“রডি, এই রডি৷”
আমি হাঁটছিলাম চারুকলা ভবনের সামনে দিয়ে৷ আজকের এই ভালোবাসা দিবসে জায়গাটায় মানুষের ঢল নেমেছে৷ চারদিকে অগনিত মানুষের ভীর৷ রঙ বেরঙের মানুষ৷ আনন্দিত মুখ৷ বেশির ভাগই কলেজ-ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছাত্রী৷ তবে স্কুল পড়ুয়ারাও আছে৷ কোথাও একদল ছেলেমেয়ে একসাথে হাঁটছে৷ কোথাও একজন প্রেমিক তার প্রেমিকার হাত ধরে হাঁটছে৷ কোথাও বা একদঙ্গল মেয়ে একসাথে, সাথে কোন ছেলে নেই৷ তাই দেখে আবার একদঙ্গল ছেলে তাদের পিছু নিয়েছে৷
এসব দেখতে দেখতে ভীর ঠেলে আমি হাঁটছিলাম৷ হঠাৎ মনে হলো কেউ আমাকে ডাকছে৷ এই ভীরের মধ্যে কিছু ভালো বোঝা যায় না৷ আমাকেই ডাকছে না অন্য কাউকে? আমি দাঁড়িয়ে পড়ে এদিক ওদিক দেখলাম৷ কেউনা, দূর! ঠিক এই সময় একটু দূরে একটা বেলুনঅলার পাশে তাকিয়ে আমার চোখ আঁটকে গেলো৷ একভীর মানুষের মধ্যেও ঝলমল করছে ওটা কে? রূপালী না? হ্যাঁ, রূপালীই তো! সে আমারি দিকে তাকিয়ে আছে৷ চোখাচোখি হতেই রূপালী উত্তেজিত ভাবে হাত নাড়াতে লাগলো৷ আমি ভীর ঠেলে সামনে এগোলাম৷
“উঁহ, কখন থেকে তোকে ডাকছি, শুনতে পাস না? কালা হয়ে গেছিস নাকি?” আমি কাছে যেতেই রূপালী হড়বড় করে বলল৷
“তুই ডাকবি আর আমি শুনতে পাব না তাই কি হয়?” আমি হাসতে হাসতে বললাম৷ “তুই সাত সুমুদ্দুরের ওপাড় থেকে ডাকলেও আমি শুনতে পাব৷”
“এই দাঁড়া দাঁড়া, তুই রডিইতো?” রূপালী অবাক হয়ে বলল৷ “খুব পাম দিচ্ছিস দেখি! সে কিরে? তুইও আজকাল মেয়েদের পাম দিতে শিখেছিস নাকি?”
“আহা, পাম আবার দিলাম কখন? যা সত্যি সেটাই বললাম৷” আমি হেসে উত্তর দিলাম৷
“কি সত্যি? আমি তোকে সাত সমুদ্রের ওপাড় থেকে ডাকলেও তুই শুনতে পাবি?”
“হুঁ৷”
“আহা কি ঢংয়ের কথা রে! তা এই ঢংয়ের কথা আগেতো কখনো বলিসনি!”
আমি একটু হতাশার ভঙ্গি করে বললাম, “কত কথাইতো বলেছি, তোরা কি কখনও শুনেছিস?”
“তোরা মানে কি রে? আরো কেউ ছিলো নাকি?”
আমি হেসে ফেললাম৷ বললাম, “পাগল, তুই থাকতে আর কেউ কাছে ঘেষবে সে সাহস কার আছে?”
তখন সেই ভীরের মধ্যে দাঁড়িয়ে রূপালী আমাকে আপদমস্তক দেখতে লাগলো৷ আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, “হচ্ছে কি? কি দেখছিস এভাবে?”
রূপালী বলল, “নাহ, তোর চেহারাতো দেখছি সেই আগের মতই আছে, কিন্তু তোর ঘটনা কি বল দেখি? আগেতো তুই কখনো এরকম মেয়ে পটানো কথা বলতি না!”
আমি উদাস স্বরে বললাম, “আগে বলতাম নাতো কি হয়েছে? আজকাল বলি৷”
“তাই দেখছি!”
“কিন্তু বলেই বা কি লাভ বল? আগেও কেউ আসেনি, এখনো কেউ আসেনা৷ যে তিমিরে ছিলাম সেই তিমিরেই রয়ে গেছি৷”
“আহারে কি দুঃখ!”
রূপালীর বলার ভঙ্গি দেখে আমার হা হা করে হাসতে ইচ্ছে করছিলো৷ কিন্তু আমি গম্ভীর হবার চেষ্টা করে বললাম, “ঠাট্টা করছিস?”
“আরে না তোকে নিয়ে ঠাট্টা করব সে সাহস কি আমার আছে? বাব্বা, তুই যা গম্ভীর ছিলি আগে!”
“আমি গম্ভীর ছিলাম?”
“ছিলি না? গম্ভীর ছিলি আর ভীষন অহংকারী ছিলি৷”
আমি একটু চুপ করে রইলাম৷ এসবই ছিলো ভুল৷ আসলে আমি কখনো তেমন গম্ভীর বা অহংকারী ছিলাম না৷ কিন্তু নানাকারনে বাইরে সেরকম একটা ভান করে থাকতাম৷ কিন্তু রূপালীর সে ভুলটা বোধহয় এখন আর ভাঙতে যাওয়ার কোন মানে হয়না৷ তাই কিছু না বলে একটু হাসলাম৷ রূপালী বলল, “তুই এখনো বিয়ে করিসনি?”
“নাহ৷” আমি মাথা নেড়ে বললাম৷
“সে তোকে দেখেই বোঝা যায়৷”
“তাই নাকি? দেখেই বোঝা যায় আমি বিয়ে করিনি?”
“হ্যাঁ৷”
“কি করে বুঝিস রে?”
“সে তুই বুঝবি না৷ মেয়েরা বোঝে৷”
“ও তাহলে আমার বুঝে কাজ নেই৷ মেয়েদের মন বোঝার আশা অনেক আগেই বাদ দিয়েছি৷ তোদের ভাষা বোঝার আশা দিছি জলান্জলি৷”
“নাকি? একেবারে জলান্জলী দিলি?”
“হ্যাঁ, একেবারে জলান্জলী৷”
“তা বোঝার চেষ্টা করতি কখনো?”
আমি হাসতে হাসতে বললাম, “কখনো আবার কি? সারাজীবন করেছি৷”
“আহারে! আমরাতো কখনো বুঝিনি রে, আমরা তোকে বরাবর কাঠকোট্টা ভাবতাম!”
“ঐতো তোদের দোষ, শুধু বাইরেটা দেখিস, ভীতরটা দেখিস না৷”
“তা ভীতরটা বাইরে আনতে কি হয়?”
“আর এনে লাভ কি বল?”
“লাভ নেই? তবুতো এনেছিস দেখছি! যা পাম দিয়ে কথা বলছিস আজকে! আমিতো ঘাবরে যাচ্ছি, তুই ঠিক রডিইতো?”
আমি হাসতে লাগলাম৷ বললাম, “তোর ঘটনা কি? আজকের দিনে তুই একা কেন? বিয়ে করিসনি?”
“কবে!” রূপালী ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল৷
“তা তোর সেই লোকটি কই?”
“ও সে গেছে অফিসে৷ সকালে বললাম চলো টিএসসিতে যাই৷ তা সে এসব কিছু বোঝে না, আসতে রাজি হলো না৷ তাই আমি একাই চলে এলাম৷ এসেতো অকুল পাথারে পরে গেলাম৷ একটা সময় এখানে কত চেনা মানুষ ছিলো, এখন আর কাউকে চিনি না৷ ভাগ্যিস তোকে পেয়ে গেলাম৷ এই শোন, আজকের এই ভালোবাসার দিনে, চল আমরা ভালোবাসা ভালোবাসা খেলি৷”
আমি হাসতে হাসতে বললাম, “সেটা কিভাবে খেলে রে?”
“খুব সহজ খেলা৷ ধর আমরা এই পার্কের ভিতরে ঢুকে খুব নির্জন কোন জায়গায় একটা গাছের তলায় মুখোমুখি বসব৷ দুজনে দু'জনে চোখের দিকে তাকিয়ে থাকব, মাঝে মাঝে একটা দু'টা কথা বলে হেসে গড়িয়ে পড়ব৷ তুই মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবি, আমি লজ্জায় লাল হব৷”
“আর বলিস না৷ শেষে লোভে পড়ে যাব, সত্যি সত্যি খেলতে ইচ্ছা করবে৷”
রূপালী একটু ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল, “আহা আমিতো সত্যি খেলার কথাই বলছি, বানিয়ে বলছি নাকি?”
“তাই? কিন্তু তুইতো অন্যের বউ, তোর সাথে আমি ভালোবাসার খেলা খেলব কেন?”
“কেন খেলবি না? তোর পরকিয়া করতে ইচ্ছে হয় না?”
“উঁহু, পরকিয়া করতে আমার রূচিতে বাঁধে৷ আমি তোর প্রেমে বিবাগী হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াব আর তুই আরেকজনের বুকে মুখ গুঁজে হাসবি! নাহ, ওর মধ্যে আমি নেই৷”
“হুম, তুই মুখে অনেক মিষ্টি কথা বলছিস বটে, কিন্তু তুই সেই আগের মতই অহংকারী আছিস৷”
“আমি অহংকারী?”
“তুই অহংকারী না?”
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, “ঠিক আছে চল তোর সাথে ভালোবাসার খেলাই নাহয় খেলি৷ চল গাছতলাতে বসি৷”
রূপালী হাসতে হাসতে বলল, “তুই সত্যি অনেক বদলেছিস! সত্যি সত্যি রাজি হবি আমি ভাবিনি৷”
আমরা দু'জন সোহারাওয়ার্দী পার্কের মধ্যে ঢুকে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে গেলাম৷ ইদানিং পার্কের ভীতর একটা লেক করেছে৷ লেকের চারপাশে বসার জন্য বেন্চ বানানো৷ আমরা গিয়ে একটা বেন্চে মুখোমুখি বসলাম৷ জায়গাটা নির্জন৷ ইতস্তত কিছু প্রেমিক প্রেমিকা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে৷ শান্ত স্বচ্ছ লেকের পানি৷ দূরের কোলাহলের কোন আওয়াজ এখানে এসে পৌচচ্ছে না ৷ আমার পাশে বসে আছে এক পরমা সুন্দরী ছটফটে রমনী৷ যে এক সময় আমার ক্লাসমেট ছিলো, আর যার সাথে আজকে আমি ভালোবাসা ভালোবাসা খেলা খেলছি৷ হা হা হা৷ সব মিলিয়ে অনুভুতিটা ভালোই৷ ফেব্রুয়ারির মিস্টি রোদে রূপালীর সুন্দর মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনটা অন্য কোথাও ভেসে যাচ্ছিলো৷
কতদিন পরে আমি রূপালীকে দেখলাম? সময়ের হিসেব আজকাল আর রাখি না৷ সেই কবে আমরা ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম! দুই চার পাঁচ বছর যা কিছু হতে পারে৷
আমি মুখোমুখি বসে রূপালীকে দেখছিলাম৷ রূপালী বরাবরই সুন্দর৷ এখন তার সৌন্দর্য্য যেন মাত্রা ছাড়িয়েছে৷ একটা হাল্কা গোলাপী রঙের শাড়ি পড়েছে৷ চুলগুলো পিঠের উপর ছেড়ে দেওয়া৷ কানে ছোট্ট দুল৷ ঠোঁটে খুব হাল্কা করে লিপস্টিক৷ ফেব্রুয়ারির এই শান্ত মিষ্টি রোদের মধ্যে তাকে ঠিক একটা দেবীর মতই লাগছিলো দেখতে৷ রোদটা যেন তার উপরে পরে ঝলমল করছিলো৷
“ইস কতদিন পর এখানে এলাম৷” রূপালী বলল৷ “আজকাল কোথাও যাওয়া হয় না৷ সেই ইউনিভার্সিটির লাইফটা কি মজার ছিলো বল৷”
“ছিলো নাকি?” আমি বললাম৷ “কি জানি! আমার এখনো কিছু খারাপ লাগে না৷”
“হ্যাঁ তুইতো বলবিই, তুই তো পুরুষ মানুষ৷ আমরা মেয়েরা তো বিয়ে হয়ে গেলে আর ঘর থেকে বের হতে পারি না৷ সেই পড়া টড়ার সময়ই যা বের হই৷”
কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া কথাটা ঠিক৷ তাই আমি কিছু বললাম না৷
রূপালী বলল, “আচ্ছা ভার্সিটিতে থাকতে তুইতো কথা বেশি বলতি না, তুই শুধু আমাদের কথা শুনতি৷ তুই সেই সময় সত্যিই অনেক গম্ভীর ছিলি৷ আজকে বল, তুই কখনো প্রেমে পড়েছিস?”
আমি হেসে ফেললাম৷
“হাসিস না তো, সত্যি করে বল না৷”
“কেন? আমার প্রেম নিয়ে তোর এত কৌতুহল কেন?”
“কৌতুহল আছে বৈকি৷ তুইতো আর জানিস না কত মেয়ে তোর কাছে আসতে চেয়েছে, কিন্তু তোকে বলার সাহস পায়নি৷”
“তাই? আহা আগে জানলে জীবনটা ধন্য হত রে!”
“এখনতো জেনেছিস?” তাহলেই হলো৷
“এখন জেনে লাভ কি? সে মেয়েগুলা এখন কই?”
“থাক ওদেরকে আর খুঁজে কাজ নেই৷ নতুন কাউকে খুঁজে বের কর৷ বলনা তুই কখনো প্রেমে পড়েছিস কিনা৷ চোখ বন্ধ করলে তোর সামনে কোন মেয়ের ছবি ভেসে ওঠেনা?”
“কত মেয়ে ভাসে! হা হা হা৷”
“ফাজলামো করিস না৷ বল চোখ বন্ধ করলে তুই কি দেখতে পাস?”
আমি একটু ভেবে বললাম, “দাঁড়া একটা স্মৃতি মনে পড়ছে৷ মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাই একটা চোদ্দ পনেরো বছরের ছেলে দুপুরবেলা পুকুরে ছিপ ফেলে বসে আছে৷ তার পাশে কাছাকাছি বয়সের খুব সুন্দর একটা মেয়ে হাঁটুতে চিবুক রেখে বসে৷ ছেলেটা মাঝে মাঝেই মুখ ফিরিয়ে মেয়েটিকে দেখছে, আর মেয়েটা লাল হয়ে একটু হাসছে৷”
রূপালী একটুক্ষন আমাকে দেখে বলল, “একি তোর সত্যি স্মৃতি? নাকি বানিয়ে বললি?”
আমি হেসে ফেললাম৷ রূপালী বলল, “মেয়েটাকে তুই ভালোবাসতিস?”
“কি জানি৷” আমি উদাস স্বরে বললাম৷
“তারপর কি হলো?”
“তারপর আর কিছু না৷ একদিন সকালে উঠে কলেজে পড়ার জন্য ঢাকায় চলে এলাম৷ আর ফেরা হয়নি৷”
“সেকিরে? তুই একটা মেয়েকে ছ্যাঁকা দিয়েছিস?”
আমি মাথা নাড়লাম, “তুই যা ভাবছিস তা না৷ আমরা কখনো কোন ভালোবাসার কথা বলিনি৷ ইনফ্যাক্ট আমাদের কথাই হতো কম৷ আমরা শুধু পুকুর পাড়ে পাশাপাশি বসে থাকতাম৷”
“তুই কখনো বুঝিসনি মেয়েটি তোকে ভালোবাসত?”
“বাসতো নাকি?”
“হারামজাদা গবেট তুই একটা৷ একটা মেয়ের সাথে তোর বেশি কথা হতো না, সেই মেয়ে খামোখা দুপুরবেলা এসে তোর পাশে পুকুরপাড়ে বসে থাকতো? মগা কোথাকার!”
আমি মাথা চুলকাতে চুলকাত বললাম, “কি জানি, হবে হয়তো! আমি কখনো বুঝিনি৷”
“আহা, সেই মেয়েটার জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে!”
“আর কষ্ট পেয়ে কি হবে বল? সে কবেকার কথা৷ ওর কবে বিয়ে টিয়ে গেছে৷”
“হ্যাঁ তা ঠিক৷ আচ্ছা বল তুই আমাকে কখনো পছন্দ করতিস? আমি যে খুব সুন্দর ছিলাম সে কথা তো স্বীকার করবি?”
“তুই এখন আরো বেশি সুন্দর৷”
“যাক তাও ভালো যে বললি! তুই যে বলতে পারিস তাই আমরা কখনো ভাবিনি৷”
“তোরা আমাকে নিয়ে ভাবতিস নাকি?”
“কত!” রূপালী হাসতে হাসতে বলল৷
“যাক, জীবন প্রথমবারের মত মনে হচ্ছে আমি মানুষটা অত ফেলনা না৷ ভাগ্যিস তোর সাথে আজকে দেখা হয়েছিলো! তোর এই পাম দেয়া কথাগুলাই আমার মধুর স্মৃতি হয়ে থাকবে৷”
“তোকে আমি পাম দিব কেন?”
“তাওতো কথা৷” আমি হাসতে হাসতে বললাম৷
“না পাম দিচ্ছি না৷ সব মানুষেরই কিছু গোপন এ্যাডমায়ারার থাকে, তা নিয়ে বেশি গর্ব করার কিছু নেই৷ তোর কথা আমি জানি কারন আমি নিজেও তোর এ্যাডমায়ারার ছিলাম৷”
আমি অবাক হয়ে রূপালীর দিকে তাকিয়ে রইলাম৷ বললাম, “তুই আমার এ্যাডমায়ারার ছিলি?”
“হ্যাঁ৷”
“যাহ, তুই ফাজলামী করছিস৷”
“তোর ফাজলামী ভাবতে ইচ্ছা করলে কর৷ আমারতো আর কিছু করার নেই৷”
আমি খুব অবাক হয়ে রূপালীর দিকে তাকিয়ে রইলাম৷ রূপালী হঠাৎ খিলখিল করে হাসতে শুরু করলো, “সে কিরে তুই সত্যি সত্যি বিশ্বাস করেছিস আমি তোর এ্যাডমায়ারার ছিলাম? হি হি হি৷”
আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো৷ মেয়েগুলো ঠাট্টা করতে বড় বেশি ভালোবাসে! চুপচাপ বসে রইলাম৷ রূপালীর সেল ফোনটা বেজে উঠলো৷ সে ফোনে কিছুক্ষন কথা বলল৷ তারপর আমাকে বলল, “এই শোন, আমার ডাক পড়েছে, যেতে হবে৷”
“ঠিক আছে৷” আমি বললাম৷
“আমাকে এগিয়ে দিবি না?”
“হ্যাঁ চল৷”
আমরা পার্ক থেকে বের হয়ে দোয়েল চত্বরের কাছে এলাম৷ বললাম, “তোর ঠিকানা দিবি না আমাকে?”
রূপালী আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “থাক ঠিকানা নিতে হবে না৷ কি দরকার বল? হয়তো অনেক বছর পর এমনি ভাবে কোন একদিন আমাদের আবার দেখা হয়ে যাবে৷ সেই ভালো৷”
আমি একটু ওকে দেখে বললাম, “হ্যাঁ সেই ভালো৷”
রূপালী চলে যাওয়ার জন্য সামনে এগলো৷ তারপর ঘুরে আবার কাছে এসে বলল, “শোন যাবার আগে তোকে একটা সত্যি কথা বলে যাই৷ আমি সত্যিই তোকে খুব পছন্দ করতাম৷ বোধহয় সেটা ভালোবাসাই ছিলো, কি জানি! কখনো তোকে বলিনি, আজ বললাম৷”
আমি চুপ করে রূপালীর দিকে তাকিয়ে রইলাম৷ আমার আশংকা হচ্ছিলো সে আবার এখনি খিলখিল হাসিতে ভেঙে পড়বে৷ কিন্তু সেও চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো৷ একটু পর বলল, “যাই রে৷ ভালো থাকিস৷”
রূপালী চলে গেলো৷ আমি রূপালীকে কতটা পছন্দ করতাম সে কথা কি আমি তাকে কখনো বলেছি? না বলিনি৷ হ্যাঁ, আমি তাকে খুব পছন্দ করতাম৷ কিন্তু আমি তাকে সবসময় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতাম৷ কেনই বা করব না? আমি কি আর বুঝতাম না যে সে অনেক দূরের মানুষ? আমি কি জানতাম না যে রূপালীর মত মেয়ে আমার জন্য নয়? আমার এই ক্ষুদ্র, তুচ্ছ জীবনে সে কেনই বা আসবে? তাই নিজের তুচ্ছতাকে আড়াল করার জন্য আমি একটা অহংকারের মুখোশ পড়ে থাকতাম৷
আমি দোয়েল চত্বরে দাঁড়িয়ে টিএসসির দিকে তাকিয়ে রইলাম৷ সেখানে ভালোবাসার মেলা বসেছে৷ ভালোবাসার মানুষটার হাত ধরে সবাই ভেসে যাচ্ছে এক স্বপ্নময় জগতে৷
আমি হাঁটতে হাঁটতে আবার ভীরের মধ্যে মিশে গেলাম৷ হ্যাঁ সেই ভালো, আমি অন্যের ভালোবাসা দেখে যাব৷ অন্যের আনন্দ দেখে আমি নিজের কষ্ট ভুলব৷ সেই ভালো৷
© রোডায়া
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৮