যেহেতু এখন প্রচণ্ড গরম পড়ে তাই গরমের কারনে এই সময়টায় হিট স্টোক হওয়ার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি। হিট স্টোক সম্পর্কে কমবেশি অনেকেই জানেন আবার অনেকেই জানেন না। যেহেতু এটাতে মৃত্যুও হতে পারে তাই এই সম্পর্কে সবারই জানা উচিৎ। আমারা এখানে দেখব হিট স্টোক কি , কেন হয়, কারা বেশি ঝুকি পূর্ণ,এর লক্ষণ সমূহ ,কিভাবে চিকিৎসা করব এবং কিভাবে প্রতিরোধ করব?
হিট স্টোক কি এবং কেন হয়ঃ
সূর্যের তাপের কারনে বা জ্বরের কারনে যদি আপনার শরীরের তাপমাত্র ১০৪°F বা ৪০°C এর বেশি হয় তাহলে হিট স্টোক হতে পারে। আমাদের শরীর নিজ থেকে কিছু তাপ উৎপন্ন করে যা সহজেই ঘামের মাধ্যমে কমানো হয়। কিন্তু যদি শরীর অতিরিক্ত পরিমান উত্তপ্ত হয় জ্বরের কারনে বা সূর্যের তাপের কারনে ও বেশি আদ্রতার কারনে আমাদের শরীর ঐ তাপ কমাতে পারেনা। তখনই হিট স্টোক হয়।পানি শূন্যতার কারনেও হিট স্টোক হতে পারে। আর হিট স্টোক হওয়ার সাথে সাথে যদি সুচিকিৎসা না করা হয় তাহলে রোগী মারাও যেতে পারে। তাই হিট স্টোক হওয়ার সাথে সাথে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আর একটা জিনিস মনে রাখবেন সাধারন স্টোক আর হিট স্টোক এক জিনিস না। তাই বেশি ঘাবড়াবেন না।
কারা বেশি ঝুকি পূর্ণঃ
১. শিশু ।
২. বয়স্করা যারা হার্টের রোগে, কিডনি রোগে আক্রান্ত বা ওষুধ সেবনের ফলে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয় তারা।
৩. ক্রীড়াবিদ যারা রোদে খেলাধুলা করে।
৪. রিক্সা বা ভ্যান চালক।
৫. কৃষক যারা রোদে মাঠে কাজ করে।
৬. যারা রোঁদের ভিতর বা গরমে অনেকক্ষণ থাকেন।
হিট স্টোক এর লক্ষণ সমুহঃ
১.বমি বমি ভাব, অথবা বমি
২.হঠাত ক্লান্ত লাগা
৩.মাথা ব্যাথা করা/ মাথা ঘোরানো
৪.শরীর ব্যাথা করা।
৫. শরীরে অধিক তাপমাত্রা।
৬. ঘামের অভাব।
৭. হার্ট বিট বেড়ে যাওয়া।
৮. শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
৯. অদ্ভুত ব্যবহার করা।
১০. ভুল দেখা।
১১. কোমায় চলে যাওয়া।
কিভাবে হিট স্টোক আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা করবেনঃ
একটা জিনিস মনে রাখবেন হিট স্টোক আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে নেয়ার চেয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করা বেশি জরুরী।
হিট স্টোক আক্রান্ত রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব ঠাণ্ডা করতে হবে। সেটা যেভাবেই হোক।
১. প্রথমে রোগীকে ছায়া স্থানে নিতে হবে, শুয়িয়ে দিতে হবে,কাপড় ঢিলা করতে হবে, বাতাসের ব্যবস্তা করতে হবে এবং পারলে ঠাণ্ডা পানি বা বরফ দয়ে শরীর মুছতে হবে এবং বরফ বগলে এবং কুচকিতে ধরে রাখতে হবে তাপ কমানোর জন্য। মাথায় পানি ঢালতে পারেন।
২. যদি রোগী তরল খবার খাওয়ার মত সমর্থ হয় তাহলে তাকে ঠাণ্ডা পানি বা অন্য কোন ঠাণ্ডা পানীয় খাওয়াতে পারেন যেগুলোতে অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন নাই।
৩. শরীরের তাপমাত্রা মনিটর করতে হবে থার্মোমিটার দিয়ে এবং শরীর ঠাণ্ডা করার কাজ চালিয়ে যেতে হবে ততক্ষন পর্যন্ত যতক্ষণ না শরীরের তাপমাত্রা ১০১ থেকে ১০২ F না হয়।
৪. পরিস্থিতি অবনতি ঘটলে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়ঃ
১. এটা প্রতিরোধের প্রথম শর্ত হল অতিরিক্ত গরমে বা রোদ্রে শারীরিক কাজ করা যাবে না এবং শরীরে পানি শূন্যতা হতে দেয়া যাবে না।
২. যদি আপনাকে রোদ্রে শারীরিক কাজ করতেই হয় তাহলে প্রচুর পরিমান তরল জাতীয় খাবার যেমন পানি পান করতে হবে তবে চা, কফি বা অ্যালকোহল পান করা যাবে না।
৩. শরীরে লবনের ঘারতি পুরনে ওরস্যালাইন খেতে হবে।
৪.কাজের ফাকে ফাকে কিছুক্ষণ পর পর জিরিয়ে নিতে হবে।
৫. মাথায় বড় হ্যাট ব্যবহার করতে পারেন, ঢিলা কাপড় পড়তে হবে , সাদা রঙের কাপড় পড়তে পারলে ভাল।
অবশেষে, যেভাবেই হোক আপনার শরীর কে গরম বা রোদ থেকে ঠাণ্ডা রাখাই হবে হিট স্টোক থেকে বাঁচার প্রধান শর্ত। তাই এই গ্রীষ্মকালে যতটা সম্ভব ঠাণ্ডা জায়গায় থাকার চেষ্টা করুন।
সুত্রঃ Click This Link
ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন।