মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
জানি প্রচন্ড ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন আপনি । অশান্ত দেশ, উত্তাল উন্মত্ত রাজনীতি আর প্রতাপশালী পররাষ্ট্রের আসন্ন ক্ষমতাধর অতিথি-সবকিছু নিয়ে আপনি প্রচন্ড ব্যস্ত । তারপরও নিখোজ ইলিয়াস আলীর ছোট্ট মেয়েটিকে কোলে নিয়ে আপনার দুঃখী মুখটি আমাকে কোথা থেকে একটা ভরসা দিলো । আপনাকে অনেক বেশি মমতাময়ী মনে হল । তাই আপনার কাছে হঠাত অস্ফূট কান্না গুলি লিখবার কথা মনে হল ।
প্রধানমন্ত্রী,
আমরা ক্লাসে ফিরতে চাই । জানি না, কোন কালে কোন দেশে কোন নাগরিককে এমন দাবি জানাতে হয়েছিল কিনা । তবু আমি জানাচ্ছি । মাননীয় নেত্রী, শুনেছি বঙ্গবন্ধু এদেশের প্রকৌশলী আর কৃষিবিদদের সমস্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতার উর্ধ্বে রাখতে বুয়েট আর ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের পদটি নিজের তথা প্রধানমন্ত্রীর জন্য রেখেছিলেন । আপনি এবার সে নিয়মের পরিবর্তন করেছেন । সাথে সাথে কি বদলে গেছে শেখ মুজিবের দেখা সেই স্বপ্নও ?!! আমার বিশ্বাস হতে চায় না এমন নির্মম সত্য ।
প্রধানমন্ত্রী,
আমাদের পিতৃতূল্য শিক্ষকগণ বুয়েটে মেধাকে অগ্রাধিকার দেবার জন্য, একে নিষ্কলুষ রাখবার জন্য তাদের সন্তানদের জন্য ভর্তি পরীক্ষার কোটা সুযোগও গ্রহণ করেন নি ।তারা কখনো ক্লাসে ১ মিনিট দেরী করেন না , কিন্তু ক্লাসের ঘন্টা বেজে গেলেও তারা অতিরিক্ত সময় থাকেন অহরহ ।যে শিক্ষকেরা যখন তখন আমাদের নানা সমস্যার সমাধান দেন নিজেদের রুমে,মোবাইলে,ই-মেইলে এমনকি ফেসবুকেও ।যে শিক্ষকদের নিজের সমস্যার কথা জানিয়ে রাত ১২ টায় মেইল করলে তারা সকাল ৮ টায় নিজেরাই ফোন করে কথা বলেন, যে শিক্ষকেরা রেসাল্ট একটু খারাপ হলে রুমে ডেকে বকা দেন আবার পরের পরীক্ষায় ভালো করবার তাড়া দেন, যে শিক্ষকেরা অসুস্থ ছাত্রদের দেখতে রাত-বিরাতে হাসপাতালে ছুটে যান, যে শিক্ষকেরা নিজেরা আন্দোলনে থাকলেও আমাদের তা থেকে দূরে থাকতে বলেন পরম স্নেহে, সেই সমস্ত শিক্ষক নিজেদের স্বার্থে ক্লাস বর্জন করবেন এই কথা বিশ্বাস করবার জন্য যতটুকু অমানুষ হতে হয়, আমরা ততটুকু হয়তো কোনদিনও হয়ে উঠতে পারবো না । আমরা আমাদের শিক্ষকদের প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করতে শিখেছি, পাশাপাশি তাদের প্রতি আমাদের একটা বড় বিশ্বাস আর ভালবাসাও আছে । আমরা তাদের দেখে শিখতে চেষ্টা করি, তাদের মত হবার স্বপ্ন দেখি । এতগুলি সাধারণ ছেলে মেয়ে একসাথে ভুল বিশ্বাস করতে পারে না ।বিধাতা এতটা অবিবেচক আর নির্দয় নন । তাহলে ?
প্রধানমন্ত্রী,
আপনি অনেক বড় মাপের একজন মানুষের সন্তান । আপনিও বড় মনের মানুষ-এটুকু আশা আমরা করতেই পারি । জানিনা, এদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলি ধ্বংস করে দেয়াতে কার কী স্বার্থ, তবে আমার বিশ্বাস, আপনি তা কোনভাবেই হতে দেবেন না, বিশ্বাসটা অনেক নড়বড়ে, তবুও আমি খড়কুটোই আকড়ে ধরতে চাই ।দয়া করে আমাদেরকে আর ঘরে বসে অসুস্থ করে দেবেন না, আমাদেরকে হতাশ করবেন না । আমাদের final term এর অনেক বড় ভাইয়ার scholarship cancel হয়ে যেতে পারে, অনেকের পাওয়া নতুন job গুলি হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে । আপনি একটু সময় দিতে পারেন ?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমাদের বাবা-মা’রা সারাজীবন অনেক অনেক কষ্ট ,করেছেন । সারাক্ষণ আমাদের নিয়ে, আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত থেকছেন । আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবার সময় তাদের বলেছিলাম, আর চিন্তা করো না, আমরা ভালো থাকবো । কিন্তু এখন সত্যিই আমরা ভালো নেই, আমরা আমাদের বাবা মা’র চিন্তিত মুখ দেখতে চাই না, দয়া করে এতগুলি মানুষের, এত এত বাবা-মা’কে বিনিদ্র রাত উপহার দেবেন না ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমি জানি এ কথা গুলি হয়ত কোনদিনই আপনার কাছে পৌছাবে না, কিন্তু আমি মহাকালকে বলে রাখছি, সত্যি যদি ধ্বংসে আর নষ্টে সবকিছুর পরিণতি ঘটে, তবে ইতিহাস তো নয়ই, অতীত,বর্তমান, ভবিষ্যত কোনটিই আমাদের ক্ষমা করবে না ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১২ রাত ১১:৩০