বস্তুবাদ বনাম ভাববাদ
জীবন দর্শন নিয়ে চিন্তা করতে গেলে একটি বিষয়ের সম্মুখীন হতে হয় তা হলো আপনি বস্তুবাদী না ভাববাদী কেননা বস্তুবাদী হলে চিন্তা হবে বিজ্ঞান ভিত্তিক অর্থাৎ সায়েন্টিফিক মেথডে অন্যদিকে ভাববাদী হলে চিন্তা হবে ইমোশোনাল অর্থাৎ যুক্তিভিত্তিক নয় সেক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করার জন্য আপনাকে বস্তুবাদী অথবা ভাববাদী কোনটি হলেই চলবেনা আপনাকে হতে হবে রেশনাল বা বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এ না হলে শুরুতেই আপনি ডান বা বাম যে কোন মহলের তোপের মুখে পড়তে পারেন তা হলে চিন্তা করার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ অবস্থান হলো বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন হিসেবে যা সত্য তা গ্রহণ করার এবং যা মিথ্যে তা বর্জন করার মানসিকতা থাকা
প্রশ্ন হলো বস্তুবাদ ভিত্তিক সায়েন্টিফিক মেথড ফলো করলে সুবিধা অসুবিধা কোথায়?
এক্ষেত্রে আমাদের জানতে হবে সায়েন্স কি এবং এর কাজ কি এক কথায় সায়েন্স হলো বিশেষ জ্ঞান অর্জন অর্থাৎ, বিশ্বের যা কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য, তার সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা ও সেই গবেষণালব্ধ জ্ঞানভাণ্ডারের নাম বিজ্ঞান। বিজ্ঞানীরা বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে জ্ঞান অর্জন করেন এবং প্রকৃতি ও সমাজের নানা মৌলিক বিধি ও সাধারণ সত্য আবিষ্কারের চেষ্টা করেন। এ জন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট মেথডোলজি - তা হলো অবজারভেশন-ফরমুলেশন-এক্সপেরিমেন্টেশন-ডিসিশন। এক্ষেত্রে পূর্ব শর্ত হলো যে বিষয় সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান আহরণ করতে চাই তা বর্তমান থাকা চাই। যা দেখা যাবে, স্পর্শ করা যাবে অর্থাৎ পৃথিবীতে বিদ্যমান যে কোন বন্তু। যা দেখা যায়না সে বিষয়ে জ্ঞান আহরণের জন্য সায়েন্টিফিক মেথড অচল। তাই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব যাচাইয়ে এ মেথড অকার্যকর। কেননা সৃষ্টিকর্তাকে এক্সপেরিন্টেশন এর মাধ্যমে প্রমাণ করা যাবেনা। এ মেথডে আগালে আপনার নিরপেক্ষতা থাকবেনা কেননা আপনি বিজ্ঞান দিয়ে এমন কিছু যাচাই করতে যাচ্ছেন যা বিজ্ঞানের কাজ নয়। এ প্রয়াস হবে থার্মোমিটার দিয়ে পানির তাপমাত্রা মাপার মতো ব্যর্থ প্রয়াস।
এস্ট্রনোমি একটি বিজ্ঞান যা নতুন নতুন অনেক কিছু উদ্ঘাটন করে। কিন্তু বিদ্যমান বস্তু উদ্ঘাটন ব্যতীত নতুন কিছু করেনা। অর্থাৎ সায়েন্স যে শুধু বিদ্যমান বস্তু নিয়ে ডিল করে তা এস্ট্রোনমির ক্ষেত্রেও বুঝা যায়।
সায়েন্টিফিক মেথডের অপব্যবহার
----বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ভাষা শিক্ষা। এটি একটি অপব্যবহার। কেননা ভাষা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শেখা যায়না। বর্ণমালার সাথে পরিচিত হয়েই ভাষা শিখতে হয় অথবা মায়ের কাছে শুনে শুনে ভাষা শেখা হয়।
----বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কুরান শিক্ষা, এটিও একটি বোগাস। কেননা কুরআন শিখতে আরবী ভাষা শিখতে হয় যেখানে সায়েন্টিফিক মেথডের ভুমিকা নেই
----বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চক্ষু পরীক্ষা। হাস্যকর। টেকনোলজির ব্যবহার আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সমান নয়।
----সমাজ পরিবর্তনে বৈজ্ঞানিক কর্মপদ্ধতির ব্যবহার। যারা তাদের কর্মপদ্ধতিকে সায়েন্টিফিক আখ্যা দেয় এসকল পলিটিক্যাল পার্টি না বুঝে বিজ্ঞান না বুঝে সমাজ।
----বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হাত গণনা করা হয়। এটি মুর্খ লোকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার এক প্রলোভন
----বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সৃষ্টিকর্তার প্রমাণ। এটিও একটি অপপ্রয়াস। যারা করেন তারা বিজ্ঞান সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখেন কিনা সন্দেহ!
অপরদিকে, ভাববাদী হলেতো সে কোন ধরনের যুক্তি মানবেনা সৃষ্টিকর্তা বিশ্বাসও তার কাছে অন্ধ বিশ্বাস
তাদের বক্তব্য, অদৃষ্ট বা গায়েব বিশ্বাসের নামই ঈমান যা দেখা যায় তার নাম বিশ্বাস নয় এভাবেই তারা ইমোশনাল্লি লোকদের মধ্যে তাদের বিশ্বাস প্রচার করে থাকে যা চিন্তাশূণ্য লোকরা গ্রহণও করে চলেছে এদের চিন্তা মূলত ইমোশনাল এদের সাথে তর্ক করে খুব একটা লাভ হবেনা কেননা সে যা বিশ্বাস করে তা প্রমাণ করতে না পারলেও সে তা বিশ্বাস করবে তাকে অন্ধ বিশ্বাসী বললেও তার কিছু আসে যায়না সৃষ্টিকর্তা বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাস তা যদি হয় এরকম অন্ধভাবে তা সমাজের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে খুবই ভয়াবহ
বস্তুবাদী ও ভাববাদী- এই দুই ধরণের লোকই পক্ষপাতদুষ্ট এদের চিন্তা নিরপেক্ষভাবে শুরু হয়নি শুরুটাই তাদের কোন মটিভ বাস্তবায়ন তাই বস্তুবাদী ও ভাববাদী হলে আপনি নিরপেক্ষ গতিতে আগাতে পারবেননা আপনাকে হতে হবে বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন ও সত্যকে গ্রহণ করার মনমানসিকতা সম্পন্ন
চিন্তার ক্ষেত্রে তাই বস্তুবাদ ও ভাববাদদুষ্ট চিন্তা পরিহার আবশ্যক সকলের মধ্যে কমন হলো বিবেক এই বিবেকবুদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য সম্পন্ন মেথডোলজিতে আমাদের আগাতে হবে এই মেথডোলজি চিরন্তন ও শ্বাশ্বত এ মেথডোলজি কেউই অস্বীকার করতে পারবেনা কেননা এটা কোন বিশেষ বিশ্বাস দ্বারা দুষ্ট নয় এ মেথডোলজি কারো অজানা থাকলেও সে মূলত এভাবেই চিন্তা করে যেমনি গ্রাভিটি আবিস্কারের পূর্বেও গ্রাভিটি ছিল এবং এজন্যই আপেল নিচের দিকে পড়ত যদিও মানুষ জানতনা এ সত্য যেমনি সকল বিশ্বাসীদের নিকট গ্রহণযোগ্য রেশনাল মেথডোলজিও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে বাধ্য যদি কেউ অন্ধ বা বিচার মানি তালগাছ আমার গোছের না হয় (চলবে)