ফ্রান্সে কান চলচ্চিত্র উৎসব চলাকালীন কেউ যদি কান ঘুরে এসে বলেন, আমার ছবি কান ফেস্টিভালে প্রদর্শিত হয়েছে! এর চেয়ে ডাহা মিথ্যা কথা আর কী হতে পারে! বাংলাদেশ থেকে কোনো ছবি যদি কান ফেস্টিভালে সত্যি সত্যি চান্স পেতো, সেই নিউজ তো স্বয়ং কান ফেস্টিভালের অফিসিয়াল ওবেব সাইটেই থাকার কথা। আমি এখানে কানের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট দিলাম। http://www.festival-cannes.com/en/। যে কেউ ইচ্ছে করলেই এ বছরের কান ফেস্টিভালের যে কোনো বিভাগে, কোন দেশের, যে কোন পরিচালকের কোন ছবি অফিসিয়ালি প্রদর্শিত হচ্ছে, দেখে নিতে পারেন। তার আগে বলে রাখি, বাংলাদেশ থেকে কান ফেস্টিভালে কোনো ছবি যায়নি। অথচ প্রথম আলো'র মত চুতিয়া দৈনিকও এটি নিয়ে গোটা জাতির সামনে মিথ্যাচার করছে। দুনিয়ার সবাইকে কী এরা বোকাচোদা মনে করে নাকি!!
অথচ কান ফেস্টিভালের নামে বাংলাদেশের অমিতাভ রেজার 'আয়নাবাজি' ও তৌকীর আহমেদের 'অজ্ঞাতনামা' ছবি প্রদর্শনের দাবি করা হচ্ছে। এটা একটা ডাহা মিথ্যা সংবাদ। সবাই বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার থাকুন। বিশেষ করে যারা চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে জড়িত, তাদের এসব ভাওতাবাজির খবর সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত!
একটা উদাহরণ দিলে সবাই বুঝতে পারবেন আসল বিষয়টি। আমাদের অমর একুশে বইমেলার সময় জাতীয় গ্রন্থ ও বাংলা একাডেমি অফিসিয়ালি বাংলাদেশের কিছু প্রকাশকদের স্টল বরাদ্দ দেন। কিছু লিটল ম্যাগাজিনও অফিসিয়ালি অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহন করে। কিন্তু পুরো বইমেলার সময় দোয়েল চত্বর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ফুটপথে পাইরেসি বইয়ের হাট বসে। যারা বইমেলায় যায় তাদের কেউ কেউ এসব পাইরেসি বইও ফুটপথ থেকে ক্রয় করেন। তাই বলে এসব পাইরেসি বইয়ের দোকানদারগণ তো আর অমর একুশে বইমেলার প্রকাশক বা লেখকদের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নয়। কিন্তু তারাও বইমেলার সময় একটা বড় ধরনের ব্যবসা করতে পারেন বটে।
ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসব বিশ্ব চলচ্চিত্রের একটি বড় বাজার। মূল ফেস্টিভালের সময় আমাদের ফুটপথের পাইরেসি বইয়ের দোকানের মত কানের মূল ফেস্টিভালের আশেপাশে অসংখ্য অডিটরিয়াম ব্যক্তিগতভাবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য ভাড়া নেওয়ার সুযোগ আছে। ইচ্ছে করলে পৃথিবীর যে কোনো দেশের যে কোনো চলচ্চিত্র নির্মাতা বা সেই ছবির প্রযোজক সেই সব হল প্রাইভেটভাবে ভাড়া নিয়ে কান উৎসব চলাকালীন নিজেদের ছবি সেখানে প্রদর্শনের সুযোগ পান।কিন্তু এক্ষেত্রে সেই হলের ভাড়া আপনাকেই গুণতে হবে। আর সেখানেও নানান দেশের দর্শক পাবার সুযোগ আছে।
এখন কান উৎসবকে ঘিরে বাংলাদেশ থেকে যদু মধু আবদুল সবদুল রাম শ্যাম যে কেউ নিজের টাকায় এধরনের হল ভাড়া নিয়ে যদি নিজেদের ছবি প্রদর্শন করেন, সেটা তো মূল কান উৎসবের কোনোভাবেই অংশ নয়। সেখানে নিজেদের পকেটের টাকায় হল ভাড়া নিয়ে আপনি ছবি দেখাচ্ছেন। সেটি তো কান ফেস্টিভালের ছবি নয় রে পাগল। কান ফেস্টিভালে যে সকল ছবি দেখানো হয়, সেগুলোর সকল নিউজ কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিসিয়াল ওয়েব সাইটেই আছে। https://www.youtube.com/watch?v=8H3TB-Cg1cI। এমন কী সে সকল ছবির লাইভ প্রোগ্রাম আপনিও ঘরে বসে এখান থেকে ইচ্ছে করলেই দেখতে পারেন। এর বাইরে দুনিয়ার যত যদু মধুদের ছবি কানের নামে নিউজ করা হোক না কেন, সেগুলো ব্যক্তিগত উদ্যোগে করা প্রদর্শন। কানে কারো ছবি প্রদর্শন হলে সেখানে সেই ছবির পরিচালক বা প্রযোজকের কোনো খরচ নেই। কান কর্তৃপক্ষই সেই খরচ বহন করে।
বাংলাদেশের মত মুর্খদের দেশে ফরিদুর রেজা সাগরের মত ধুরন্দরদের এসব ধান্দাবাজিকে ঘিরে এখন আপনি যদি মনে করেন বাংলাদেশের দুটি ছবি কান ফেস্টিভালে এবার প্রদর্শিত হয়েছে। প্রথম আলো'র মতে আজ নাকি বাংলাদেশের দিন! তখন হাসুম না কান্দুম কিচ্ছু বুঝি না। এরা কী দুনিয়ার সবাইকে বলদ মনে করে?
অমর একুশে বইমেলার সময় আমাদের ফুটপথের পাইরেসি বইয়ের কোনো দোকানদার যদি দাবি করেন, তিনিও বইমেলায় আসছেন, বই বিক্রি করছেন। সেই কথা অফিসিয়ালি যতটুকু সত্য, তারচেয়েও ডাহা মিথ্যা হবে কেউ যদি কান ফেস্টিভালের সময় ব্যক্তি উদ্যোগে এমন হল ভাড়া নিয়ে নিজেদের ছবি প্রদর্শন করে বলেন, এই যে আমার ছবি কান ফেস্টিভালে প্রদর্শন হয়েছে।
আমার মাথায় একটি জিনিস কাজ করে না। একজন সৃজনশীল মানুষ যে কিনা চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, এত বড় ওপেন দুনিয়ায় সে কেন এই মিথ্যার আশ্রয় নেবেন? যেখানে একটা গোগল সার্স দিলেই তার বানানো গল্পের সকল মিথ্যা এক মিনিটেই ধরা পড়ে। পাগলে কিনা কয় আর ছাগলে কিনা খায়। এসব ধান্দাবাজদের সম্পর্কে সবাই সতর্ক থাকুন। এরাই আপনাকে মিথ্যা বিষয় বুঝিয়ে আপনার পকেটের টাকা ছিনিয়ে নেবার কাজে ওস্তাদ। অতএব সাধু সাবধান।
১৭ মে ২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫১