ছোট্ট একটা মাঠ। তার কোনায় একটা বেন্চি পাতা। নিজের চিন্তায় নিমগ্ন এক মধ্যবয়সী হেলান দিয়ে বসা। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে একদৃষ্টিতে দূরে গাছটার দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি । তিনি আসলে গাছটাকে দেখছেন না ।
এখন থেকে অনেক বছর আগে তাদেরই পূর্বপুরুষদের হাত দিয়ে শুরু হয়েছিলো এই সমাজব্যবস্থা । এই সমাজে সুষম ভারসাম্যমূলক জনসংখ্যা ছিলো । সবার হাতেই কাজ ছিলো ।
টাকা পয়সার প্রচলন উঠে গিয়েছিলো । মানুষ তার গাড়ীতে অন্য মানুষদের লিফট দিতো । কৃষকের বাড়ীতে ইন্টারনেট দিতো টেকি লোকজন । কৃষকতার ফলানো সবটা শস্যই কেন্দ্রীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রনের হাতে তুলে দিতো। অপ্রয়োজনীয় বিলাস দ্রব্য যেটিয়ে দূর করা হয়েছিলো । মানব কল্যান বিহীন গবেষনাও বন্ধ হয়েছিলো । যেহেতু টাকার প্রচলন নাই -- ধনী গরীবের বৈষম্যও শেষ হয়ে গিয়েছিলো । মানুষকে হিপনোটাইজ করে সুন্দর অসুন্দরের ধারনা দূর করা হয়েছিলো।
সমাজ থেকে অপরাধের ধারনাটাই দূর হয়ে গিয়েছিলো। কারন
মানুষের কাছে পর্যাপ্ত খাবার, পর্যাপ্ত সময় ছিলো । যাদের অহংকার খুব বেশী তাদের সম্মানে সমাজ থেকে চলে যেতে বলা হয়েছিলো । শুধু রিপ্রডাকশনের জন্যই সেক্স এমনটাই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিলো ।
মোটামুটি বলা যায় -- পৃথিবীতে স্বর্গের রুপ ।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন লোকটা ।
অথচ একটা প্রজন্ম না যেতেই পুরো ব্যবস্থাটাই কেনো বিগড়ে যেতে বসেছে সেটাই চিন্তা করছেন। শুরুটা সম্ভবত ফুল নিয়ে হয়েছিলো ।
কিশোর-যুবকরা তাদের সংগিনীদের ফুল দিতে চায় । সবাই সুখী হবার কারনে ফুল চাহিদা খুব বেড়ে গিয়েছিলো ।
ফুলচাষীটা আবার তাদের মতো করে ছোট আকারে টাকার প্রচলন শুরু করলো । কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রন অবশ্য ব্যপারটা জানার আগেই অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিলো ।
ফুলচাষীদের হাতে তখন অনেক টাকা। জন্ম নিলো মাঝের দালাল শ্রেনী তারা ফুলচাষীদের চাটুকার ।
ফুলচাষীরা নিজেদের মহান ভেবে অহংকার করা শুরু করলো ।
তাদের ছাড়া প্রেম অচল ।
রিপ্রডাকশন বিষয়ে নীতির কোন তোয়াক্কাই করলো না তারা ।
কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রন তাদের সামনে নতজানু হয়ে গেলো শুধু মাত্র নরম মনের মানুষেরা সেখানে ছিলো বলে ।
স্বর্গের উল্টো পিঠে নরক থাকে -- এটার মতোই যেসব উঠে গিয়েছিলো তা আজ আরো ভয়ানক রুপে ফেরত আসতে শুরু করেছে ।
তরুনদের সাথে এখন বুড়োরাও পিছিয়ে নেই । তারা মরার ভয়ে হেন কোন কাজ নেই যে করছে না । মরার আগে সমস্ত কিছুর অভিজ্ঞতা তাদের নিতেই হবে ।
~~~
মধ্যবয়স্ক লোকটি ভেবেই চলছেন -- আর সুন্দর কোন কিছু ধ্বংস দেখার অভিজ্ঞতায় নির্জীব বোধ করছেন কিছুটা --
চোখের কোন দিয়ে দেখলেন ১৬-১৭ বছরের কয়েকটা ছেলে-মেয়ে গল্প করতে করতে উঠে আসছে ।
~~~
"এই দেখ আরেকটা বসে আছে এখানে" উচ্ছল টাইপের একটা মেয়ে বলল।
বিরক্তির ছাপ পড়া চেহারার একটা ছেলে বলল - "ধুর! আমার সব বোরিং লাগছে"
নেতা গোছের যে ছিলো সে বলল "তাহলে যা - এইবার তোর পালা"
চকচকে একটা ছুরি হাতে ছেলেটা এগিয়ে যায় তার একঘেয়েমি দূর করার আশায় ।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
প্রাককথন:
প্রতিকাব্য: হাত খরচের জন্য জংলীফুল -- এই লেখাটার উৎস।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৯:৪৪