মৃৎশিল্প মানুষের প্রাচীনতম আবিষ্কার। খৃষ্টপূর্ব ২৯ হাজার থেকে ২৫ হাজার অব্দের নব্যপ্রস্তর যুগে এর সূচনা।
এ পেশার সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে কুমার বা কুম্ভকার বলা হয়। আমাদের দেশে গ্রামীণ জনপদে কুমারদের কারখানা একটি দর্শনীয় বিষয়। একই ছাদের নিচে দেখা যায় চুলা, গুদামঘর ও বসবাসের ঘর, দরজার সামনের খোলা জায়গাটুকু ব্যবহূত হয় কাদামাটি তৈরির স্থান হিসেবে।
কুমাররা তৈজসপত্র তৈরিতে বেলে ও কালো এঁটেল এ দু ধরনের মাটি ব্যবহার করে থাকে। বেলে মাটির সঙ্গে এঁটেল মাটির অনুপাত ১:২ করে মেশালে শক্ত ও উন্নতমানের মৃৎপাত্র তৈরি করা যায়।
কাদামাটি দিয়ে তৈরি মৃৎশিল্পকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়: মাটির পাত্র, পাথুরে পাত্র ও পোর্সেলিন। এসব তৈরির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ধরনের কাদামাটির প্রয়োজন। মাটি সংগ্রহের পর হাত ও পায়ের সাহায্যে বা কাঠ অথবা পাথরের পিটনা দিয়ে থেতলে পাত্র তৈরির উপযুক্ত করে তোলা হয়।
কাক্ষিত রূপ দেয়ার পর রোদে শুকানো হয়। পরে পাঞ্জা বা চুলাতে ভাটার আগুনে উচ্চ তাপমাত্রায় (৬০০ - ১৬০০°সে) পোড়ানো হয়।
লাল রঙের তৈজসপত্র তৈরিতে ভাওয়ালের লালমাটি ব্যবহার করা হয়। সাদা কিংবা কালো রঙের তৈজসপত্র তৈরিতে একই ধরনের মাটি ব্যবহার করা হয়। কালো পাত্র তৈরির ক্ষেত্রে চুলাকে কিছু সময় ঢেকে রাখা হয়। এক্ষেত্রে অনেক সময় চুলার আগুনে খৈল পোড়ানো হয়।
চাকচিক্যময় করতে রং লাগানো হয়। লাল সিসা থেকে লাল রং, আর্সেনিক থেকে হলুদ, দস্তা থেকে সবুজ এবং বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগের মিশ্রণে কালো রং তৈরি করা হয়। মাটির তৈজসপত্র ছাড়াও অনেক কুমার ইট, টাইলস, মূর্তি, পুতুল ও খেলনা প্রভৃতি তৈরি করে।
বাংলাদেশে মৃৎশিল্প ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে চলছে। কিন্তু কালের বিবর্তনে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে এই শিল্পের প্রসার। অনেকে এ পেশায় থাকলেও মাটির তৈরি সামগ্রীর চাহিদা না থাকায় অভাব-অনটনে সংসার চালাতে পারছেন না তারা। শৈল্পিক নৈপুণ্য ও সৃজনশীল এ শিল্পের বর্তমানে ঠাঁই হয়েছে বিভিন্ন জাদুঘর ও চারু প্রদর্শনীতে। সময়ের আবর্তনে অন্যান্য বস্ত্ত, যেমন প্লাস্টিক বা ধাতুনির্মিত পণ্যের উদ্ভব ও ব্যবহার মৃৎশিল্পের ব্যাপক অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:৫৯