কয়েকদিন আগে ঢাকা ইউনিভার্সিটির পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের উদ্যোগে এক জরিপে দেখা যায় দেশের মোট নারীদের ৯০ ভাগ টেলিভিশন দেখে, এদের মধ্যে ৬০ ভাগই স্টার জলসা দেখে। আমার মনে হয় কেবল নারী নয় পুরুষরাও দেশি চ্যানেল থেকে ভারতীয় চ্যানেল বেশি দেখে। অথচ আমাদের কয়েক ডজন টেলিভিশন চ্যানেল আছে। তাহলে আমরা দেশি চ্যানেল কেন দেখি না?
দেশীয় কয়েক ডজন টেলিভিশন চ্যানেল থাকলেও এরা কি দর্শকদের চাহিদা পূরণ করতে পারছে? যদি সেটাই পারতো তবে আমার মনে হয় না কেউ বাইরের চ্যানেলের প্রতি আকৃষ্ট হতো।
আমাদের দেশের হাতেগোনা কয়েকটা চ্যানেল ব্যতীত বাকি সব গুলোতেই পাঁচমিশালি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে থাকে। সংবাদ, নাটক, রিয়েলিটি শো, ছায়াছবি, টক শো, গানের অনুষ্ঠান, রান্নার অনুষ্ঠান, বাচ্চাদের অনুষ্ঠান... ইত্যাদি একই সাথে সম্প্রচার করা হয়ে থাকে। কোন একটা অনুষ্ঠান দেখছেন কিছুক্ষণ পর পর বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন, সাথে ঘন্টায় ঘন্টায় সংবাদ তো থাকছেই। দর্শকদের একই সাথে সবকিছু গেলানোর ব্যবস্থা। দর্শক কোনটা রেখে কোনটা দেখবে?
ধরুন আপনি ছায়াছবি দেখছেন, ক্লাইম্যাক্স পয়েন্ট... হটাৎ ঘন্টার খবর, আগ্রহ থাকবে আপনার? নির্দিষ্ট অনুষ্টানের জন্য একটা নির্দিষ্ট প্লাটফরম থাকা দরকার, যেন দর্শক সহজেই তার পছন্দের চ্যানেলে চলে যেতে পারে। অনেকেই আছে যারা কেবল দেশের পরিস্থিতি কি সেটা জানার জন্য কেবল বাংলাদেশী চ্যানেলের সংবাদটাই দেখেন।
ডজন ডজন টেলিভিশন চ্যানেল, কোন চ্যানেলে কি অনুষ্ঠান হয় সেটা তো থাক দূরের কথা অনেকেই আছেন যারা সব চ্যানেলের নামটাই জানেন না। শুনছি আরো ডজন খানেক চ্যানেল তাদের সম্প্রচার শুরু করার জন্য রেডি হচ্ছে।
এতো চ্যানেল দেখবে কে!
বাংলাদেশী বিনোদনের মান দেখুন, বেশিরভাগ নাটক ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচিত্র তৈরি করা হয় একটা বিশেষ শ্রেণির জন্য। প্যাকেজ নাটকে একটা ঘরের মধ্যে ৩/৪ জন অভিনেতা-অভিনেত্রী দিয়েই একটা নাটক বানানো শেষ। আর বেশির ভাগ নাটকই থাকে লুতুপুতু টাইপের লাভ স্টোরি নির্ভর। যা কেবল টিনএজার কিংবা সর্বোচ্চ ২০/২২ বছরের দর্শকরা দেখে থাকেন। ২৮/৩০ বছরের দর্শক নিশ্চই লুতুপুতু টাইপের লাভ স্টোরি দেখার জন্য টেলিভিশনের সামনে বসে থাকবে না।
টিভি সিরিয়ালে স্টার জলসা কিংবা জি-বাংলার মতো এতটা আকর্ষণ তৈরি করতে পারে না। আমি দেখেছি, এই চ্যানেল গুলোতে সিরিয়াল গুলো এমন ভাবে সাজায় যাতে করে দর্শক আগামী পর্বে কি হতে পারে সেটা দেখার জন্য আকর্ষণ অনুভব করে। নতুন টিভি চ্যানেল দীপ্ত কিছুটা ওইভাবে আকর্ষণ তৈরি করতে পারে বাকি গুলোর অবস্থা খুবই খারাপ।
বাংলা ছায়াছবির অবস্থা আরো করুণ। বেশির ভাগ ছবি বানানো হয় সাউথ ইন্ডিয়ান ছবি নকল করে। আর যেগুলো নকল করা হয় না সেগুলো এমন সব কাহিনী নিয়ে বানানো যা দেখার মতো রুচি সব শ্রেণির দর্শকদের থাকে না। আমার বাসায় বাবা কিংবা আম্মুও বাংলা ছবি দেখে খুব আগ্রহ নিয়ে, তবে সেটা সেই রুপালী পর্দার সময়কার ছবি। ভাল ছবি যে আসতেছে না তা কিন্তু নয়, যথেষ্ট ভাল মানের ছবিও নির্মাণ হচ্ছে কিন্তু সেগুলো হারিয়ে যাচ্ছে এক বালতি গোবরের মধ্যে।
একগাদা নাটক, ছায়াছবি না বানিয়ে দর্শকদের সামনে একটা দুইটা ভাল কিছু তুলে আনলে সেটাই দর্শক ভাল করে দেখবে। আশাকরি আমাদের দেশীয় টেলিভিশন চ্যানেল গুলো তাদের অনুষ্ঠানের মান আরো ভাল করবে এবং আমরা আরো বেশি বেশি আমাদের দেশীয় চ্যানেল দেখার জন্য আকর্ষণ অনুভব করবো।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:৩৮