somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি প্রাথমিক আলোচনার খসড়া: জামাত, জামাত বিরোধী রাজনীতির বিষয় আশয় ও যুদ্ধাপরাধ রাজনীতি

১৭ ই জুলাই, ২০০৮ সকাল ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(গতকালকে এই লেখাটি পোস্ট করার পর, আরো কিছু সংশোধন এবং সংযোজন করা হয়েছে রাতে, মাহবুব মোর্শেদ এবং পি মুন্সির লেখাটির লিঙ্ক যোগ করলাম এবার, পাঠকদের সুবিধার্তে, তখন মধ্যরাত হওয়ায় পাঠকদের অগোচরে ছিল অনেকটা এই পোস্টটি, তাই নতুন করে পোস্ট করলাম)

এটি একটি প্রাথমিক আলোচনার খসড়া। বেশ কিছুদিন ধরে নোট করছিলাম। বুঝার চেষ্টা করছিলাম; জামাত, জামাত বিরোধী রাজনীতি এবং যুদ্ধাপরাধ রাজনীতির বিষয় আশয় । এগুলি আমাদেরকে বেশ ধাধায় ফেলার চেষ্টা করছে ইদানীং। এই ধাধাটার চরিত্র রহস্যজনক, এমনকি বেশ সন্দেহজনক। এখন বিষয়টা আবার তেঁতে উঠেছে, সম্প্রতি ঢাকার কথিত মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে একজন মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনায়। ব্যাপারখানা কী? একজন মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্চিত হলো, আর সেক্টর কমাণ্ডারস ক্লাব কোন জ্বালাময়ী কর্মসূচি, নিদেন পক্ষে কার্যকর প্রতিবাদ করলেন না? অনেক দেরীতে গণমাধ্যমগুলো কর্তব্য স্থির করেছে, মুক্তিযোদ্ধাটির বক্তব্য বিবৃতি প্রকাশ শুরু করেছে। একুশে টিভির রহস্য কী। ব্যাপারটারে সাজিয়ে নিতে তাদের বোধ হয় একটু সময় লেগেছে। বেশ রহস্যজনক ব্যাপারখানা আমাকে ভাবিয়ে তুললো।

সেদিনকার কথিত মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের আয়োজক যারাই হোন, একজন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমাণ্ডারসহ বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেছেন, পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী। সেই অনুষ্ঠান থেকে ট্রানজিটের বিরুদ্ধে দাবী তোলা হয় সরকারের কাছে, এবং প্রতিরোধের কথা বলা হয়; বেশীরভাগ পত্রিকায় অবশ্যই এই খবরটা শিরোনামেই আসেনি, মুক্তিযোদ্ধা নিগ্রহের ব্যাপারটাই শিরোনামে এসেছে।

এর রহস্যটা কী? ট্রানজিট বিষয়ক বক্তব্যটারে ধামাচাপা দেয়ায় কারা লাভবান হতে পারে? এরা কারা? আমি খুব ভেবেছি ব্যাপারটা, তারপর মনে করতে পারলাম যে, সাম্প্রতিক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবী, ভারতীয় জেনারেলের বাংলাদেশ সফর, বাংলাদেশী জেনারেলের ভারত গমন, এবং পিনাক চক্রবর্তীর ট্রানজিট অভিযান শুধু সমসাময়িকই নয়, গূঢ় তত্ত্ব দেয়। আমি এইটা ভেবে আঁতকে উঠি এই কারণে যে, বন্ধু রাস্ট্র বিষয়ক তত্ত্ব এবং অর্থনীতির নগদ কাচকলা খাইয়ে আমাদের কিছু অর্থনীতিবিদ এবং রাজনীতিবিশারদ ও বিদের কথায়, আচরণে এবং আন্দোলনে এটার চরম দরকারী রাজনীতির জায়গাটা, যেখানে দেশের জরুরী জাতীয় নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত, সেটিরে অমূল্যবান প্রতিয়মান করার প্রচেষ্টা নিহিত, উপরন্তু এই বিষয়টারে ভুলিয়ে দিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে মানুষের মনোযোগ কনসেন্ট্রেশনের চেষ্টা।

একটি কথা বলে রাখা ভাল, সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যদি কেউ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়, সেটিকে তাঁর সততার অবস্থান ধরে নিয়েই, আামার এই আলোচনা।

সম্প্রতি জনপ্রিয় ব্লগার এবং আমি যার লেখাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করি, মাহবুব মোর্শেদের একটি পোস্টে কমেন্ট করতে গিয়ে, দাবী এবং ইস্যু বিষয়ে স্পষ্ট হওয়ার কথা বলেছিলাম আমি। বলেছিলাম, সেক্টর কমাণ্ডারস ক্লাবের কথাগুলো দাবী, নাকি ইস্যু, তাতে আমার সন্দেহ নয়, গুরুতর অবিশ্বাস আছে। মাহবুব মোর্শেদ বলছিলেন ''সেইটা ব্যাপক গণভিত্তি পাইছিল। সেইটার সঙ্গে বহু মানুষ একাত্ম হইছিলেন''। আমি প্রশ্ন রেখেছিলাম:

একাত্ম হয়ে থাকলে সেইটা এখন গেল কোথায়? গণভিত্তি ব্যাপারটারে আপনি কীভাবে বুঝেন?

স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী কারা?

এদের বিচার করতে হবে কেন?

করলে কী উপায়ে করতে চান?

আর এই ইস্যুটার সাথে বাংলাদেশ নামে যে রাষ্ট্রে আমাদের বসবাস তার ন্যাশনাল ইন্টারেস্টগুলির সংঘর্ষ বা সহবাস কোন জায়গায়?

বলাই বাহুল্য, এটি স্বাধীনতাবিরোধী এবং যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক পোস্ট ছিলো। তো মাহবুব ভাই আমাকে দুইটা লেখার লিঙ্ক দিলেন, তিনি সেই লিঙ্কগুলোতে এই বিষয়গুলি আলোচনা করার চেষ্টা করেছেন। আমি লিঙ্কগুলা পড়লাম এবং মুগ্ধ হলাম তাঁর লেখনীতে, এটা তাঁর লেখার গুণ। ওখানে এই প্রশ্নগুলির সরল জবাব নেই, কিন্তু আরো কিছু প্রশ্ন, যা আমার ভিতরে ঘুর ঘুর করছিল, তার উত্থাপন আছে, যুগ্ম বৈপরিত্যসহ। যেমন:

..ভিএস নাইপলের আত্মজীবনীর নাম হাফ এ লাইফ। ১৯৭১কে আমার মনে হয় হাফ এ ওয়ার। অর্ধেক যুদ্ধ। এই যুদ্ধ শেষ হয়নি। কেন শেষ হয়নি, কে শেষ করেনি। কে ক্ষমা করেছে কাকে এ প্রশ্ন মাঝে মাঝে অবান্তর মনে হয়। কিন্তু একটা বিষয় খুব প্রাসঙ্গিক। বাকী যুদ্ধটা পেন্ডিং পড়ে আছে। আমাদের প্রজন্মকে হয়তো সেটা শেষ করতে হবে। ২০০৭ জুড়ে একটা স্লোগানই শুধু শুনেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই।..

..মাঝে মাঝে মনে হয় মুক্তিযুদ্ধ বোধহয়, এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক সামাজিক মুক্তির জন্য হয়নি, হয়েছে স্রেফ যুদ্ধাপরাধী আর স্বাধীনতা বিরোধীদের শাস্তি দেয়ার জন্য। তা না হলে, দেশের মানুষে প্রচণ্ড অর্থনৈতিক সংকটে, দ্রব্যমূল্যের সীমা ছড়ানো উর্ধ্বগতিতে, সারের সংকটে, কৃষি, শিল্প, বিনিয়োগের সংকটে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির সঙ্গে আর একটা দাবিও কেন যুক্ত হয় না। যখন গণতন্ত্র সুদূরে তখন নিদেনপক্ষে গণতন্ত্রের দাবিও ওঠে না কেন?..

(২০০৭ : নাগরিক হিসেবে আমার অপরাধসমূহ: মাহবুব মোর্শেদ) Click This Link

আমার কাছে খটকা লেগেছে, অর্ধেক যুদ্ধ বিষয়ক তত্ত্ব এবং উপসংহারের ভাবনার যুগ্ম বৈপরীত্য। অর্ধেক যুদ্ধ ব্যাপারটা আগে ভাবতাম রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক মুক্তি বিষয়ক ভাবনা, যেটা আমিও আবেগের ভিতর অনেকদিন নানাভাবে লালন করতাম, কিন্তু সেটির গন্তব্য যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিষয়ক রূপকল্পে পর্যবসিত, তা আগে বুঝতে পারিনি।

তারপর আবার আমারও প্রায়ই মাহবুব ভাইয়ের মত একই ভাবনা আসে যে, স্বাধীনতা যুদ্ধের উদ্দেশ্য কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, নাকি স্বাধীনতা এবং মুক্তি। যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়, তাহলে অর্ধেক যুদ্ধ এখনো বাকী রয়ে গেছে, এবং যদি স্বাধীনতা এবং মুক্তি হয়, তাহলে সেটাও এখনো বাকী রয়ে গেছে, কিন্তু দুয়ের তফাত বিস্তর। এই বিস্তর তফাতটাই অতিক্রম করতে সময় লাগছে আমাদের রাজনীতিবিদ এবং রাজনীতি বিশ্লেষকদের।

তারও কিছুদিন আগে সামহোয়ার ইনেই পি মুন্সীর ব্লগে ''জামাত রাজনীতির রাজনৈতিক বিচার'' শিরোনামে একটা লেখা পড়েছিলাম। এই লেখাটিও আমি খুব আগ্রহের সাথে পড়েছি। যার শুরুতে তিনি লিখেছেন:

...স্বাধীনতাযুদ্ধ, জামাত, যুদ্ধপরাধ ইত্যাদি বিষয়ে যেকোন আলোচনা প্রায় সবসময়েই আমরা প্রপাগান্ডার লড়াই হিসাবে থেকে যেতে দেখেছি, সিরিয়াস কোন আলোচনায় এর উত্তরণ ঘটেনি। রাজনৈতিক দিক অথবা সাংবিধানিক আইনী দিক - কোন দিক থেকেই পরিপক্কতা দেখিয়ে কোন আলোচনা তুলে আমরা প্রমাণ পারিনি যে ৩৮ বছর ধরে যে আবেগ প্রকাশ বা প্রপাগান্ডা করেছি এবার একে ছাড়িয়ে আমরা সাবালক জাতি হয়েছি; আমরা এখন রাষ্ট্র গঠন, এর রাজনৈতিক দল, সাংবিধানিক আইন নিয়ে কথা বলার মত বয়স্ক হয়েছি। আমাদের মধ্যে এখনও এই ধারণাই প্রবল - ও জা-আ-মাত? ওর কথা নিয়ে আর কী আলোচনা করবো!...

(জামাত রাজনীতির রাজনৈতিক বিচার: পি মুন্সি) Click This Link

তাঁর এই প্রস্তাবনাটা পড়ে ভাবনা হয়েছিল, তাঁর সাবালকত্ব শিক্ষা পেয়ে হয়তো আমি শিক্ষিতভাবে আলোচনা করতে পারবো। কিন্তু পড়তে পড়তে খটকা লাগলো: কোন বিষয়ে আলোচনা করবো? পি মুন্সির কাছে আমার প্রশ্ন নয়, ধাধা। টুকে রাখি কিছু নোট, কারণ খসড়া বেশী বড় হলে অধৈর্য হয়ে পড়বেন পাঠকরা।

জামাত কোন বিষয়কে সামনে রেখে রাজনীতি করছে, অর্থাৎ জামায়াতের রাজনৈতিক এজেণ্ডাগুলো কী। ওখানে কি মুক্তিযুদ্ধ কোন পক্ষ বা বিপক্ষের বিষয় হিসেবে হাজির আছে?

যদি না থাকে, জামাত রাজনীতির রাজনৈতিক বিচার মুক্তিযুদ্ধে ঐ দলটির অবস্থান দ্বারা চিহ্ণিত হবে, নাকি তার ঘোষিত রাজনৈতিক এজেণ্ডাগুলির বিচারে?

মজার ব্যাপার হলো, জামাতের রাজনৈতিক এজেণ্ডা কী সেটি জামাত বিরোধীতায় আলোচনা হয় না বললেই চলে, আলোচনা হয় মুক্তিযুদ্ধে দলটির অবস্থান, এক কথায় অতীত পাপ। এই ব্যাপারটা কেন? জামাতের অপরাজনীতি প্রতিরোধ, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কর্মকাণ্ড, অতীত পাপ- এই সবই জামাতবিরোধী আলোচনার মূল কেন্দ্র। পি মুন্সিও জামাতের অতীত ইতিহাসেরই রাজনৈতিক বিচার করার চেষ্টা করেছেন, বেশ সাবালক হয়ে, তাঁর ভাষায়। যদিও তাঁর লেখার শিরোনাম ছিল জামাত রাজনীতির রাজনৈতিক বিচার। আর একটা শব্দ খুবই আগ্রহের দাবীদার, অপরাজনীতি, বেশ বহুল অর্থদায়ক এবং বিপরীত ব্যাখ্যাযোগ্য শব্দ। যারা জামাতের অপরাজনীতি প্রতিরোধের কথা বলেন, তারা কোনটারে অপরাজনীতি বলে অভিহিত করেন? এইটার ডেফিনিশন কী? জামাতের অতীত পাপ, নাকি বর্তমান রাজনীতিরে তারা এই ডেফিনিশনে ফেলেন? আবার কেউ কেউ জামাতকে নিষিদ্ধের দাবীও করেন।

তো অনেকদিন আগে ফরহাদ মজহার যখন আজকের কাগজে লিখতেন (আজকের কাগজেইতো?), জামাত রাজনীতি বিষয়ে তাঁর একটা লেখা পড়েছিলাম। কোন একটা বিষয়, যেটারে আপনার পছন্দ হয় না, রাজনৈতিক কারণে, সেটিরে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে, ফ্যাসিবাদী কায়দায় নিষিদ্ধের দাবী ব্যাপারটা কেমন। তার উত্তর ছিলো, সন্দেহজনক। তো জামাতকে মোকাবেলার প্রশ্ন যখন আসবে, তখন কী করতে হবে? ফরহাদ মজহারের এই সংক্রান্ত উত্তরটা বলার আগে, আমি একটা কথা যোগ করি, মোকাবেলা শুধু জামাতকে নয়, আমার নিজেকেও মোকাবেলা করতে হয়, যখন তাকে রাজনীতি দিয়ে ছাঁকতে চাই। তো ফরহাদ জামাতকে মোকাবেলা করার জন্য একটি প্রশ্ন দাঁড় করাইছিলেন। সেটি হলো, গণতন্ত্র তার অধীনে এমন কোন সিস্টেমকে গ্রো করার সুযোগ দেবে কিনা, যা গণতন্ত্রের মাধ্যমে এসটাবলিশ হয়ে গণতন্ত্রকেই খুন করার ঘোষণা দিয়ে রাজনীতি করবে।

ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলি। জামাতের রাজনৈতিক শ্লোগান, যেটা দিয়ে সে মানুষরে তার রাজনীতির দাওয়াত দেয়, সেটি আল্লাহর আইন। কুরান তাদের সংবিধান। আর গণতন্ত্র কথা বলে মানব রচিত আইনের কথা, constitutional republic। গণতন্ত্রে মানুষই আইন তৈরী করার ক্ষমতা রাখে, আল্লাহ বা অন্য কেউ নন। দুইটি দৃষ্টিভঙ্গী সুনির্দিষ্টভাবে দুইটি বিশ্ববীক্ষার পটভূমি নির্দেশ করে এবং পরস্পরকে রাজনৈতিক এবং সিস্টেম হিশেবে গাঠনিকভাবেই মেনে নিতে অপারগ এবং অস্বীকার করে, এবং নস্যাৎ করার ঘোষণা দেয়। তাই গণতন্ত্রে আল্লাহর আইন অচল আর আল্লাহর আইনে গণতন্ত্র অচল। অথচ জামাত একটি গণতান্ত্রিক রাস্ট্রের অধীনে রাজনীতি করার অধিকার চাচ্ছে, সেটি কী করে সম্ভব?

ফরহাদের এই আলোচনায় আমি প্রথমে চমকে উঠেছিলাম সেদিন।

তাহলে কী হবে? সেইসব মানুষের, যারা সিস্টেমের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চায়, ঘুমের ভিতর বিপ্লব নিয়ে স্বপ্ন দেখতে দেখতে জেগে উঠে, পরিবর্তনের কথা বলতে চায়, গণতন্ত্রইতো শুধু নয়, কোন তন্ত্রই তাদেরকে আইনিভাবে জায়গা দিতে প্রস্তুত নয়। কোন তন্ত্রই নিজের নস্যাৎসম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলতে, লালন করতে রাজি হবে না। তখন কী হবে? ফরহাদের এই মোকাবেলা তত্ত্বের আরো একটা ফাঁক রয়ে যায়। সেটির কথা বলছি।

এই মোকাবেলার প্রশ্নটির সাথে রাজনীতি ব্যাপারটা কী, মানুষ রাজনীতিতে কোন ধরণের আচরণ দ্বারা বৈশিষ্টায়িত হয়, অর্ডার বলতে কী বুঝি, কনফ্লিক্ট কী, এনার্কী কী জিনিশ, সেই প্রশ্নগুলিও জড়িত। মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে, অন্তত বাংলাদেশের পরিচিত অভিজ্ঞান হল, রাজনীতি মানে শত্রু-মিত্র ভেদজ্ঞান। সাধারণভাবে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক শাস্ত্রে পরিচিত আরো একটা পরিপ্রেক্ষিত আছে, সেটি হল রাজনীতি মানে মানুষের ব্যবহারিক জীবনে আন্তঃসহযোগিতা, কো-অপারেশন। এই কো-অপারেশনেরও দুইরকম পরিপ্রেক্ষিত সম্ভব। একটা হলো পুঁজিবাদী বিশ্বায়নের পরিপ্রেক্ষিত কো-অপারেশনের ধারণা এবং অন্যটা ইসলামিক পরিপ্রেক্ষিতে কো-অপারেশনের ধারণা। পুঁজিবাদী বিশ্বায়নের পরিপ্রেক্ষিতে এটি হল লস এবং প্রফিটের ভিত্তিতে আন্ত সহযোগিতা, আর ধর্মীয় পরিপ্রেক্ষিতে এটি হল নৈতিকতা এবং ন্যায়বিচার।

ধর্মীয় পরিপ্রেক্ষিতে, বিশেষত ইসলামে, মানুষের অন্তরের সম্পর্ক হল ঈমানে, আর রাজনীতির ক্ষেত্রে উপকরণ হল ডিপ্লোমেসি, কিন্তু ওয়েস্টার্ন রাজনৈতিক বাস্তবতায়, তাদের মানসিক সম্পৃক্ততা হল ডিপ্লোমেসির সাথে, এবং এই ডিপ্লোমেসির গতি প্রকৃতি অভিমুখ নির্ধারিত হয় সেলফ ইন্টারেস্ট দিয়ে, আর টুলস হিশেবে ব্যবহার করে ধর্মকে। এইগুলির সর্বসাম্প্রতিক উদাহরণ হল আমেরিকান পররাষ্ট্র দফতরের মুসলিম ওয়ার্লড আউটরিচ প্রজেক্ট, রেন্ড কর্পোরেশনের (ডিক চেনি, ডোনাল্ড রামসফেল্ড, কণ্ডোলিৎজা রাইজ এর মেম্বার) সিভিল এন্ড ডেমোক্রেটিক ইসলাম: পার্টনারস, রিসোর্সেস, স্ট্রাটেজিস শীর্ষক দলিল।

রাজনীতি বিজ্ঞানী, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক, পর্যবেক্ষক, একটিভিস্ট সবাই এ বিষয়ে একমত যে, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা প্রকৃতই নৈরাজ্য ধারণ করছে, আলটিমেটলি এমন কোন গাইডিং প্রিন্সিপল নেই, যেটি একটি প্রকৃত অর্ডার ক্রিয়েট করতে পারে। এই গাইডিং প্রিন্সিপলটি দ্বারা আমরা কোনক্রমেই মানুষের অন্তর্গত ফিতরতের সাথে সাংঘর্ষিক সমন্বয়ধর্মী ইজমগুলোকে বুঝাচ্ছি না, যা থেকে নরমেটিভ থিওরিগুলোর উদ্ভব। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, নরমেটিভ থিওরিগুলো মানুষের রাজনৈতিক আচরণ এবং অভীপ্সা বিশ্লেষণ করতে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ। আমাদের ধারণায় কনফ্লিক্ট মাইক্রো, কিন্তু প্রচলিত বিশ্লেষণে কনফ্লিক্ট মেক্রো হিশেবে পূর্বনির্ধারিত। তাই মানুষের ফিতরতের মধ্যে যে মাইক্রো কনফ্লিকট বিদ্যমান, সেইটার সমাধান হতে হবে প্রথমে, তারপরে অন্যান্য প্রপঞ্চের বিচার।

অতএব, এই সিস্টেমেটিক আলোচনা দলা মুচড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম, এটি শুধু তাদের জন্যই, যারা গণতণ্ত্রকে গড হিশেবে দেখে, পরিবর্তনের অন্য সব সম্ভাবনাকে ভুলে গিয়ে।

তাহলে জামাতকে মোকাবেলা, মানে বিচার এবং পর্যালোচনার আর কোন কোন পথ বাকী আছে? আরো চারটি পদ্ধতি আছে বলে আমার মনে হয়।

এক. জামাতের ঘোষিত রাজনৈতিক এজেণ্ডার বিরুদ্ধে যাদের অবস্থান, সেই জায়গা থেকে।

দুই. জামাতের ঘোষিত রাজনৈতিক এজেণ্ডাকে যারা সমর্থন করেন, কিন্তু মনে করেন যে, জামাত ঘোষণা অনুযায়ী কাজ করছে না, সেই জায়গা থেকে।

তিন. জামাতের ঘোষিত রাজনৈতিক এজেণ্ডাকে যারা সমর্থন করেন না, কারণ ইসলামে রাস্ট্রের ধারণার জামাতীয় এজেণ্ডাকে তারা ইসলাম অনুযায়ী সঠিক মনে করেন না, সেই অবস্থান থেকে।

চার. জামাতের ঘোষিত রাজনৈতিক এজেণ্ডাকে যারা সমর্থন করেন এবং করেন বলেই জামাত করেন, সেই জায়গা থেকে।



(লেখাটারে আরো সম্পাদনা করা সম্ভব, আপাতত দিয়ে দিলাম)



সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৩৬
২৪টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×