সেদিন ছিল বর্ষার দ্বিতীয়।
বেশিদিন আগের কথা নয়।
তোমায় আমি লিখেছিলাম
আমার প্রথম পত্র।
চারিদিকে সাজ সাজ রব পড়ে গিয়েছিল।
টেবিলে কাগজ,
হাতে কলম,
অন্তরে ভালোলাগার তীব্রতা-
আর মস্তিষ্কে কথামালার ফুলঝুড়ি।
কিন্তু একটি কথাও লিখছিলাম না।
এ পৃথিবী যেন একটিবারের জন্য থমকে গিয়েছিল।
থমকে গিয়েছিল আমার শিরা-উপশিরার রক্ত প্রবাহ।
থমকে ছিল সময়ের মহাচাকা।
থমকে ছিল কল্পিত তরু শাখা।
বিশাল পাথার ঢেউগুলি আজ শান্ত।
ভয় ছিল মোর হই যদি দিকভ্রান্ত।
ঘোরে ছিলাম।
তোমার কথা ভাবতে ভাবতে
দুপুর থেকে বিকেল গড়ায়।
তোমার কথা ভাবতে ভাবতে
বিকেল শেষে নবীন সাঁঝে
আলো জ্বলে সন্ধ্যাতারায়।
সন্ধ্যাতারাও একসময়ে -
এদিক থেকে ওদিক গড়ায়।
ঘোর কাটে মোর।
হঠাৎ দেখি চারিদিক পানে চেয়ে।
বসে রয়েছি আমিই কেবল,
শূণ্য পানে চেয়ে রই চোখে
অশ্রুবিন্দু নিয়ে।
সেদিন ছিল বর্ষার দ্বিতীয়।
পরিস্কার আকাশে দেখা গেল মেঘের ঘনঘটা।
উদ্বাহু ধরনী যেন মেঘের কাছে আকুতি জানিয়েছিল -
এক পশলা বৃষ্টির।
বৃষ্টি ঝরে।
বর্ষার প্রবল বর্ষণে ;
আমার জানালার কাঁচ ধুয়ে মুছে
একাকার হয়ে যায়।
যেন বলতে চায়-
"তোমার পত্রে আমার কথাও লিখ।"
বাইরে রিকসার টুংটাং আওয়াজও যেন বলতে চায়-
"তোমার পত্রে আমার কথাও লিখ।"
ঘরের প্রতিটি আসবাবপত্র যেন একযোগে জীবন্ত হয়ে
বারবার বলে ওঠে-
"তোমার পত্রে আমাদের কথাও লিখ।"
পত্র লেখা হয় এবেলা শেষ।
মনের কুঠীরে স্বস্তির বয় রেশ।
অবশেষে আজ হলো কিছু তবে;
সময় ক্ষেপন হয়নি শুধু
- আকাশকুসুম ভেবে।
লিখেছি অনেক; লিখেছি ব্যাপক।
খামে লিখেছি পত্র প্রাপক।
ভালোবাসি তোমায় আমি
- তুমিই আমার হবে।
লেখা শেষ করে অমর বাণী,
আবার দেখি পত্রখানি-
কী লিখিলাম তোমায়?
একী! বিমূঢ় আমি, নির্বাক আমি।
ব্যাথায় হৃদয় পোড়ায়।
অবাক ধরনী আবার থামে-
আমার চিঠির খরায়।
চিঠি লেখার সাদা কাগজ
সাদাই থেকে যায়।
সেদিন ছিল বর্ষার দ্বিতীয়।
বেশিদিন আগের কথা নয়।
তোমায় আমি লিখেছিলাম
আমার প্রথম পত্র।
কিন্তু আমার অব্যক্ত কথামালা
বাক্যরূপ না পাওয়াতে,
আমার লেখা প্রথম পত্রখানি
তুমি পাওনি।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৫