ফেসবুকে সাইকো চেনার কী উপায়? আমার তো মনে হয়, যারা ঘনঘন ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচার চেইঞ্জ করে, এরা সবাই বড় বড় সাইকো। ফেসবুক এসেছে একুশ শতকের ২০০৪ সালে। আর বাংলাদেশে ২০০৭ সাল থেকে আমি যখন ফেসবুক চালাই, তখন বন্ধুদের অনেকেই আমাকেও সাইকো কইতো। এখন সেই সকল বন্ধু যখন ফেসবুক চালায় দেখে আমার সত্যি ভালো লাগে। কারণ এদের অনেকের ফেসবুকে হাতেখড়ি আমার কাছে। বন্ধুদের অনেকের ইন্টারনেটেও হাতেখড়ি আমার কাছে। অথচ ইন্টারনেট-ফেসবুক নিয়ে মাতামাতির কারণে বন্ধুদের অনেকে এক সময় আমাকে বকাবকি করতো।
বাংলাদেশ ধীরে ধীরে ডিজিটাল হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এখনো ঠিকমত পাসওয়ার্ড দিতে জানে না। অনেকে আবার পাসওয়ার্ড ভুলে যায়। এর প্রধান কারণ, বাংলাদেশের মানুষ কোনো জিনিস ভালো ভাবে শেখে না। আধাআধি শিখেই সেই বিষয়ে নিজেদের পণ্ডিৎজ্ঞান করেন। অথচ শুধুমাত্র ফেসবুক দিয়েই দেশের বড় বড় সন্ত্রাসীদের পাকরাও করা সম্ভব। কিন্তু আমাদের পুলিশ সেই শিক্ষাটা ভালোমত নেয় না। সবার আগে ঠিক করা দরকার আমাদের ন্যাশনাল আইডি কার্ড। প্রত্যেক নাগরিকের জন্য একটা ইউনিক নাম্বার হবে। এই ইউনিক নাম্বারটি তার সারাজীবন সবখানে দরকার হবে। কেউ যদি মোবাইল ফোন নিতে চায়, ওটা দিতে হবে, কেউ যদি পাসপোর্ট নিতে চায়, ওটা দিতে হবে। ন্যাশনাল আইডি কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজের লাইসেন্স নেওয়া যাবে না। বন্দুকের লাইসেন্স হোক আর ড্রাইভিং লাইসেন্স হোক, মোবাইল ফোন হোক, আর এনজিও লাইসেন্স হোক, যে কোনো বিজনেস লাইসেন্স নেওয়ার ক্ষেত্রেও ন্যাশনাল আইডিকে মৌলিক ভিত্তি করলে, কারো সাধ্য নাই, কোনো অন্যায় করে পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়া। অথচ রাষ্ট্র সেই ন্যাশনাল আইডি কার্ড করার ক্ষেত্রে এখনো কোনো ধরনের জোড়ালো আগ্রহ দেখায় না। একটি শিশুর জন্ম হলেই পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে তার জন্য ন্যাশনাল আইডি কার্ড বরাদ্দ করতে হবে। মৌলিক এই জায়গাটায় যত আধাখেচরা কাজ হবে, এর সঙ্গে রিলেটেড অন্য সব ক্ষেত্রেও গোটা রাষ্ট্রে তাই হবে। আমাদের রাষ্ট্রই এসব ফাঁকফোকর ইচ্ছে করেই রেখে দেয়। যাতে সন্ত্রাসীরা তাদের অভয়অরণ্যে আরামে ঘুরে বেড়াতে পারে। বায়োমেট্রিক তো আরো অনেক পরের বিষয়। আমাদের টেলিফোন মন্ত্রী মাঝখান থেকে মনে করছেন, কেবল বায়োমেট্রিক হয়ে গেলেই সব সন্ত্রাসী পাকরাও করা সম্ভব। কিন্তু আসল সত্য হলো, আমাদের মন্ত্রী বা পুলিশের চেয়ে সন্ত্রাসীদের বুদ্ধি অনেক বেশি। সমস্ত ফাঁকফোকর আমাদের মন্ত্রী বা পুলিশের চেয়ে সন্ত্রাসীরা বেশি জানে। সেই ফোকর বন্ধ না করার উদ্যোগ না নিলে ঘটনা কেবল ঘটতেই থাকবে।
আমাদের রাষ্ট্র কাঠামোতে সদিচ্ছা ব্যাপারটা প্রায় পুরোটাই লোক দেখানো। কাজের ভেতরে অসংখ্য ফাঁকফোকর রেখেই আমাদের রাষ্ট্র চলছে। ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। চোখের সামনে একটা দেশের রাজধানী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আর আমাদের শাসকগোষ্ঠী বড় বড় উন্নয়নের বুলি ছুড়ছে। প্রতিদিন ট্রাফিক জ্যামে যত শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয়, তার আর্থিকমূল্য কত? রাষ্ট্র সেই হিসাব দিতে পারবে না। রাষ্ট্রের সেই সদিচ্ছাও নাই। আমাদের রাষ্ট্র চলে স্রেফ হুজুগে। এখানে আইনের কোনো বালাই নাই।
আমাদের রাস্তা নির্মাণ ব্যয় বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কিন্তু আমাদের সেই ব্যয়বহুল রাস্তা সবচেয়ে কম সময় টিকে থাকে। রডের বদলে বাঁশ দিয়ে সরকারি ভবন নির্মাণ একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বে বিরল। চোখের সামনে এই দেশটাকে পৃথিবীর সাক্ষাৎ নরক বানানোর প্রচেষ্টা চলছে। সুন্দরবন ধ্বংস করা হচ্ছে। নদী মেরে ফেলা হচ্ছে। চারিদিকে কেবল দখল উৎসব। আহা এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি!
......................................
৭ মে ২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৬ দুপুর ২:৪২