ফেসবুকে লেখাটির লিঙ্ক, আগ্রহীরা ওখানেও কমেন্ট করতে পারেন
শাহবাগ যাবো, যেতে চাই, কিন্তু আমি যেখানে থাকি, তার থেকে শাহবাগের দূরত্ব অনেক। সেই দূরত্ব ঘুচানো যেত, কিন্তু যে দূরত্বটি স্রেফ স্থানিক পরিমাপ দিয়ে ঘুচানো যাবে না, তা নিয়েই এই নোট।
১.
শাহবাগের আজান, শব্দটা আমি এভাবেই ব্যাবহার করছি, আজান, মানে ডাক বা আহ্বান। শাহবাগে জড়ো হওয়া তরুণদেরকে এই ধর্মগন্ধযুক্ত শব্দ আহত করতে পারে, তবু আমি এ শব্দটিই ব্যবহার করলাম। হাঁ, শাহবাগের আজান, সেটা কী? আমার মনে হয়েছে সেটা অস্পষ্ট, প্রচুর ধোঁয়াশায় ভরা, বিহ্বল, গন্তব্যহীন, আবার উদ্বেলিত, উচ্ছল, দ্রোহী, অনেকটা আরব বসন্তের উদ্ভ্রান্ত তারুণ্যের মতন, বা তার চেয়েও অস্পষ্ট, যার ফলশ্রুতিতে প্রেসিডেন্ট মুরসি ক্ষমতায় আসলো, সেই একই একনায়ক, একটা পরিবর্তিত, ইসলামী পোশাক পরা চেহারা নিয়ে। এই শাহবাগ তারুণ্য, যারা নিজেদের সেক্যুলার বলেন, আবার একই সাথে এইটারে তাহরীর স্কয়ারের সাথে তুলনা করে আমোদ বোধ করেন, তারা চমকে উঠতে পারেন। তাহরির স্কয়ারের এই চরিত্রটি কি তারা ধরতে পেরেছিলেন? এই শাহবাগ তারুণ্যের ভাব ও ভবিষ্যত কী?
সেই একই নিম্নমধ্যবিত্ত জীবনের ক্ষোভ-সাধ-আহ্লাদসম্পন্ন- খুনী, অপরের অধিকার হরণকারী, ধর্ষকামী, আবেগী- অরাজনৈতিক, নৈতিক ও ভালো মানুষ, হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে গিয়ে হত্যা ও নির্মূল, ধরে ধরে জবেহ করার, তাদের মাংস দিয়ে সকাল বিকাল নাস্তার কথা বলনেওয়ালা, দেশকে ভালবাসনেওয়ালা, আবার রাষ্ট্রের দালাল, একই সাথে প্রেমিকাকে ভালবাসেন ও এসিড দিয়ে ঝলসে দেন, সেই একই ফ্যাসিবাদী ও সুবিধাবাদি ভাল মানুষ চরিত্র, যা একজন শিবির কর্মী থেকে ব্যতিক্রম নয়, ওরাও তাই করে থাকে সচরাচর। মিছিলে, সমাবেশে, জীবন-যাপনে। কিন্তু ওরা এখানে সংখ্যালঘু, তাই ওদের মিডিয়া কভারেজ নেই। মিডিয়াতে ওদের ডেমনাইজ করা হয়, বিপরীতে শাহবাগের ফ্যাসিবাদকে হিউম্যানাইজ করা হচ্ছে। আমরা এতে উদ্বেলিত হচ্ছি, মিডিয়ার সাথে। সুমন গান লিখছে।
শাহবাগের যে আজান, তা আমার কাছে রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে ফ্যাসিবাদের যে বিকাশ হয়েছে, তাই জানান দেয় রূঢ় স্বরে। মিডিয়া, সামাজিক গণমাধ্যমের একটিভিস্ট, তাদের সহযোগে সব ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ছে এই ফ্যাসিবাদ। আবার, একই সাথে এর আবেগ, সংহতি ও উচ্ছাসের যে ভাব, তা আমার তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়। তাই এর গন্তব্য ও পরিণতি সম্পর্কে সজাগ থাকা, এর সম্পর্কে প্রয়োজনীয় পর্যালোচনা হাজির করা- এইসব আমাদের রাজনৈতিক কর্তব্যও বটে।
২.
প্রেক্ষিতটা হলো, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ, বা তার আইনি নাম মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার-প্রক্রিয়া চলছে। এমন একটি আবহের ভিতর দেশের বৃহত রাজনৈতিক দল বিএনপি পরোক্ষভাবে এবং তার সহযোগী ইসলাম পন্থি রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবির প্রত্যক্ষভাবে এই বিচারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছে। জামাতের সিংহভাগ নেতৃত্ব এই অভিযোগে বিচারের জন্য গ্রেফতার হয়েছেন, স্বভাবতই জামাত শিবির এই ট্রাইবুনাল বাতিলের দাবীতে মিছিল-হরতাল এইসব করছে। পুলিশ মিছিলে গুলি করেছে ও হত্যা করেছে শিবির কর্মীদের। উল্টো দিকে শিবির কর্মীরা পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছে। বিচারের সমর্থকদের একটি গ্রুপ, ব্লগ ও সোসাল মিডিয়ার একটিভিস্টরা এবং সরকারের মন্ত্রীরা কিছুদিন আগেও এ বিষয়ে কাতর প্রশ্ন তুলেছিলেন: যে, এইটা রাষ্ট্রদ্রোহিতা। একটি বিদ্যমান রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও তার সংবিধানের অধীনে গঠিত বিচার ব্যবস্থাকে না মানার এমন ঘোষণা বা তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার ঔদ্ধত্যের কারণে জামাত শিবির নিষিদ্ধেরও দাবী তুলেছিল তারা। এই দাবী ট্রাইবুনালের প্রতি এমন এক আস্থা থেকে তৈরী হয়েছে, যেই নিরঙ্কুশ আস্থার কারণেই সেই একই আদালতের প্রতি জামাত শিবিরের অনাস্থা। স্কাইপি ক্যালেঙ্কারির পর ওরা এই অনাস্থা প্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছে। এই ধরণের সুযোগ যে কেউ নেবে, আওয়ামী লীগ- বিএনপি প্রমুখ রাষ্ট্রীয় জাতীয়তাবাদীরা পর্যন্ত। এর পিছনে জামাতের কোন রেডিক্যাল, রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান নেই। কারণ জামাত শিবির এমন কোন বিপ্লবী দল নয়, যারা বিদ্যমান রাষ্ট্র ও বিচার ব্যবস্থাকে অস্বীকার করে নতুন ব্যবস্থা কায়েমের রাজনীতি করে। দৃশ্যত ও কার্যত তা মনে হয় না। বরং তাদের রাজনীতির সাথে বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থার যেটুকু অসংগতি ও বিরোধ, তা দূর করতে দলীয় গঠনতন্ত্রের নূন্যতম সংশোধন করা সহ সম্ভব সব উদ্যোগ নিয়েছে এই সংগঠন, বিভিন্ন সময়। জামাত শিবির রাষ্ট্র বিরোধী, এই ধানাই পানাই দিয়ে যারা জামাত রাজনীতি ও যুদ্ধাপরাধ মোকাবেলা করতে চান, তাদের জন্যই এই নোকতা। সাথে এই কথাটি পরিস্কার করতে চাই, নিশ্চয়ই যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবী সুনির্দিষ্টভাবে আওয়ামীলীগ, বিএনপি বা কোন দলীয় দাবী হতে পারে না। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে যারা এদেশের মানুষের উপর গণহত্যা ও নির্যাতন করেছে, তাদের বিচারের প্রশ্নটি আমাদের সবার কাছে দ্ব্যর্থহীনভাবে গুরুত্বপূর্ণ- যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ একটি ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যাওয়া। এই প্রশ্নটি এড়িয়ে গিয়ে নয়, বরং এই প্রশ্নটি সামনে রেখেই, এবং এই প্রশ্নটির সাথেই আমাদের আলোচনাগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। শাহবাগের উচ্ছাস ফ্যাসিবাদের বিকাশ ঘটাচ্ছে, এই বাস্তবতার সাথে সাথে এটাও পরিস্কার যে, যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রশ্নটি অমিমাংসায় রেখে আওয়ামী লীগ বিএনপি জামাত সহ আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এতদিন যে দলীয় দুরভিসন্ধি ঘোট পাকিয়ে রেখেছে, তার অবসান চায় এরা। যদিও তাদের প্রশ্নটি পরিস্কার নয়, গন্তব্য ধোঁয়াশায় ভরা, কিন্তু তাদের আবেগটি মিথ্যা নয়।
ছবি কৃতজ্ঞতা: সালাহউদ্দিন শুভ্রর ফেসবুক কভার। বিনা অনুমতিতে।
৩.
শাহবাগের এই তারুণ্য সর্বসম্প্রতি জামাত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার বিচারে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল কর্তৃক দেয়া রায়ে ক্ষুদ্ধ এবং ব্যাথিত। তারা ফাঁসির রায় চান। তারা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের নির্মূল চান, জামাত রাজনীতির নিষিদ্ধ করতে চান, এইসব আরো আরো কিছু। যেমন, কেউ কেউ বলছেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধটাও তাদের অন্যতম দাবী। শুধু তাই নয়, গতকালকের ঘোষণায় দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন গণ-মাধ্যম নিষিদ্ধের-ও দাবী করছে তারা। এই তারুণ্যকে কারা নেতৃত্ব দিচ্ছে, ছাত্রলীগ, বাম, গণতান্ত্রিক-অগণতান্ত্রিক ফ্রন্ট বা শিবির এইটা আলাদাভাবে বিবেচ্য নয়, বিবেচ্য হলো ওদের দাবী বা কাঙক্ষা। সেটা কী? একটি বিচারিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ওদের পছন্দের রায় প্রদানের জন্য চাপ প্রয়োগ ও দাবী। বিচার নয়, ফাঁসির দাবী। অপরাপর দাবীগুলো এর সাথেই সংস্লিষ্ট। কিছুদিন আগেই ‘রাষ্ট্র বিরোধী ও ট্রাইবুনাল মানে না’, এই ধানাই পানাই দিয়ে যারা জামাত রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবী তুলছিলেন সেই একই রাজনীতিক বুদ্ধিজীবী মহল এদের এডভোকেট এখানে। তাহলে কী দাঁড়াল? প্রথমত আইনী ভাবে মোকাবেলার চেষ্টা, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, আইন ব্যবস্থা বা বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থা অমান্যের অভিযোগ, জামাত নিষিদ্ধকরণের দাবী। পরে আইনি পদ্ধতিতে নির্মূল সাধন, মানে চুড়ান্ত শাস্তির রায় না পেয়ে এখন সেই একই বিচার ব্যবস্থার প্রতি রাজনৈতিক চাপ। বিচারের পরিবর্তে কালচারাল এক্সপ্রেশন, মঙ্গল প্রদীপ, ঢোল-তবলা, গান, নিষিদ্ধ ও ফাঁসি চাওয়া, এইসব। বিচার এবং নির্মূল দ্বৈত চরিত্রের। যারা নিষিদ্ধ চান, ফাঁসি চান, যবেহ করতে চান, নির্মূল চান, তারা একই সাথে বিচার চাইতে পারেন কি? এই দুমুখো ভাষ্যের গণ্ডগোলটি হলো, আপনার কাছে স্পষ্ট না, আপনি এই আপদকে কীভাবে মোকাবেলা করতে চান- আইনি, নাকি রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়ায়? তাই এটি শেষেমেষ না আইনি না রাজনৈতিক গুরুত্ব পায়, অবশেষে একটি সুবিধেবাদী ও আওয়ামী ঘোট পাকানো চরিত্র হিশেবে হাজির হয়। আবার দেখা যাচ্ছে তাদের কাছে স্পষ্ট না, তারা কি জামাত রাজনীতি ও ইসলামী রাজনীতির বিচার চায়, নাকি মানবতা বিরোধী অপরাধেরই বিচার চায়? এখানে সবার কণ্ঠস্বর আওয়ামীলীগের দলীয় কর্মসূচিতে লিন হয়ে গেছে। এবং শেষে এসে থেমেছে জামাত রাজনীতির বিচার-এ, যুদ্ধাপরাধের বিচার হনুজ দূর। কিন্তু জামাত রাজনীতির বিচার- সে আপনার ঘোরতর রাজনৈতিক মোকাবেলার ব্যাপার, আইন দিয়ে একে মোকাবেলা করার চেষ্টাটাই জামাতের কাছে আপনার রাজনৈতিক পরাজয়, তারা এটুকু মানতে নারাজ।
৪.
স্কাইপি ঘটনার পর, জামাত ঘোষণা দিয়েছে, তারা এই ট্রাইবুনাল মানেন না। জামায়াতের ট্রাইবুনাল মানি না- এই অবস্থান ও দাবী শাহবাগ তরুণদের ট্রাইবুনালের কাছে রায় পরিবর্তন করে ফাঁসির আবদার এর চেয়ে মৌলিক এবং অভণ্ডামিপূর্ণ। একই সাথে ট্রাইবুনালকে মানা এবং তার কাছে নির্দিষ্ট কোন রায় চেয়ে ডিকটেশন দ্বৈততাপূর্ণ ও ভণ্ডামি নির্দেশ করে। এটি মূলতই ট্রাইবুনালকে অমান্য করার, এর প্রতি অনাস্থা ও বিচারকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করার অভিযোগকে সুসংহত করে, যাতে বিচার বিরোধীরাই শেষ মেষ লাভবান হবে। এই দাবীর উদ্দেশ্য ও ফলাফল বিষয়ে তাই আমাদের গভীরতর সন্দেহ আছে।
৫.
আমরা বরং আর একটু ঘুরিয়ে দেখি। আমরা আগেই বলেছি, যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবী সুনির্দিষ্টভাবে আওয়ামীলীগ, বিএনপি বা কোন দলীয় দাবী হতে পারে না। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে যারা এদেশের মানুষের উপর গণহত্যা ও নির্যাতন করেছে, তাদের বিচারের প্রশ্নটি আমাদের সবার কাছে দ্ব্যর্থহীনভাবে গুরুত্বপূর্ণ- যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ একটি ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যাওয়া।
তাহলে যুদ্ধাপরাধের বিচারের মত একটি গুরুত্ত্বপূর্ণ দাবীর এই অবস্থা হলো কেন? কেন এই দাবীতে সরকারী দল- বিরোধী দল- সবার মধ্যে একটি গণ-আস্থার পরিবেশ তৈরীর চেষ্টা হলো না। এমন কি, দরকার ছিল, জামাত শিবিরের সমর্থকদের মধ্যেও এই বিচারের প্রতি আস্থা ও সম্মতি তৈয়ার করা। ‘শিবির এর ছেলেরা যুদ্ধাপরাধী প্রজন্ম নয়, তারা স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিতরে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্ম’: বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (কয়েকদিন আগেও কোন এক সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শপথ অনুষ্ঠানে) ও আওয়ামীলীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ এমন কথা উচ্চারণ করেছেন, বেশ কয়েকবার, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। তাহলে প্রশ্ন হলো, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্মের এই ছেলেরা কেন যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর আন্দোলন করতে যাবে? আমরা আগেই জেনেছি, শিবির এর ভিতরেও একটি গ্রুপ ৭১ সালে জামাত এর অবস্থান এবং যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে একটা মিমাংসা চায়- যার কারণে তারা দল থেকে পদত্যাগ করেছিল। এতদসত্ত্বেও সেই একই ছাত্র-যুবকরা কেন এই যুদ্ধাপরাধ বিচারকে মেনে না নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। আমরা কেন তাদের এই সমর্থন ব্যবহার করতে পারি নাই, বরং ঘৃণা ও অপরাপর নির্যাতনে তাদেরকেও যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রতিপক্ষ হিশেবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছি?
আমার বিবেচনা হল, প্রশ্নটি যুদ্ধাপরাধ বিচারের প্রশ্ন হিশেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামীলীগ এবং এই বিচারের অপরাপর এডভোকেটরা। বরং এই বিচারকে জামাত রাজনীতি, এমন কি ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি, আরো সহজ অর্থে ‘ইসলামী রাজনীতি’র বিচার, যেইটারে উনারা মৌলবাদী রাজনীতি আখ্যায়িত করে গালাগালি করে থাকেন- এবং আজকের শাহবাগ তারুণ্য শেষমেষ যেই ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলে বেড়াচ্ছেন- রাষ্ট্রযন্ত্র, আওয়ামী বুদ্ধিজীবী মহল ও এটির পক্ষের তাত্ত্বিকরা - ওইটারই বিচার হিশেবে হাবে-ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। স্বভাবতই মিডিয়া ও শাহবাগের কতিপয় তারুণ্যের বাইরে আর কোথাও এমন বাসনার গণভিত্তি নেই। বিভিন্ন সময়ে এ সরকারের মন্ত্রীরা বলার চেষ্টা করেছেন, এটি প্রতিকী বিচার। তো, জামাত শিবির বিএনপির ভিতরে যারা যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিষয়টিকে গুরুত্ত্ব দিতে চান, এই বিচারের প্রয়োজন অনুভব করেন, কিন্ত দেখেন যে, ওই প্রতিকী বিচার স্রেফ জামাত রাজনীতিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েই সমাধা হতে যাচ্ছে- গ্রেফতার হচ্ছে স্রেফ জামাত নেতৃত্বই, তখন তারা নতুন করে ভাববেন বৈকি। আবার, প্রথম রায়ে জামাতকে একটি যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিশেবে উল্লেখ করে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে ট্রাইবুনাল, কিন্তু কার্যত ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সংঘটিত সামগ্রিক যুদ্ধাপরাধের কোন বিচারিক পর্যবেক্ষণ হাজির করেন নাই এই রায়ে। এমনকি যুদ্ধপরবর্তী সময়ে মুজিব সরকারের বাঁচিয়ে দেওয়া চিহ্ণিত ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর ব্যাপারেও কোন কথা নেই। প্রতিকী বিচারই যদি হতো, সেই ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীরও প্রতিকী বিচার হতে পারত, কিন্তু সেটা হয় নাই। কেন? এই প্রশ্নটি কি আজকের শাহবাগ তারুণ্য করেছে কখনো? শাহবাগ তরুণরা জামাত শিবির নির্মূলের ঘোষণা দিচ্ছে। জামাত শিবিরের বিশাল সমর্থক গোষ্ঠিকে স্রেফ নিকেশ করে দেওয়াটাই যুদ্ধাপরাধ বিচারের কাজ- এটাই কি ওরা মনে করেন? এই ফ্যাসিবাদি চিন্তার উৎস কোথায়?
৬.
আমি শাহবাগ যেতে চাই, কিন্তু দূরত্বটি প্রচুর। আমাকে যাওয়ার পথে এইসব পর্যালোচনা করতে করতে হাঁটতে হয়। আমি যেতে চাই, কিন্তু কোথায় যাবো?
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১২