হিমু শিবির -২
হিমু শিবির - ১
রমনা থানা থেকে বের হয়ে মৎস ভবনের দিকে হাটা শুরু করলাম। মাজেদা খালা আমার জরুরী দর্শন চায়। খালার বাসায় ভাগ্নে যাবে, নো প্রব্লেম। সমস্যার প্রব্লেম হচ্ছে খালু, কোন এক অজানা কারণে আমি তার চোখের বালি। চোখে বালি থাকে জানতাম না, বাংলা বাগধারায় কিছু সংশোধন আনা প্রয়োজন, যেমন আকাশ কুসুম। আকাশের সাথে কুসুমের সম্পর্ক ঠিক যায় না, কুসুম খাওয়ার বস্তু। আকাশ নদী হলে বাগধারাটা উপযুক্ত লাগতো। আমিও আকাশ-নদী সব বাগধারা চিন্তা করতে করতে হাজির হলাম মাজেদা খালার বাসায়। কলিংবেল চাপলাম। একবার না একসাথে পাঁচ-ছয়বার। ভদ্রলোকেরা একবার কলিংবেল চাপে, কিন্তু হিমুরা ভদ্রলোক না।
দরজা খুলে কাজের মেয়ে আহাম্মক বনে গেল। আমি নতুন এই শব্দটি সৃষ্টি
করেছি, বোকা বনে যাওয়ার বাগধারা নকল করেছি। চোখ মুখ ভোঁতা করে জিজ্ঞেস করল, "অই বেডা, আম্নে কেডায়?"
মাজেদা খালা আবার নতুন কাজের মেয়ে রেখেছে। কাজের লোকের উপরে সে কখনোই বিশ্বাস করতে পারে না। দুই মাস আগেও অন্য আরেকটি মেয়েকে দেখে গেছি, সেক্রেটারিও পালটায় মাসে মাসে। খালা অবশ্য চিঠিতে এই কথাও লিখেছে। খালার চিঠির একটি সারসংক্ষেপ নীচে দিলাম,
খচ্চর হিমু,
তোকে খচ্চর বলার কারণ কি জানিস? আগে মানুষ খচ্চরে চরে কিংবা মালামাল নিয়ে একস্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমন করত। খচ্চরের কাজ বলতে সারাক্ষন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরাঘুরি, তোর কাজও একইরকম। সুতরাং ভুলেও খচ্চরের সাথে নিজের পার্থক্য খুঁজতে যাসনে।
পরসমাচার আমি আগের সেক্রেটারি রিমি কে বিদেয় করে দিয়েছি। আসলে বিদায় করেছি বললে ভুল হবে। হারামজাদী আমার ম্যানেজার জুবায়ারের সাথে ভেগে গেছে। বুঝলাম না এই মেয়ে আমার এম এ পাশ শিক্ষিত ম্যানেজার কে কখন পটালো!
দেশের অবস্থা বিশেষ ভালো না। তোর সাথে অনেক কথা আছে। জানি না এই চিঠি পাওয়ার কতদিন পরে আসবি, কিন্তু হিমু তোকে আমার খুব দরকার।
ইতি
তোর মাজেদা খালা
পাদটীকা ১ - তুই যত দ্রুত সম্ভব চলে আয়, ভি ভি আই প্রবলেম।
পাদটীকা ২ - চিঠি পাওয়া মাত্রই চলে আসবি।
কাজের মেয়েকে ভড়কে দেয়ার জন্যে বললাম, "মুই ডাকাইত, তোরার বাড়ি ডাকাতি করত আইছি।" কাজের মেয়ে "খালাম্মাগো" বলে চিৎকার করতে করতে ভিতরে চলে গেলো। আমি ভিতরে ঢুকে সোজা খালামনির ঘরে ঢুকে গেলাম। যেয়ে দেখি মাজেদা খালা চোখ বন্ধ করে টান হয়ে শুয়ে আছে। একজন অল্পবয়স্ক ছেলে স্যুট টাই পড়ে মাজেদা খালার মাথায় পানি ঢালছে। দেখে মনে হয় মাত্রই গ্রাজুয়েশন করে বের হয়েছে। নিঃসন্দেহে মাজেদা খালার নতুন ম্যানেজার। এক ডাকেই মাজেদা খালা উঠে বসলেন ভিজা চুলেই।
উত্তেজিত হয়ে বললেন, "এতক্ষনে তুই আসছিস! দশ দিন আগে চিঠি পাঠাইছি!"
আমি কাচুমাচু ভাব মুখে এনে বললাম, "খালা উত্তেজিত হবা না, তোমার প্রেসার আবার হাই হয়ে যাবে। ক্ষুধা লাগছে, কি খাওয়া যাবে?"
খালা কাজের মেয়েকে ডাকার পরে দরজার সামনে এসে মেয়েটা চোখটা রসগোল্লার মত বড় করে রাখল। আমাকে খালের পাশে দেখে আরও ভড়কে গেছে। ওর বিশ্বাস হচ্ছে না আমি ডাকাত না, আমি হিমু। কারো ভয়ার্ত চোখ দেখার মধ্যে একটা আনন্দ আছে। শক্তিশালী পশু দুর্বল পশুকে ভয় দেখিয়ে মুচকি হাসে। এই মুহুর্তে আমারও নিজেকে পশু পশু মনে হচ্ছে। কাজের মেয়েকে খালা টেবিলে খাবার দিতে বললেন।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে বসার ঘরে যেয়ে বসলাম। বসার ঘরে খানিকটা পরিবর্তন এসেছে। ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম খালার জাপানী মৎসকন্যার দামী সুভ্যেনিরটা নেই। সোফাসেট চেঞ্জ করা হয়েছে। জানালার পর্দাও চেঞ্জ করা হয়েছে। মাজেদা খালার তো আবার শুচিবাই রয়েছে সবকিছু পরিষ্কার রাখা। তাই এক জিনিস বেশিদিন বাসায় রাখেন না, কিন্তু মৎসকন্যার সুভ্যেনির বাসায় না রাখার কোন কারণ নেই, খালার বিশেষ প্রিয় ছিল। খালা হেলতে দুলতে বসার ঘরে এসে আমার উল্টপাশের সোফায় বসলেন। আমি বললাম, "খালামনি, তুমি কেন উঠে এসেছ, হুকুম দিলে আমিই হাজির হয়ে যেতাম।"
খালা রাগত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, "ঢং করবি না হিমু, জরুরী ব্যাপারে তোকে ডেকেছি।"
আমি দাঁত খিলাল করতে করতে বললাম, "তোমার সেক্রেটারি তোমার ম্যানেজার কে নিয়ে ভেগে যাওয়ার সময় তোমার জাপানিজ সুভ্যেনিরটা নিয়ে গেছে, এখন তুমি সেইটা ফেরত চাচ্ছো তাই না খালা? তবে আমি বলে রাখি, অইটা তোমার উপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে চুরি করেছে ওরা, গুলিস্তানে দশ টাকাতেও বিক্রি করতে পারবে না।"
খালা আমার দিকে চোখ স্থির করে রাখলেন। মনে হল খালার রাগ এই মুহূর্তে আরও এক ডিগ্রি বেড়ে গেছে। খালা বললেন, "সুভ্যেনির টা নিয়ে গেছে সেজন্যে খারাপ লাগছে, কিন্তু আমি তোকে সেজন্যে ডাকি নাই, ডাকছি বাদলের ব্যাপারে কথা বলার জন্যে।"
আমি অবাক হওয়ার ভান করে বললাম, "বাদল কই খালা? অনেকদিন কথা হয় না। আবার কি ঝামেলা করেছে বদমাশ।"
খালা এবার যেন একটু বিষণ্ণবোধ করলেন। নিশ্বাস ছেরে বললেন, "হিমুরে, গত দশদিন যাবত বাদল শাহবাগে পরে আছে। একবারও বাসায় আসেনি। কিসব আন্দোলন করে বেড়াচ্ছে। ফোন দিলে বলে, 'মা, ফাঁসি চাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই' এদিকে শুনতে পাচ্ছি শাহবাগে নাকি সব নাস্তিকেরা আন্দোলন করে। রাতের বেলায় মদ গাঁজা খায়, ছেলে মেয়ে বেলাল্লাপানা করে। তোর খালুও রেগে আছে। কিন্তু বাদল নাছরবান্দা হয়ে বসে আছে, কাদের মোল্লাকে ফাঁসি না দিলে আসবে না।"
আমি চুপচাপ এতক্ষন খালার কথা শুনছিলাম। আসলে আমি চিন্তা করছিলাম সুভ্যেনিরটা নিয়ে ওরা কি করেছে। সম্ভবত ভাঙ্গারির দোকানে বিক্রি করে দিয়েছে। আবার হতেও পারে ওদের নতুন সংসারে এটাকে সাজিয়ে রেখেছে। আমি খালার দিকে গুরুত্ব দিয়ে বললাম, "হুম খালা, খালুকে বল তার বন্ধু আলম সাহেব যে আছেন, পুলিশের আইজি। তাকে ফোন করে এক গাড়ি দাঙ্গা পুলিশ পাঠায়ে দিতে বল। পিছনে দুই চারটা না পরলে হুশ হয় না, শাহবাগ আন্দোলন কোথায় যাবে ভেবেও পাবে না।"
খালা আবার রেগে বললেন, "তুই দেশের কোন খরব রাখিস না? শাহবাগে কি হচ্ছে জানিস না? তোকে বলেও লাভ নাই। তুই শুধু একটা কাজ কর। বাদলকে ভুজুংভাজুং বলে সেখান থেকে নিয়ে আয়। তুই বললে শুনবে, ও তো আবার তোর ভক্ত।"
আমি ঘুম ঘুম ভাব করে বললাম, "খালা, কথা দিতে পারছি না, তবে চেস্টা করবো। বাদলের ঘর তো খালি, একটু ঘুমাই যেয়ে।"
খালা চিৎকার করে বললেন, "তুই এই মুহুর্তে যা, আমার ছেলেকে না আনা পর্যন্ত তোর ঘুম নাই। আমার বাদলকে নিয়ে আয়।"
খালা চিৎকার করেই যাচ্ছে। আমি রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম। এখান থেকেও তার হুঙ্কার কিছুটা শোনা যাচ্ছে। শাহবাগের দিকে হাটা শুরু করলাম। রূপাকে একটা ফোন করা দরকার। পকেটে টাকা নেই। ফার্মগেটে বাংলা টেলিকমে গিয়ে বললাম, "ভাইয়া, একটা টেলিফোন করা যাবে?" দোকানে বসা ছেলেটি ভ্রু কুঁচকে একটা নোকিয়া আধমরা মোবাইল এগিয়ে দিল। মোবাইল আবার শিকল দিয়ে আটকানো। আমি রূপাদের বাসার নাম্বারে ফোন দিলাম। ফোন ধরেছেন রূপার বাবা, "হ্যালো, হু ইজ স্পিকিং।"
দুইবার "তুই রাজাকার" বলে ফোন রেখেদিলাম। রূপার বাবা যদিও রাজাকার না, কিন্তু বর্তমানে এই ব্যাপারটা ভালো মার্কেট পাচ্ছে। এখন সে বসে বসে ভাবছে তাকে কেন রাজাকার বলছে! আজ রাতে সে ঘুমাতে পারবে না সিওর। আমি রূপার মোবাইলে একটা মেসেজ সেন্ড করলাম,
"কাল সন্ধ্যায় শাহবাগে এসো,
তোমার মত করে ভালবেসো।"
মোবাইল রেখেই হাটা শুরু করলাম। শাহবাগে যেতে হবে। এখান থেকে হেঁটে প্রায় আধাঘন্টা লেগে যাবে শাহবাগ যেতে। দোকানদার ছেলেটির বিস্ময় কাটতেই পেছন থেকে চেঁচামেচি করা শুরু করল। দৌড়ে এসে আমার পা টেনে ধরে বসে বলল, "হালারপো, আমার টেকা দিয়া যা।" আমি তাকে বুঝিয়ে বললাম আমার কাছে টাকা নেই, তাকে দেখালাম আমার পাঞ্জাবির পকেট নেই। তারপরেও সে আমাকে ছারতে নারাজ। যেভাবেই হোক সে টাকা নিবেই। ধরে নিয়ে আমাকে দোকানে দাড় করাল আবার। দোকানি ছেলেটা মালিককে ফোন করল। আমি দোকানি ছেলেটার দিকে তাকি বললাম, "ভায়া, এক কাপ চা হবে? উইথ এ বেনসন সিগারেট?" ছেলেটা চোখ গরম করে তাকাল আমার দিকে, পারলে সেই দৃষ্টিতে ভস্ম করে দিবে এক্ষুনি।
মালিক এসেই চোখ চড়কগাছ। এইটাও একটা হাস্যকর বাগধারা। চোখ আবার কিভাবে চড়কগাছ হয়! দকানের মালিক আমার আমার উপরে হুমড়ি খেয়ে পরে বলল, "হিমু ভাই, আপ্নে এতদিন পরে!"
আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, "এতদিন পরে বলেই তো এইরকম পরিস্থিতিতে পড়লাম।" দোকানের মালিক আমার বিশেষ পরিচিত। রানা নামের গ্রাজুয়েট এক যুবক ছেলে।
রানা তার কর্মচারির উপর উত্তেজিত হয়ে বলল, "জানো কাকে আটকাইছ, ইনি হিমু ভাই। আজকে যা কিছু দেখতেছ, সব ইনার ইশারা, ক্ষমা চাও।"
দোকানি ছেলেটি যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না তার মালিকের জীবনের উপরে এই হলুদ পাঞ্জাবীর মুখভর্তি দাড়ি আর খালি পায়ের উজবুক লোকটার কি 'এহছান' থাকতে পারে!
রানা আমার বাম হাত জোরে ধরে রেখেছে, যেন আর যেতে দিবে না। আমাকে বলল, "হিমু ভাই, কি খাবেন বলেন?"
আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, "আমার জরুরী কাজ আছে, শাহবাগে যেতে হবে।"
রানাও নাছোড়বান্দা বলল, "হিমু ভাই, আমিও যাব আপনার সাথে, কিন্তু শুনেছি সেখানে নাকি অগ্নিপুজা হয়। ঘটনা সত্য?"
আমি শাহবাগের উদ্যেশ্যে হাটা শুরু করলাম। আমার সাথে রানাও শাহবাগের দিকে হাটতে থাকল। এই বিকেল বেলায় হরতালের কারণে সমস্ত কারওয়ান বাজার এলাকা খালি। হঠাত হঠাত দু একটি গাড়ি ছুটে যাচ্ছে। মৃদু বাতাস এসে গায়ে লাগছে। রানা একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে শাহবাগিদের সম্পর্কে। আমি চুপচাপ হেঁটে যাচ্ছি। লর্ড বায়রনের ডার্কনেসের শেষ কিছু ধিরে ধিরে আবৃতি করলাম,
The winds were wither'd in the stagnant air,
And the clouds perish'd,Darkness had no need
Of aid from them,She was the Universe.
রানা পাশ থেকে বলল, "হিমু ভাই কি আমাকে কিছু বলেছেন?"
সন্ধ্যার পূর্বমুহূর্তে শাহবাগের কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম। আমি আর রানা খোঁজা শুরু করলাম বাদল কে। একসময় মিস্টি সূরে পেছন থেকে ডেকে উঠল, "ওস্তাদজি, ও ওস্তাদজি, আমি হাফেজ আজিজুদিন শায়েখ"
আমি নিজেই পিছনে ফিরে বোকা বনে গেলাম। যেই লোক কিছুদিন আগে বায়তুল মোকাররমে পুলিশকে ইটা মারছিল, আজকে সে শাহবাগে স্লোগান দিচ্ছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,"ছাড়া পেলেন কিভাবে?"
সে কিছুটা লজ্জা নিয়ে বলল, "আপনার যে থানা পুলিশ পর্যন্ত হাত তা জানতাম না, আপনি বলেছেন তাই ছেরে দিয়েছিল। পরে আপনাকে তো আর খুজেও পেলাম না।"
আমি হেসে জিজ্ঞেস করলাম, "তা আজিজুদ্দিন আপনি শাহবাগে কি করেন?"
সে উত্তেজিত হয়ে বলল, "ওস্তাদজি, সেদিন আসল ঘটনা বুঝিনাই, জেল থেকে বের হয়ে শাহবাগে আসলাম আসল ঘটনা জানতে। বুঝলাম, রাজাকারের ফাঁসির বড়ই দরকার। দুপুরে বেলুন উড়াইছি। স্লোগানে আমিও যোগ দিয়েছি। ই-তে ইসলামী ব্যাঙ্ক, তুই রাজাকার তুই রাজাকার।"
আমি রানা আর হাফেজ আজিজুদ্দিন শায়েখ কে সাথে নিয়ে হাটতে শুরু করলাম। রানা এখন আর প্রশ্ন করছে না। সে চারিদিকে এত মানুষ দেখে থমকে গেছে। কিছুদুর সামনে যাওয়ার পরে দেখি রানা থেমে থেমে বলছে, জয় বাংলা, জয় বাংলা।
কিছুদূর যেতেই দেখলাম মাজেদা খালার ম্যানেজার জুবায়ের আর কাজের সেক্রেটারি রিমি বসে আছে। জুবায়ের এবং রিমি দুজনের মাথায় জাতীয় পতাকা বাঁধা। দুজনে হাত ধরাধরি করে বসে স্লোগান দিচ্ছে। আমি সামনে যেয়ে দাড়াতেই দুজন উঠে দাড়াল। রিমি আবার এক ফাঁকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে নীল। আমি বাঁধা দিলাম না। আমার বাবা বলেছেন, "হিমু, মহাপুরুষরা কাউকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে দেয় না।" এখানে একটা কথা বলে নেয়া ভালো, এই দুজন পালিয়ে গিয়ে আমার মেসে উঠেছিল। বিয়ের জন্যে একজন সাক্ষি শর্ট পরায় তারা ভেবেছিল আমিই যোগ্য
। এ পর্যন্ত কত বিয়ের সাক্ষি দিয়েছি আমি নিজেই জানি না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, "জুবায়ের, বাদল কে দেখেছ?"
জুবায়ের হাসিমুখে বলল, "বাদল ভাই তো আমাদের জন্যে পানি আনতে গেছে। সে এখন শাহবাগের ভলেন্টিয়ার। আমাদের খুব খাতির যত্ন করেন।"
আমি মনে মনে বললাম, "ঘরের শত্রু বিভীষণ"
এবার আমার দল ভারী হল। আমি সামনে হাটছি, পেছন পেছন রানা, হাফেজ আজিজুদ্দিন শায়েখ, রিমি এবং জুবায়ের আমার হাটছে। নিজেকে পীর দরবেশ মনে হচ্ছে। চারপাশের মানুষ আমাদের এই ছোট গ্রুপটার দিকে বাকা চোখে তাকাচ্ছে, আবার স্লোগানে ফিরে যাচ্ছে। কিছুদূর যেতেই পেয়ে গেলাম বাদলকে। দুই বোতল পানি নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে এদিকে আসছে। আমাকে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল। বলল, "হিমুদা, আমি জানতাম তুমি আসবা। আমার এক বন্ধুর সাথে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।" এই বলে সে একটি ছেলেকে আমার সামনে নিয়ে এলো। সেও আমাকে দেখে 'হিমু ভাই' বলে চিৎকার করে জড়িয়ে ধরল। এর সাথে গতকাল হাজতে যাওয়ার আগেই আমার সাথে পরিচয় হয়েছে। এই ছেলেটি গোয়েন্দা কর্মকর্তা মইনুদ্দিন সাহেবের ছেলে ব্লগার - শকুনের চোখ। (হিমু শিবির-১ দ্রষ্টব্য)
শেষে আমরা সবাই একসাথে স্লোগান দিলাম। তারপর একসাথে সাতজন সাতটা মোমবাতি ধরিয়ে সাত বীরশ্রেষ্ঠ কে সহ সকল শহীদকে স্মরণ করলাম। তারপর বাদলকে আরও বেশি উৎসাহ দিয়ে শাহবাগ থেকে বেড়িয়ে আসলাম। রানা শাহবাগেই থেকে গেলো। তার আবার স্লোগান দিতে ভালো লাগছে। ইতিমধ্যেই গলা ভেঙ্গে গেছে। এবার আমার পিছু পিছু এসেছে হাফেজ আজিজুদ্দিন শায়েখ। তাকে সহকারে শাহবাগ থেকে একগুচ্ছ গোলাপ কিনলাম। ব্লগার শকুনের চোখ থেকে জানা গেছে জানা গেছে তাদের বাসা মগবাজারে। তার বাসায় গিয়ে নিলু ভাবীর বিখ্যাত চা খাওয়া দরকার।
দড়জায় যখন নক করলাম তখন রাত নয়টা। আমার হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ সাথে আজিজুদ্দিন। দড়জা খুললেন ছিলাছাম হাসিহাসি মুখের এক মহিলা। আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, "কাকে চাই?" গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মত তাদের স্ত্রী-রাও সম্ভবত গোয়েন্দা হয়ে যায়, যদিও সকল স্ত্রী স্বামী অপরাধ খোঁজে। আমি হাসিমুখে বললাম, " নিলু ভাবী আমি হিমু, মইনুদ্দিন ভাই এই গোলাপ আপনাকে দিতে বলেছেন।" বলে গোলাপের গুচ্ছ এগিয়ে দিলাম। নিলু ভাবী ফুল নিয়ে দরজা আটকে দিলেন।
বুঝলাম চা খাওয়া হবে না আজকে আর। আমি আর আজিজুদ্দিন সিড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছিলাম। এমন সময় নিলু ভাবী দড়জা খুলে ডাকলেন, "হিমু, ভিতরে আসেন, চা খেয়ে যান।"
চা খেয়ে ঘন্টাখানেক গল্প করার পরে বেরিয়ে পড়লাম আবার রাস্তায়। নিলুভাবি মইনুদ্দিন ভাইয়ের পাঠানো গোলাপ ভেবে অনেক খুশি হয়েছেন। তিনি যখন তার ছেলে এবং স্বামীর সাথে হিমু এসেছিল বলবে, দুজনেই অপ্রস্তুত হয়ে যাবে। মানুষকে অবাক করার ক্ষমতা সবার নেই, হিমুদের থাকে।
জ্যোৎস্না ভরা চাঁদের আলোয় হাটতে বেরিয়েছি। আজ সারারাত হাটব। সাথে আছে হাফেজ আজিজুদ্দিন। বাদল বলেছিল চাঁদে নাকি সায়েদি নামের কোন এক রাজাকারের ছবি দেখা গেছে বলে গুজব রটেছে। হাফেজ আজিজুদ্দিন বললেন, "এটা অসম্ভব। যারা একথা ছড়াইছে তারা মুসলিম হতে পারে না।"
আমরা চাঁদের দিকে চেয়ে হাটতে শুরু করলাম। কাউকে চাঁদে দেখতে নয়, হিমুরা জ্যোৎস্না খায়, জ্যোৎস্নায় বাঁচে। হিমুরা জ্যোৎস্নাময়ী চাঁদ দেখে।
পরদিন সকালে উঠে আমি আর আজিজুদ্দিন টং দোকানে বসে চা খেলাম। আজিজুদ্দিন ইতিমধ্যে আমার ভীষণ ভক্ত হয়ে গেছে। তার ধারণা সমস্ত ঢাকার শহরের সমস্ত লোক আমাকে চিনে। টং দোকানদার জালাল যখন আমার চায়ের বিল নিল না, তার ধারণা আরও বদ্ধমূল হয়ে গেল। এখন আমি আর আজিজুদ্দিন কমলাপুর রেলস্টেশনে। কাশিমপুর কারাগারে যাব।
কারাগারের জেলারের সাথে আমার ভালো পরিচয় আছে। খুনের আসামি কানকাটা খায়েরকে বেশ কয়েকবার দেখতে এসেছিলাম। জেলার সাহেব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রাজাকারদের দেখালেন। তাদের দেখে আমি আর হাফেজ আজিজুদ্দিন উচ্চস্বরে বললাম, "তুই রাজাকার, তুই রাজাকার।" দুপুরে আমরা খাওয়াদাওয়া করলাম জেলার সাহেবের সাথে। শেষে দেখা করলাম কান কাটা খায়েরের সাথে। সে তার ছেলের কথা জানতে চাইল। বললাম তার ছেলেকে যারা ছেলে হিসেবে নিয়েছেন, তারা খুব আদরেই রেখেছেন। বিকেল বেলায় রওনা দিলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। ঢাকায় এসে হাফেজ আজিজুদ্দিন কে বাসে তুলে দিলাম। সে আজ মাদ্রাসায় চলে যাবে। যাওয়ার সময় অনেক কান্নাকাটি করলেন। শেষে বললেন, "ওস্তাদজি, নিজের খেয়াল রাখবেন।"
প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আজকে রূপাকে বলেছি শাহবাগে আসতে। আমি জানি রূপা আজকে শাহবাগে আসবে। নীল শাড়ি আর নীল টিপ পড়ে রূপা আসবে। আজকে আমি আর মহাপুরুষ হব না, আজকে আমি হিমু হব, শুধুই হিমু। আজ আমি রূপার হাত ধরে শাহবাগের হাজারো মানুষের ভিড়ে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিব, "তুমি কে আমি কে? বাঙালি বাঙালি।"
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন