আজ দ্বিতীয়বারের মত গয়নার বাক্স দেখলাম । অপর্না সেনের ভক্ত আমি অনেক আগে থেকে, তাই নিৰসন্দেহে মুভিটা আমার ভাল লেগেছে। তাছাড়া ভাল লাগার জন্য যে ইমোশনাল উপাদান প্রয়োজ তা একটা মুভিতে আছেই- তা হলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। যাই হোক মুভি নিয়ে একটা ভাল রিভিউ লিখতে চাই । কিন্তু এখনো ফিল্ম নিয়ে তেমন জ্ঞান অর্জিত হয় নি বিধায়- হয়তো অনেক দুর্বলতা থাকবে। এ কারণে পূর্বেই ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
গয়নার বাক্স' চলচ্চিত্রে একটি প্রাক্তন বিত্তশালী পরিবারের উপর দেশ বিভাগের প্রভাব যেমন ফুটে ওঠেছে, তেমনি সাধারণ দৃষ্টিতে ধরা পড়ে এমন হাজারো বিষয় ফুটে ওঠেছে যেমন: নারীর সামাজিক অবস্থা - সময় ভেদে, সময়ের সাথে সাথে নারীর চিন্তা ও স্বাধীনতার পরিবর্তন, বিধবার জীবন ও তার করুণ পরিণতি, এক নারীর সঙগ্রাম, সম্পদের তৃষ্ঞা লড়াই, জমিদার পরিবারের ভ্রান্ত আভিজাত্য, অন্ধ ধর্শবিশ্বাসের ফলাফল, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয়দের সহায়তা সহ বেশ কিছু বিষয়। কিন্তু আমি আজ এসব নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী নই, বরঙ মুভিটা দেখে আমার চিন্তায় যা কিছু প্রকম্পন তৈরি করেছে- তাই জানাতে আগ্রহী।
এই মুভিতে '৪৭ থেকে '৭১ এই সময়কালকে ক্যামরা বন্দী করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় আসলে তিনটি প্রজন্মের চরিত্র এই মুভিতে স্থান করে নিয়েছে। আসলে নির্মাতা এখানে তিনটি প্রজন্ম কেন এনছেন? - তা এটু চিন্তার বিষয় । মুভিটি তো লতার কণ্যার শিশুকালেই শেষ হতে পারত; । ক্নিতু চৈতালীকে নির্মাতা এমন বয়সে এনে মুভির ইতি টেনেছেন , যেন সে একটি মতামত প্রদানে সক্ষম হয় । এখানেই হয়তো মুভিটির গুঢ়ার্থ নিহিত আছে।
আসলে আমার ভাষায় গুঢ়ার্থ নিহিত আছে , সমালোচক বা চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের ভাষায় আছে কিনা আমার জানা নেই।
মুভিটিতে আমার মনে হয়েছে তিন প্রজন্মের চোখে ো চিন্তায় বাঙলাদেশকে অঙ্কন করা হয়েছে। পিস ঠাকুরমা - রাসমনি, মা- লতা আর কণ্যা- চৈতালী -- এরাই তিনটি ভিন্ন প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করছে । তার সাথে পাশ্বচরিত্রগুরোও করছে। তবে আমি এ তিন মূল চরিত্রের ঘটনাপ্রবাহে আমাদের ধারনাটি আলোচনা করতে চাই।
প্রথমে পিসি মা ওরয়ে পিসি ঠাকুরমা বা রাসমনির গল্পে আসি । তাদের আদি নিবাস এপার বাঙলার ফরিদপুর। দেশ বিভাগের কারণে ঠায়ৎ মিলল ভারতে । তবে তিনি প্রাণ থেকে মুছতে পারেন নি বাংলাদেশের নাম ো স্মৃতি । আজো তিনি ফরিদপুরকেই নিজের দেশ ভাবছেন । এপারের শুটকি, তাদের বাড়ি, তার শ্বশুর বাড়ি সব কিছুই তার খুব কাছের । এখানে তিনি ও বাংলাদেশ এক অবিচ্ছেদ্য সত্ত্বা।
এবার আসি লতার কথায়। সদ্য এক নারী এসেছে ভারতে নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে । তার সময় নেই বাংলা নিয়ে ভাবতে । তাকে জীবণ সঙগ্রামে নেমে পড়তে হলো । সে নিজেকে নতুন এ পরিবেশের উপযোগী করে নিতে চায় । বাংলাদেশকে ভাবার তার সময় নেই। দেশ বিভাগের কারণে যে নতুন প্রজন্ম ভারতে আশ্যয় গ্রহণ করেছে তাদের প্রতিনিধিত্ব করছে লতা। যারা নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে ব্যস্ত, তাদের অনুভূতিগুলো তখন ম্লান । সে পুরোনো স্মৃতিতে ফিরে যেতে চায় না তাই লতা ফিরিয়ে দিল বাংলাদেশী কবির ভালবাসা, আসলে প্রতীকীভাবে সে কি বাংলাদেমের প্রতি তার পিছুটানকেই ফেলে দেয় নি ??? লতা নিশ্চিত জীবন চায় , আবেগ ভরা ভালবাসা নয় । ঠিক '৪৭ পরবর্তী সময়ে যারা যৌবন বয়সেই বাংলাদেশ ছেড়েছে তাদের মনকেই লতা প্রতিনিধিত্ব করছে।
এবার আসি চৈতালীর কাছে । যার জন্ম ভারতে । আদতে সে ভারতীয়। তার কাছে বাঙলাদেশ তার প্রতিবেশী রাষ্ট্র । তাই এ প্রতিবেশীর বিপদে সে এগিয়ে আসে । বাংলাদেশের মুক্তি তাকে ভাবায় , বাংলাদেশীদের প্রতি সহানুভূতিশীল করে কিন্তু সমানুভূতি সেখানে অস্পষ্ঠ। আমার মনে হয়েছে চৈতালী আধুনিক ভারতের যুবসমাজের প্রতিনিধিত্ব করছে, যারা '৪৭ দেখে নি , এপার ও ওপার বাঙলার প্মিলন দেখে নি। তাই সে কেবল বাংলাদেশীদের বন্ধু , আত্মায় মিলন এখানে নেই।
কালোস্রোতে এপার এবং ওপার বাঙলার আত্মার মেলবন্ধন যে কিভাবে হারিয়ে গেল তাই নির্মাতা সূক্মভাবে তুলে ধরেছেন বলে আমার ধারনা।
এখানে গয়নার বাক্স হলো বাংলার মেলবন্ধনের প্রতি প্রাণের টান , যা রাসমনির কাছে খুবই যত্নে জিনিস , লতার কাছে সিন্দুকে লুকিয়ে রাখার বিষয় আর চৈতালীর কাছে খুবই সাধারণ বিষয় ।
আরো বিস্তর আলোচনা করা সমআভব । কিন্তু রাত ২ টায় লেখা শুরু করলাম বিধায় আর বিশ্লেষণ সম্ভব হল না । আর আজকে না লিখলে কাজটির ফলাফল হবে অনেকটা এমন যে বাকির নাম ফাকি' । তাই যা পেরেছি তাই লিখলঅম। পরে আরো বিস্তর বিশ্লেষণ লেখার ইচ্ছা আছে।