মূলত "কিশোর তারকালোক" কে বিনোদনমূলক ম্যাগাজিনের কিশোর সংস্করণ বললেও অতুক্তি হবে না। অন্যদিকে "কিশোর পত্রিকা" ক্ষুদে পাঠকদের অভিজ্ঞতা লেখা আহবানের মাধ্যমে বেশ কিছু লেখকও তৈরি করেছিল। ফলে দুটি পত্রিকা দুটি ভিন্ন ছাঁচে বা আদলে গড়ে ওঠে। "কিশোর তারকালোক" বর্তমানে প্রকাশিত হলেও "কিশোর পত্রিকা"-র প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায় বেশ আগেই।
দুটি পত্রিকার মধ্যে সুস্পষ্ট একটি পার্থক্য ছিল বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ নিয়ে। "কিশোর তারকালোক" বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করলেও "কিশোর পত্রিকা" তা করতো না। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল "কিশোর তারকালোক"-এর বিশেষ ঈদ সংখ্যা, ভূত সংখ্যা, সায়েন্টিফিক সংখ্যা, রহস্য সংখ্যা প্রভৃতি। বর্ধিত কলেবরে প্রকাশিত এসব সংখ্যার মধ্যে ঈদ সংখ্যায় বিভিন্ন লেখকরা ছাড়াও দেশের প্রথিত যশা ব্যক্তিরা লিখতেন। এদের মধ্যে অরুণ চৌধুরী প্রতি বছর কেবল "কিশোর তারকালোক"-এর ঈদ সংখ্যায় একটি ধারাবাহিক সায়েন্টিফিক উপন্যাস লিখতেন। তখন বাংলাদেশে সায়েন্টিক লেখা পাওয়া যেত কেবল সেবার বই পড়ে। অরুন চৌধুরীর সেই ধারাবাহিক উপন্যাসটি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করে। আমার এখনও মনে পড়ে, কেবল সেই উপন্যাসটি পড়ার লোভেই পরবর্র্তীতে বেশ কয়েক বছর "কিশোর তারকালোক" কিনতাম। কিন্তু তখনও জানতাম না তিনি কে, কি করেন?
পরবর্তীতে ২০০০ সালে যখন "আজকের কাগজে" কাজ শুরু করলাম তখন জানতে শুরু করলাম অরুণ চৌধুরী সম্পর্কে। তার লেখা উপন্যাস পড়তাম বা নাটক দেখতাম আগ্রহ নিয়ে। একটা ভাল লাগা ছিল তার লেখক সত্ত্বাকে ঘিরে। পরবর্তীতে যখন মিডিয়া জগত নিয়ে আরও জানলাম তখন অরুণ চৌধুরীর ব্যক্তিক পরিচয় নিয়েও বেশ অনেক ধরণের খবর শুনতাম। স্ত্রী চয়নিকা চৌধুরীর সঙ্গে তার পারিবারিক সম্পর্ক ভাল নয় বা চয়নিকার ব্যক্তিক ইমেজও খুব সুবিধের নয় বলে মিডিয়া মহল থেকে মাঝে-সাঝেই শুনতাম। কিন্তু অরুণ চৌধুরীর স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে হাস্যজ্জ্বোল গ্রুপ ছবিটি দেখে অধিকাংশ খবরকেই ভিত্তিহীন মনে করতাম।
অবশেষে ৩.১ মেগাবাইটের ছোট একটি ভিডিও ক্লিপিংস্ অরুণ চৌধুরী সম্পর্কে জানা-অজানা সব তথ্যের ভিত্তিহীনকে ভিত্তির মূলে দাঁড় করিয়ে দিলো। নিজের ব্যক্তি ইমেজ ও অবস্থানকে ব্যবহার করে তিনি যেভাবে মিডিয়ার নতুন মেয়েদেরকে ব্যবহার করেছেন সেটি যে তার অত্যন্ত দুর্বল ও নিম্ন মানসিকতারই পরিচায়ক সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ট্রান্সকম গ্রুপের মালিকানাধীন আনন্দধারা পত্রিকার সম্পাদক ছাড়াও নাট্যাঙ্গনে নাট্যকার ও পরিচালক হিসেবে নিজের যে ব্যক্তিক ইমেজটি তিনি গড়ে তুলেছিলেন সেটির নিঃসন্দেহে অপব্যবহার করেছেন। সাম্প্রতিক মিডিয়ায় স্ক্যাণ্ডালের অস্থিরতার ভীড়ে অরুণ চৌধুরীর এই ভিডিওটি নিয়ে ব্লগ ও ফেসবুকে রীতিমত আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে।
আনন্দধারার একটি সোর্স থেকে আজ খবর পেলাম যে, অরুণ চৌধুরী আনন্দধারার সম্পাদক হিসেবে আর থাকছেন না। তাকে সম্পাদক পদ থেকে ইতিমধ্যে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে তিনি যেমন নিজের ক্যারিয়ারের সর্বনাশ ডেকে এনেছেন তেমনি অসংখ্য পাঠককে করেছেন হতাশ। ঠিক এমনি আরেকটি হতাশ হয়েছিলাম হুমায়ূন আহমেদের কীর্তি দেখে!
একজন লেখক, সাহিত্যিক বা মিডিয়াকর্মী শুধু নিজের সত্ত্বারই পরিচায়ক হন না, বরং তিনি অন্যদের জন্যও আইডল হিসেবে চিহ্নিত হন। অথচ আমরা যাদেরকে আইডল হিসেবে নেব তারাই আজ ইমেজ সংকটে ভুগছেন। এক একটি স্বপ্নের অপমৃত্যৃ হচ্ছে প্রিয় মানুষটিকে নিজের ব্যক্তিগত লালসার কাছে পরাজয় হতে দেখে।
অথচ এমনটা কখনোই কাম্য ছিল না।
অথচ এমনটিই ঘটছে।
আর মানতে কষ্ট হচ্ছে, কারণ এটাই যে বাস্তবতা!
**********************************************
[ barta24.net-এ প্রকাশিত]