বাংলাদেশ সত্যি সত্যিই এক বিচিত্র দেশ। এখানে কোনটা ভালো আর কোন খারাপ উদাহরণ হতে পারে, তা নিয়েই বরং এখন গবেষণা করার মত হাজার হাজার উপাদানে ভরপুর। আমাদের মিডিয়াগুলো সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে এখন আর কষ্ট করতে চায় না। রেডিমেট সংবাদ একটু এদিক সেদিক করেই সংবাদ প্রচার করতে ব্যস্ত তারা। অনুসন্ধানি রিপোর্ট বলতে গেলে উঠেই যাচ্ছে। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপারটি হল, কোনটি সংবাদ আর কোনটি সংবাদ নয়, সেই বিবেচনা বোধেই আমাদের মিডিয়াগুলো এক ধরনের দেউলিয়াত্বে ভুগছে। অথচ আমাদের সংবাদপত্রের সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের প্রাইভেট টেলিভিশনের চ্যানেল সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের এফএম রেডিওর সংখ্যা বেড়েছে। সংবাদও বেড়েছে। কিন্তু সেই সংবাদের মধ্যে দেউলিয়াত্বও ভয়ংকর আকারে বেড়েছে। এক কথায় অনেকটা সরল করে বলা যায়, আমাদের মিডিয়ার দেউলিয়াপনা দিন দিন বাড়ছে।
গতকাল ছিল আমাদের রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিবের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান। শুক্রবার বিয়ে। বিয়ের খবর তো খুশির খবর জবাই জানেন। কিন্তু এই বিয়ের মাহাত্ব কি? এটি একটি অসম বিয়ের জ্বলন্ত উদাহরণ। রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি অসম বিয়েকে গোটা রাষ্ট্র একযোগে হৈহৈ চৈ চৈ করে নেচে গেয়ে স্বাগত জানাচ্ছে। অসম কিভাবে? এই বিয়ের বর রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিবের বয়স মাত্র ৬৭ বছর। আর কনে অ্যাডভোকেট হনুফা আক্তার রিক্তার বয়স ২৯ বছর। বুড়ো বর যুবতী কনে। তাদের বয়সের পার্থক্য মাত্র ৩৮ বছর। কনের বয়স ৩৮ বছর হতে আরো অন্তত ৯ বছর লাগবে। তখন বরের বয়স হবে মাত্র ৭৬ বছর। বুঝেন ঠ্যালা। রাষ্ট্রীয়ভাবে কিভাবে এই অসম বিয়েকে স্বগত জানানো হচ্ছে?
কারণ, বর ও কনে দুজনের বাড়ি কুমিল্লা। বরের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। আর কনের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনায়। এই বিয়ে উপলক্ষ্যে কুমিল্লা থেকে চান্দিনা পর্যন্ত বরকে বরণ করতে অন্তত এক ডজন তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। বরের গাড়িসহ কয়েকটি ভিআইপি গাড়ি যাবে কনের বাড়ি গল্লাই ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা মীরাখলা গ্রামে। ৭শ বর যাত্রীর মধ্যে ডেপুটি স্পীকার এড. ফজলে রাব্বিসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০জন মন্ত্রীও উপস্থিত থাকবেন। বিয়ে অনুষ্ঠানে প্রায় একশ স্বেচ্ছাসেবক , পুলিশ, আনসারসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় শতাধিক সদস্য সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন। একেবারে রাজকীয় ব্যাপার স্যাপার। তো এই বিয়েতে মাননীয় রেলমন্ত্রী কত টাকা খরচ করছেন? সেটা জানতে হলে আরো অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু আসল খরচের ব্যাপারটা হয়তো কোনোদিনও জানা যাবে না। আমাদের রাষ্ট্রীয় রাজস্ব বিভাগের সেই প্রচেষ্টাও থাকবে না। কারণ, এই বিয়েতে স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশির্বাদ রয়েছে।
রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি অসম বিয়ের এমন হুজুগে দৃষ্টান্তের ভেতরেই অনেক না বলা রহস্য লুকিয়ে আছে। মাননীয় রেলমন্ত্রী, বাংলাদেশের রেলওয়ের বর্তমান দশা যে চেহারায় আছে, তাতে সেই মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে রেলের সার্বিক উন্নয়নের প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে আপনি যে বিয়ে করতে যাচ্ছেন বুড়ো বয়সে, এটাকে এক কথায় বলা যায়, বুড়ো বয়সে আপনার মধ্যে ভিমড়তি বাসা বেধেছে। আপনি অসম বিয়েকে রাষ্ট্রীয়ভাবে উৎসাহ দিচ্ছেন। এটি একটি খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বর্তমান মন্ত্রী পরিষদ আপনার বিয়ে উপলক্ষ্যে রঙ্গরস করার একটি মোক্ষম উপাদান পেয়েছে। মানে আপনি মন্ত্রীসভায় একটি হাসির খোরাক যোগান দিয়েছেন। রাষ্ট্রের যে দায়িত্বটি আপনার করার কথা ছিল, সেটিকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে আপনি রঙ্গরস সরবরাহের পাত্র হয়েছেন। ভবিষ্যতে দুদক যদি আপনআর এই বিয়ের হিসেব নিয়ে টানাটানি করে, তখন আপনাকে নতুন বিড়ম্বনায় জড়াতে হবে। রঙ্গরসের আরেকটি বিষয় হল, আমাদের শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু মন্ত্রীসভায় বলেছেন, আপনার বিয়ের কারণে আমাদের সংসার ভাঙার উপক্রম হয়েছে। কানাডা, আমেরিকা, বৃটেন থেকে অনেক পরিচিতজন নাকি তাঁকে ফোন করে জানতে চেয়েছেন, আপনি নাকি আরেকটা বিয়ে করতে যাচ্ছেন? তাঁর স্ত্রীকে অনেকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছেন, আপনার স্বামী নাকি আরেকটা বিয়ে করতে যাচ্ছে। এতো গেলো মন্ত্রীসভার রঙ্গরস।
গতকাল আমাদের টেলিভিশন মিডিয়াগুলো আপনার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান লাইভ টেলিকাস্ট করলো। আপনার বিভিন্ন মুডের ছবি ফেসবুক, ট্যুইটার সহ নানান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বিশাল বিনোদনের খোড়াক হয়েছে। আপনি তো রাষ্ট্রের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। রেলওয়ের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দায়িত্ব আপনার হাতে। আর আপনি কিনা সেই গুরু দায়িত্ব অবহেলা করে সবার হাসির খোরাক হবার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেলেন!! আপনার বিয়েটি যেভাবে মহা রাজকীয় ভাবে আয়োজন হল, এবার যদি আপনি বাংলাদেশের রেলওয়ের চেহারা এমন রাজকীয় করতে না পারেন, তাহলে আপনাকে সবাই ছি ছি করবে, এই কাণ্ডজ্ঞানটুকু আপনার কি হয়েছে??
অনেকে একথাও বলছেন, যারা আপনার বিয়ে নিয়ে বিরুদ্ধাচারণ করছেন, তারা জেলাস থেকে করছেন। আপনি রাষ্ট্রের একজন মন্ত্রী। আপনার সাথে দেশের সাধারণ একজন নাগরিকের জেলাস করার কিছু নেই। আপনি কাজ করে বরং দেশের মানুষের হৃদয় জয় করবেন। এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা। সেখানে আপনি একটি অসম বিয়ে করে রাষ্ট্রে অসম বিয়েকে উৎসাহ দিতে মদদ দিচ্ছেন। এটি বাংলাদেশের জন্য খারাপ উদাহরণ হয়ে থাকবে। আমরা অপেক্ষায় থাকব, কখন আপনি রেলওয়ের অভূতপূর্ব সাফল্য নিয়ে আসেন। আর যদি সেটি করতে আপনি ব্যর্থ হন, তাহলে লোকে আপনাকে স্রেফ সঙ হিসেবে পরবর্তী সময়ে হিসেব করবে। এটা মনে রাখবেন।
আমাদের মিডিয়া দিন দিন আরো দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। কোনটা খবর, কোন খবর লাইভ দেখানো উচিত, এই কাণ্ডজ্ঞান আমাদের মিডিয়ার কবে হবে? একজন মন্ত্রী বিয়ে করছেন, তা লাইভ দেখানোর কি আছে? এর মধ্যে খবরের কি আছে? যদি বিনোদনের বিষয় হিসেবে এটি প্রচার করা হয়, তাহলে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান লাইভ দেখানোর মধ্যে বিনোদনের কি আছে বুঝি না। গতকাল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন ছিল। একাত্তরে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী'র মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করেছেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১। মিডিয়ার উচিত ছিল, সারাদিন মতিউর রহমান নিজামীর একাত্তরে সংগঠিত নানান কুকর্মের অনেক অনুসন্ধানী রিপোর্ট তুলে ধরা। গোটা বাংলাদেশ ও বিশ্ববাসী জানতে পারতো, কিভাবে এই খুনি নরপিচাশ একাত্তরে কি কি অপরাধ করেছিল? কেন তার মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য।
কিন্তু আমাদের মিডিয়া সেই অনুসন্ধানি রিপোর্টে না গিয়ে, তারা প্রচার করলো, নিজামী কি খায়? এখন কি খাবে? পড়ণে কি ছিল? মাথায় জিন্নাহ টুপি ছিল কিনা এসব। এসব তো খবরের বিষয় নয়। এসব তো আবর্জনা। আবর্জনা কেন মিডিয়ার সংবাদ হবে। একাত্তরে যেসব পরিবার নিজামীর কুকর্মের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তাদের কথা শুনানোর সুযোগ ছিল। সেই সব পরিবার বর্তমানে কেমন মানবেতর জীবনযাপন করছে, তা তুলে ধরা যেতো। অথচ মিডিয়া নিজামীর পোশাক, খাবার, টুপি, ইত্যাদি অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়েই মেতে রইল। আমাদের মিডিয়া কবে অনুসন্ধানি রিপোর্টের দিকে অগ্রসর হবে? দেশে মিডিয়ার যে হারে প্রসার হয়েছে, সেই তুলনায় কোয়ালিটি খবর কি প্রচার করতে পারছে তারা? প্রফেশনালিজম কবে গড়ে উঠবে? জার্নালিজম মানে সাদা চোখে দেখা বিষয় নয়, খবরের অন্তরালের খবর বের করাই জার্নালিজম। আমাদের মিডিয়ার দেউলিয়াপনায় বারবার মনে হচ্ছে, মিডিয়া দেশের জন্য এখন একটি হিরিকে পরিনত হয়েছে। অনেক মিডিয়ার চেয়ে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, অনেক খবরই তাদের আগেই প্রচার করছে। মানুষ ফেসবুকের মাধ্যমে মিডিয়ার চেয়ে খবরটি আগেই প্রচার করার মত সক্ষমতা অর্জন করেছে। তাহলে মিডিয়ার ভূমিকা কি হবে? আমাদের টেলিভিশন, সংবাদপত্র, রেডিও-র আগে যদি ফেসবুক থেকে খবরটি আগেভাগে জানা যায়, তাহলে বাংলাদেশে এতো এতো মিডিয়ার প্রয়োজনীয়তা কি জন্য?
বাংলাদেশে মিডিয়াও এক বড় সন্ত্রাস সৃষ্টির আকড়া। খবরের পেছনে না ঘুরে এরা টাকার পেছনে ছোটে। আজকাল বিভিন্ন সভা-সেমিনার, মানববন্ধন, আন্দোলনের প্রধান ব্যাপার থাকে, কখন টেলিভিশনের ক্যামেরা আসবে? টেলিভিশনের ক্যামেরা আসার পর, তখন সেসব সভা সেমিনার, মানববন্ধনে এক ধরনের গতিশীলতা দেখা যায়। যতক্ষণ ক্যামেরা না আসে ততক্ষণ সভা, সেমিনার, মানববন্ধন শুরু হয় না। আর ক্যামেরা আসার পর তাদের এক্টিভিটিজ শুরু হয়। এমনও দেখেছি, মানববন্ধনে মোট উপস্থিতির সংখ্যা ছিল হাতে গোনা দশ-পনের জন। ক্যামেরার কল্যানে তা বড় করে উপস্থাপন করা হচ্ছে। যেসব বক্তব্য খবরের অংশ না হলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না, আমাদের মিডিয়াগুলোর কাছে, তাই অনেক গুরুত্ব সহকারে প্রচার পাচ্ছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশটির নাম বাংলাদেশ। এখানে পায়ে পায়ে মানুষ। গায়ে গায়ে মানুষ। দেশে জাতীয় জনসংখ্যা নীতি নামে কোনো নীতিই কার্যকর নেই। কার্যকর নেই পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি। এখানে খাবার নেই কিন্তু অসংখ্য অভুক্ত মুখ আছে। রাজধানী ঢাকায় যানজটের কথা না হয় নাইবা বললাম। ফুটপথ দিয়ে মানুষের কারণে হাঁটা যায় না। আপনি যদি সামনে তাকিয়ে হাঁটেন, পেছন থেকে ধাক্কা লাগবে। যদি পেছনে দেখতে যান, সামনে থেকে আপনার সেঙ্গ আরেকজনের ধাক্কা লাগবে।
সারা পৃথিবীর মানুষ যদি খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জড়ো করা হয়, তাহলে বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে ঘনত্ব দাঁড়াবে, তারচেয়েও বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব বর্তমানে বেশি। এবার অনুমান করুন আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছি। বাংলাদেশের জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে, আর সরকারি কাগজপত্রে যেভাবে দেখানো হচ্ছে, এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য বোঝার জন্য আপনার গবেষক হবার প্রয়োজন নাই। আপনি শুধু বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরলেই এর প্রমাণ হাতেনাতে পাবেন। এরকম একটি অপরিপক্ক, অগোছালো, জগাখিচুরি মার্কা দেশে একজন মন্ত্রী ৬৭ বছর বয়সে বিয়ে করার খায়েস কোথা থেকে পান? নিশ্চয়ই মন্ত্রী হবার পর ব্যাচারার আয় উন্নতি ঘটেছে। আরো উন্নতির প্রত্যাশাও রয়েছে। যে কারণে ২৯ বছরের একটি কনে তুড়ি মেড়ে জুটিয়ে ফেলেছেন। আর এই অসম বিয়েতে খোদ রাষ্ট্রের সায় আছে।
উচিত ছিল, মন্ত্রীসভায় জনাব মুজিবুল হককে কড়া একটা ধমক মারা। মিঞা, রেলওয়ের দশা কি আছে, তাই ঠিক করুন। আপনি বিয়ে করার চিন্তা কিভাবে করতে পারেন? আর করলেও চুপচাপ করেন। ঢাক ঢোল পিটানোর কি আছে? সেই ধমকটি না খেয়ে মন্ত্রী বাহাদুর যখন সবার আনন্দের খোরাক হলেন, তখন তিনি আরো উৎসাহ পেলেন, 'যে তালি পরে লাইনে আছি গো'। আমরা জানি, রেলের গাড়ি গুলো লাইনেই চলে। লাইনচ্যুত হলেই বরং বিপদ। এখন সেই দপ্তরের মন্ত্রী যদি ভাবেন, উনিও লাইনে আছেন, 'কুনো অসুবিদা নাইক্কা'। তাহলে বাংলাদেশের কপালে আরো অনেক দুর্দশা আছে।
আমাদের কবি শামসুর রাহমান লিখেছিলেন, 'উদ্ভট উটের পৃষ্ঠে চলছে স্বদেশ...' । কথাটি স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় কবি'র কলম থেকে বের হলেও, কবি'র এই কথাটি বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকেই দেশের সকল কর্মকাণ্ড, যজ্ঞ, রাষ্ট্রীয় যন্ত্র, মিডিয়া, খবর, বিয়ে, মন্ত্রী, সবার বেলায় সব সময় প্রযোজ্য বলেই আমার মনে হয়। অদ্ভুত উটের পিঠে বাংলাদেশ সওয়ার হয়েছে। একটি অসম বিয়েকে রাষ্ট্রীয়ভাবে এভাবে এক ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা করার পরিণাম কোনদিন ভালো হবার কথা না। আমার এই কথাটি মন্ত্রী মহোদয়কে ব্যক্তিগতভাবে কোনো কষ্ট দেবার জন্য নয়। টোটাল বিষয়টি বোঝাতে, দেশের কর্তাব্যক্তিদের দায়িত্ববোধ ও কর্তব্য বোঝাতে, মিডিয়ার বর্তমান চালচিত্র বোঝাতে, খবরের খাসিলত বোঝাতে বলেছি মাত্র।
মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, আপনি বিয়ে করছেন, আপনাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হোক, সেই বাসনা করি। কিন্তু যে খারাপ দৃষ্টান্ত আপনি স্থাপন করলেন খোদ রাষ্ট্রের ঘাড়ে বন্দুক রেখে, এই অসম বিয়েতে নতুন প্রজন্ম যদি উৎসাহিত হয়, ভেবে দেখুন, এই বাংলাদেশের, এই মরার দেশের, এই গায়ে গায়ে পায়ে পায়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপনের দেশে, সেটি কতোটা ভয়ংকর খারাপ ফল নিয়ে আসবে!!!
আশা করি, মন্ত্রীর বিয়ের বিষয়টি সবাই বিনোদনের খোরাক হিসেবে নিয়ে সেই খারাপ দিকে উৎসাহিত হবে না। কিন্তু মিডিয়ার কাণ্ডজ্ঞান কবে হবে, সেই আশা করার মত কোনো ভরসা পাচ্ছি না। বাংলাদেশের মিডিয়া দিনদিন দেউলিয়া হচ্ছে। এই দেউলিয়াত্বের জন্য মিডিয়া নিজেরাই দায়ী। এটা তাদের স্বীকার করতেই হবে। রেলওয়ের নানান কুকর্মের খবর নিয়ে যেখাানে মিডিয়ার ব্যস্ত থাকার কথা, সেখানে রেলমন্ত্রীর বিয়ে তারা লাইভ দেখায়। মিডিয়ার কি রুচিবোধও তৈরি হবে না? কোন খবরটা কতোটা প্রচার করা যায়, এই বোধটা তৈরি না হলে আমাদের মিডিয়ার যতোই প্রসার ঘটুক, তা কেবল কোয়ানটিটি বাড়াবে বটে, কোয়ালিটি নয়।