যদি আমি খুব বেশি ভুল না করে থাকি তাহলে কমপক্ষে পনের দিন আগে থেকেই ঢাকার অলিতে গলিতে, বাসের পেছনে সাইনবোর্ডে একটি গোলাপী রং-এর পোস্টার সবার নজর কেড়েছে । পোস্টারটি ছিল আসন্ন একটি নতুন সিনেমার নাম তার ভালবাসার রঙ (প্রথম ডিজিটাল সিনেমা) ।প্রথমে পোস্টারের ছড়াছড়ি দেখে আমার একটি ভুল ছিল নায়ক বৃঝি আবার অনন্ত ; আসলে মোস্ট ওয়েলকামের হাোয়া কিঙবা ঢাক্কা তখনো পিছু ছাড়েনি কিনা তাই । তবে সামান্য আহত হলাম বটে যখন দেখলাম এটা অনন্ত নয় বরঙ নতুন কেউ; তাই বলে মুভিটির শুভমুক্তি প্রথম লগ্নে মুভি দেখবো এমন ইচ্ছা ছিলো না। কিন্তু কপালের লেকন খন্ডাবে কে ? – দেখতে গিয়েছিলাম ঘেটুপুত্র কমলা দেখে আসলাম ভালবাসার রঙ।
মুভিটি শুরুর আগে নাম প্রদর্শন চলছে , ভাবলাম আসা বুঝি বৃথা নয়,ডিজিটাল বাংলাদেশে ডিজিটাল মুভি। কিন্তু আশার গুড়েবালি প্রথম দৃশ্যে; নদীর পাড়ে গোসলে আছে একদল তরুন তরুণী । তরুণরা লাফ-ঝাপের কারণে পানি ছিটকে পড়ছে তরুণীদের উপরএ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক। এর ই মাঝে কেই একজন বলে উঠলো ভাগ্যিস বাপ্পী এখনো আসে নি ; এ ছিল বাঙলা সিনেমায় নায়কের এন্ট্রি। কোথা থেকে যেন দৌড়ে এসে সবাইকে মাড়িয়ে ঝাপ দিল পানিতে । আর আমিো দেখতে পেলাম সেই অপরিচিত নায়ক চেহেরা ; প্রথম দেখায় তাকে হিরো হিসেবে পাফেক্ট বলা যেতে পারে, আর তার শিশুসুলভ কন্ঠে সে বাংলা দেখি ঠিকঠাক বলে নিয়েছে ( আলহামদুলিল্লাহ)।
পরের দৃশ্যেইনায়ক বাপ্পী তার মামার হৃদয়হরনকারীর বিয়ে ভেঙ্গে দিলো ; বিয়ে ভাঙ্গলে কী হবে-বাপ্পী তো হিরো!তার তো ভুল হবার নয়-বর নাকি এক ইয়াবা ব্যবসায়ী, তাই বিয়ে ভেঙ্গে দেয়ায় শুরু হলো নায়কের জয়গান ।
আরে! আমি তো কেবল নায়কের কথাই বলছি নায়িকা কই ?? এত অস্থির হবেন না , নায়িকা আসছে পাশ্চাত্য গানের তালে তালে বাথটাব নৃত্য করতে করতে (!) হায়রে বাংলা সিনেমা!!! বাথটাব নৃত্য শেষে শুরু হলো বারান্দায় নাচ, সেখানেই নায়কের চোখে পড়লো তার নায়িকা – যথারীতি যেই দেখা সেই প্রেম !!! এ সিনেমার ভাষায় প্রথম ভালবাসার রং এর ছটা ।
নায়কের হৃদয় চুরি করেছে নায়িকা আর নায়িকা শুরু করলো নায়ককে দিয়ে তার দাদুর ছড়ি ,খালার টেপরেকর্ডার চুরি করানো ্ চুরি করতে গিয়ে বাপ্পী খেল বেয়নেট (!) এর খোচা রক্তাক্ত নায়কের প্রেমে পড়লো এবার নায়িকা ।
রাগ করছেন নাকি ?? এখনো নায়িকার নাম বলা হলো না তাই । আসলে প্রথমবার দেখে আমি নিজেও বুঝিনি নায়িকার নামটা কী ?? মাহী ??? ফারিয়া আহমেদ ??? নাতি ফারিয়া রহমান ??? তাই নায়িকা বলাই ভাল ।
এ পর্বে অনেকটা সময় নায়ক উধাও !!! কোথাও দেখা মিললো না তার ।এরই মাঝে ভিরেনের আগমন ; গুনে গুণে চারজন ।নায়িকাকে বাচাতে তারা হামলা চালালো দাদার বাড়িতে । কেন ?? তার জন্য রয়েছে এক বিশাল ফ্ল্যাশব্যাক কাহিনী ; দেখবেন দয়া করে । শুধু বলে রাখি –তারই সারমর্ম হলো নায়িকার আছে হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি। সেই প্রথাগত বাংলা সিনেমা –বড়লোকের কণ্যা গরীবের পুত্র !!!
যাই হোক ভিলেনরা কিন্তু নায়িকাকে িনঃস্ব করে দিল আরেকবার ,আরেকবার বলছি কারণ সেই ফ্ল্যাশব্যাক কাহিনীতে একবার করেছিল কিনা তাই। পিতামাতা হারানো এতিম নায়িকার জন্য এবার প্রাণ হারালো পালক দাদু ( রাজ্জাক) মানে হলো চেৌধুরী সাহেব । তার কথা তো বল া হয় নি । চৌধুরী সাহেব খাটি ভাল মানুষ, দুর্নীতিবাজ লোকদের বাদ দিয়ে এক হিন্দু ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান করার উদ্দ্যোগ নিয়ে তিনি অসাম্প্রদায়িকতার নির্ভেজাল প্রতীক হলেন , আর কিছু না জেনেই ধনী এই মেয়েটিকে আশ্রয় দিয়ে নাতনি বানালেন আর বললেন টাকা দিয়ে চৌধুরীকে কেনা যাবে না;কী মহানুভব!
এদিকে বিপদগ্রস্ত নায়িকার গন্তব্য অবশ্যই নায়ক , তাই দেখা মিললো নায়কের , শুরু হলো বাচার সংগ্রাম ।সেখানে কিন্তু এক নতুন চরিত্রে উত্থান ভিলেন তুফান এর আগমন ঘটে গেছে , যার আবার লিভার নষ্ট। লিভার ঠিক করার টাকা নিয়ে তার ছোটভাই লাপাত্তা ; এমন ক্ষণে দায়িত্ব পড়লো নায়িকাকে ধরার ।অন্যদিকে সায়ক নায়িকা আশ্রয় নিল এক খামারবাড়িতে (!!!) সেখানে এসে দেখা মিললো তুফানের ছোট ভাইয়ের; আগমনের কারণ কিন্তু আইটেম গান !! আর আইটেম গার্ল বিপাশা !! আইটেম গানের পরই ছোট ভাইয়ের মৃত্যু আর খামার বাড়িতে টাকার জন্য তুফানের আগমন; যেখানে নিশ্চিতমনে চলছে নায়ক-নায়িকার কাছে আসো আসো খেলা। রোমান্সের পরই আবার সংগ্রাম । বনের ছেলে(!)[বিস্তারিত বললে বিরক্ত হতে পারেন ] নায়কের নায়িকাকে বাচানোর লড়াই । তবে এই সিনেমায় এক মজার বিষয় হলো কেবল নায়ক নায়িকাকে বাচায় নি; নায়িকাো তার প্রিয়তমকে বাচিয়েছে একাধিকবার । আহা!!! আমার বাংলা সিনেমার নায়িকা পেল এক সাবলম্বী চরিত্র।
এখানেো আমাদের নায়ক বাপ্পী কিন্তু ঘাতক নয় বরঙ ভিলেনরা একে অপরকে মেরে রেখে দিলো কেবল তুফানকে। তারই সাথে শেষ দৃশ্যে মারামারি চলছে নায়কের এমন সময় পুরিশের আগমন( এক ওসি যাকে ঘুষ দিয়ে কিনে নিয়েছিলো ভিলেনরা)। কিন্তু এখানেই আপনার ভুল বাংলাদেশের সব পুলিশ কী খারাপ নাকি ?? তো ঘুষের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে । এই সৎ পুলিশ অফিসার আর আমাদের নায়ক নায়িকা লিভার রোগীকে(ভিলেন তুফান) ওষুধের জন্য হাহাকার করাতে করাতে মেরে ফেললো; আধুনিক এনকাউন্টার তাই না !!!!
ভিলেনদের খতম করে নায়িকা কিন্তু তার হাজার কোটি টাকার সম্পদ পেয়ে গেছে তা হলো তার নায়ক , যার ভালবাসার রঙএ সে রাঙ্গাতে চায় নিজেকে । অথচ রক্তের তেউ না হয়েও ( সিনেমার ভাষা !!) যে দাদু তার জন্য জীবন দিল তার জন্য কোন কষ্ট নেই; বরঙ নায়কের জয় হলো –সে তো বলেছিল তার জীবন থাকতে তার বুক থেকে নায়িকাকে কেউ সরাতে পারবে না। তাই পারে নি শহীদ চৌধুরী সাহেব । জয় হোক নায়কের , জয় হোক ভালবাসার রং –এর ।
শেষ হয়েও হইলো না শেস আমার কথা সিনেমা না- নায়কে মামা (কাবিলা) ; প্রেমপাগল কাবিলা আত্মহত্যা অভিনয় করে রাজি করালো তার প্রেমিকাকে এরপরই গান- তারপর উভয় চরিত্রে বিদায় !!!অর্থাৎ প্রেম পেয়েছে তো কেল্লা ফতে !!!!
>>>>> লেখিকা রকি স্বপ্নচারী
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:৪৫