বাংলাদেশের সকল ক্ষেত্রেই সংকট দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সমাজ সর্বস্তুরে সংকটের তীব্র রূপ। মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়ছে এই সংকটে। কেউ পক্ষে কিউ বিপক্ষে। পক্ষ বা বিপক্ষের ক্ষেত্রে যুক্তি যত বেশি তার চেয়েও বেশি আবেগ এবং জেদ। যে কারণে সংকটের তীব্রতা বাড়ছে বই কমছে না।
বুয়েটের ভিসি প্রোভিসি না সরিয়ে সংকট সমাধান হবে না এমন কথা বলছেন একদল। তেমনি আরেক দল বলছে এটা ষড়যন্ত্র। তাদের সরালে ষড়যন্ত্রকারীরা প্রশ্রয় পাবে। জাহাঙ্গীরনগরে শরীফ এনামুল হক সবার দাবির প্রেক্ষিতে পদত্যাগ করলেও ভিসি প্যানেল নির্বাচনে তিনিই সর্বোচ্চ ভোট পেলেন। আসলে কোনটা আন্দোলন আবার কোনটা ষড়যন্ত্র সেটাও ঠাহর করা মুস্কিল।
রাজনীতিতেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে প্রধান দুই দলের মধ্যে গেইম চলছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ছাড় দিলেই মনে হবে তারা পরাজিত হলো। এই খেলায় কেউই হারতে চায় না।
এই সব দ্বন্দের খেলায় জিততে চাওয়ার চেয়ে অপরকে পরাজিত করাটাই মূল লক্ষ্য আর একারণে জেদ আবেগ অনেক বেশি প্রাধান্য বিস্তার করে।
আসলে দ্বন্দ্ব নিরসনের পন্থাগুলোও আমাদের অজানা নয়। তারপরও সম্মানজনক সমাধানটি আমরা খুজতেই চাই না।
দ্বন্দ্ব নিরসনের চারটি পন্থার কথা আমরা জানি। এগুলো হলো:
১. আমি জিতবো --- তুমি হারবে: সাধারণ মানুষ এটাতেই বেশি আগ্রহী। নিজেকে জিততেই হবে অপরকে হারতে হবে। এইরকম সমাধান আপাতত শান্তি পাওয়া যায় কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে স্থায়ী সমাধান নয়।
২. আমি হারবে- তুমি জিতবে: এটা একটা কৌশগত অবস্থান। রক্ষণাত্মক অবস্থান থেকে নিজে সাময়িক পরাজয় বরণ করে কিন্তু ভবিষ্যতে অপরকে হারানোটাই প্রধান লক্ষ্য।
৩. আমি হারবো- তুমিও হারবে: : এটা আসলে নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার পদ্ধতি। এটি কোনো যুক্তি সঙ্গত আচরণ নয়।
৪. আমি জিতবো -- তুমিও জিতবে: এটা অনেক যুক্তিসঙ্গত এবং উদারমনের সমাধান। সে জন্য দুই পক্ষ আলোচনা করে উভয় পক্ষই কিছু ছাড় দেয়। এর মাধ্যমে একটা যুক্তিসঙ্গত বা গ্রহণযোগ্য সমাধান বের হয়ে আসে।
আমি নিশ্চিত ভাবেই বিশ্বাস করি, সকল ক্ষেত্রেই এরকম একটা অবস্থা সৃষ্টি করা সম্ভব। কিন্তু এত বড় বড় জ্ঞানী মহাজনদের মাথায় এরকম এ্যাপ্রোচ তৈরি করা যাচ্ছে না কেন সেই বড় প্রশ্ন?
বড় মানুষদের সবই যত বড় মনে করে তাদের মনটা তত বড় নয়। বরং সংকীর্ণতায় পরিপূর্ণ। আর তাই অপরকে নাজেহাল করে নিজের জয় অর্জনের বিকৃত প্রচেষ্টা। মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটি হতাশা। আর এই হতাশায় নিমজ্জিত গোটাদেশ। তাই বোধ হয় কেউ বাড়ীর পাশের পড়শিকেও দূরদেশের লোক মনে করে। সাধারণ সমাধান খুজতেও চেষ্টা করি না।
সংকট আমাদের জীবনের অংশ। সেই সংকটকে সৃজনশীলভাবে মোকাবেলা করাটাই প্রধান যোগ্যতা। যারা প্রতিদিনের সংকট সমাধানের পথই খুঁজে পান না তারা দেশ বা সমাজ চালাবেন কেমন করে সেটাই প্রশ্ন।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৭:০৯