এইটা বিডি নিউজের একটা সংবাদ, কিন্তু আমি নোট হিশেবেই দিলাম। এজলাসে দাঁড় করিয়ে রাখা, নাগরিকদের অসম্মান এবং গালাগালি করার এখতিয়ার হাইকোর্টের নেই। ‘ধর্মাবর্তারের শাসন’ শিরোনাম দিয়ে এমন একটা আলাপ কিছুদিন আগে করেছিলাম, বিডিনিউজ ছাপাতে ভরসা পায় নাই। পরে ফেসবুকে নোট আকারে দিয়েছিলাম। ভাবছিলাম, আমাদের মিডিয়াগুলো মেরুদণ্ডহীন, সরকারের দয়ায় চলে, তাই যে কোন রকমের বৈরীতা এড়িয়ে চলাই এদের নীতি। কিন্তু হাইকোর্টের মুখের উপরে দাঁড়িয়ে এইসব কথা বলে দেয়ার সাহস ও যোগ্যতা কে রাখে? তেমন কেউ কি নেই? আজকে বিচারপতি এএইচএম শামসু্দ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চে শফিক রেহমানের আইনজীবী টিএইচ খানের এই বাহাস দেখে আগ্রহ পেলাম। আপনারাও সম্ভবত আগ্রহ পাবেন।
প্রথমত, অবিকল আজকের বিডিনিউজে প্রকাশিত সংবাদ বিবরণী:
আদালতে দাঁড় করিয়ে রাখায় আপত্তি টি এইচ খানের
Tue, May 22nd, 2012 8:56 pm BdST
ঢাকা, মে ২২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ডেকে এনে উচ্চ আদালতে কাউকে দাঁড় করিয়ে রাখার সমালোচনা করেছেন সাবেক বিচারপতি টি এইচ খান।
মঙ্গলবার বিচারপতি এএইচএম শামসু্দ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চে এক শুনানিতে তিনি বলেন, “কাউকে তলব করে এনে হাই কোর্টে দাঁড় করিয়ে রাখা যায় না। এতে নাগরিকের অসম্মান হয়।”
এদিন সাংবাদিক শফিক রেহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিয়াউল হক জিয়ার ছেলে জয়কে সোয়া দুই ঘণ্টা হাই কোর্টে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।
টি এইচ খান বলেন, “এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে পিক অ্যান্ড চুজ নীতির ভিত্তিতে আদেশ দেওয়া হচ্ছে। আদালতের অনেক বিষয়য়ে মিসকনসেপশন রয়েছে।”
তখন বিচারক বলেন, কোথাও কোনো অনিয়ম হলে তা দেখা আদালতের দায়িত্ব।
টি এইচ খান বলেন, “অনেক কথা আইনের বইতে লেখা থাকে না, তবুও আমরা তা অনুসরণ করি। এটাই সভ্যতা, ভদ্রতা। আপনারা আদালতে এলে আমরা দাঁড়িয়ে যাই। এটা কোনো বইতে লেখা নেই, তবুও আমরা এটা করি।”
“আপনি নোটিস দিয়েছেন। আপনার নোটিস না পেয়ে পত্রিকা দেখেই তারা হাজির হয়েছেন। তারা অপরাধী নন। আপনি তাদের দাঁড় করিয়ে রেখেছেন, তাদের অসম্মান করছেন।”
তখন বিচারক বলেন, “আমরা তো আইনজীবীদের চেয়ার তাদেরকে দখল করতে দিতে পারি না।”
জবাবে টি এইচ খান বলেন, “তারা পেছনে বসবে, পেছনেও বেঞ্চ আছে। আদালত অবমাননার আসামি হলে দাঁড় করিয়ে রাখতে পারেন। কিন্তু এভাবে নোটিস দিয়ে ডেকে এনে আপনি দাঁড় করিয়ে রাখতে পারে না।”
জবাবে বিচারক বলেন, নিম্ন আদালতেও বিচার চলাকালে আসামিদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
টি এইচ খান বলেন, “ওই আদালত এবং এখানকার প্রসিডিংস এক নয়।”
শু না নি
আদালত শুরুতে শফিক রেহমানের আইনজীবী আসাদুজ্জামানের কাছে জানতে চান আদেশের জবাব কোথায়?
জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, শফিক রেহমানকে আসতে বলা হলেও কোনো রুল ছিল না।
তখন আদালত বলে, তাকে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে, তার চেহারা দেখতে ডাকা হয়নি।
এরপর আদালতের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে শফিক রেহমানের আইনজীবী বলেন, যায়যায়দিন পাবলিকেশনস লিমিটেডের নামে ২০০৩ সালে এক একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। শফিক রেহমান ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।
আসাদুজ্জামান বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শফিক রেহমান ওই কোম্পানি থেকে উচ্ছেদ হন। তিনি যায়যায়দিন পত্রিকায় ‘প্লাস টু এবং মাইনাস থ্রি’ সম্পর্কে একটি লেখা লিখেছিলেন।
“তিনি লিখেছিলেন, খালেদা-হাসিনা প্লাস হবেন, ইয়াজউদ্দিন-ফখরুদ্দীন-মইন মাইনাস হবেন। এ লেখার জন্য তাকে যায়যায়দিন এইচআরসি নামে একটি কোম্পানিকে লিখে দিতে বাধ্য করা হয়। তিনি কোনো অর্থও পাননি।”
তেজগাঁওয়ের ওই এলাকায় চ্যানেল আই এবং নিউ নেশনসহ অনেকেই প্লট পেয়েছে বলে জানান আইনজীবী।
আসাদুজ্জামানের বক্তব্য শেষে আদালত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বিএ ম আলতাফ হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি একটি তালিকা পড়ে শোনান, যাতে বলা হয়েছে. ঢাকায় কামরুল ইসলাম ও তার পরিবারের ১১টি এবং ঢাকার বাইরে তিনটি বাড়ি অথবা প্লট রয়েছে।
তবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের ওই তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি করেন কামরুলের আইনজীবী।
কামরুলের প্রধান আইনজীবী টি এইচ খান বলেন, “যে জায়গাটা আমি (আমার মক্কেল) লিজ পেয়েছি, তা হাতিরঝিল প্রকল্পের নয়। শিল্প এলাকার প্লট আমি লিজ পেয়েছি। বাকি ১০১ জন যেভাবে পেয়েছে, আমিও একইভাবে পেয়েছি। আমাকে একা কেন ডাকা হবে। প্রত্যেকই ডাকতে হবে।”
তখন বিচারক বলেন, তালিকা চেয়ে প্রত্যেককেই ডাকা হবে।
টি এইচ খান বলেন, “আপনি পিক অ্যান্ড চুজ নীতির ভিত্তিতে চলতে পারেন না। আপনি যা যা করছেন, তা এখতিয়ার বহির্ভূত। সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের বাইরে গিয়ে আর্বিটারি (স্বেচ্ছাচার) আদেশ দিচ্ছেন।“
তখন বিচারক বলেন, এটা কোনো আর্বিটারি আদেশ নয়।
জবাবে টি এইচ খান বলেন, “আমার মতে আর্বিটারি। আপনি নোট নেন।”
এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেন, সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সব ক্ষমতার মালিক জনগণ। বিচারপতিরা সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছেন। ওই শপথ রক্ষায় বেআইনি কোনো ঘটনা ঘটলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া বিচারপতিদের আইনি দায়িত্ব।
আদেশের পর টি এইচ খান সাংবাদিকদের বলেন, “স্বতপ্রণোদিত কোনো আদেশ দেওয়ার এখতিয়ার হাই কোর্টের নেই। সংবিধান তা অনুমোদন করে না। আর সম্পদের যে হিসাব চাওয়া হয়েছে, ওই আদেশের কপি এখনো পাইনি। আগে দুদক চাইতো, এখন হাই কোর্ট চায়। ওই আদেশ অপ্রাসঙ্গিক এবং এখতিয়ার বহির্ভূত।”
“বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণেই তাদের তলব করা হয়েছে। অনেকের মধ্যে ‘জিয়া ফোবিয়া’ কাজ করছে,” বলেন খালেদা জিয়ার এই উপদেষ্টা।
পুনশ্চ: আমার ধর্মাবর্তারের শাসন নোটটির ফেসবুক লিঙ্ক, সামহোয়ার লিঙ্ক ।