somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিমি দর্শন -- উপক্রমনিকা B-)

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলা খুব শখ ছিলো বড় হয়ে প্রানীবিজ্ঞানী হবো । যদিও তখন কোন আইডিয়া ছিলো না প্রানী বিজ্ঞানীরা কেমন চিজ ( তখন যদি জানতাম কাটা ছেড়া -- ইয়ে ঘাটাঘাটি তখনই বাদ দিয়ে দিতাম )।
লাইব্রেরীতে বই আনার সময় প্রানী সম্পর্কিত বিশ্বকোষ গুলো নিয়ে আসতাম । ইয়া মোটা মোটা বই গুলো থেকে বেছে নানা ধরনের অদ্ভুত সব প্রানী সম্পর্কে জানতে দারুন লাগতো ।

আমার আশে পাশের পোলাপান গুলোও একটু অদ্ভুত ছিলো -- আমাদের মাথায় খেয়াল চাপলো "পথ প্রদর্শনের" । তখনো শহরের বড় রাস্তায় যাওয়ার অনুমূতি মিলেনি । এই বাড়ীর উঠান ঐ ক্ষেতের আইল ধরে -- অচেনা রাস্তায় বেড়ানোই আমাদের বিশ্বভ্রমন B-) । একদিন বেড়াতে বেড়াতে একটা আমের আটি থেকে আমের চারা উঠতে দেখলাম । আমার মাথায় জেনো শত ওয়াটের বাতি জ্বলে উঠলো -- জন্ম নিলো আমাদের নিজস্ব বাগান :| -- এর বাড়ী থেকে ওর বাড়ী থেকে
আমের চারা -- জামের চারা -- লিচুর চারা সব এনে জড়ো করতে লাগলাম -- সে বয়সেই বুঝে গেছিলাম যৌথ কারবার খুব ভালো বুদ্ধি নয় -- সুতরাং ছোট চাচাত ভাই কাম বন্ধু নিজের ভাগের গাছ গুলো নিয়ে আলাদা হয়ে গেলো --
এরমধ্যে আমাদের টারজান কাম অমিতাভ বচ্চন জ্যাঠাতো ভাই নিজের আলাদা বাগান গড়ে তুলল -- তার এক্সেস দুনিয়া জোড়া -- খালি হাতে সে দোতলা বিল্ডিং এর উপরে উঠে যেতো :| -- আমরা তাকে ঈর্ষা আর ভয়ের চোখে দেখতাম :(
সে বাগান আবার ডাকাতের খপ্পরে পড়েছিলো -- সে আরেক কিছ্ছা ।
বাগানের শখের কিছু পরে নিজস্ব প্রানী শালা গড়ে উঠলো আমার -- রাজহাস , গিনিপিগ , মুরগী , ছোট কুকুর, বাজারিগার , গাপ্পি ফিশ , গোল্ড ফিশের অদ্ভুত জগত ছিলো আমার ।

ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে ফেললাম --- মূল কথা ছোট বেলা থেকেই পশুপাখী দেখার-জানার শখ ছিলো আমার।
তাই গত বছর সোহান যখন বলল "তিমি দেখতে যাবে নাকি মামা" --- লাফিয়ে উঠলাম ।
পাগলামীর ঝোকটা এত বয়সে একটু কমেনি -- শুধু খালি সাকো নাড়াবার অপেক্ষা :D
তো হঠাৎ মধ্যেরাতে দিলাম রওনা -- গন্তব্য তাদুসসাক (tadoussac) Click This Link ৮০০ কিমি ড্রাইভ শুধু যেতেই । কানাডার পূর্ব পাড়ে সেন্ট লরেন্ট রীভারের তীরে ছোট একটা গ্রাম কাম টুরিষ্ট স্পট । রাতে বেলা ড্রাইভ করতে দারুন লাগে -- আমরা দুই টেকনো প্রেমী গানের সুরে মাতোয়ারা -- পিছনের কালো আন্ধার -- সামনেও তাই --
রাতে দারুন একটা রোমান্চ আছে -- অচেনা গন্তব্য -- অদ্ভুত লাগছিলো...।

মন্ট্রিয়ালের ধারে কাছে আসতেই দেখি শপিংমল আর শপিংমল -- বিশাল শহর -- আর একটার পর একটা একটা টো ট্রাক যাচ্ছেই খালি --
মন্ট্রিয়াল শহরটা আবার প্যাচের -- হাইওয়ের কোন ঠিক ঠিকনা নাই -- আর লোকজন ১২০ কিমি স্পিডে বাম্পার টু বাম্পার গাড়ী চালায় X( । বিপদজনক !!

পরবর্তী গন্তব্য কুইবেক সিটি --
সেখানে পৌছাতে পৌছাতে রাত চারটা -- আমি তখনো চার্জড -- রাতজাগা পাবলিকদের রাতেই সব মজা --- বাড়ী থেকে দূরে যাবার আনন্দে আমি বাতাস শুকছি ।তো তখন আমরা ভাবছি এই তো এসে পড়েছে -- আর ২০০ কিমি কোন ব্যাপারই না --
ব্যাপার না কি ব্যাপার এটা একটু পরেই টের পেলাম --
রাস্তা পুরো পাহাড়ের উপর দিয়ে -- এত খাড়াই যে -- দেখতে পাচ্ছি গাড়ী নিয়ে সরাসরি মেঘের ভিতরে ঢুকে যাচ্ছি B-)
আরো বিপদজনক ব্যাপার হচ্ছে -- আমার তখন পেয়েছে ঘুম -
আমি চিন্তা করছি -- আর তো ৬০-৭০ কিমি -- দেখতে এসে পড়বে --- কয়েকবার প্রায় ঘুমিয়ে পড়তে পড়তে উঠে পড়েছি :-/ -- পড়ে বুঝেছিলাম -- এমন করা উচিত হয় নি -- নেহাত সকালে কোন ট্রাফিক ছিলো না বলে --

যাই হোক -যাওয়ার পথেই একটা অবিস্মরনীয় দৃশ্য দেখতে পেলাম -- গাড়ী তখন পাহাড়ে উচুতে -- নিচেই বিশাল নদী (আসলে ঠিক নদী না - ঐ পাড় মনে হয় ৫০ কিমি দূরে )
কি অসাধারন -- বলে বোঝানো যাবে না !!
তাদুসাকের রাস্তার সাথে রাংগামাটির হালকা একটা তুলনা করা যায় --- শুধু কল্পনা করেন -- নিচের উপত্যাকার জায়গা সাগর হলে কেমন লাগবে -- তেমন বাক খাওয়া রাস্তা -- সবুজ আর সবুজ ---
মাঝে কিছু ভেড়াও চড়ছে(!)-- বিনে পয়সায় সুইজারল্যান্ডের ফিলিংসটাও নিয়ে নিলাম B-):D

তো এমন করতে করতে মোটামুটি তাদদুসাক এর কাছাকাছি এসে নেতিয়ে পড়লাম -- গাড়ীতে ফুয়েলও নিতে হবে --
দোকানী কে জিগ্গেস করলাম --- বেচারী আধা ইংরেজী আধা ফ্রেন্চে ধমকের শুরে বলল -- "তাদুসসসসেক" আরো ৩৭ কিমি আছে । টয়লেটে ঘুরান দিতে গিয়ে মজার জিনিস দেখলাম -- কানাডাতে একটা জোক প্রচলিত আছে -- ১৯৭০ এর দিকে কুইবেক আলাদা হয়ে যেতে চেয়েছিলো -- তো এখন মানুষ জোক করে -- কুইবেক আলাদা হলে ওদের প্রধান রপ্তানী দ্রব্য কি হবে -- "পর্নো ইন্ডাষ্ট্রি"!! ;) টয়লেটের দরজায় ওপেনলী সাটা সেসব কাটিং দেখে ঐ জোকটার মর্ম বুঝেছিলাম ;)

ফেরী দিয়ে নদী পাড় হয়ে তাদুসসাক দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম -- নদীর উপরে পাহাড়ে ঢালুতে ছোট্ট একটা গ্রাম ।
পৌছে পরলাম হোটেল খোজার মুশকিলে -- যে কোন ভাবে ঘুমাতে হবে -- সোহান কে বল্লাম যা খুজে আয় -- ৫-৬ জায়গায় দেখা পর দেখা গেলো ভাড়া আমাদের ট্যাকের জোরের চে অনেক বেশী -- শেষে আমি গর্বিত সুরে বল্লাম বাংলাদেশের কোনায় কোনায় হোটেল খুজে বের করে ফেল্লাম আর এখানে পারবো না -- কপালগুনে একটা দারুন সুন্দর রিশেপসনিষ্টকে পটিয়ে রুম মেনেজ করে ফেল্লাম -- তাও সেটা পাওয়া যাবে ২ টা বাজে --
এতক্ষন কি করবো -- গেলাম খেতে -- আহা ফ্রেন্চ স্যুপ আর কেবেট ব্যাং ব্যাং ( এটা আসলে চিড়িং টা বিস্কুটের গুড়া দিয়া ভাজি, ব্যাং না :P) গ্রোগ্রাসে গিলাম --
রুমে ফিরে ঘুম ----
এক ঘুমে রাত ৮ টা ।

বেশী লম্বা হয়ে গেলো -- পরের পর্বে সামাপ্য । :)

ছবি গুলোর জন্য আমার বন্ধুর কাচা হাতই দায়ী -- ছবি তোলার মুন্সিয়ানাটা(!) উপেক্ষার করা অনুরোধ রইলো-- অবশ্য ভোর সকালের মেঘালা আবহাওয়াও দায়ী এর জন্য












এই সেই তাদুসসাক





উৎসর্গ : ইয়া খারেজি --- এই পোষ্ট খানা ইতং বিতং অনেক কিছু লিখে ফেল্লাম -- নেহাত স্মৃতিচারন করতে মজা লাগছিলো বলে । পরের পর্বে তিমি ধরার (!) ছবি :P
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:১৭
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×