somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কতিপয় অতি-মুসলমান , ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং আমার ব্যক্তিগত মতামত ।

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
আজকাল এই বঙ্গদেশে একশ্রেণীর অতি-মুসলমানের আবির্ভাব হইয়াছে যাহারা পারিলে একেবারে ইসলামকে ধুইয়া তিনবেলা তাহা দিয়া পানাহার করে । এই ভণ্ডকূলের অত্যাচারে বোধকরি ফেরেশতাগণও বিরক্ত বোধ করিয়া থাকিবেন । এই অতি-মুসলমানগণ দিন-রাত্রি কেবল খুজিয়া বেড়ায় কোথায় কে দাড়াইয়া প্রস্রাব করিল আর কাহার হিজাব একটুখানি নামিল । ইহারা ‘রাস্তায় পড়িয়া থাকা অর্ধ-নগ্ন অভুক্ত মৃতপ্রায় ভিখারিণিকে দেখিয়া সামান্য বিচলিত হয় না , অথচ সুন্দরীর একটুখানি মাংস দেখা গেলে একেবারে হুলুস্থুল বাধাইয়া দেয় ’। ইহারা মাকে পায়ে ঠেলে – কিন্তু ফাকিস্তানি হুজুরদের পারিলে পশ্চাৎদেশ ধুইয়া দেয় । যদি তখন ভুল করিয়াও আমাদিগের মতন কোন সাধারণ মুসলমান যাইয়া তাহাদিগকে নবীর (সাঃ) মাতৃভূমির প্রেমের কথা শুনায় তাহলে তাহারা তলোয়ার বাহির করিয়া বলিয়া ওঠে ‘নিজের সুবিধা মতন হাদিস ছাড়িস- দূর হ’ ; যেন কেবল তাহাদের মুখ নিঃসৃত না হইলে তাহা তাৎপর্য পাইবে না । ইহাদের পূর্ব-পুরুষেরাই এককালে কবি নজরুলকে ধর্মদ্রোহী বানাইয়া ফতোয়া দিয়াছিল – আবার পরে তাহারাই নজরুলের গজল ছাড়া মিলাদ পড়াইতে পারিত না । তখন নজরুলই হইয়া ওঠেন তাহাদের এক ও একমাত্র কবি – অবশ্য তাহার পেছনেও স্বার্থ ছিল - আর তাহা হইল হিন্দু রবি ঠাকুর কে বাংলা হইতে উটপাটন !! হায়রে মুসলমান !!! ইহারা আফগানে যাইয়া পারিলে যুদ্ধ করিয়া শহীদ হয় ; খুবই ভালো কথা , – কিন্তু সিডরে দেশ লন্ড ভন্ড হইলে ইহাদের কর্ণে কোন আর্তনাদ পৌছায় না কেন ভাবিয়া পাই না । ইহাদের মন প্রাণে ‘পাক-সার-জমিন-সাদ-বাদ’ বাজিতে ত্থাকে , আমার সোনার বাংলা , শহীদ মিনার আর স্মৃতি-সৌধ তাই ইহাদের কাছে হিন্দুয়ানি । বাংলাও নাকি হিন্দুদের ভাষা !!! তাই বাংলার সাথে খানিক উর্দু মিশাইয়া না বলিলে ইহাদের জম্ম সার্থক হয় না ।
এই ভন্ড মুসলমানেরা যে কেবল দেশের আর সমাজের ক্ষতি করিতেছে তাহাই নয় , মাঝে মাঝে মনে হয় , ইহারা ইহুদি-নাসারাদের তৈরি কৃত্রিম মুসলমান – যাহারা ইসলামের সর্বনাশ করিতে জিহাদে নামিয়াছে । তাহারা মানুষ মারে আল্লাহর নামে , অথচ আল্লাহ তাহাদের কখন কবে মানুষ মারিবার অধিকার দিলেন ইহা ভাবিয়া পাই না । এই ভণ্ডগণ আবার অন্য কারো মুখে আল্লাহর নাম শুনিলেও দ্বিগুণ ক্ষেপিয়া ওঠে – যেন ভাব খানা এই যে,পরপ করুণাময় কেবল তাহাদেরি করুণা করিয়াছেন যে আল্লাহর নাম কেবল তাহারাই জপিতে পারিবে – আল্লাহর বাণীর ব্যাখ্যাও কেবল তাহারাই রচিবে ।
এই ভন্ড প্রতারকদেরকে আল্লাহ কী শাস্তি দেবেন জানি না, তবে তাহা যে শয়তানের শাস্তির থেকে কোন অংশে কম নয় – তাহা নিশ্চিত । কেননা শয়তান প্রকাশ্য বিশ্বাসঘাতক-আর উহারা ছদ্মবেশী শয়তান, উহারা মুখে আল্লাহর নাম লইয়া অন্তরে অন্য দেবতার মন্দির গড়িয়া তুলিয়াছে- সেই মন্দিরে সাধনা হয় না – হয় ধ্বংস আর সর্বনাশের নীল নকশা ।



২.
আজকাল এই অতি মুসলমানগণের অতি আক্রোশের শিকার ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল । এরা পারলে এখনই তাঁর আমলনামা লিখে দুইহাতে ধরিয়ে দিয়ে পারলে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে । ভাবটা এমন বঙ্গদেশে মানুষের আমলনামা লেখার দায়িত্বটা তাহারা বাপ-দাদার আমল থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে ভোগ দখল করে আসছে !! তিনি যাই লেখেন তাতেই তাদের আপত্তি নয় শুধু – একেবারে ঘোরতর যুদ্ধংদেহী মনোভাব । কেন তিনি লিখবেন ? তিনি যখন শিবিরদের নিয়ে লিখলেন , তখন তাঁরা বলল , ছাত্র লীগের কোন দোষ তিনি দেখতে পান না । সরকারের মদদপুষ্ট বুদ্ধিজীবি । তাঁরা ভুলে গেল টিপাইমুখ বাধ নিয়ে তাঁর অবস্থানের কথা । এবং অতঃপর তিনি বিশ্বজিতের লাল শার্টে কেপে উঠলেন , হয়ত কাদলেন ও । এবং সেখানে তিনি এক বড় অন্যায় করে ফেললেন । আর তা হল সাধারণ মুসলমান হয়েও অতি-মুসলমানদের কোরানের আয়াত শোনালেন । এ বড় অপরাধ – ভীষণ অপরাধ । সুতরাং সেই সব ছদ্মবেশীরা আবারো ক্ষেপে উঠল ।
কেউ ধার্মিক না অধার্মিক , আস্তিক না নাস্তিক – তা বিচারের দায় বা দায়িত্ব কার ? এই অতি মুসলমানদের , নাকি মহাস্রষ্টার ? এ বিচার করা তো তারই সাজে মহা বিচারক, মহা পবিত্র যিনি ।




৩.
আমি সেই সাধারণ মুসলমানদেরই একজন - যে সাধারণ মুসলমানরা শান্তি প্রিয় ভীষণ - তাঁরা যখন বহু দূরদেশের অসহায় মানুষের কান্না শোনে, তখন নিজেরাও কেদে ওঠে । তাঁরা অন্য মতের অন্য ধর্মের মানুষকেও মানুষ বলেই সম্মান দিতে জানে – কেননা তাদের পথ-প্রদর্শক, তাদের মহানবীর (সাঃ) শিক্ষাও যে তাই । তাঁরা ‘ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি’ করে না । তাঁরা রাস্তায় জ্যান্ত মানুষ পিটিয়ে মারে না – তাঁরা বোমা ফাটায় না – তাঁরা কোথাও আত্মঘাতি হামলাও করে না । তাদের কাছে একজন অসহায় মানুষ নিরাপদ- এবং নিরাপদ এই পুরো পৃথিবী । তাদের অনেকেই হয়ত ইসলামের তাত্ত্বিক বিষয়গুলি সম্পর্কে কম জানে , অনেকে জানেই না – কিন্তু তাদের অন্তরের প্রগাঢ় বিশ্বাস তাতে এতটুকুও লীন হয় না, তাঁরা হয়ত বেহেশতের সার্টিফিকেট বিক্রি করতে পারে না, কিন্তু তাদের সুন্দর হৃদয় তাদের স্বর্গ-যাত্রাকে সহজ করে নিশ্চিত । তাঁরা যেমন নিজেরা ভুল করে মহাস্রষ্টার কাছে ক্ষমা চাইতে পারে, তেমনি অন্যেরা ভুল করলে তাদের ক্ষমাও করতে পারে । এবং তাঁরা ভালোবাসতে পারে । তাঁরা ক্ষুদার্ত মানুষকে দেখলে তার মুখে খাবার তুলে দিতে চায় – তা সে হিন্দু কিবা মুসলমান যাই হোক না কেন । কারণ তাঁরা সবার আগে মানুষ । ইসলাম তাদের মানুষ হবার শিক্ষা দিয়েছে , জালিম হবার নয় । তাদের মহানবী (সাঃ) তাদের সহমর্মিতা শিখিয়েছেন , ভালোবাসা শিখিয়েছেন , বচসা আর হিংসা-দ্বেষ শিখাননি ।
এবং সেই অতি-মুসলমান কিংবা অতি হিন্দু , অতি খ্রিষ্টান অথবা অতি নাস্তিকদের প্রতি মহানবী (সাঃ) বলেছেন ‘তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না ’ । আর মহামহীম আল্লাহ জানেন - ‘তাঁরা অন্ধ ও বধির – তাঁরা কখনোই (সুপথে) ফিরে আসবে না । ’ (আমি জানি, আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের বাণী কারও বাপ-দাদার সম্পত্তি নয় – তা শোনা-মানা কিংবা বলবার অধিকার কেবল মুসলমানদের নয় , বরং পৃথিবীর প্রতিটি মানুষেরই আছে – তা সে যাই হোক – হিন্দু – বেদুঈন কিংবা নাস্তিক )
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৫৭
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×