বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসে এখন পর্যন্ত একজন গনমানুষের নেতা ছিলেন। শুরুতেই এই গনমানুষ শব্দটা কেন ব্যবহার করলাম তার একটা যুক্তিযুক্ত কারন আছে। আমার আজকের লেখার প্রতিপাদ্য বিষয় মূলত মাগুরা-১ এর রাজনৈতিক তত্ব ও অত্র এলাকার দুজন আওয়ামী লীগের নেতার নিয়ে।
‘গনমানুষ’ শব্দটার শাব্দিক অর্থ দাড়ায় যিনি ধর্ম বর্ণ জাতি বেজাতি দল বে-দল উচু নিচু এই সকল বা সমগ্র মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য বা পেয়ে থাকেন। তিনিই মূলত গনমানুষের নেতা। আর বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসে একজনই গনমানুষের নেতা ছিলেন, তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
এবার মুল কথায় আসা যাক। মাগুরার আনাচে কানাচে একটা পোষ্টার বেশ চোখে পড়ার মত। বর্তমান প্রধানমন্ত্রি জননেত্রী শেখ হাসিনার সহকারী সচিব জনাব সাইফুজ্জামান শিখর সাহেবের রাজনৈতিক পোষ্টারে তার নামের আগে ঠিক এই টাইটেলটাই দেয়া আছ। ‘‘গণমানুষের নেতা এ্যাড: সাইফুজ্জামান শিখর’’ এই কারনেই গনমানুষ শব্দটা দিয়ে আমার লেখাটা শুরু হয়েছে। এখন কোন নেতা যদি সয়ং বঙ্গবন্ধুর সাথে তুলনা করেন তবে সেটা কতটুকু অন্যায় বা অপরাধ সেই বিচারটা না হয় সাধারন মানুষের হাতেই ছেড়ে দিলাম।
এবার আসি অন্য প্রসঙ্গে। ৭৫ জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। যারা হত্যা করেছিলেন তারা শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে এমন ইতিহাস কলঙ্কিত কাজ করে বসলেন। দেশদ্রহী সেই মানুষ(অমানুষ) গুলোর নাম উচ্চারণ করে মুখটাকে অপবিত্র করতে চাচ্ছি না। বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করার পর জননেত্রী শেখ হাসিনা ভাগ্যগুনে বেঁচে যান। আজ যিনি দেশের তথা সারা বিশ্বের একজন শক্তিশালি নেতা বা প্রধানমন্ত্রি। অসহায়ত্ব কি জিনিস, পরিবার হারিয়ে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা কি কঠিন কষ্ট সেটা জননেত্রী খুব ভালো করে জানেন। আমি মূলত মাগুরা-১ ও এখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার উদ্দেশ্যে ল্যাপটবের কিপ্যাড চাপা শুরু করেছি।
জনাব সাইফুজ্জামান শিখর সাহেব মরহুম আসাদুজ্জামান সাহেবের পুত্র। এই আসাদুজ্জামান সাহেব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে টানা কয়েকবারের সংসদ সদস্য ছিলেন তবে তার এরিয়া মাগুরা-১ নয় মাগুরা -২ আসন। তার পুত্র সাইফুজ্জামান শিখর সাহেব এবারো মাগুরা-১ থেকে মনোনয়ন কামনা করছেন যেটা তার আসন নয়। এখানে ন্যায় অন্যায় বা জোর জবরদোস্তির বিষয়টা না হয় নাই বা লিখলাম। গত ২৫ বছর ধরে মাগুরা-১ বরাবরই অবহেলিত। সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম এম এস আকবর থেকে শুরু করে বর্তমান সংসদ সদস্য এম ওয়াহাব সাহেব পর্যন্ত যারাই সংসদ সদস্য হয়েছেন তাদের কারো সাথেই এলাকার মানুষের কোন সংযোগ ছিলো না বা তারা চেষ্টাও করেনি সাধারন মানুষের সাথে বা এলাকার মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার। আর এই কারনেই মাগুরা-১ অবহেলিত। কিন্তু এই মাগুরাবাসি আর কতকাল অবহেলিত থাকবে?
জনাব সাইফুজ্জামান শিখর সাহেব এবারও মনোনয়ন চাচ্ছেন। কিন্তু তার সাথেও কি অত্র এলাকার সাধারন মানুষের সাথে কোন সংযোগ আছে!? এলাকার তৃনমূল রাজনীতির কোথাও কোন দিন কি তার অংশ গ্রহন ছিলো? এখন এই মানুষটা যদি এবার মনোনয়ন পান তাহলে কি মাগুরা-১ এর সাধারন মানুষের ভাগ্যন্নয়ন হবে? তিনি কোন দিন কোন কৃষকের পাশে বসে ভাত খেয়েছেন? কোন শ্রমিক তার সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়েছে? গত কুড়ি বছরে তিনি এলাকার কোন নেতা বা সাধারন মানুষের দু:খ কষ্টের সারথী হয়েছেন? তিনি তো মাগুরা-১ আসনের সীমানাতে বড় হননি। তার বাড়ি বা জন্মস্থানও এখানে না! তিনি ভোটারও এখানের নয়! তাহলে তিনি কি করে মাগুরা-১ থেকে মনোনয়ন কামনা করেন? তাকে দিয়ে এলাকার কি উন্নতি হবে? আগে যারা নেতা ছিলেন তারা বছরে একবার এসি গাড়িতে করে এলাকায় এসেছেন! গলা ফাটিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন, বোতলের মিনারেল ওয়াটার খেয়েছেন, মাংশ পোলাও খেয়েছেন তারপর চলে গেছেন। আর চলে গেছেন মানে আর কোন খবর নেই। তো এই ধরনের নেতাগুলো কি করে সাধারন মানুষের ভাগ্যন্নয়ন করবে? তৃনমূলের রাজনীতিতে যাদের অবস্থান নেই, এলাকায় যাদের বিচরন নেই, এলাকার মানুষের সাথে যাদের সম্পর্ক নেই তারা নেতা এমপি মন্ত্রি হলে কি করে এলাকার সাধারন মানুষের উন্নয়ন হবে? দলের ভেতরে গ্রুপিং মারামারি খুনোখুনি আর দলের ভাঙ্গন ছাড়া এরা তো এই কুড়ি পচিশ বছরে কিছুই দিতে পারেনি! তাহলে তারা কেন আবার মনোনয়ন পাবেন বা চাইবেন বা সংসদ সদস্য হবেন?
৭১ এ যখন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো তখন দেশের টানে তার আগেই পাকি আর্মি থেকে পালিয়ে এসেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মরহুম আকবর হোসেন মিয়া। নিজের জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়লেন। দেশ বাঁচানোর সংগ্রামে কৃষক শ্রমিক দিনমুজুরদের নিয়ে গড়ে তুললেন এক বিশাল মুক্তিফৌজ! যার নেতৃত্বে ছিলেন এই আকবর হোসেন। নিয়মিত অনিয়মিত প্রায় ১২’শ মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে একের পর এক সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহন করে পাকি নরপশু আর রাজাকারদের কোমর ভেঙ্গে দিলেন। শ্রীপুর বাহিনী তথা আকবর বাহিনীর নাম অল্পতেই সারা বাংলাদেশ তথা বিশ্বের কাছে সংবাদ মাধ্যম দ্বারা পরিচিত পেলেন। এই আকবর বাহিনী প্রধানের হাতে একে একে বধ হতে থাকলো পাকি আর্মি আর রাজাকার বাহিনী। বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করলেন দেশ স্বাধীন হলো। কিন্তু তিনি কোন খেতাব পেলেন না। তাতে তার কোন আফসোস ছিলো না। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি মাগুরার রাজনীতিতে, মাগুরার সাধারন মানুষের কাছে যে পরিমান শ্রদ্ধা, ভালোবাসা সম্মান পেয়েছেন তা মাগুরাতে আজ পর্যন্ত কোন মানুষ পাননি! সরকারের থেতাব পাননি কিন্তু সর্বস্তরের সাধারন মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। কৃষক শ্রমিক বা নিন্ম আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের সাধারন মানুষের পাশে থেকে সেবা করে যারা নেতা হয় তারা ছাড়া আর কেউ কি বুঝবে সাধারন মনুষের দু:খ যন্ত্রনার কথা। যিনি বছরে একবার এসি গাড়িতে করে এলাকায় এসে বক্তৃতাবাজি করে পোলাও মাংশ দিয়ে ভাত খেয়ে চলে যান তিনি কি করে বুঝবেন না থেয়ে থাকা মানুষের কষ্ট!
জনাব কুতুবুল্লাহ কুটি মিয়া আকবর বাহনী প্রধান, উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাা সভাপতি ও সাধারন মানুষের ভালোবাসা শিক্ত পরা পর তিন বারের উনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মরহুম আকবর হোসেন মিয়ার সুযোগ্য পুত্র, দির্ঘ ৩০ বছর ধরে সাধারন মানুষের সঙ্গে মিশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হয়ে শ্রীপুর উপজেলা তথা মাগুরার ছাত্রলীগ যুবলীগ এরপর আওয়ামী লীগের হাল ধরে আছে শত নির্যাতন সহ্য করে। এলাকার প্রতিটা মানুষের সাথে যার আত্বার সম্পর্ক, এক সঙ্গে চলাফেরা খাওয়া দাওয়া, তৃনমুলের প্রতিটা নেতা কর্মির ভালোবাসা ও সমর্থনে আজ তিনি সবার প্রিয় কুটি ভাই। তার জনপ্রিয়তাকে নষ্ট করার জন্য, তাকে দমানোর জন্য ওই এসি গাড়িতে আসা সাবেক নেতা কর্মিসহ বর্তমান সাইফুজ্জামান শিখর সাহেব ক্ষমতার বাহাদুরি দেখিয়ে যে অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে সেটা কখনোই সহ্য করার মত নয়।
জননেত্রী শেখ হাসিনার কথা বলছিলাম, যিনি পুরো পরিবারকে হারিয়ে নি:স্ব হয়েছিলেন। সব কিছু হারিয়ে শত নির্যাতন সহ্য করেও সাধারন মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন করে আজ বিশ্বের একজন শক্তিশালি নেতা বা প্রধানমন্ত্রি হয়েছেন। যার পাশে সাধারন মানুষ ছাড়া আর কেউ ছিলো না।
জনাব কুতুবুল্লাহ কুটি মিয়া মা বাবা হারিয়েছেন অনেক বছর হলো। পরিবার স্ত্রী ছেলে মেয়ে ভাই বোন ছাড়া এখন তিনি একা বাড়িতে বসবাস করেন। পরিবারের এমন কেউ নেই যে তাকে ভাত রান্না করে খাওয়াবেন। স্ত্রী সন্তান ভাই বোন সবাই আমেরিকা প্রবাসি। ওত বড় একটা বাড়িতে পরিবার ছাড়া তিনি একা থাকেন শুধুমাত্র সাধারন মানুষের ভালোবাসা ও ভরসা নিয়ে। দির্ঘ বছর ধরে তিনি একাই লড়ে যাচ্ছেন সাধারন মানুষের অধিকার আদায়ে। প্রতিনিয়ত তার উপর যে পরিমান নির্যাতন হয়েছে বা হচ্ছে তাতে তিনি চাইলেই আমেরিকায় পালিয়ে যেতে পারতেন স্ত্রী সন্তানদের কাছে। কিন্তু তিনি যাননি। স্ত্রী সন্তানদের ভালোবাসা,মায়া, কষ্টকে বুকে চেপে রেখে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হাতের মুঠোয় করে সাধারন মানুষের জন্য তিনি সংগ্রাম করে যাচ্ছেন! যে মানুষটি রাজনীতির জন্য, আওয়ামী লীগের জন্য এত কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছেন সেই মানুষটি কি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তথা রাজনীতির কাছে যোগ্য মুল্যায়ন পাবে না। মাগুরা-১ আসনে যিনি সর্বোচ্চ ভোটের মালিক, মাগুরা -১ এ যিনি সর্বস্তরের ভালোবাসায় শিক্ত নেতা, দল মত নির্বিশেষে যাকে সবাই পছন্দ করে, আওয়ামী লীগের কান্ডারী হয়েও কথিত আওয়ামী লীগ দ্বারা শত নির্যাতনের স্বীকার, মন্দিরে, মসজিদে গোপনে যার জন্য দোয়া প্রার্থনা কামনা করা হয়, যাকে মাগুরা-১ এর সংসদ সদস্য হিসেবে দেখার জন্য ৯৫ ভাগ আন্তর থেকে কামনা করে, সেই মানুষটিকে কি মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সামনের নির্বাচনে মাগুরা-১ থেকে নৌকার টিকেট দিবেন না! মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও আঞ্চলিক বাহিনীর প্রধান মরহুম আকবর হোসেন মিয়া না হয় তার বীরত্বের জন্য কোন থেতাব বা সম্মান না পেয়ে পরোপারে চলে গেলেন কিন্তু তার সন্তান কি মুলায়ন পাবেন না? এলাকার মানুষের ভাগ্যন্নয়ন কি হবে না হে জননেত্রী? আপনি কি আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছেন হে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৮