এর আগে দেখেছি, মেয়ের সহযোগিতায় মা খুন করেছিলো তার সন্তানকে!
আমরা হৈ চৈ করেছি। তারপর স্বভাববশত সব ভুলে গেছি!
এবার দেখলাম, বন্ধুদের সহযোগিতায় মেয়ে খুন করলো তার মা-বাবাকে!
আমরা হৈ চৈ করছি। তারপর স্বভাববশত ভুলে যাব!
আসলে, মা বা মেয়ে নয় - মাদক খুন করেছে সন্তান, মাদক খুন করেছে বাবা-মাকে!
মেয়ের হাতে মা-বাবা খুন হওয়ায় সবাই স্তম্বিত হয়েছে। মাননীয় স্পিকার, এই ঘটনায় স্তম্বিত হওয়ার কিছু নাই! তার বদলে আমাদের উচিত আতংকিত হওয়া!
মা সন্তানকে খুন করেছে বা মাদকাসক্ত ঐশী তার মা-বাবাকে খুন করেছে– এই ঘটনাগুলো অস্বাভাবিক নয়। বরং স্বাভাবিক। যে দেশে চাল-ডাল-মুড়ির মতই হাতের কাছে সুলভে মাদক পাওয়া যায়; যে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র- শিক্ষক, কবি, লেখক, অভিনেতা, অভিনেত্রী, গায়ক, মন্ত্রী থেকে শুরু করে পাড়ার মাস্তান, রিকশাওয়ালা, টেম্পু চালক, ট্র্যাক ডাইবার, বাসের হেলপার, বস্তির যুবক, এমনকি চার বছর বয়সী পথশিশুরাও মাদক নেয় প্রায় প্রকাশ্যে, সে দেশে এমন খুনের ঘটনা অতি স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক ঘটনা হলো মুড়ি-মুড়কির মত মাদক বিক্রি হওয়া এবং প্রায় প্রকাশ্যে তা গ্রহণ করা।
রাস্তা থেকে কাউকে ধরে এনে বাংলাদেশের পক্ষে কোন ক্রিকেট ম্যাচে নামিয়ে দিলে সে ব্যক্তি যদি ম্যাচে অস্বাভাবিক খারাপও খেলে সেটাকে আমরা অস্বাভাবিক বলতে পারি না। বরং দলে তার সুযোগ পাওয়াটাই ছিল অস্বাভাবিক ঘটনা। অস্বাভাবিকভাবে দলে থাকার ফল হিসেবে অস্বাভাবিক খারাপ খেলাটা স্বাভাবিক, প্রত্যাশিত। দ্বিতীয় অস্বাভাবিক ঘটনাটা ছিলো নিছক ধারাবাহিকতা, ঘটনাটা ঘটার জন্য সময় পার হওয়ার অপেক্ষা মাত্র।
ঐশীরে গালি দিবেন, দেন। ফাঁসি দিবেন, দেন। তয় মনে রাইখেন, দুই দিন চিল্লাফাল্লা করার পর যখন আপনি-আমি-আমাদের পত্রিকা-মিডিয়া এই ঘটনা ভুলে যাবো, তখন আবার কোন এক ঐশী ছুরি দিয়ে তার মা-বাবাকে খুচিয়ে খুচিয়ে খুন করবে। আমরা আবার হৈ চৈ করবো। তারপর আবার ভুলে যাবো। তখন আবার কোন এক ঐশী ছুরি দিয়ে...
এভাবে চলতেই থাকবে। একদিন হয়তো শুনবেন, আপনার আপন কোন আত্মীয় – হয়তো বা আপনার ভাই বা বোনকে তার সন্তানেরা খুন করেছে। অথবা শুনবেন, আপনার ছেলে মাদক কেনার জন্য ছিনতাই করতে গিয়ে মানুষ খুন করেছে। অথবা দেখবেন, আপনার ছেলে একদিন আপনার উপরেই ঝাপিয়ে পরছে। কিছছু করার থাকবে না তখন।
মাননীয় মন্ত্রী, আমরা আম-জনতা। আমরা ঘটনা ঘটার পর চিল্লাবো। আপনাদের গালি দিবো। মানব-বন্ধন করব। ফেবুতে স্ট্যাটাস দিবো। এর বেশি কিছু করার ক্ষমতা আমাদের নাই। কিন্তু আপনারা যদি কানে তুলা গুজে রাখেন, যদি ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন, তাহলে মনে রাইখেন - আপনার ছেলেও একদিন ছুরি হাতে…
মাননীয় পুলিশ অফিসার, আমরা এর আগে অনেক চিল্লাইছিলাম। বলেছিলাম, মাদক ধরার অভিযানের আগে মাদক ব্যবসায়ীদের ফোন কইরা সতর্ক কইরেন না। মাদক উদ্ধারের পর অর্ধেক সাংবাদিকেদের সামনে ধ্বংস করে বাকি অর্ধেক গোপনে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি কইরেন না। বলেছিলাম, আপনাদের সন্তান, আপনাদের আত্মীয়রাও মাদকাসক্ত হতে পারে। আপনারা শোনেন নাই। এখন আপনাদের মেয়ে ছুরি হাতে…
মাননীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, দয়া কইরা ব্যবস্থা নেন। হলের ছাদে, ক্যাম্পাসের ফুল বাগানে, শহিদ মিনারে, ভাস্কর্যের গোড়ায়, একাডেমিক বিল্ডিং-এর পিছনে, টিএসসি-তে, লাইব্রেরি বিল্ডিং-এর চিপায় আয়োজন করে ছাত্ররা মাদক নেয়। স্যার, আপনারা জানেন। কিন্তু ব্যবস্থা নেন না। যারা মাদক নেয় তাদের আপনারা চেনেন। কিন্তু কাউন্সিলিং-এর ব্যবস্থা করেন না। মনে রাইখেন, আপনাদেরও সন্তান আছে। আপনাদের সন্তানরাও একদিন ছুরি হাতে…
মাননীয় সাংবাদিক ও মিডিয়া কর্মী, আপনি-আমি- আমরা সবাই আমাদের মাই ডিয়ার রাজনীতিবিদদের চিনি। তাদের চরিত্র জানি। তারা সম্ভত এখনও ঘুমাচ্ছে। এবং সামনেও ঘুমিয়ে থাকবে। আপনারা তাদের জাগানোর উদ্যোগ নেন, জনগণকে সচেতন করতে নেতৃত্ব দেন । আমরা আমজনতা আপনাদের সাথে আছি। নয় তো মনে রাইখেন, একদিন আপনাদের সন্তানরাও ছুরি হাতে...
মাননীয় আমজনতা, হূমায়ুন আহমেদ আমাদেরকে গোল্ড ফিস সাধে কয় নাই। দুই দিন পরেই সব ভুইলা যায়েন না। চুপ মাইরা যায়েন না। মনে রাইখেন, ঐশীরা আপনার ঘরেই আছে। অথবা আপনার প্রতিবেশীর ঘরেই আছে। শুধু ছুরি মারার অপেক্ষা। তাদের সুন্দর পরিবেশ দেন। তাদেরকে সুস্থ্য করার উদ্যোগ নেন। নয়তো চিৎকার করারও সুযোগ পাবেন না। ঘুমের মধ্যেই ছুরি হাতে...