৭১ এর যুদ্ধে অনেক বিদেশী নাগরীকদের অবদান ছিলো বাংলাদেশের জন্য তার মধ্যো বৃটিশ নাগরিক মিস লুসি হল্ট অন্যতম যিনি প্রায় ৬০ বছর ধরে আছেন বাংলাদেশে। সেটা নিজের পছন্দেই। মানুষটা জন্মগত দিক থেকে ভীনদেশি হলেও, মন ও মননে পুরোপুরি বাঙালি। হয়ত বাংলাদেশে মানুষদের থেকেও একটু বেশি। ১৯৩০ সালে ইংল্যান্ডের সেন্ট হেলেন শহরে মিস লুসি হল্টের জন্ম। মাত্র ৩০ বছর বয়সে বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনের হাসপাতালে আসেন সেবায়েত হিসেবে। কথা ছিলো দুই বছর বাদে ফেরবার। কিন্তু এখানকার প্রকৃতি, মানুষ, আর মানুষের ভালোবাসা আবৃষ্ট করে তাকে। তাই তো গেল ৫৬ বছর ধরে লাল-সবুজের দেশে মাখামাখি ব্রিটিশ নাগরিক লুসি হল্টের। চলনে-বলনে সবকিছুতেই তার বাঙালিয়ানা।
বিনে পয়সায় কখনো সেলাই শেখানো, তাঁত প্রশিক্ষণ, পথ শিশুদের পাঠদান, আবার কখনো বা হাসপাতালে সেবা দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলায়। আর এসব কাজের শুরুটা বরিশাল থেকে। পর্যায়ক্রমে নওগাঁ, রাজশাহী, যশোর, ঢাকা, গোপালগঞ্জ, খুলনা হয়ে আবারো বরিশালেই। পরিবার-পরিজন, বৃটিশ আভিজাত্য ফেলে এ বিদেশিনী একা থাকেন অক্সফোর্ড মিশন হোস্টেলের ছোট্ট খাট্টো একটা রুমে। নাম মাত্র উপার্জন তার। পেশা বলতে বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ। কেউ কেউ তার কাছে আসেন ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদের জন্যও। এসব কাজ করেন তিনি হাসিমুখে।
বৃটিশ নগরিক হওয়াতে ৭০ পাউন্ড বা হাজার ছয়েক টাকা পান মাসিক ভাতা হিসেবে। এটা তিনি আবার অসহায়দের মধ্যে বিলিয়ে দেন। একাত্তরের স্মৃতি রয়েছে লুসির চোখজুড়ে। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে বেশ কয়েক মাস যশোরের ফাতেমা হাসপাতালে আহতদের সেবা দেন তিনি।
সাদাসিধে জীবনে অভ্যস্ত লুসির এদেশে রক্তের কেউ না থাকলেও আত্মীয়তা করেছেন অনেক বাঙালীর সাথেই। তার মেয়ে, মেয়ে জামাই, আদরের নাতি-নাতনি রয়েছে। যদিও এরা কেউ-ই রক্তের তো নয়ই, বিদেশীও নয়-সব বংলাদেশী। এই নারী বাংলাদেশকে তার নিজের দেশ হিসেবে বেছে নিয়েছেন তা নয়, এই দেশেই মরতে চান তিনি। আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে বরিশালে
লুসি দ্বৈত নাগরিকত্ত্ব চেয়েছিলেন, পাননি। শুধু বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নেবেন তাও সাহস পাচ্ছে না। কারণ বৃটিশ নাগরিক হওয়াতে তিনি ভাতা পান সেখান থেকে। সেটি বন্ধ হবে যদি তিনি সেখানকার নাগরিকত্ব ছেড়ে দেন।
আর্থিক নিঃস্ব এ মানুষটির সরকারের কাছে আহ্বান, তাকে দ্বৈত নাগরিত্ব প্রদানসহ বছরে ভিসা নবায়নের ৩৮ হাজার টাকা মওকুফের। বলেন, ‘আমি অনেক বছর পর্যন্ত এদেশে আছি। বাংলাদেশকে ভালোবাসি। সরকার চাইলেই বছরের ঐ ৩৮ হাজার টাকা কনসিডার (বিবেচনা) করতে পারে। আমি খুব কৃতজ্ঞ থাকবো যদি টাকাটা কমানো হয়। পেনশনের যে টাকা পান তাতে খুব কষ্ট হয় । তার কাছে ফিক্সড কোন টাকা নাই।
ব্রিটিস এই নাগরীক লুসির দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রাদানসহ বছরের ৩৮ হাজার টাকা বাংলাদেশ সরকার মওকুফ করবেন। তাকে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সনদ ও সম্মাণনা দিবেন এই অনুরোধটুকু একজন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিসেবে দাবি করছি। সেই সাথে দাবী করছি এই মানুষটিকে ভালো ভাবে বেঁচে থাকার জন্য সরকারী ভাবে সহায়তা প্রদান করা। আর আমি বিশ্বাস করি এটা আমাদের এবং বাংলাদেশ সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।
পত্রিকা নিউজ লিংক http://www.dhakatimes24.com
http://dailyjagoran.com
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১৪