প্রথমেই এক গাল হেসে শুরু করছি ।
রান্না করতে গেলে অবশ্যই কিছু জিনিসপত্র লাগে যা ছাড়া রান্না করা যায় না বা কঠিন হয়ে পড়ে ।
আমি আজ রান্না করব তা হল মাংস রান্না ২-৩ কেজির মাংস । আর গরম গরম ভাত । তেমন আহামরি কিছু না । এটা তাদের জন্য যারা রান্না পারে না ।
কিছু জিনিস কিনে নিবে, যা প্রত্যেক রান্নার জন্য অতীব জরুরী । (নিউ মার্কেট এ পাওয়া যাবে)
১.একটা পানির ৫০০ মিলিটার এর জগ
২.৫০০ গ্রাম এর পাত্র ।
৩.ধারালো ঢেউ এর মত দেখতে ছোট কিন্তু ধাড়ালো ছুড়ি, লম্বা ধাড়ালো ছুড়ি এবং চাপাতির মত ছুড়ি(মাংস কাটার উপযোগী) । এই দুইটা যা দাউ বা বটির কাজ করবে।
৪.একটা বোর্ড যেখানে কাটাকুটি করা যায় ।
৫.একাধিক বড় প্লাস্টিক এর বাটি(ধারন ক্ষমতা আনুমানিক ৩ বা ৪ কি ৫ কেজি) (এগুলো কাটাকুটির সময় লাগে, বা ধোয়ার সময়)
৬.বিশেষ ধারালো ছিদ্রযুক্ত পাতলা স্টিলের পাত যা আদা, আলু, শশা, পেয়াজঁ বিভিন্ন কাটতে সুবিধা হয় ।
যাদের উপরি সামর্থ আছে বা একটু বিলাসী তাদের যা লাগবে
৫.ছুড়ির সেট
৬.ব্লেন্ডার মেশিন
৭.স্লাইস মেশিন
৮.ডিম ফাটানোর মেশিন
৯.রাইস কুকার
১০.প্রেসার কুকার
১১.ওভেন
১২.মাইক্রোওভেন
এগুলো প্রায় রান্না করতেই লাগবে । যদিও তা রান্নার খাদ্যের উপর নির্ভর করছে ।
এত কথা না বলে আসুন রান্নাঘরের দিকে যাই । রান্নাঘর কি রকম হলে সুবিধা হবে তা না হয় পড়ের কোন পোষ্টে জানাব । তবে এখন আমাদের কাজ হবে রান্না করা ।
১ম ভাগঃ ভাত চড়ানো ।
> তো হাড়িঁতে ভাত বসান আর রাইস কুকার থাকলে ১ কেজী চালের সাথে ২ লিটার ৮০০ মিলি পানি দিব ।(১০০০ মিলি=১লিটার) এখন ৫০০ মিলি জগের সহায়তায় পানি ঢালব । কারন চালে পানির পরিমান অনুযায়ী স্বাদ নির্ভর করতে । না হলে মাঝে মাঝে চাল শক্ত শক্ত লাগবে না হলে বেশী নরম হয়ে জাউ জাউ লাগেব । রাইস কুকার এর সুবিধা হল এর এলার্ম দেয় ভাত হয়ে গেলে । সবারটা জানি না, তবে আমারটা ডাক পাড়ে তবে চিন্তার কোন কারন নাই আমার নিয়ম অনুযায়ী সিদ্ধ চালের ভাত হতে ১৫-২০ মি. লাগে । সুতরাং ১৫ মি. পড়েই হাড়ির দিকে চোখ রাখতে পারেন । এটার সুবিধা হল হাড়িতে মার থাকবে না । মার যখন শুকিয়ে যাবে প্রায় তখন ঝড়ে ঝড়ে ভাতটাকে একটা বল(ফাঁকাফাঁকা পাতিল যাতে পানি ঝড়ে যেতে পারে) এর উপর রাখবেন । তারপর দ্রুত হাড়িকে ধুয়ে শুকাতে দিবেন ।
যাই হোক আপাতত আমরা মূল মাংসের দিকে ফিরে যাই । কারণ এই হাড়িতে ভাত চাপিয়ে বসে থাকলেই হবে না । এর ফাকেঁ মাংসকে খাবারের উপযোগী করতে হবে ।
২য় ভাগঃ আনুসাঙ্গিক কাটাকুটি এবং প্রস্তুতি
> এখন রান্নার অবিচ্ছেদ্দ অংশ পেয়াঁজ তাই আন্দাজ বুঝে বড় হলে ৪ কি ৫ অথবা ছোট হলে ৭ কি ৮ টুকরা দিয়ে দিন । বলাবাহুল্য যে এতে স্বাদ বাড়ে । এখন আমি কিপ্টা টাইপের মানুষ আমি দেই ৩টা । যদিও আমার ক্রয়কৃতগুলি অনেক বড় । এখন ঢেউ এর মত ছুড়ি দিয়ে পেয়াজঁগুলি কাটবেন । তবে কাটাঁ ধরন হবে করাতে মত । কাঠকে যেভাবে চেড়া হয় ঠিক এইভাবেই হাতকে নড়াতে হবে । ভুলেও চাপ দিয়ে কাটার চেষ্টা করবেন না । কারণ এই ঢেউ টাইপের ছুড়ি হাতকে আগে পিছে করে কাটার জন্য । অনেকে ঢেউ বিহীন অথার্ত সমান্তরাল ধাড়ালো ছুড়ি ব্যবহার করেন । অনেকে অনেকভাবে পেয়াজ কাটে আমি অনেক খুজে বাঙ্গালী টাইপের বের করলাম । নিচের ভিডিওটতে দেখুনঃ
উপরের ভিডিও অনুসারে প্রথমেই দুইভাগ করুন অথবা পেয়াজের সামনের এবং পিছনের অংশটুকু কেটে ফেলে দিন । এরপর দুই ভাগ করুন । এরপর উপরের খোশা ফেলে দিন । এখন একটি অংশকে ধরে মাঝখান থেকে দুইভাগ করুন আবার । না ছেড়ে দিয়ে তার বিপরীত দিক থেকে পাতলা পাতলা করে কাটুন । যা ভিডিওতে দেওয়া নাই । তবে এত বেশী কুচি কুচি করতে যাবেন না । প্রথমে না পারলে কয়েকবার রান্না করলেই বুঝবেন ।
এইভাবে ১ টি কি ২টি রসুনও কুচি কুচি করতে পারেন । অথবা যাদের ব্লেন্ডার মেশিন আছে । তাতে একটু পানি দিয়ে এই টুকরো গুলিকে ছেড়ে দিয়ে পেষ্ট বানিয়ে নিতে পারেন । তাও চলে । এমনি ভাবে পেয়াজেরও পেষ্ট করা যায় । তবে চাইলে পেয়াজের পেষ্ট + কাটা পেয়াজ দুইটাই করতে পারেন । তাতে স্বাদ বাড়ে বৈ কমে না !
এরপর অনেকে আদা কেটে দেন কিংবা গুড়ো আদা দেন । এই আদার ব্যাপারটা পড়েই জানাচ্ছি ।
এখন চুলোতো হাড়ি বসিয়ে দিন । তেল দিন । এতটুকু তেল দিবেন যতটুকুতে যাতে হাড়ির সব অংশ তেলে আচ্ছাদিত হয়ে যায় । অথার্ত এত বেশী তেল না খুবই সামান্য কারণ আমি ফার্মের মুরগী রান্না করছি সুতরাং মুরগীর চর্বিই তেল হয়ে আসবে । এখন তেলে হালকা আগুনে পেয়াজ এবং রসুন কুচি ছেড়ে দিন । এর মাঝে আমরা একটু মাংস নিয়ে গবেষনা করি ।
৩য় ভাগঃ মাংস কে খাবারের উপযোগী করা ।
> আমি আগেই বলেছি আমি রাধুঁনী নই । সুতরাং আমার লক্ষ্য হচ্ছে যেভাবেই মাংসকে দ্রুত এবং সাধারনভাবে খাবারের উপযোগী করা । সেই লক্ষেই একটি মুরগীকে বাহির করুন ফ্রিজ থেকে তারপর তা ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন(গরম পানিতে না ভিজালেই ভাল যথাসম্ভব পানিতে না ভিজিয়েই বাহিরে রাখতে পারেন নরম হওয়ার জন্য) । যদি এখন ফ্রিজে না থেকে থাকে বাজার থেকে কিনে নিয়ে আসতে পারেন । আর এখনকার মুরগীর চামড়া-পালক ছিলানোই পাওয়া যায় । অনেক সময় কেটেও দেওয়া হয় । এখন যদি বিক্রেতা কেটে না দেন > প্রথমেই বোর্ডকে কাটাকুটির জন্য উপযোগী করবেন । সেজনছ বোর্ডের নীচে ভিজা ন্যাকড়া অথবা কাপড় অথবা পাতলা স্পঞ্জ রাখতে হবে । তবে ভিজা যেন থাকে । তাহলে বোর্ডটি স্লিপ কাটবে না বা সহজে নিজ স্থান চ্যুত হবে না ।
>এরপর বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বলে শুরু করবেন । আপনার ইচ্ছা । কারণ আমি ভয় পাই কাটাকুটি কখন মুরগী কোপাতে গিয়ে হাতই কোপ দেই ।
>
উপরের ছবিতে দেখুন কিভবে মুরগীকে চিত করে শুয়ানো হয়েছে । আমাদের হাত পায়ের জোড়া যেমন আছে মুরগীরও আছে । সুতরাং ফুটবল খেলার সময় জোড়াতে যেরকম মারলে খেলোয়াড় আহত হয় । তেমনি এখন জোড়াতে কুপ দিয়ে হালাকাভাবে আলাদা করতে পারব । তবে এতো জোড়ে না হালকা জোড়াতে লম্বা ধারালোঁ ছুড়ি দিয়ে একটু ঘষা দিলেই আলাদা হয়ে যাবে । তাই উপরের চিত্রে থাইকে মুরগীর মূল শরীর থেকে আলাদা করা হয়েছে । যদি শক্ত শক্ত লাগে তাহলে একটু উড়া ধুড়া ঘষা দিয়ে মূল নরম জোড়ার অংশটি খুজে নিবেন ।
এরপর পা থেকে থাইকে আলাদা করার চিত্র উপরে দেওয়া আছে ।
এরপর পাখনাকে মূল শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে উপরের চিত্রে । নরম জোড়ার অংশটিকে একটু লম্বা ধারালোঁ ছুড়ি দিয়ে চাপ দিয়ে খুজেঁ নিবেন । যদি এই জোড়া ভাঙ্গা কাজটি ফুটবলের মত পা দিয়ে না হলেও হাত দিয়েও করা যায় তবে ছুড়ি দিয়ে করলেই ভাল ।
}}এখন চাপাতি ব্যবহার করুন । প্রয়োজনবোধে নিচের ভিডিও দেখুন ।{{
উপরের ছবিতে d. নীচের বুকের পাজরের সামনের অংশ. e. লেজ এবং নীচের বুকের পাজরের পিছনের অংশ f. মাংশল বুক থেকে আলাদা করে নিন । না বুঝলে নীচের ভিডিওকে লক্ষ্য করুন ।
উপরের ছবিতে d. নীচের বুকের পাজরের সামনের অংশ. e. লেজ এবং নীচের বুকের পাজরের পিছনের অংশ f. মাংশল বুক থেকে আলাদা করে নিন । না বুঝলে নীচের ভিডিওকে লক্ষ্য করুন ।
বুককে দুইটা অংশে ভাগ করা হয়েছে । চাইলে আপনি বুকগুলোকে আরো একাধিক অংশে ভাগ করতে পারেন ।
উপরের তিনটি চিত্রে ধারাবাহিকভাবে মুরগীর মূল দেহকে টুকরো করা হয়েছে ।
যা যা টুকরো হয়েছে তা হল a. পা বা মুরগীর রান, b. থাই, c. মুরগীর পাখনা, d. নীচের বুকের পাজরের সামনের অংশ. e. লেজ এবং নীচের বুকের পাজরের পিছনের অংশ f. মাংশল বুক
নীচের ছবিতে দেখুনঃ
ভিডিওতে দেখুন কিভাবে কাটতে হবেঃ
৪র্থ ভাগঃ মাংসকে সিদ্ধ করা, কশানো এবং রান্না করা
> অনেকে বলে মাংস সিদ্ধ করতে, অনেকে বলে কশাতে এবং অনেকে বলে রান্না করতে । এখন আমি যা করতে যাচ্ছি আপনার কাছে যা লাগবে তাই ই তা হবে । এখন কাটা মাংস গুলি ধুয়ে নিন ভাল করে । মাংসের ভিতরে রক্ত থাকলে সমস্যা নাই । থাকতেই পারে । এত সময় নিবেন না ধৌত কালে । অবশ্যই ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুবেন ।
> যখন দেখবেন পেয়াজঁ গুলো হালাকা বাদামী বা সাদা বাদামী বর্ণ ধারণ করে বা ধারণ করা শুরু করে তখনই গরম মশলা দিব । সুতরাং গরম মশলার তালিকায় থাকবেঃ
-৪ কি ৫ টুকরা লং
-চাইলে গুল মরিচও দেওয়া যায় ৩ কি ৪ টুকরা
-এলাচি ৪ কি ৫ টুকরা (একটু থেতলে দিবেন)
-দাড়ুচিনি ৩টি কি ৫টি ছোটবড় টুকরা
-২ কি ৩ তেজপাতা ছিড়েঁ দিবেন (বাজারে তেজপাতার দাম অনেক)
-ধনিয়া গুড়া ২-৩ চামচ
-মরিচ গুড়া ২-৩ চামচ (বেশী দিলে তরকারী বর্ণ লাল হবে এবং ঝাল হবে যদিও আমি ঝাল দিলেও ঝাল পাই না )
-আদা গুড়া ২-৩ চামচ (যারা আদা গুড়া ব্যবহার করেন না তারা চাইলে আরেকটা উপায়ে আদা গুড়ো করে নিতে পারেন । সেটা হল আদা ডিপ ফ্রিজ রাখুন তখন আদা জমে শক্ত হয়ে যাবে এরপর আদাকে ঘষুন বিশেষ ধারালো ছিদ্রযুক্ত পাতলা পাতে যা বাজারে কিনতে পাওয়া যায়)
-জিড়া গুড়া ২-৩ চামচ
-হলুদ গুড়া ১ চামচ বা ইচ্ছামত (হলুদের গন্ধ অনেক রান্ন ঘরের বারোটা বাজাবে আর এর খাবারে প্রচুর হলুদ থাকলে যদি ঝোল একবার কাপড়ে লাগে তো মনে করবে, ঐ কাপড় তো গেল !)
তাপর একটু নাড়া চাড়া করুন কাঠি দিয়ে । চাইলে একটু ঘিও দিতে পারেন । যদি ঘরে থাকে । ধীরে ধীরে তাপ বাড়ান তবু সম্পূর্ণ না । ২ কি ৩ মি. পরেই মাংসের টুকরাগুলি ছেড়ে দিন । একটু নাড়াছাড়া করুন ৩-৪ মি. একে মনে হয় কশানো বলে । যাই হোক তখন আরও একটু তাপ বাড়ান এবং লবন দিন ১ ১/২ চামচ ভরে পরবর্তীতে লবন পরীক্ষা করে আরও বাড়িয়ে দিতে পারেন । এরপর মাংশ তার বর্ণ পরিবতর্ণ করবে তারপরই ১ ১/২ লিটার পানি জগ দিয়ে মেপে দিয়ে ঢেকে রাখুন । চাইলে মাঝখানে আলুও কেটে দিতে পারেন । আলু কাটাকাটি শিখার কিছু নাই । ধুয়ে প্রথমে দুই ভাগে ভাগ করুন । এরপর প্রত্যেক ভাগকে আরও দুই ভাগ করুন । এইভাবে ৫- ৬টি আলু দিতে পারেন ।
৪৫ মিনিট রাখুন এভাবেই তবে এর মধ্যে করণীঃ
এরপর ১০ মি. পর পর গিয়ে দেখুন, লবন পরীক্ষা করুন । ঝোল দেখুন ঘন হয়েছে কিনা । বেশী ঘন হলে একটু পানি দিন । একটু নাড়াচাড়ু করুন । তাপ সর্বোচ্চ করুন ।
ব্যস হয়ে গেল ।
এই দিকে ভাত হয়ে গেল এই দিকে তরকারীও হয়ে গেল । তাহলে এবার আহার করুন ।
মুখবন্ধ------
ভাতের চাল ধুয়ে বসা সময় লাগবে ২ মিনিট
পেয়াজ,রসুন কেটে ধুতে লাগবে ৩ মিনিট
তেল ঢেলে পেয়াজ, রসুন ঢালতে মিনিটও লাগবে না !
মাংস কেটে ধুতে লাগবে ৩ মিনিট
পেয়াজ,রসুন একটু বাদামী করতে লাগবে ৩ মিনিট
সব মসলা দিতে মিনিটও লাগবে না !
মাংস একটু ভাজতে বা কষাতে লাগবে ৪ মিনিট
আর মাংস রান্না করার সময় ঢেকে রাখুন ৪০-৪৫ মি. সবোর্চ্চ তাপমাত্রায়
*মোট সময়ঃ ১ ঘন্টা (৬০ মিনিট) রান্না শুরু, শেষ ও পরিবেশন ।
+ সব কিছু ধুয়ে ফেলা ।
(যদি পেয়াজ,রসুন বাদামী হতে বা মাংস কষাতে সময় লাগে তাহলে তাপ বাড়িয়ে দিবেন যাতে প্রেসারে দ্রুত বাদামী হতে পারে বা কষাতে পারে)
খাদ্যের তৃপ্তি খুদাতে সুতরাং যতই খারাপ রান্না হোক, তৃপ্তি আপনার হবেই ।
*প্রাথমিকভাবে সময় লাগতে পারে পরবর্তীতে করতে করতে দ্রুত রান্না শিখে যাবেন ।
কৃতজ্ঞতা একটু আপডেট হবে ।