১৯৫২ সালের আগে এ দেশের যতজন মানুষ ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু এক কথায় অন্য ভাষায় কথা বলত, অন্য ভাষার গান শুনত, আজকে ষাট বছর পরে তার অনুপাত বেড়েছে না কমেছে? বাড়লে কতটুকু বেড়েছে? তখন দেশে ক’টি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল-কলেজ ছিল, আর এখন কয়টা?
তখন সারা বাংলাদেশে দু’চারটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ছিল কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে। অনেকে হয়ত আমাকে কাঠমোল্লাদের মতো ইংরেজী বিদ্বেষী ভাবতে পারেন, কিন্তু সেটা মনে করলে কঠিন ভুল হবে। আমি ইংরেজি ভাষার একজন ভক্তজন, ইংরেজি আমার খুব প্রিয় একটি ভাষা। তবে আমি ইংরেজ এবং ইংরেজির অন্ধ অনুরাগী নই। ইংরেজির প্রতি আমাদের এই জাতির এত যে ভালোবাসা, এত শ্রদ্ধা অথচ মুখে বলি আ-মরি বাংলা ভাষা।
আমাদের কোর্ট-কাছারিতে, অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সর্বত্র চলে ইংরেজি প্রীতি, ইংরেজির জয়োগান। আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে পড়াই ইংরেজি মিডিয়াম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, তারা যখন ইংরেজি রাইম বলে, ইংরেজি কথা বলে তখন সেটা অন্যদের কাছে বলতে খুব গর্ব বোধ করি। আমরা প্রতিটি বাক্যে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করি, যে শব্দগুলির যথোপযুক্ত প্রতিশব্দ বাংলাতে আছে সেগুলিও ইংরেজিতে বলতে আমরা সাচ্ছন্দ বোধ করি।
এই জগাখিঁচুড়ি ভাষাটিকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য বেশ কিছু রেডিও স্টেশনও কোমর বেঁধে নেমেছে যারা পারতপক্ষে বাংলা শব্দ বলতে চান না, যতটুকুও বা বলেন সেটা ইংরেজি উচ্চারণ নকল করে বলতে চেষ্টা করেন। হঠাৎ করে কেউ বুঝতেও পারবেন না যে তারা বাংলা বলছেন না ইংরেজি বলছেন। যারা এভাবে নিজেদের মাতৃভাষাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন তারা কবি আব্দুল হাকিমের সেই দু’টি লাইন আবারও পড়ে নিতে পারেন-
যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী,
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।
দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়।
নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায়॥
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৩২