somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবা দিবসের বাবা অভ্যাস বসত বাবা

১৮ ই জুন, ২০১৭ রাত ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যে বিষয়ে লিখছি সেটা একটা ইমোশন। মানুষ স্বভাব বসতই খুব ইমোশনাল বিশেষ করে আমরা বাঙ্গালীরা হয়তো একটু বেসিই ইমোশনাল! আর আমাদের ইমোশনটাও সম্ভবত ক্ষনিকের! মানে হুট করেই ইমোশনটা কাজ করে। সেদিন ভারতের একটা বাংলা মুভি দেখলাম। মুভির নাম ‘বেলা শেষে’ আমাদের সমসাময়ীক জীবনে আমরা প্রতিটা বিষয়ে আসলে অভ্যাস হিসেবে নিয়েছি। সিনেমাটিতে ঠিক সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে।ভাই কে ভাই ডাকা, মা কে মা ডাকা এটা আমাদের অভ্যাস! আমরা অভ্যাস বসত বাবাকে বাবা বা মাকে মা বলে ডাকি! সিনেমাটিতে সেটাই বোঝানো হয়েছে! সেখানে বাস্তবে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে আমরা প্রকৃত পক্ষে প্রতিদিন অন্তর থেকে ভালোবেসে কতবার বাবা কে বাবা বা মা কে মা বলে ডাকি!
আমাদের এই অভ্যাস গুলোর জন্ম হয় শুধু মাত্র স্বার্থের কারনে। আমার বাবার কাছে যদি টাকার প্রয়োজন হয় তখন আমরা বাবা কে বাবা বলে ডেকে খুব সম্মান দেখানোর চেষ্টা করি।তখন অসংখ্যবার বাবা কে বাবা বলে হাক ডাক ছাড়ি! কিন্তু যখন বাবার কাছে কোন কিছুর প্রয়োজনীয়তা থাকে না তখন আমি বা আমরা কতবার বাবা কে বাবা বলে ডাকি! বাবাকে বাবা ডাকতে হবে বা মাকে মা ডাকতে হবে তাই ডাকি! এটা আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে! কিন্তু প্রতি দিন স্বার্থের বাহিরে আপনি কতবার বাবা কে বাবা আর মা কে মা ডেকেছেন বা ডাকেন। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারেন আপনি দিনে অন্তত একবার নিতান্তই ভালোবেসে বাবা ডাক টা দেন।
বেলা শেষে সিনেমাটি তে দেখানো হয়েছে, গত ৫০ বছর ধরে এক সাথে সংসার করার পরে তাদের মনে হয়েছে তারা এতদিন যে এক ছাদের নিচে কাটিয়েছে তা ছিলো নিতান্তই তাদের অভ্যাস! স্বামির কাপড় ময়লা হলে কাপড় ধুয়ে দেয়া, খাবার তুলে দেয়া রাতে এক সাথে ঘুমানো! এটা তাদের অভ্যাস হয়ে গিয়েছিলো। এসব করতে হয় তাই করেছে! ৫০ বছরের মাথায় এসে তাদের মনে হলো নিতান্তই অভ্যাসের কারনে গত ৫০ বছর সংসার টা টিকিয়ে রেখে শেষ বয়সে এসে পৌছেছে! প্রকৃত পক্ষে তাদের ভেতরে কোন ভালোবাসা ছিলো না! সব ছিলো অভ্যাস! তাদের মনে হয়েছিলো স্বামির কাপড়টা বা ম্বামিকে প্লেটে খাবার তুলে দেয়া অথবা স্ত্রীকে শাড়ি কিনে দেয়া বা বাসায় ঢুকে স্ত্রীকে ডাকা সবই ছিলো তাদের অভ্যাস! স্মামী হলে তার কাপড় ধুয়ে দিতে হবে বা তার সাথে এক বিছানায় ঘুমোতে হবে এটা অভ্যাস! এটা ভালোবাসা নয়!ঠিক বিয়ের ৫০ বছর পরে তাদের মনে হয়েছে আসলে তাদের ভেতরে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ছিলো না। সবই ছিলো অভ্যাস!
ছোট বেলা থেকেই আমরা জন্মদাতা পিতাকে বাবা ডেকে অভ্যস্ত ছিলাম তাই বাবা ডাকতে ডাকতেই বড় হয়েছি। কোন কিছুর প্রয়োজন হলেই বাবা ডাকতে ডাকতে বাবার কাছে ছুটে গিয়েছি। বাবা ডেকে আপনি আমি অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। কিন্তু আপনি প্রতিদিন কয়বার প্রয়োজন ছাড়া অন্তর থেকে ভালোবেসে বাবা ডাকটা দিয়েছেন!? আমরা সবাই এমন অভ্যাস করেই বড় হই। এক সময় বিয়ে করি তারপর আর অভ্যাস বসতও বাবা ডাকতে ভুলে যায়।
আজ আমার লেখাটা মূলত বাবা কে নিয়ে। তথাকথিত ক্যালেন্ডারের নিয়ম মেনে আজ সবাই বাবা দিবস পালন করবেন বা করছেন। আজ বাবা কে স্মরণ করে হয়তো সামাজীক যোগাযোগ মাধ্যাম গুলোতে স্টাটাস দিয়ে বাবার প্রতি সম্মান দেখাবেন। হয়তো সে কারনেই আজ আমি বাবা কে নিয়ে দু কলম লিখতে বসেছি।
আপনি বড় হয়ে ঢাকায় পড়াশোনা করছেন। মাসের শেষে আপনার পকেট খালি হয়ে যায়। পকেট খালি হওয়া মানেই বাবাকে স্মরণ করা। দুদিন আগে থেকেই বাবা কে ফোন করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বাবার শরীরের খোঁজ খবর নেন। তারপর হাতে টাকা আসলেই আবার দির্ঘদিন বাবাকে ভুলে যান। নিতান্তই প্রয়োজন না হলে আপনি বাবা ডাক দেন না। অথবা বাড়ি আছেন। বাহির থেকে এসে বাবা কে দেখে বাবা ডাকটা দিলেন। বাবাকে দেখে বাবা ডাকতে হয় এটা আপনি ছোট বেলা থেকে অভ্যস্ত! এই অভ্যস্থতা বা অভ্যাসের কারনেই বাবা ডাকটা দেন। কিন্তু বাস্তবে ভালোবেসে আপনি দিনে কয়বার বাবা কে বাবা বলে ডাক দেন?
ছবির এই মানুষটি আমার বাবা। দির্ঘ জীবন যুদ্ধের এখন শেষ প্রান্তে। গত চার বছর হলো তিনি বিছানায়। বয়সের ভারে তিনি এখন ন্যুয়ে পড়েছেন। একজন মানুষ ছাড়া তিনি হাতটা পর্যন্ত নড়াতে পারেন না। অথচ এই মানুষটাই তার ওই হাত দিয়ে ২০ জনের একটা পরিবারের ভরণ পোষনের ব্যবস্থা করতেন! তার ছোট ভাই গুলোকে মানুষ করেছেন, তার ছেলে মেয়েদের মানুষ করেছেন একা কৃষি কাজ করে! গ্রামের জোতদার এই কৃষক বড় একটা পরিবারকে এক হাতে সামলে রেখেছিলেন! পরিবারের কাউকে কোন বিষয়ে অপূর্ণতার জন্য উহ শব্দটি করার সুযোগ দেননি এই মানুষটি। সারা জীবন পরিশ্রম করে সবার চাহিদা মিটিয়েছেন কারো দারস্থ হননি! বরং তার ছায়া তলে এসে অনেক অসহায় মানুষ ভালো ভাবে বেঁচে থেকেছেন।
আমার বাবা ছিলেন আশে পাশের কয়েক গ্রামের ভেতরে প্রথম সারির বড় কৃষক এবং ব্যবসায়ী। এলাকার মানুষ তথা পরিবারে কেউ কখনো তার চোখের উপরে চোখ তুলে কথা বলার সাহস করেনি।বাঘের মত ভয় পেয়েছে সবাই বাবাকে দেখে। যে মানুষটি অসংখ্য মানুষের রুটি রুজির আবাস স্থল ছিলেন, যে মানুষটি তার দুই হাত দিয়ে পরিশ্রম করে অসংখ্য মানুষকে ছায়া দিয়ে গেছেন! আজ সেই মানুষটিই কারো সহযোগিতা ছাড়া একটা হাত ঠিকমত নড়াতে পারেন না। বয়সের কাছে আমার বাবা আজ পরাজীত। যে মানুষটি কখনো কোন প্রয়োজনে কারো দারস্থ হননি আজ সেই মানুষটিই একটু উঠে বসার জন্য কারো পানে চেয়ে থাকেন!কেউ একজন আসবেন তারপর তিনি বসতে পারবেন। কেউ না আসলে তার আর বসা হয় না! কেউ একজন ধরে বসালেই তিনি তখন বসতে পারেন! একটা হিংস্র বাঘকে খাঁচায় আটকালে কেমন আচরন করে তা আমার বাবাকে দেখে বুঝতে পারি! বয়সের খাঁচায় তিনি এখন এমন ভাবে বন্ধি হয়েছেন যে নড়াচড় ই করতে পারেন না।
হ্যাঁ ছবির এই মানুষটিই আমার সেই মহান বাবা! যিনি শিখিয়েছেন কি ভাবে মানুষকে ভালোবাসতে হয়, কি ভাবে মানুষকে শ্রদ্ধা করতে হয়, কি ভাবে পরিশ্রম করে সফলতা অর্জন করতে হয়।কিন্তু আমি কি আসলেই আমার বাবাকে তার পূর্ণ সম্মান করতে পেরেছি বা করেছি কখনো! আমরা কি আসলে কেউ ই আমাদের বাবাদের সে ভাবে অন্তর থেকে সম্মান করি বা করার চেষ্টা করি? আজ বাবা দিবস বলে আমি আপনি বা আমরা সবাই বাবাকে স্মরণ করছি বিন্তু বাকী দিনগুলো। আমার বাবা যখন সুস্থ ছিলেন তখনও বুঝতে পারিনি আসলে বাবা কি! আজ বুঝতে পারি আসলেই বাবা জিনিস! যার কোন বিকল্প নেই, যার কোন তুলনা নেই! সময় এবং ব্যস্ততার কারনে আমরা হয়তো বাবাকে ভূলেই যায়! হয়তো দিন শেষে অভ্যাস বসত বাবাকে একবার বাবা বলে ডাকি! কিন্তু দিনে বা মাসে কতবার বিনা স্বার্থে, নিতান্তই ভালোবেসে বাবা কে বাবা বলে ডাকি!?
অনেক কিছু লিখতে চেয়েছিলাম বা লেখার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু কেন জানি শেষ পর্যন্ত আর অনেক কিছু লেখা হলো না। শেষ পর্যন্ত লেখাটা আর আসলো না! কেন আসলো না সেটা হয়তো আমি বলতে পারবো না্। ওই যে প্রথমেই বলেছিলাম আমরা অভ্যস বসত ইমোশনাল। হুট হাট করেই ইমোশনাল হয়ে যায় আবার হুট করেই ইমোশন চলে যায়! আমার ও হয়তো সেটাই হয়েছে তাই অনেক কিছু লিখতে চাইলে ও লিখতে পারলাম না, প্রকাশ করতে পারলাম না! আমরা সবাই হয়তো এমনই।
তবুও পৃথিবীর প্রতিটা বাবার প্রতি আমার শ্রদ্ধা সালম ও সম্মান জানাচ্ছি। সবার বাবা সুস্থ ও সবল থাকুক সেই সাথে আমার বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করছি। বছরের একটি দিন বা মূহুর্ত যেন বাবার জন্য না হয়। প্রতিদিন প্রতিটা মুহুর্থ হোক শুধুমাত্র বাবা জন্য নি:স্বার্থ ভালোবাসা। প্রতি দিন অন্তত একবার অন্তর থেকে ভালোবেসে বাবা কে বাবা বলে ডাকবো, অভ্যাস বসত নয় এই হোক অঙ্গিকার।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×