দুই রূপবান যুবকের মৃত্যু, অনাকাঙ্ক্ষিত, অগ্রহণযোগ্য এবং এই বিচারহীন সমাজে এর বিচার আদৌ হবে কিনা কে জানে? শুধু এদের বিচার কেন প্রতিটি হত্যার বিচার হওয়া উচিৎ, যার সম্ভাবনা ক্ষীণতর হচ্ছে ক্রমেই। তবে একি সাথে তারা যে অন্যায় যে বিকৃতি প্রকাশ্যে নিয়ে আসছে তাও সাধারনের উদ্বেগের কারণ। সমাজ বিজ্ঞানীরা যাই বলুন এ ধরনের জীবন যাপন অবশ্যই অসুস্থতা, ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে নয় বরং একজন সাধারণ মানুষের চোখে দেখুন তারপর বুকে হাত দিয়ে বলুন আপনার পুত্র কি ভাই কি বন্ধুর এ হেন বিকৃতি আপনি বরদাস্ত করবেন কি? এ এক কড়াল নেশা, আপনি নেশায় আসক্ত, এটা ফলাও করে প্রচার ক্রার কিছু নেই। আর এ দেশে এখন যাই ঘটবে তাতেই ইসলাম আক্রান্ত হবে, এদের কে খুন করেছে কেন খুন করেছে কেউ জানে না। কিন্তু শুরু হয়ে গেলো ইসলামের বিরুদ্ধে আক্রমণ। এখন মাথায় টুপি লাগিয়ে যে কেউ যা খুশি করতে পারে তার পরিচয় মুখ্য নয় তার লেফাফাই আসল। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি হারাম, যারা এহেন আচরণ করবেন তারা ইসলাম থেকে বাদ হয়ে যাবেন, তাদের শাস্তি আল্লাহ সুবাহানাল্লাহত্বালা দিবেন, আমরা তাদের থেকে দূরে থাকবো, এদের বিচারের ভার কাউকে দেয়া হয়নি। আবার একি সাথে এটাও সত্যি এদের মৃত্যুর কারণ তো আরও হাজারটাও থাকতে পারে, ব্যক্তিগত ক্ষোভ, ঘৃণা, লালসা আমরা তো এখনো জানিনা, আমাদের চৌকস গোয়েন্দারা নিশ্চিত এর বিহিত করবেন, যেমন করেছেন “তনু” “ সাগর-রুনি” সহ সকলের। তখন জানতে পারব কে এই হত্যাকারী?
বাংলাদেশ এখন হত্যাপুরী, রোজ খুন যখম লেগেই আছে, তবে বিশেষ বিশেষ হত্যা তে আমরা বজ্র কণ্ঠে আওয়াজ তুলি আর কত গুলির ক্ষেত্রে থাকি নিসচুপ, কি আদ্ভুত! তনুর শত সহস্র ভাই হয় অথচ ঝিনাইদহের “সোহানের “ একটিও ভাই নেই, বয়স মাত্র ষোল তার কি অপার সম্ভাবনা ছিল কিনা আমরা জানিনা, তাঁকে নিয়ে কাউকে উদ্বিগ্ন হতে দেখিনি, হয়তো সে অর্থে তারা বিত্তশালী নন কিংবা শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির ধারক বাহক নন, তাই বলবার মত বিচার চাই বার মত কেউ নেই। অথচ এই হত্যা কান্ড কিন্তু ভয়ংকর একটি সিগ্নাল দিচ্ছ , কাদের মনে এত বিদ্বেষ থাকতে পারে যারা কিনা একটি শিশু কে হত্যা ও এই ভাবে অঙ্গহানি করতে পারে, এই ঘৃণার উৎস কোথায়?
যে শিক্ষক রাজশাহীর মারা গেলেন, তার ছবি দেখে বেশ সজ্জন ব্যাক্তিই মনে হয়, জানিনা কি কারণ এ মৃত্যুর, তবে উনি কোন উগ্র নাস্তিক প্রচারক নন। কেউ কেউ বলছেন উনি সেতার বাজান তাই খুন হয়েছেন, চাপাতি প্রস্তুত সব সংস্কৃতিবান ব্যক্তি বর্গের উপর, তাহলে আমার প্রশ্ন, রাজশাহীর এক নিরীহ শিক্ষক কে মারবে কেন? আমাদের ঢাকাই ছবির অশ্লীল নট, নটী কিংবা নির্মাতাদের কেন নয়, কিংবা অশ্লীল মডেল, কিংবা নাটকের পাত্রও পাত্রি গায়ক গায়িকা, প্রমিনেন্ট যারা তাদের কে তো মারার কথা। নাসির উদ্দিন হোজ্জার মত আমরা বাগানে চশমা খুঁজছি, কেন না ঘরে তো আলো নেই, চশমা কিভাবে পাবো আমরা। সারাক্ষন লেগে আছি ইসলামের পিছু।
যে কোন মৃত্যুই বেদনাদায়ক।
যে মার্কিন সৈনিকটি মধ্যপ্রাচ্যের উশর কোন মরুতে মরে পরে আছে, সেও কিন্তু মারাই গেছে, তার পরিবার পরিজনের থেকে দূরে এই করুন মৃত্যু কিন্তু তার ব্যক্তিগত লোভ লালসায় নয়, শুধু মাত্র কল অভ দ্য ডিউটি। তার পুত্র কন্যা তাদের কাছে তিনি ছিলেন এক প্রিয় পিতা, যদিও তার হাতে লেগে আছে অনেক শিশুর রক্ত কিন্তু সে ও তো মরল! মৃত্যু মৃত্যুই! আমি চাই না কেউ , সে যেই হউজ মরুক এভাবেই। কোন ব্যক্তিই চায় না আমার বিশ্বাস। সে ইসলাম বিদ্বেষই অশ্লীল লেখক, সে জামাতি রাজাকার, সে অমুক, সে তমুক এগুল কারোর মৃত্যুর কারণ হতে পারে না। অসভ্য রাজিব, কিংবা মূর্খ আশিকুর বা নীলয়ের, চটি লিখায় কি আসে যায়? কিসের ব্লগার! কিসের কি!! এরা সমাজের অত্যন্ত নিচুস্তরের অপদার্থ বিশেষ, তারা কি বলল এতে আমদের কিছুই আসে যায় না।
তবে পাঠ্য পুস্তকে যখন দেখি মগজ ধোলাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে তখন ভয় পাই, সংখ্যালঘু হিসেবে আতঙ্কিত হই। এর বিরুদ্ধে বললেই মৌলবাদী, না তাতো নয়, যা অন্যায় তা অন্যায়! সে বলতেই হবে, তুমি যতই চোখ রাঙাও। কোন কালচার কে শেষ করতে হলে তার শিক্ষা কে নষ্ট করতে হবে, সহজ সুত্র। ইসলামকে ধংস করতে চাও তবে শিশুদের মনে ভুল মন্ত্র দাও। ভুল বানানে আরবি লিখ, ভুল শিক্ষা নাও, পড় “ আল্লাহ ও অন্যান্য দেবদেবী ব্যতীত কারো নামে উৎসর্গ ক্রীত পশুর গোস্ত হারাম”! এটি প্রিন্টিং মিস্টেক হতে পারে না! আমার কাছে আমার আল্লাহই শ্রেষ্ঠ, একজন ক্রিশ্চানের কাছে তার গডই শ্রেষ্ঠ, হিন্দুর কাছে ভগবান কিংবা তাদের দেবতারা, এতে আমার কি আসে যায়, কিচ্ছু না, আমার ইসলাম আমাকে সহনশীলতার শিক্ষা দিয়েছে। কিন্তু এভাবে আমার ধর্ম বই এ দেবদেবী আর আল্লাহ কে এক কাতারে আনার কি অর্থ আমি জানিনা? বাংলা বই এ ইস্লামিক শিক্ষা মূলক কোন লিখা বাদ পরতেই পারে , যে হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ তার তো তা পড়ার কথা নয়, এতে আমার আপত্তি নেই বরং তাই হউক। যা থাকবে ধর্ম বইতে থাকবে, একি ভাবে অন্যান্য ধর্ম বিষয়ক লিখাও বাংলা বইতে রাখার প্রয়োজন নেই, ব্যস ল্যাঠা চুকে গেলো। কিন্তু যদি এর ব্যতিক্রম ঘটে তখন আতঙ্কিত হই। হবারই কথা! এর বিরুদ্ধে বলতেই হবে।
আরও ভয়ংকর একটি বিষয় না বললেই নয়, এই অবসরে , সেটি হচ্ছে দলীয় মার্কায় স্থানীয় নির্বাচন। আনেক আগে ইন্ডিয়ান বাংলা বই পড়লে দেখতাম তাদের গ্রাম গঞ্জে কংগ্রেস কি সি পি বি, কি বি জে পি নিয়ে অনেক দাঙ্গা ফ্যসাদ হচ্ছে ইত্যাদি লিখা থাকত, আমি অবাক হয়ে ভাবতাম আমাদের গ্রাম গুলি তো এমন নয়, বেশ সহনশীল কে কোন পারটির সেটি ইস্যু নয়, সুন্দর ভোটা ভুটি হত, জানিনা কার প্রেসক্রিপশনে এ সরকার এই ঘৃণার রাজনীতি আমাদের তৃণমূলে পৌঁছে দিলো, এর ভয়াবহতা আমাদের ধারণার ও বাইরে।