আমাদের নীচতলার ভাড়াটিয়া আন্টির মেয়ে রুম্পা ক্লাস ফাইভে পড়ে।ওকে নাকি কয়েকদিন যাবত্ মডেল স্কুলের একটা ছেলে ফেসবুকে ডিস্টার্ব করতেছে!আন্টি আমার কাছে বিচার দিলেন।হঠ্যাত্ করে ডেকে নিয়ে চা-বিস্কুট খাওয়ানোর কারনটা বুঝতে পারলাম।আন্টি রুম্পাকে রুমে ডাকলেন;'কি কি হইছে তোর ভাইয়াকে খুলে বল।'
.
বা'হাতে গোলাপী কাভার ওয়ালা বিশাল স্মার্টফোন চেপে ধরে পিচ্চি মেয়েটা রুমে এসে ঢুকলো।আমার দিকে তাকিয়ে ভীত গলায় বললো,
"ভাইয়া,আর বইলেন না!ঐ ছেলে আমার স্ট্যাটাসে আজেবাজে কমেন্ট করে।সেদিন এক সেল্ফি আপ্লোড দিছি; সে ওখানে কমেন্ট করেছে,
'কি ব্যাপার রুম্পা?তোমার বাবার ময়দার বিজনেস আছে নাকি?আর যদি থাকেও,তুমি ডেইলি যে পরিমানে মুখে মাখাচ্ছ;দুদিনেই তো ব্যাবসায় লালবাতি জ্বলবে!'
দেখছেন ভাইয়া,কি ফাজিল!আর শুধু কি এই?আরো আছে,আমাকে ম্যাসেজ দিয়ে বলে-'চশমা পরলে তোমাকে পুরা মিয়া খলিফার মতো কিউট লাগে।' "
.
এহেম! এহেম! আরেকটু হলে আমার গলায় গরম চা আটকে যাচ্ছিলো।রুম্পা আমার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো।ফোনের কালারের সাথে ম্যাচিং করে তার নখে গোলাপী কালারের নেলপলিশ লাগানো।আমি পানি টানি খেয়ে কোনমতে শান্ত হয়ে বসলাম।ক্লাস ফাইভের মেয়ে ফেসবুকে কি করতেছে?আন্টিকে কিছু কথা শোনানো দরকার।আমি মনে মনে বিশাল এক স্পিচ ঠিক করলাম।যেই বয়সটা ওর পুতুল খেলার,সেই বয়সে হাতে স্মার্টফোন তুলে দেয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বলতে যাব,এমন সময় আন্টি কথা বলে উঠলেন;
.
-'কি যে করি বাবা,আর বইলো না!আজকাল সোশ্যাল সাইটে মেয়েদের কোনো রেসপেক্ট নাই।বিলিভ ইট অর নট,রুমকির আইডিতে পর্যন্ত প্রতিদিন শ'খানেক মেসেজ আসে।আর কি সব মেসেজের ভাষা!'
-'ইয়ে..মানে আন্টি...রুমকি কে?'
-'ওহ!তুমি জানো না?আন্টি লাজুক হাসি দিলেন।রুম্পার তো বোন হবে।আল্ট্রাসনোগ্রামে ফিমেল আসছে।তোমার আঙ্কেল সেদিনই ডাকনামটা ঠিক করে ফেসবুকে আইডি খুলে দিলেন।রুমকি বুঝা শিখলে চালাবে!আপাতত আইডিটা স্ট্যাবলিশ হোক।
.
এই কথা শোনার পর আমি ক্লাস ফাইভের মেয়ের ফেবু চালানো নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস বা উত্সাহ;কোনটাই পেলাম না।
এককাপ চা,কয়েকটা বিস্কুট আর একগাদা টাস্কি খেয়ে সেখান থেকে কোনমতে উঠে আসলাম।আসার আগ আন্টিকে কথা দিতে হলো,বিষয়টা আমি দেখবো।
.
রুম্পাকে 'রাহুল আমান' নামের আইডি থেকে ডিস্টার্ব করা হয়।খোজ নিয়ে জানতে পারলাম ছেলেটার নাম রুহুল আমিন!মডেল স্কুলে ক্লাস সিক্সে পড়ে।বাসা আমাদের পাশের এলাকায়।একদিন স্টেডিয়ামের সামনে দেখা হয়ে গেলো,আমি ডেকে আনলাম।
-'কিরে পিচ্চি,তুই নাকি রুম্পাকে ডিস্টার্ব করিস?'
-(চুপ)
-'ওরে কি ভালোবাসিস নাকি?'
পিচ্চি এবার আমার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো!
-'ধুররর,ভাইয়া কি যে বলে না....!ওর সাথে তো যাস্ট ফ্লার্টিং করি।আমার রিয়েল ক্রাশ হইলো গিয়ে গার্লস স্কুলের মহুয়া আর পুলিশ লাইনের তিন্নি
.
রিয়েল ক্রাশ ক্যামনে দুইজন হয় এটা আমার জানার কথা না।ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় আমি আপুদের পেছনে গল্পের বই পড়ে শোনানোর জন্য ঘুর ঘুর করতাম।এই গল্পের মোরাল লেখার মতো ম্যাচুরিটি এখনো আমার হয়নি।এদের তুলনায় আমি অনেক অনেক ব্যাকডেটেড!
সংগৃহীত এবং এদের তুলনায় আমি অনেক অনেক ব্যাকডেটেড!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:০৩