আমার মাথায় মীরাক্কেলের ভূত চেপেছে৷
আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে ভিকি-পার্থর ভূত৷ আহা, শিবরাম চক্রবর্তীর হর্ষবর্ধন আর গোবর্ধনের কিছু গল্প এই দু'জনকে দিয়ে করাতে পারলে৷ সেই যে সেই গল্পটা, বৈজ্ঞানিক ভ্যাবাচেকা- হর্ষবর্ধন আর গোবর্ধন দুই ভাই যাবে বোম্বে৷ মাঝপথে হর্ষবর্ধন ভাইকে দশ হাজার টাকার বাণ্ডিলের একটা ব্যাগ দিয়ে বলেছে যে বোম্বে পর্যন্ত টাকাটা নিরাপদে নিয়ে যেতে পারলে অর্ধেক তার৷ নিরাপদে টাকা নেয়ার আশায় গোবর্ধন ব্যাগটা পেটের তলায় রেখে দিয়েছে৷ একসময় বাথরুমে গিয়েছে৷ একটুপরেই চ্যাঁচাতে চ্যাঁচাতে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসেছে সে- "দাদা, দাদা! সর্বনাশ হয়েছে!"
হর্ষবর্ধন চোখ মেলে তাকান- "অ্যাঁ?"
"পেটের তলায় রেখেছিলাম তো ব্যাগটা? যেই না বাথরুমে উবু হয়ে বসতে গেছি, ওটা আমার মধ্যাকর্ষণ ফসকে তালাকার গর্তের ভেতর দিয়ে গলে পড়ে গেছে নিচেয়!"
"অ্যাঁ? তা, তুই চেন টানলি না কেনো তক্ষুনি? তা হলে তো গাড়ি থেমে যেত কখন! এতক্ষণ দিয়ে কুড়িয়ে আনা যেত ব্যাগটা৷"
"টেনেছিলাম তো চেন৷ কিন্তু যতবারই টানি, হুড় হুড় করে কেবল খালি জল বেরিয়ে আসে৷"
হা হা হা, কি কাণ্ড! সেই ভ্রমনেই তাদের ট্রেন যখন আগ্রা পৌঁছেছে, তারা ট্রেন থেকে নেমে তাজমহল দেখে ঘুরে ফিরে এসেছে৷ স্টেশনে এসে দেখে ট্রেন প্রায় ছেড়ে দেয়৷ ওটা যে কোলকাতার ট্রেন ওরা বুঝতে পারেনি, লাফ দিয়ে উঠে বসেছে৷ কামরা প্রায় ফাঁকা৷ কেবল ওপরের বার্থে এক ভদ্রলোক অর্ধশায়ী৷
"আপনিও কি বোম্বাইয়ের যাত্রী নাকি?" আলাপ ফাঁদলেন হর্ষবর্ধন: "বোম্বায়েই নামবেন বুঝি?"
"না মশাই, আমি যাচ্ছি কোলকাতায়৷"
"কলকাতায়! আশ্চর্য!" গুমরে ওঠেন হর্ষবর্ধন: "দ্যাখ রে গোবরা দ্যাখ৷ বিজ্ঞানের আরেক বিস্ময় চেয়ে দ্যাখ চোখে৷ তলাকার বার্থ চলেছে বোম্বাই আর ওপরের বার্থ যাচ্ছে আমাদের কলকাতায়৷"
অথবা সেই গল্পটা, সেই যে "দোকানে গেলেন হর্ষবর্ধন", গিয়ে দাঁড়ালেন হল অ্যাণ্ডারসন নামে দোকানটার সামনে৷ উপরে বড় বড় করে দোকানের নাম লেখা৷
"পড় তো!" হর্ষবর্ধন বললেন, "পড়ে দ্যাখ তো, কি লিখেছে বড় বড় ইংরেজীতে?"
গোবর্ধন বানান করে পড়ে মনে মনে! তারপর বলে, "বুঝেছ দাদা, এরা হচ্ছে সব হল্যান্ডের৷ হল্যান্ড বলে একটা দেশ আছে জানো তো? ইংল্যাণ্ড, হল্যান্ড, ইসকটল্যান্ড..."
"যা যাঃ! তোকে আর ভূগোল ফলাতে হবে না৷ ভারি তো বিদ্যে! তার আবার ইসকটল্যান্ড!" হর্ষবর্ধন ধমকে দেন, "কি পড়লি তাই বল৷"
"ঐ কথাই, হল্যান্ড আর তার ছেলেপুলে৷" গোবর্ধন ব্যাখ্যা করতে চায়, "ঐ তো স্পষ্টই লিখে দিয়েছে৷ পড়েই দ্যাখো না! হল্যান্ড- অ্যান্ড- অ্যান্ড মানে তো এবং? অ্যান্ড হার- হার মানে তো তার? হিজ- হার- মনে নেই তোমার? অ্যান্ড হার সন, এবং তার ছেলেপুলে৷"
হর্ষবর্ধনের চোখ এবার স্বভাবতই কপালে ওঠে৷ অ্যাঁ! এত বড় কথা লিখে দিয়েছে৷ কলকাতায় এসে কারবার করছে কিনা স্বয়ং হল্যান্ড? সঙ্গে আবার তার ছেলেপুলে নিয়ে? অবাক কান্ড!
হর্ষবর্ধনকে চোখ খাটাতে হয় বাধ্য হয়েই৷ বদন-ব্যাদন দিয়ে, আকর্ণ চক্ষু বিস্তার করার চেষ্টা পান তিনি৷ ক্রমশ তার হা বুজে আসে, চোখও সংক্ষিপ্ত হয়৷
"হার কই? হার?" উষ্ণ হয়ে ওঠেন তিনি৷ "এইচ গেলো কোথায়? হার সনের এইচ- শুনি তো একবার?"
"পড়ে গেছে৷" গোবরা আমতা আমতা করে৷ "পড়ে যায় না নাকি?"
উপস! ভিকি-পার্থের উপস্থাপনায় শিবরামের গল্প কতই না লোভনীয় হয়ে উঠবে!