অভিসাপের প্রবাস।
দৃশ্য ০১
অফিসে কাজ করছে নয়ন। পাশে এক বন্ধু এসে ওকে ক্রিটিসাইজ করে একি ড্রেস প্রতিদিন পরার জন্য।
সুমিত (নয়নের কলিগ): কিরে তরতরা, নিচের দিকে তাকিয়ে খালি ঘসাঘসি করলেই হবে নাকি এপাশ ও পাশ দেখা উচিৎ।
আর এ একি সার্ট পরে তরে প্রায় সপ্তাহ হয়ে গেলো দেখতাছি। ট্যাকা কি খালি কামাও নাকি অন্য কোন খানে যাও যে একটা নতুন সার্ট কেনার পয়সা থাকে না। হাহহ াহাহাহ াহাহহ
নয়ন পকেটে হাত দেয় আর ঠিক করে এই মাসে কিছু ওভার টাইম করার জন্য যাতে সেই টাকা দিয়ে এক সেট নতুন সার্ট কিনতে পারে।
সে হিসাব করে যদি প্রতিদিন ১২ ঘন্টার পরে আরও ২ ঘন্টা বেশী কাজ করতে পারে তাহলে তার বেশ কিছু বারতি টাকা আসবে।
তাই সে তার বসের কাছে যাবার চিন্তা করে।
দৃশ্য ০২
মাসের ১২ তারিখ। ক্যালেন্ডার এ দেখানো হয়। নয়ন দোকানে যায়। সার্ট দেখে পছন্দ করে।
সার্টের দাম ৫০ দেরহাম। কিন্তু নয়নের পকেটে ১৫ দেরহাম। সার্টি নয়নের খুব পছন্দ হয়।
নয়ন: ভাই এই সার্টটির দাম কত?
দোকানদার: ৫০ দেরহাম
নয়ন: এই সেইম দেখতে সার্ট আর একটু কম দামে নাই।
দোকানদার: না ভাই, এগুলো ব্রান্ডের সার্ট। একপিস ই আছে।
নয়ন: তাহলে ১০ দেরহাম দিয়ে আমি এটা বুকিং দিয়ে যাই। পরে এই মাসের বেতন এলে বাকি টাকা দিয়ে সার্টটি নিয়ে যাবো।
দোকানদার: ভাই এইটা কি মাছের বাজার পাইছেন নাকি। যত্তসব কোত্থেকে আসে এই খবিশ গুলো।
সিকিউরিটি ? সিকিউরিটি ..।
দৃশ্য ০৩
মাসের তিরিশ তারিক ক্যালেন্ডার এ দেখানো হয়।
এটিএম থেকে টাকা তুলে বার হচ্ছে নয়ন।
হাতে টাকা নিয়ে গুনতে গুনতে বাসার দিকে যেতে শুরু করে সে।
দৃশ্য ০৪
নয়নের তার বাসার বাইরে এক জায়গায় দাড়িয়ে তার বাবার সাথে কথা বলছে।
নয়ন: বাবা টাকা পাইছো। এই মাসে পুরা ৮ হাজার পাঠাইছি।
বাবা: হ্যা বাবা টাকা পুরাটাই পাইছি। তু্ই বল তুই কেমন আছিস বাবা। তোর জন্য খুব কস্ট হয়।
কই থাকোস কি যে খাস আর ভালোলাগে না।
নয়ন: এইতো বাবা। বাড়িডা ঠিক হয়া গেলেই ছুটি আসবো।
বাবা: আর শোন তোর ছোট ভাইয়ের এসএসসির রেজাল্ট বাইর হইছে। ওতো গোল্ডেন এ প্লাস পাইছে।
তুই নাকি কইছিলি এ প্লাস পাইলে ওরে তুই হোন্ডা কিনা দিবি। ও তো তোরে খুজতাছে। এই নে কথা ক'।
তুহিন: ভাইয়া এ প্লাস পাইছি। কই আমার হোন্ডা কই, কবে দিবা।
নয়ন: ভাইরে আমি অনেক খুশি হইছি তোর রেজাল্ট শুইনা। তুই পরা শুনা কইরা বড় হ ভাই। তারপর বড় চাকরি করবি।
আমাদের সময় ঘুইড়া যাইবো ভাই।
তুহিন: সেসব তো বুজলাম ভাই। আগে আমার হোন্ডা কবে দিবা?
নয়ন: ভাইরে! আমি তো কথা দিছিলাম। কিন্তুু এখণ এই মুহুর্তে তো দিতে পারতিছি না। হাতে টাকা নাই। কয়একদিন পর
ভালো একটা চাকরি হবার কথা আছে। দেখি কি করি।
তুহিন: ভাইয়া, আমি তো বুজি। কিন্তু এখন তো কলেজে যাওন লাগবো। কোচিং করন লাগবো। শহরে যাইতে যেই ভাড়া লাগে তাতে মাসে হাজার পনেরোশ টাকা অযথা খরচা হইয়া যাইবো। তুমি একখান কাম করো। হাজার দুই হাজার হইলেই একটা সেকেন্ডহান্ড সাইকেল পাওয়া যাইবো। হেইডা তুমি কিন্না দাও। কমছে কম সাইকেলটা ব্যাবহার করলে মাসে কিছু টাকা বাচাইতে পারবো।
নয়ন: আচ্ছা দিমু ভাই দিমু, আব্বারে দে দেহি।
তুহিন আব্বাকে ফোনটা দেয়।
বাবা: বল নয়ন বাপ আমার।
নয়ন: বাবা, তুমি একটা কাজ করো। এই মাসে তুমি দুই হাজার টাকা কম নাও। তুহিনরে তো কথা দিছিলাম। এছাড়া তুহিন যা কইলো তাতে তো ওকে সাইকেলটা কিনে দেয়া জরুরী। এখন তো সামনে ভর্তি কোচিং। শহরে তো প্রতিদিনি যাইতে হইতাছে। মাসে যেই টাকা ভাড়া দিতে হইবো তাতে তো একটা সেকেন্ড হ্যান্ড সাইকেলই হইয়া যায়।
বাবা: ঠিকি কইছোস। কিন্তু এইদিকে তোর মায়ের শরীরডা ভালা না। ডাক্তরে কইছে বাত জ্বর ধরছে নাকি।
শহরে নিয়া ভালা ডাক্তর দেখান লাগবো।
যেই আট হাজার দেস প্রতি মাসে। এইটা দিয়ে তো মাস চলে না। টান পরে। সেই টান এই হান ঐ হান থাইক্কা আইন্না ঠিক করি।
আর ডাক্তর দেহানোর লাই শহর গেলে হিসাব কইরা দেখছি - যাওন, খাওন, আওণ মিলাই য়া ২-৩ হাজার টাকা লাইগা যাইবো।
আমি আরো কইতে ছিলাম বাবা আমারে যদি এই মাসে আরও ৩ হাজার টাকা দিতে পারতা তাইলে ভালো হইতো।
তোর মায়ের একটু ভালো চিকিৎসা করাই তে পারতাম। মনটা শানতি পাইত।
এরপর নয়ন ফোন রেখে দেয়।
- নয়ন হাটতে থাকে।
দৃশ্য ০৫
রাতে বাসায় আসে। আর ফোনে বলা কথা গুলো নয়নের বার বার মনে হতে থাকে। পকেটে থাকা টাকা বার বার বের করে দেখটে থাকে।
সার্টের দোকানে দেখা সার্টের কথা মনে পরে। তার পর এক সময় ঘুমিয়ে যায়।
স্বপ্নে দেখে সেই দোকান থেকে সেই সার্ট টি নয়ন কিনতে যায়। কিনে নিয়ে ঐ একি সার্ট পরে ঘুড়তে বের হয়।
খুব খুশী সে নতুন সার্ট পরে।
দৃশ্য ০৬
পরদিন সকালে এলার্ম বেজে ওঠে। তরিঘরি করে নয়ন ঘুম থেকে ওঠে। বুঝতে পারে স্বপ্ন দেখছিলো এতক্ষন। গায়ে নতুন সার্টের জায়গায় পুরানা সেই সার্ট টি। পকেট থেকে টাকাটা বের করে ঠিক করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিবে। বাবার ৩০০০ আর ভাইয়ের ২০০০।
দৃশ্য ০৭
টাকা দেশে পাঠাতে দোকানে যায়। টাকা পাঠায়।
দৃশ্য ০৮
অফিসে কাজ করে বাসায় ফিরে। কিন্তু ফ্রিজ খুলে দেখে ফ্রিজ খালি।
পকেট ও ফাকা।
পানি খেয়ে রাত পার করে।
পরের দিন দুপুরেও পানি খেয়ে দিন পার করে।
রাতে এক ক্ষিধায় সইতে না পেরে এক বন্ধুর রুমে গিয়ে বিস্কুট খায়।
পরের দিন ঐ বন্ধুর রুমে বিস্টিট খাইতে গেলে ঐ বন্ধু অপমান করে তারিয়ে দেয়।
আবার পানি পান কর দিন পার করতে থাকে।
একদিন সে আর ঘুম থেকে ওঠে না। চলে যায় চিরোতরে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩৯