গত কয়েক মাসে বাসের ও নিয়ন্ত্রনহীন গতিতে হাত এবং পা হারিয়েছেন রাসেল সরকার,রোজিনা আক্তার, খালিদ হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, রুনি আক্তার, আয়েশা খাতুন ও রাজিব হোসেন। যেখানে রাজিব হোসেন ও রোজিনা আক্তার মারা গেছেন। এই মধ্যো পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন পুলিশ বলে তার পক্ষে হত্যা চেষ্টা মামলা হয়েছে কিন্তু বাকিদের ক্ষেত্রে মামলার কোন গুরুত্ব পায়নি বরং অনেকেই জামিন নিয়ে বের হয়ে গেছে।(সুত্র প্রথম আলো)
বাস মালিকরা অর্থবিত্তে বলীয়ান, রাজনৈতিক ক্ষমতায় প্রতাপশালী; চাঁদার টাকায় গড়ে তোলা বেতনভুক্ত ক্যাডার বাহিনীও আছে তাদের। মোটা অঙ্কের মাসোহারার টাকায় আজ্ঞাবহ রাখেন থানা-পুলিশ, ট্রাফিক-প্রশাসন। প্রকাশ্য চাঁদাবাজি, মানুষ হত্যা থেকে শুরু করে মারাত্মক সব অপরাধ ঘটিয়েও তারা বরাবরই থাকেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। দাপুটে মালিকদের ক্ষমতা, প্রতাপ আর তোয়াক্কাহীনতায় তাদের বাস-মিনিবাসগুলো আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মালিকদের মাসোহারার সুবাদে নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা ও ইচ্ছাকৃত অপরাধ ঘটিয়ে বেমালুম রেহাই পেয়ে যান সংশ্লিষ্ট বাস-মিনিবাসের চালক-সহকারীরা। তারা গাড়ির ভিতরে যাত্রীদের নানাভাবে হেনস্থা করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, ইদানীং গাড়ির ভিতরে নারী যাত্রীদের আটক রেখে গণধর্ষণসহ নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটাতেও দ্বিধা করছে না।
শাস্তি পেতে হয় না বলেই চালক-হেলপারদের মধ্যে দিন দিনই অসতর্ক, অবহেলা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বেড়েছে, ফলে পাল্লা দিয়েই বাড়ছে দুর্ঘটনা আর হতাহতের সংখ্যা। বিশেষজ্ঞরাও অভিমত প্রকাশ করে বলেছেন, চালকদের বেপরোয়া মনোভাব, শাস্তি না পাওয়া, পুলিশের দায়িত্বহীনতা, বিআরটিএর দুর্নীতি দিন দিনই সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রাকে আকাশচুম্বি করে তুলেছে। অথচ সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দেশে আইন আছে, রয়েছে শাস্তির বিধান। কিন্তু এই আইনের প্রয়োগ সন্তোষজনক নয়। তাই সড়ক-দুর্ঘটনার দায়ে অভিযুক্ত চালকদের সাজা ভোগের নজিরও দেখা যায় না।
সড়ক দুর্ঘটনায় হত্যাজনিত মামলাতেও সাজা ভোগের নজির খুব কম। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী গাড়ির চালক-মালিকরা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ কারণে একশ্রেণির চালক-শ্রমিক দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এত জানমালের ক্ষতি সাধনকারী দুর্ঘটনার কোনোটিতেই ঘাতক গাড়িচালক ও মালিকদের আদালতে শাস্তি পেতে হয় না। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটি কয়েক ঘণ্টার বেশি আটকেও রাখা যায় না। পুলিশের সঙ্গে বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে ঘাতক চালকের পরিবর্তে ভাড়াটে হেলপার হাজত খাটেন। ঘাতক চালক পরমুহূর্ত থেকেই মালিকের অন্য কোনো গাড়িতে বহাল তবিয়তে ডিউটি করে থাকেন।পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে ‘মারা গেলে ২০ হাজার, আধমরায় ৫ হাজার’ কথাটি প্রবাদ বাক্যের মতোই প্রচলিত হয়ে আছে। এর অর্থ হচ্ছে, বেপরোয়া গাড়ি চালানোজনিত দুর্ঘটনায় কেউ নিহত হলে মিট-মীমাংসার নামে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা। আর মারাত্মক আহত কিংবা আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণকারীর জন্য এই বরাদ্দ সর্বোচ্চ হাজার পাঁচেক টাকা।
আমরা আসলেই কেউ আইনের উর্দ্ধে নয় সবাই নিম্নে তাই গাড়িগুলোও মানুষের উপর দিয়ে চাপা দিয়ে চলে যায়! আইন তো আমাদের উর্দ্ধেই চাপা খেয়ে হাত পা তো ভাঙবেই দু একজন মানুষ তো মরবেই!
গাড়ির এই বেপরোয়া গতি আর পরিবহন শ্রমিক মালিকদের বর্বরতার বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোন সংখ্যক মানুষকে রাস্তায় নামতে দেখিনি বা এটার বিরুদ্ধে জোড়ালো কোন প্রতিবাদ করতে দেখিনি! অথচ দেশে সামান্য কোন ঘটনা ঘটলেই বোদ্ধাদের মুখ আর কলম গর্জে ওঠে, রাস্তায় হুঙ্কার ছেড়ে লাফিয়ে পড়ে হাজার হাজার মানুষ! অথচ প্রতি বছর শুধু মাত্র ঢাকার এই পাবলিক পরিবহনের বেপরোয়া গতি আর তাদের অযাচিত ও অনিয়ন্ত্রিত চালনায় শত শত সাধারন মানুষ প্রাণ হারায়। না হয় তাদের বিরুদ্ধে শক্ত আইনি সাজা না হয় তাদের বিরুদ্ধে বড় কোন প্রতিবাদ! সবাই যেন এ ক্ষেত্রে মুখে কুলুপ এটে বসে থাকে। এদেশের বামদল গুলোকে দেখি কিছু হলেই সরকার বিরোধী আন্দোলনে হুঙ্কার ছেড়ে নেমে পড়ে বিশাল ব্যানার নিয়ে কিন্তু এখানেও তাদের কোন প্রতিবাদ করা দেখলাম না! নাকি এখানে তাদের কোন রাজনৈকিত স্বার্থ নেই!
থাক বামেদের কথা বাদই দিলাম কারন ওনারা ওনাদের রাজনৈকিত স্বার্থের বাইরে কোন কিছুই চিন্তা করেন না কিন্তু এদেশে বর্তমানে বিশেষ করে ঢাকা শহরে সুশিল সমাজ থেকে শুরু অসংখ্য নামহীন সংগঠন বা গোষ্টি তৈরি হয়েছে যারা কিছু হলেই হুঙ্কার ছেড়ে রাস্তায় নেমে পড়ে! তারা কি ঢাকার পাবলিক পরিবহনের এই বেপরোয়া গতি আর মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে জোড়ালো কোন প্রতিবাদ করতে পারে না! এটার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি নয় কি! নাকি আপনাদের কারো ভাই বোন সন্তান প্রিয়জন বা রক্তের কেউ এই পরিস্থিতিতে পড়েনি!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৮