ–তোশকের দোকানের সামনে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার।
সিলিন্ডারগুলো রাখা হয়েছে একেবারে সড়কের পাশে একটার ওপর আরেকটা স্তর করে।
পাশে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম চায়ের দোকান এমনকি ওষুধ বিক্রির দোকানের সামনেও গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়েছে।
এছাড়া কোনাবাড়ি, সফিপুর, পল্লী বিদ্যুৎ, চান্দুরা এমনকি সাভারের মুজিব নগরের ওলি গলি ও রাস্তার পাশের বিভিন্ন ছোট বড় দোকানে অন্য ব্যাবসার পাশাপাশি এই গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ করে রাখা হয়েছে বিক্রির জন্য। এছাড়া অনেকেই নিজ বাসার গ্যারেজে উচ্চ দামে ভাড়া পাওয়ার আসায় এই সব অবৈধ ব্যাবসায়ীকে ভাড়া দিচ্ছে। আর ব্যাবসায়ীরা সেই সব গ্যারেজ ভাড়া নিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ করছে। এর ফলে এই সব গ্যারেজ গুলোা এক একটা জীবন্ত টাইম বোমায় পরিনত হয়েছে। যেকোন সময় অতীতে ঘটে যাওয়া পুরান ঢাকার বা নবাব কাটরার মত বড় কোন অগ্নীকান্ডের আশংকা একেবারে উরিয়ে দেওয়া যায় না।
বিস্ফোরক পরিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, খুচরা দোকানে বিক্রির জন্য সর্বোচ্চ ১০টি গ্যাস সিলিন্ডার রাখা যায়। ১০টির বেশি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে হলে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। নিয়ম অনুযায়ী, গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি ও মজুত স্থানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন হয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতারও। এ ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস লাইসেন্স, জ্বালানি অধিদপ্তরের লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়ার বিধানও রয়েছে। কিন্তু এ নিয়ম এখানে মানা হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১১