দেশে যারা বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত, যারা টক-শোতে কথা বলেন, লেখালেখি করেন তাদের সম্পর্কে আমাদের দলীয় পরিচয় জানা থাকলে তাদের কথাবার্তা নিয়ে আমরা হতাশ হইনা। যখন তারা নিরপেক্ষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস পান, তখন দু:খ লাগে।
বুদ্ধিজীবী যদি নিরপেক্ষ হন, তাহলে তাকে স্টাটাস কো-র উর্দ্ধে উঠতে হবে। প্রচলিত চিন্তার ফ্রেমওয়ার্ক এর বাইরে ভাবার শক্তি ও সাহস থাকতে হবে। নিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবী চেনার উপায়:
১. তার চিন্তার ভিত্তি তার নিজস্ব দর্শন যা যেকোন প্রভাব বলয়ের উর্দ্ধে।
২. তিনি প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার সমস্যা যেমনি বুঝতে পারেন, তা সমাধানে আমূল পরিবর্তন দরকার হলেও তা বলতে দ্বিধা করেননা।
৩. দর্শনগত মতপার্থক্যের কারনে তিনি কারও প্রতি আক্রমনাত্মক হননা। বরং বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনার মাধ্যমে তার বিরুদ্ধ মতকে পরাজিত করার চেষ্টা করেন।
৪. সুপার পাওয়ারকে চিরন্তন সত্য না ধরে, ইতিহাসের একটি অধ্যায় হিসেবে ভাবেন।
৫. সমাজের চরম সংকটকালে তারা সমাধানের পথ দেখান, যে সমাধানের ওপর তার নিজস্ব প্রত্যয়/দৃঢ় বিশ্বাস থাকে।
৬. এ জাতীয় বুদ্ধিজীবীর উদাহরণ-রুশো, ভল্টেয়ার যারা সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছেন নিজস্ব দর্শনের ওপর ভিত্তি করে। অনেক সমস্যা, নিপীড়ন তারা মাথা পেতে নিয়েছেন।
আমি রুশো ভল্টেয়ারের দর্শনে বিশ্বাসী নই। কেন নই সেজন্য বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা-বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু তাদের ভূমিকাকে আমি প্রশংসা করি। আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধির দৈন্যদশা দেখলে বোঝা যায়, এসমাজে সাধারন মানুষের চিন্তার বাস্তব অবস্থা।
এই অধ:পতিত সমাজে সত্য কথা বলার লোক আছে, কিন্তু তাদের স্বরকে উচু হতে দেয়া হয়না। এসমাজে বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধিকে, বুদ্ধিবৃত্তিক উপায়ে চ্যালেঞ্জ করার লোক আছে কিন্তু তাদেরকে সেই প্লাটফর্মে আসতে দেয়া হয়না। এদেশকে ভালোবাসার লোক আছে কিন্তু তাদেরকে দেশের জন্য কিছু করতে দেয়া হয়না।
তাহলে সমাজে যা ঘটছে সবই একটি মঞ্চ নাটক। টিভি নাটকে অনেক সময় ডায়লগ দেখি, "এসব কি নাটক হচ্ছে," "নাটকে যেমনি অভিনয় করা হয় তেমনি মডেলরা অভিনয়ের রোল প্লে করে" কিন্তু মোদ্দা কথা ভিত্তিটাই একটি নাটক। তেমনি দেশে যা হচ্ছে- বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবীদ, রাষ্ট্রনায়ক এর ভূমিকা সবই একটি নাটক।
তবে কে মঞ্চায়িত করেন এই নাটক? উত্তরটি সাবারই যানা-সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, যাদেরকে বুদ্ধিজীবীরাও ভয় পান।