এস পি বাবুলের স্ত্রী হত্যার পরবর্তীতে তাকে ঘিরে যে লুকোচুরি খেলা চলছে এর একটা চমৎকার বিশ্লেষন আছে নিচের লেখাটায়। পড়ে দেখতে পারেন ...
___________________________________
"এসপি বাবুল আক্তার চট্টগ্রামের স্বচ্ছ ইমেজের সাংবাদিক, পুলিশ এবং বিচারকসহ আমার অনেক পরিচিতজনের বেশ ঘনিষ্ঠ। তাদের কাছেই বিভিন্ন সময়ে আমি বাবুল আক্তারের অনেক গল্প শুনেছি। তার স্ত্রী মিতু যে দিন মারা যান, সেদিন সকালে আমার এক বন্ধু ঘটনা জানিয়ে কাঁদতে থাকেন। মিতু–বাবুলের সম্পর্কটা খুব ভালো ছিল। বাবুলের স্ত্রী কতোটা ভালো মানুষ ছিলেন, তার একটা উদাহরন দেই। আমার সেই বন্ধুর কাছে শোনা। মিতু ভাবী খুব সাধারন জীবনযাপন করতেন। বাবুল ডিসি না এসপি, পুলিশ না র্যাবে আছেন এসব নিয়ে ভাবীর কোন মাথা ব্যাথা ছিল না। একবার তার জন্মদিনে দুই হাজার টাকায় একটা জামা পেয়ে ভাবির যে কী উচ্ছাস!
যাই হোক মিতু ভাবী মারা যাওয়ার পর এসপি বাবুলের সংগে আমার কথা হয়েছে। তখনো তার বিরুদ্ধে পুলিশের কোন অভিযোগ নেই। তার জঙ্গিবিরোধী অভিযানগুলোর গল্প শুনলে আপনি শ্রদ্ধায় মাথা নত করবেন। গত শুক্রবার গভীর রাতে তাকে আটক করা হয়। ১৫ ঘন্টা তাকে আটকে রাখা হয়। এরপর দেশের গণমাধ্যমে রিপোর্ট এলো পরকীয়ার। এরপর খবর এলো বাবুল খুন করেছেন। তিনি অপরাধ স্বীকার করে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। তার সোর্সরাই ছিল খুনি ইত্যাদি । তার ঘনিষ্ঠদের সংগে এসব নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে নিয়মিত কথা হচ্ছিল। সেই হিসেবে কতোগুলো বিষয় তুলে ধরছি।
১. এসপি বাবুলকে কী সেদিন ১৫ ঘন্টা আটকে রেখে কোন সোর্সের মুখোমুখি করা হয়েছিল? তাহলে সেই সোর্স কারা? বাবুল তার ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন, সেদিন তাকে কোন সোর্সের মুখোমুখি করা হয়নি। ওয়াসিম ও আনোয়ার নামে যে দুজনকে গ্রেপ্তারের কথা বলা হয়েছে দুজনেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে শনিবার। আর বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হয়েছিল শুক্রবার।
২. সেদিন তাহলে কী হয়েছিল? সেদিন এসপি বাবুলের ছেলেটা বাবার কোলে শুয়েছিল। রাত ১ টার দিকে পুলিশ এসে তাকে নিয়ে যায়। বাচ্চাটা কোনভাবেই বাবাকে ছাড়তে চাইছিল না। ও বলছিল বাবা তুমি বাইরে যেও না। তোমাকে গুলি করে মারবে। এসপি বাবুল ওই অবস্থায় ছেলেটাকে বুঝিয়ে পুলিশের সংগে যান। ডিবি কার্যালয়ে নেওয়ার পর চট্টগ্রামের এক কর্মকর্তা সরাসরি বলেন, আমরা তোমাকে সন্দেহ করছি। তোমার সামনে অপশন দুটো। হয় জেলে যাবে। নয় পুলিশ ছাড়বে। বাবুল জানতে চান, কেন তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে। বলা হয় মুসা নামের একজন ঘটনার পেছনে আছে যে পুলিশের সোর্স। বাবুল জানান, ওইমুসা তো চট্টগ্রামের সব পুলিশ, ডিজিএফআই র্যাব সবারই সোর্স। এর দ্বারা কী প্রমাণ হয়? বাহার সাহেবের একটাই কথা, হায়ার অথরিটির নির্দেশ। তোমাকে চাকুরি ছাড়তে হবে। বাবুল তখন ছেলের কথা ভেবে মুষড়ে পড়েন।
৩. সব গণমাধ্যমে এসেছে বাবুল নাকি দোষ স্বীকারকরে পদত্যাগ করতে রাজি হয়েছেন? বাবুল তার স্বজনদের জানিয়েছেন, প্রশ্নই আসে না। তাকে আবেদনে লিখতে বলা হয়েছে স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। এইঅবস্থায় পুলিশ সুপারের মতো পদে থাকা তার জন্য অসম্ভব। বাবুল নিজের ছেলের কাছে ফেরার জন্য ওই আবেদন করেন। কিন্তু তাতে কোন দোষ স্বীকারের কথা ছিলনা। কিন্তু পুলিশ সেই আবেদন নিয়ে মিথ্যা খবর দেয় সাংবাদিকদের বাবুল অপরাধ স্বীকার করে পদত্যাগ করেছেন। বাস্তবে অপরাধ স্বীকারের কোন প্রশ্নই আসে না। আর এমন কোন প্রসঙ্গও আসেনি।
৪. কী কারণে এসপি বাবুলের বিরুদ্ধে ক্ষেপতে পারে পুলিশের একটা অংশ? এ ব্যাপারে বাবুল তার স্বজনদের বলেছেন,নানা সময়ে তিনি বিভিন্ন মামলার তদন্ত করেছেন। তাতে অনেকে ক্ষুব্ধ হতে পারেন। এরমধ্যে গতবছরের ডিসেম্বরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তিনি সেনাবাহিনীর ১৪ টি পোষাক, একটি এমকে-১১ স্নাইপার রাইফেল, প্রায় ২০০ রাউন্ড গুলি এবং বিস্ফোরক উদ্ধার করেন। ওই বাড়িটিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গিসংগঠন জেএমবির সদস্যরা ব্যবহার করছিল। উদ্ধার করা সেনাবাহিনীর পোষাকগুলোর মধ্যে মেজরের একটিপোষাকও ছিল। প্রতিটি পোষাকের নম্বর ছিল। অস্ত্রগুলো মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির। এসপি বাবুল সিজার লিষ্টে এই নাম্বারগুলো দিয়েছিলেন। সেনাবাহিনী নাকি সেটা চায়নি। তারা চায়নি নাম্বারগুলো আসুক। ওইঘটনার জের ধরে এসপি বাবুল আইজিকে একটা চিঠি দিয়েছিলেন যাতে বিভিন্ন সেনানিবাসের কিছু লোকজনের সাথে জঙ্গীদের জড়িত থাকার একটা তালিকাও ছিল। এছাড়া জাল টাকার ঘটনায় এমন কোন আসামিকে তিনি একবার ধরেছিলেন যেটা সিএমপি কমিশনার বা চট্টগ্রামের লোকজন পছন্দ করেনি। তিনি একবার মাদক চোরাচালানি এমপি বদির গাড়ি আটকে ছিলেন। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে কেউ কেউ তার পেছনে লাগতে পারে বলে তার ঘনিষ্ঠজনদের ধারনা।
৫. স্ত্রীর পরকীয়া কিংবা যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতনের কথা বলা হচ্ছে। বাবুলের শ্বশুর শ্বাশুড়ি এগুলো একেবারেই ভিত্তিহীন বলেছেন। কারন কোনদিন মিতু অসুখী থাকলে বা সমস্যা হলে বাসায় বাবা মাকে জানাতেন। কোনদিনই তিনি জানাননি। মিতুর বাবা মা বিশ্বাস করেন না বাবুল কোনদিন এই কাজ করতে পারেন। বাবুল এখনো শ্বশুরের বাসাতেই আছেন। আর যদি পরকীয়া থাকে বাবুল জানতে চান কে তিনি যার সাথে পরকীয়া ছিলো?
৬. সম্প্রতি একটি গুজব ছড়ানো হচ্ছে বাবুল শিবির করতেন। বাস্তবতা হলো ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগেরদিন রাতে এই এসপি বাবুলই সেই অফিসার যিনি ৪২ লাখ টাকাসহ বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। সেই ঘটনা সেই রাতে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া সাঈদীর মামলার পর কক্সবাজারে জামায়াত দুটি মামলা করে। দুটিতেই এক নম্বর আসামি করা হয় বাবুলকে। এভাবে সারাজীবন যে বাবুল শিবির জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করলো এখন তাকে সেই তকমাই দেওয়া হচ্ছে! প্রশ্ন হলো সারা জীবন দেশের জন্য কাজ করে বাবুল আকতার কী পেলেন? তাকে অনুরোধ করা হয়েছিল আপনি এসব নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন না কেন? তিনি বলেছেন পুলিশ থেকে তাকে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই তিনি এখন কথা বলছেন না। আজ এতকিছুর পরও তার বাংলাদেশ পুলিশের প্রতি আস্থা আছে। তার আশা পুলিশ সঠিক তদন্ত করবে। বাবুলের ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, যদি বাবুল আসলেই দোষী হয় তাহলে তার শাস্তি হোক। কিন্তু কোনভাবেই যেন তাকে ফাঁসানো না হয়। তাহলে কিন্তু আর ভবিষ্যতে বাবুল আক্তারের মতো পুলিশ কর্মকর্তা তৈরি হবে না দেশে।"
লেখকঃ Fazlul Bari
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৬ রাত ২:২৭