ঠিক এই মুহুর্তে কয়েক লক্ষ ছেলে মেয়ে এক প্রচণ্ড অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে । সে অনিশ্চয়তা তাদের স্বপ্ন-মৃত্যুর আশঙ্কায়, তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবার, এবং একটি প্রজন্মের অকাল মৃত্যুর সম্ভাবনায় ।
হ্যা, আজ অশান্ত এদেশের শিক্ষাঙ্গন । বুয়েট,মেডিকেল,জাহাঙ্গীরনগর,ঢাবি,পাবনা সহ সারা দেশের ক্যাম্পাসগুলো আজ অশান্ত , অস্থির । দেশজুড়ে শিক্ষার্থীরা আজ ক্লাস ছেড়ে রাস্তায়, শহীদ মিনারে মিছিলে মিছিলে । অথচ এই মিছিল প্রগতির বিরুদ্ধে নয়, বরং ঐতিহ্য আর সুনাম রক্ষার তাগিদে ।
আর আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র ? তার কি আদৌ কোন মাথা ব্যথা আছে ? সত্যিই অবাক লাগে ।
জন্মলগ্ন থেকে যে বুয়েটের ইতিহাস ছিল মসৃণ, আজ হঠাতই সেখানে সবচেয়ে বেশি বিশৃঙ্খলা । সমস্ত বুয়েট পরিবার আজ একাত্ম হলেও, কেবল হাতেগোনা ক’জন মানুষের জন্য আজ রাষ্ট্রযন্ত্র এখনো নীরব । কেননা তার কাছে ৫ হাজার ভাবী প্রকৌশলী কিংবা ৫ শতাধিক শিক্ষক কোন গুরুত্ব বহন করে না । বরং করে হাতে গোনা ৪-৫ টা দুর্নীতিবাজ মানুষ । হায়!
মেডিকেল কলেজেও হটাত করেই ওরা উপদ্রব শুরু করল । যখন কয়েক লাখ শিক্ষার্থী তাদের স্বপ্ন বাস্তব করতে, চিকিতসক হবার প্রত্যয় নিয়ে মনে প্রাণে খেটে চলেছে দিনরাত, ওরা হঠাত শুনল, কোন ভর্তি পরীক্ষাই নাকি হবে না । আমি এখনো হিসাব মেলাতে পারছি না । গত বছর সৃজনশীল পদ্ধতি ছিল না, কিন্তু ছিল এবার । তবে গতবারের শিক্ষার্থীদের জি,পি,এ, এবারের শিক্ষার্থীদের সাথে মেলাবে কি করে !! সব গোল্ডেনই কি একই মানের ? অনেক ছেলে মেয়ে আছে, যারা নিতান্ত কিছু সাজেশন মুখস্থ করে ৩-৪ মাসের পড়া-শুনায় গোল্ডেন পেয়ে যায় । আবার অনেকে সত্যিকারের জেনে-বুঝে পায় । এ দুই মেলাবে কী করে ? সারা দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কি এক ? যে শিক্ষকেরা S.S.C , H.S.C ‘র খাতা মূল্যায়ন করেন তারাও কি একই মেজাজের এবং মানের ? কোচিং সেন্টারের বাণিজ্য বন্ধ করতে চাও, তো অনেক উপায়ই তো ছিল, এগুলো নিষিদ্ধ করে দেয়া যেতে পারে, কিংবা H.S.C শেষের ১০ দিনের মাথায় ভর্তি পরীক্ষাও নেয়া যেতে পারত । যদিও তাতে রাজধানী ও বড় বড় শহরের শিক্ষার্থীরাই লাভবান হত আর ক্ষতি হত মফস্বলের মেধাবীদের, তবুও সেখানে একটা আলোচনার – নিরীক্ষার জায়গা থাকত । কিন্তু এ যে একেবারে মাথা ব্যথায় মাথা কেটে ফেলার উপক্রম ।
বুঝলাম, আমাদের নেতা-নেত্রীদের অসুখ বিসুখে Mount Elizabeth ইত্যাদি আছে । কিন্তু তাই বলে আমাদের মত আমজনতাদের জন্য একেবারে certified কসাই এর পাইকারী ব্যবস্থা !!! নাকি এর পেছনে পুজিপতি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান গুলিকে uphold করার সরকারি আয়োজন ?এককালে এদেশের প্রাইমারি স্কুলগুলো ছিল শিশু শিক্ষার কেন্দ্র । অথচ কোন এক আলাদীনের দৈত্যের কারসাজিতে সেগুলো মুখ থুবড়ে পরে আর সেই জায়গায় আজো মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে প্রাইভেট কিন্ডারগার্টেন গুলি । সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজগুলিকে একবার এমন গ্যাড়াকলে ফেলতে পারলে কারা লাভবান হবে তা বলাই বাহুল্য । তবে জাতি যে ডুববে তা প্রতিদিনের পূর্বাকাশেই সুর্যোদয়ের চেয়েও সুনিশ্চিত ।
আজ বুয়েটের যে আন্দোলন, তা কোন গোষ্ঠীর বিশেষ স্বার্থ চরিতার্থ করতে নয়, বরং একটি প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করবার । এবং দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় কে প্রতিষ্ঠা করবার আন্দোলন । আজ মেডিকেল কলেজ গুলোয় যে আন্দোলন তাও ঠিক একই কারণে । সারা দেশের ক্যাম্পাস গুলিতে আজ ন্যায় উঠে দাড়িয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে । তাই এ আন্দোলন গুলি আমাদের একার নয় , আমাদের সকলের । কেননা এগুলি কেবল বিচ্ছিন্নভাবে বুয়েট, মেডিকেল বা স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানকে বাচাতে নয়, বরং একটি প্রজন্মকে রক্ষা করবার ।
তাই এ প্রজন্মের এই ন্যয় সংগ্রামে আমরা সবাই একই পথের পথিক । আমরা সবার সারথী । তাই আজ আমাদের ক্রন্দন আমাদের দুর্বলতা নয়, বরং আমাদের সুনিশ্চিত বিজয়ের প্রত্যয় ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১২:৪৭