মন্ত্রী নিয়োগ পরীক্ষা
হঠাৎ করেই দেশসুদ্ধ লোক মন্ত্রীদের ব্যাপারে খুব চিন্তায় পড়ল। সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে মনোনয়ন পেয়ে যেকোন ব্যাক্তি মন্ত্রিত্ব পেয়ে যায়। ফলে সবসময় যা হওয়ার তাই হয়। পাঁচ বছর ধরে পাঁচ ভূতে মিলে দেশটাকে শোষণ করে। প্রতিটি দলের মন্ত্রীদেরই একই অবস্থা। চিরাচরিত মন্ত্রিদের উপর আর ভরসা না করে দেশটাকে বাঁচাতে জনগনের কিছু প্রতিনিধি একত্রিত হয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করল। সভায় সীদ্ধান্ত হল একজন ব্যাক্তি মন্ত্রী হতে হলে তাকে অবশ্যই কয়েকটি ধাপ পার হয়ে আসতে হবে।
ব্যাক্তিটিকে কমপক্ষে গ্র্যাজুয়েশন এবং বেশিরপক্ষে (A-Z) পর্যন্ত যত পারা যায় তত ডিগ্রীধারী হতে হবে। তবে নির্দিষ্ট কোন বিষয়ের উল্লেখ নেই। যেকোন বিষয়েই গ্রেজুয়েশন ডিগ্রী থাকতে পারে। প্রথম ধাপে মন্ত্রীত্বের মনোনয়ন ফরমের সাথে শিক্ষাগত যোগ্যতামূলক সার্টিফিকেট দেখাতে হবে এবং ফটোকপি জমা দিয়ে দ্বিতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপে ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় নম্বর বন্টন হবে এইরকম : বাংলা-৩০, ইংরেজী-৫০, বাংলাদেশ-৬০, আন্তজার্তিক-৬০। লিখিত পরীক্ষায় পাশ করা পরীক্ষার্থীকে তৃতীয় ধাপে দেশপ্রেমের পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে হবে। এক্ষেত্রে দেশপ্রেম সম্পর্কিত প্রশ্নের পাশাপাশি বুদ্ধিমত্তা যাচাই সংক্রান্ত প্রশ্ন থাকতে পারে।
যেমন- বাংলাদেশের একটি মুরগী বাংলাদেশ- ভারত সীমান্তে একটি ডিম পারল। ডিমটি কে পাবে? অপশনগুলো থাকতে পারে নিম্নরূপ-
১. মুরগীটি আপনার দেশের এবং ঐ ডিম হতে আরো একটি মুরগী এবং এই মুরগী হতে আরো বহু মুরগী হতে পারে জানা সত্বেও আপনি চাপের মুখে ডিমটি ভারতের কাছে ছেড়ে দিবেন।
২. বি.ডি.আর কে নির্দেশ দিবেন বি.এস.এফের সাথে যুদ্ধ করে ডিমটি উদ্ধার করতে যেখানে শক্তিশালী বি.এস.এফের হাতে দেশের সম্পদ বহু বি.ডি.আর জোয়ান মারা পরার আশংকা থাকে।
৩. ডিমফুটে বাচ্চা বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। তারপর বাচ্চাটির ডি.এন.এ পরীক্ষার মাধ্যমে আইগতভাবে ডিমফুটা বাচ্চাটি দেশে ফিরিয়ে আনবেন।
৪. সমঝোতার মাধ্যমে একটি বৈঠক করে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি করবেন যাতে উল্লেখ থাকবে প্রথম ছয়মাস যেসকল মুরগী সীমান্ত রেখার উপর ডিম পারবে সেগুলো ভারতের আর পরের ছয়মাসের গুলো বাংলাদেশের হবে।
সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্তরা মনোনয়ন পেয়ে জনগনের ভোটে মন্ত্রী হতে পারবে।
জনগনের সভায় গৃহীত এই সীদ্ধান্ত চারদিকে বাহ্ বাহ্ রব ফেলে দিল। এতদিনে দেশ নিয়ে একটা উত্কৃেষ্ট উপায় বের করা গেল। আর সকলে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল এই ভেবে যে, এইভাবে মন্ত্রী নির্বাচন করলে কোন ভেজাল থাকতেই পারে না। খাঁটি এবং যোগ্য ব্যাক্তি মন্ত্রী হয়ে দেশের সেবা করতে পারবে।
জনগনের এই সীদ্ধান্তের পর দেশে বেশ কিছু পরিবর্তন এল। এর মধ্যে-
• টাইপিং ও প্রিন্টিং ব্যবসা বেড়ে গেল, নীলক্ষেতে নকল সার্টিফিকেট তৈরীর প্রতিভা তারা আরো বেশী করে ঝালাই করে নেওয়ার সুযোগ পেল, সাথে যোগ হল বাড়তি কিছু আয়।
• বিভিন্ন দুগ্ধজাতীয় পুষ্টিকর খাবার কোম্পানীর বিক্রি বেড়ে গেল। এমন একটি প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে হলে মন্ত্রী মনোনয়নে পরীক্ষার্থীদের মেধার বিকাশে পুষ্টিঘাটতি থাকলে তো আর চলবে না। বেশ কিছু পন্যেরও নতুন বিজ্ঞাপন তৈরী করা হল। হররলিক্স (হরলিক্স নয়) কিন্তুপুষ্টিকর দুগ্ধজাতীয় খাবারের বিজ্ঞাপনে সন্তানকে উদ্দেশ্য করে বাবার পুষ্টির জন্য ডাক্তারের পরামর্শ ধারন করা হল হররলিক্স তোমার বাবাকে করে Taller, stronger এবং sharper (ক্ষমতাবলে এত Taller যে তিনি দুনীর্তি ও স্বজনপ্রীতি করেও আইনের উর্দ্ধে উঠে যাবে, শরীরের চামড়া হতে হার্ট পর্যন্ত এত stronger (শক্ত) হবে যে হাজার অপমানও গায়ের চামড়া ভেদ করতে পারবে না আর এত sharper যে তীক্ষ্ণ বুদ্ধি দিয়ে রাজনীতি করে দেশের বারোটা বাজাতে পারবে)
• বাজারে নতুন+পুরাতন পাবলিকেশনের নতুন নতুন বইমডেল টেস্ট এর সাথে সাথে কোচিং ব্যবসা হুর হুর করে বেড়ে লাভজনক হয়ে গেল।
এ তো গেল একদিকের কথা অন্যদিকে মনোনয়ন পরীক্ষায়ও অনৈতিক কার্যকলাপ ধরা পড়ল। তিন তিনবার প্রশ্নপত্র ফাঁস হল। নতুন প্রশ্নে পরীক্ষা নিতে বেশ হিমশিম খেতে হল।
অর্থাত্ দেশের স্বার্থরক্ষার্থে সমস্যা সমাধানের নতুন সীদ্ধান্ত বাহবা পেলেও এর অন্তরালে তৈরী হল আরো কিছু সমস্যার। এর সমাধানই বা কি হতে পারে তা কারোই জানা নেই।
[এটি একটি অতি কাল্পনিক গল্প, জীবিত/মৃত/অর্ধমৃত/মুমুর্ষ/এখনও জন্মায় নি এমন কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে কোন প্রকার মিল খঁজে পেলে কাঁকতালীয় ঘটনা ছাড়া আর কিছুই নয়]
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৭