ইমু ভেবে রাখে। ছাদে রেলিংয়ের ধারে সার বেঁধে থাকা গাছগুলোর গায়ে মৃদু পরশ বুলিয়ে দেবে। চুপি চুপি বলবে। কি সবুজের দেবীরা সব! বলি, এত সবুজ কোথা থেকে আনো? তোমাদের রাজ্যে কি কোন দুঃখ নেই? দাও না, তোমাদের সবুজ প্রাণের আতর আমার গায়ে মাখিয়ে! সবচেয়ে সবুজ বনসাইটার কাছে গিয়ে সে শুধাবে - হে “মৃত্তিকার বীর সন্তান” তোমার মহিমাময় সবুজের আলাপন শোনাও।
ইমু লিখতে থাকে। দুহাত পেছনে দিয়ে উঁচু হয়ে চাঁদের দিকে তাকাবে। কি চন্দ্রাবতী! চাঁপাচন্দ্র! শুনতে পাও? ভালো আছো তো। খুব তো চারদিক আলোকিত করে রেখেছো । এত হাসি কোথা থেকে পাও, শুনি!
আচ্ছা তোমার এত হাসি, এত রূপ, রাত হলেই বুঝি ফোটে? বলো তো, কোন সে রাজপুত্র, যার কথা মনে করে এত হাসির ফোয়ারা ফোটাও। লে বাবা। রাজপুত্রের কথা বলতেই, চন্দ্রাবতী’র মুখ যেন এক পেঁজা তুলোর মতো ধূসর মেঘে ঢেকে যায়। উঁহু। লজ্জা পেয়েছো না। সে যাই হোক। তোমার ঐ হাসি কিন্তু কভু ভুলো না । ঐ হাসিতেই তো শত মানুষের মন মূহুর্তেই ভালো হয়ে যায়। তা জানো?
তোমার রাজপুত্রের ঠিকানা দিয়ো। খুব করে একদিন বকে দিবো। অমাবস্যা তিথি দির্ঘায়িত করে সে যেন আবার শিকারে না যায়। হা হা হা। মেঘ সরে গিয়ে লাজুক হাসি ভীর করে চন্দ্রবতীর মুখে ।
তারপর, শীতল সমীরণের মিষ্টি পরশ গায়ে মেখে, ইমু দু পাক ঘুরে আসবে ছাদের চারপাশে। কি খবর? দখিনা বাতাস। কোথায় লুকাও হে । ডুমুরের ফুল হয়ে । চৈত্রের দাবদাহে।
ইমু ফেইরী টেলস এ পড়া পরীদের কথা স্মরণ করে। লাল পরী, নীল পরী, ফুল পরী, জল পরী, মেঘেদের পরী। ইমু সব পরীদের সাথে কথা বলে। পরীরা তাকে পরীর দেশের গল্প শোনায়!
আচ্ছা, তখন বৃষ্টি এলে কেমন হবে? ঝম ঝম নুপূরের শব্দে সে দুহাত ছড়িয়ে ভিজবে। বৃষ্টিতে। আর কারও ভ্রুক্ষেপিত দৃষ্টি আসবে না গায়ে। “আমার নিশীথ রাতের বাদল ধারা”।
তারপরই। সেই ভয়ংকর কান্ডটি ঘটবে। প্রকৃতির নির্জনতায় কোন এক চন্দ্রাহত রজনীতে, ইমু তার মধ্যে জমে থাকা সমস্ত পাগলামির অন্ত ঘটাবে। তারজন্যেই তো এত প্রস্তুতি!
ঘড়ির কাটা দুইটা পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই। ইমু ছাদে। এখানে ছাদে উঠা বারণ। অবশ্য বারণ অমান্য করার মত অনেক বড় হয়েছে ইমু। তারপরও বড়দের কথা বলে সে অনেক বারণই মেনে চলে।
ইমু ধীরে ধীরে রেলিংয়ের একদম ধারে চলে যায়। তাকে কেমন পাগলামিতে পেয়ে বসে। হা হা হা করে অট্টহাসিতে সে ফেটে পড়ে। নিচের দিকে তাকাতেই তার মাথা কেমন যেন দুলে উঠে। সে চাইলেও মনে হচ্ছে এখন আর বুঝি সামলাতে পারবে না। ভয় হচ্ছে সে ঘুরে পরে যাচ্ছে বহু নীচের দূর্বাঘাসের শিশির ভেজা জমিনে। তার চোখে শেষবারের মতো অনেক রহস্যের দ্বার উম্মোচিত হয়। সে ঢের বুঝতে পারে। এভাবেই মানবের জীবনে এক একটি দুর্ঘটনা ঘটে যায়।
রহস্যে ঘেরা এই প্রকৃতি...। সব কিছুর মূলে নিজের অবদানকে কখনই প্রত্যক্ষ হতে দেয় না। প্রচ্ছন্নই থেকে যায় অনেক প্রশ্নের উত্তর। যেমন প্রচ্ছন্নই আছে ইমুর অন্তর্ধান রহস্যে প্রকৃতির ইন্ধন। সেদিন কিন্তু বৃষ্টিও নেমেছিলো। ডায়রীতে দুদিন আগের লেখা কিছু নোট ছিলো। গাছগুলোয় পানি স্প্রে করা হয়ে ছিলো। ইমুর হাত দুটো ভোরের শিশিরে সিক্ত হয়ে ছিলো। শুধু ছিলো না ইমু!!! অন্য কোন রহস্যময় পৃথিবীতে সে তখন বাঁধা।
সে কি ইচ্ছে করেই পড়ে গিয়েছিলো? নাকি না বুঝে তাল সামলাতে পারে নি? ইচ্ছে করেই কি হেঁয়ালির বশে সে এই পাগলামির কথাগুলো লিখেছিলো? যেমন হেঁয়ালি সে করতো সবসময়। নাকি প্রকৃতি খুব নিঁখুত ভাবেই শ্রাবণে’র পর ইমুকেও খুন করলো।
আফসোস! এই খুনের কোন আসামীই যে নেই!
সেই থেকে A11 ভবনের ছাদ আর কখনো খোলা হয় না।।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৩৮